বায়ু সীমান্ত কাকে বলে? ও বায়ু সীমান্তের শ্রেণিবিভাগ: বায়ু সীমান্ত বলতে দুটি বায়ুপুঞ্জের মধ্যবর্তী সীমানা কে বোঝায়। ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বিশিষ্ট দুটি বায়ুপুঞ্জ যদি একে অপরের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে বায়ুপুঞ্জ গুলি একত্রে মিশে না গিয়ে একটি ঢালু সীমা রেখা বরাবর পৃথক হয়ে যায়, একে বায়ু সীমান্ত বলে।
ফ্রণ্টোজেনেসিস – ফ্রণ্টজেনেসিস একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ সীমান্ত সৃষ্টি। যেখানে দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জ এসে মিলিত হয়, সেখানে সীমান্তের সৃষ্টি হয়, একেই ফ্রণ্টজেনেসিস বলে। বায়ুপ্রাচীর বা সীমান্ত হলো এমন এক পরিবর্তনশীল অঞ্চল যেখানে বায়ুর তাপ ও আদ্রতার দ্রুত পরিবর্তন দেখা যায়।
ফ্রন্টোলিসিস – বায়ু সীমান্ত দ্বারা পৃথকীকৃত ভিন্ন তাপ ও আদ্রতা বিশিষ্ট বায়ুপুঞ্জ যখন সমতাপ বিশিষ্ট বায়ুপুঞ্জে পরিনত হয়, তখন সীমান্তের বিলোপ ঘটে, একেই ফ্রন্টোলিসিস বলে।
বায়ুপুঞ্জের গতির উপর ভিত্তি করে বায়ু প্রাচীর বা সিমান্তকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা: ১. উষ্ম সীমান্ত ২. শীতল সীমান্ত ৩. অক্লুডেড সীমান্ত ও ৪. সাম্য সীমান্ত
১. উষ্ণ বায়ু সীমান্ত – শীতল ও উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের মধ্যে যদি উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের বেগ বেশি হয় তবে উষ্ণ বায়ু অধিকতর সক্রিয় হয়ে শীতল ও ভারী বায়ুর গা বেয়ে উপরের দিকে ওঠে যায়। এরুপ অবস্থায় সৃষ্ট বায়ু প্রাচীরকে উষ্ণ বায়ু প্রাচীর বলে।
বৈশিষ্ট্য – ক) উষ্ণ বায়ু সক্রিয় হয়ে উষ্ণ বায়ুপ্রাচীর বা সীমান্তের সৃষ্টি করে।
খ) উষ্ণ বায়ুপ্রাচীরের ঢাল অপেক্ষাকৃত কম। ঢালের পরিমান ১ : ১০০ থেকে ১ : ২০০ হয়।
গ) উষ্ণ বায়ু শীতল বায়ুর গা বেয়ে উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
ঘ) উষ্ণ বায়ুর ঘর্ষনে ভূপৃষ্টস্থ শীতল বায়ু হালকা হয়ে পড়ে।
ঙ) উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ অবস্থান করলে – তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, আপেক্ষিক আদ্রতা বাড়ে ও বায়ুর চাপ হ্রাস পায় এবং বায়ুপ্রবাহের দিকের কিছুটা পরিবর্ত্ন হয়।
২. শীতল বায়ু সীমান্ত – দুটি বায়ুপুঞ্জের মধ্যে যখন শীতল বায়ুপুঞ্জটি অধিক সক্রিয় হয়ে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জকে ক্রমে উপরের দিকে সরিয়ে দেয়। এই অবস্থায় শীতল বায়ুটি সক্রিয় ভাবে অংশ নেই বলে, শীতল বায়ুপুঞ্জের সামনের বায়ু প্রাচীর কে শীতল সীমান্ত বলে।
বৈশিষ্ট্য – ক) এই ক্ষেত্রে শীতল বায়ু পুঞ্জের সক্রিয়তা বেশি হয়।
খ) শীতল সীমান্তে ঢাল অপেক্ষাকৃত অধিক খাড়ায় হয়। ঢালের পরিমান ১ : ৫০ থেকে ১ : ১০০ হয়।
গ) শীতল বায়ুপুঞ্জের গতিপথের বিপরীত দিকে উদ্ধমুখী ঢালের সৃষ্টি হয়।
ঘ) শীতল সীমান্তের উপরিস্থিত উষ্ণ বায়ু যদি শুষ্ক হয়, তাহলে তাহলে খন্ড খণ্ড মেঘের সৃষ্টি হয় এবং এ অবস্থায় কোনো বৃষ্টিপাত হয় না। অপর দিকে উপরিস্থিত মেঘ আদ্রতা সম্পূর্ন হলে বর্জ্র বিদ্যুৎ সহ ঝড়বৃষ্টি হয়।
ঙ) ভূ-পৃষ্টের উপর শীতল বায়ু অবস্থান করলে – আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাপমাত্রা হ্রাস পায়, আপেক্ষিক আদ্রতা হ্রাস পায় ও বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায়।
৩. অন্তর্ধৃত সীমান্ত বা অক্লুডেড ফ্রন্ট – শীতল ও উষ্ণ বায়ুপ্রাচীরের মধ্যে শীতল বায়ু প্রাচীরটি অপেক্ষাকৃত দ্রুত অগ্রসর হয়। শীতল বায়ু প্রাচীরটি উষ্ণ বায়ু প্রাচীরটির কিছু অংশ দখল করে ফেললে মধ্যবর্তী উষ্ণ বায়ু তার শক্তি হারিয়ে ফেলে, একেই অন্তর্ধৃত সীমান্ত বা অক্লুডেড ফ্রন্ট বলে।
বৈশিষ্ট্য – ক) মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলের নিম্নচাপে এরুপ অবস্থা দেখা যায়।
খ) এই রূপ সীমান্ত থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ঝিরঝিরে বৃষ্টিপাত হয়।
গ) প্রকৃতপক্ষে অন্তর্ধৃৎ হওয়ার ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা পর ঘূর্নিঝর চরম অবস্থায় উপনিত হয়।
ঘ) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পূর্ব অঞ্চলে সচরাচর এরুপ অক্লুসন দেখা যায়।
৪. সাম্য সীমান্ত – দুটি ভিন্ন ধর্ম বিশিষ্ট বায়ু যখন পরস্পরের সমান্তরালে বিপরীত দিকে ধাবিত হয়, তখন তাদের মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে সীমান্ত বিরাজ করে তাকে সাম্য সীমান্ত বলে।