স্যার আর্থার কোনান ডায়াল জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Arthur Conan Doyle Biography in Bengali. আপনারা যারা স্যার আর্থার কোনান ডায়াল বা আর্থার ইগনেসিয়াস কোনান ডায়াল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী স্যার আর্থার কোনান ডায়াল এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল বা আর্থার ইগনেসিয়াস কোনান ডায়াল কে ছিলেন? Who is Arthur Conan Doyle?
আর্থার ইগনেসিয়াস কোনান ডয়েল (২২ মে ১৮৫৯ – ৭ জুলাই ১৯৩০) ছিলেন একজন ইংরেজ লেখক ও চিকিৎসক। তার শার্লক হোম্সের গল্পসমূহের জন্য তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তার অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে কল্পবিজ্ঞান গল্প, নাটক, প্রেমের উপন্যাস, কবিতা, ননফিকশন, ঐতিহাসিক উপন্যাস এবং রম্যরচনা।
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল জীবনী – Arthur Conan Doyle Biography in Bengali
নাম | স্যার আর্থার কোনান ডায়াল বা আর্থার ইগনেসিয়াস কোনান ডায়াল |
জন্ম | 22nd মে 1859 |
পিতা | চার্লস আলটামন্ট ডয়েল |
মাতা | মেরি (নি ফোলি) |
জন্মস্থান | এডিনবারা, স্কটল্যান্ড, যুক্তরাজ্য |
জাতীয়তা | স্কটিশ, আইরিশ |
পেশা | ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, কবি, ডাক্তার |
মৃত্যু | 7th জুলাই 1930 (বয়স 71) |
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল এর জন্ম: Arthur Conan Doyle’s Birthday
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল বা আর্থার ইগনেসিয়াস কোনান ডয়েল ১৮৫৯ সালের ২২ মে জন্মগ্রহণ করেন।
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Arthur Conan Doyle’s Parents And Birth Place
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল সাহিত্যের বিশ্ববিখ্যাত চরিত্র রহস্যভেদী শার্লক হােমসের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডায়ালের জন্ম এডিনবরায় ১৮৫৯ খ্রিঃ। ডায়াল ছিলেন বহুমুখী গুণ – নৈপুণ্যের মানুষ। তিনিহতে পারতেন অনেক কিছুই। কিন্তু সাহিত্যপ্রীতি এবং শিল্পপ্রবণতা তাঁকে আকস্মিকভাবেই নিয়ে আসে সাহিত্যক্ষেত্রে।
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল এর শিক্ষাজীবন: Arthur Conan Doyle’s Educational Life
১৮৭৬ খ্রিঃ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারী পড়বার সময় তার সঙ্গে যােগাযােগ ঘটে ডঃ জোশেফ বেল – এর। সুদক্ষ শল্যচিকিৎসক এই মানুষটিব নির্ভুল ক্ষমতা ছিল রােগ নির্ণয়ের। কেবল তাই নয় সামান্য লক্ষণ থেকেই তিনি রােগীদের জীবন ও জীবিকার সন্ধান বলে দিতে পারতেন।
ডায়াল ছিলেন ডাঃ বেল – এর প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম। তার ইচ্ছাতেই একসময় ডায়াল নিযুক্ত হয়েছিলেন তার আউট পেশেন্ট ক্লার্ক হিসেবে। এই সুযোগটা ডায়ালের জীবনে শার্লক – প্রস্তুতি পর্বের সূচনা করল বলা চলে। কেননা, রােগীদের ইতিহাস টোকার মধ্যে দিয়েই তার মানুষের চরিত্র পর্যবেক্ষণের হাতে খড়ি হতে থাকল।
তিনি যে নােট নিতেন, তার সঙ্গে ডাঃ বেল – এর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের হুবহু মিল দেখে তিনি অভিভূত হতেন। মানুষটির লজিক্যাল অ্যানালিসি ডিডাকসন পদ্ধতির প্রতি এভাবেই আকৃষ্ট হয়ে পড়েন ডায়াল।
তার কাল্পনিক অপরাধ কাহিনীর নায়ক শার্লক হােমসের মধ্যেও আমরা দেখেছি এই গুণ গুলিই আরও প্রখর ও বিকশিত রূপে। আঙুলের নখ, কোটের হাতা, বুট জুতাে, প্যান্টের হাঁটু, তর্জনী আর বুড়াে আঙুলের কড়া – পড়া চামড়া, মুখমণ্ডলের ভাব, শার্টের আস্তিন- এসব থেকে হােমস তার প্রাথমিক সমস্যাবলীকে আয়ত্তে আনতেন।
চিকিৎসা জগতটা এমন এককঠিনঠাই যেখানেএই জীবিকার মানুষদের প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য দীর্ঘ সময় এবং ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। ভাগ্যের জোরে কেউ কেউ অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যেই তা পেয়ে যায়। এরা সুনাম ও আর্থিক প্রাচুর্যের দাক্ষিণ্য লাভ করে। কিন্তু বাদ বাকি সকলকেই চেম্বারে বসে স্টেথাে দিয়ে মাছি তাড়াতে হয়।
ডাঃ বেল – এর স্নেহভাজন হওয়া সত্ত্বেও ডায়াল জীবিকার্জনের ক্ষেত্রে কৃচ্ছতা এড়াতে পারলেন না। লেখক হবার বাসনা না থাকলেও খেয়াল বশেই ইতিমধ্যে তিনি কয়েকটি গল্প লিখে ফেলেছিলেন এই সময়ে। কিন্তু তার প্রায় সবকটিই ফেরত এসেছিল সম্পাদকের দপ্তর থেকে। কেবল Thestory of Sasassa Valley গল্পটি ছাপা হয়েছিল চেম্বার্স জার্নালে।
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল এর কর্ম জীবন: Arthur Conan Doyle’s Work Life
এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে পাড়ি দিচ্ছিলেন ডায়াল। সেই সময়ে আকস্মিক ভাবেই চাকরি জীবনের হাতছানি এল। পঞ্চাশ পাউন্ডের বিনিময়ে সার্জন হিসেবে জাহাজে করে আর্কটিক যাতায়াতের দায়িত্ব পেলেন। বলাইবাহুল্য, এই সমুদ্রযাত্রা তার উত্তর জীবনে সাহিত্য রচনার রসদ হিসেবে কাজে লেগেছে।
১৮৮১ খ্রিঃ ফিরে এসে ডাক্তারী ডিগ্রিলাভ করে আবার রওনা হলেন আফ্রিকার পথে। কিন্তু তিনমাস পরেই ফিরে এলেন। এরপর তার স্থিতিহীন জীবনের মােড় ঘুরিয়ে দিল প্লাইমাউথ থেকে পাঠানাে এক সহপাঠী বন্ধু ডাঃ বাড – এর টেলিগ্রাম।
বন্ধুটি তাকে প্লাইমাউথে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি নিজে সেখানে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বিপুল সাফল্য লাভ করেছেন। ডায়াল এই সুযােগ হাতছাড়া করলেন না। তিনি বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে রওনা হয়ে পড়লেন।
ডায়ালের সহপাঠী ডঃ বাড ছিলেন টগবগে প্রাণবন্ত তরুণ। আধা প্রতিভাবান আধা হাতুড়ে এই মানুষটি ছিলেন কিছুটা খামখেয়ালি আর ঝোঁকগ্রস্তও। ফলে বন্ধুর সঙ্গে ডায়ালের পার্টনারশিপ বেশিদিন টিকল না।
তিনি রীতিমত ঝুঁকি নিয়েই সাউথ সীর ১ নং বুশ ভিলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস শুরু করলেন। কিন্তু ভাগ্য বিরূপ হলে যা হয়। ডায়ালের ঝকঝকে নেমপ্লেট হঠাৎ করে রােগীদের আকৃষ্ট করল না। কিন্তু ভেঙ্গে পড়লেন না তিনি। অনমনীয় মনােবল নিয়ে প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে যুঁঝবার শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন মায়ের কাছ থেকে।
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল এর রচনা: Written by Arthur Conan Doyle
স্টেথাে দিয়ে মাছি না তাড়িয়ে এবারে কলম নিয়ে বসলেন আর্থার কোনান ডায়াল। লন্ডন সিটি ম্যাগাজিনে গল্প লিখতে শুরু করলেন। দিকনা হিল পত্রিকায় একটি গল্প প্রকাশিত হবার পর অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটতে লাগল। ইতিমধ্যে ডাক্তারিতেও কিছুটা রােজগার বেড়েছে। অল্পহলেও স্থায়ী রােজগারের পথ কিছুটা খুলেছে। ভরসা করে ১৮৮১ সালের এপ্রিল মাসে বিয়ে করে ফেললেন মিস লুই হকিন্স নামের একটি তরুণীকে। বিয়ের কিছুদিন পরে একদিন কাগজ কলম নিয়ে বসে নানান আঁকিবুকি কাটতে কাটতে একটা গােয়েন্দা চরিত্রের নকসা ছকে ফেললেন ডায়াল।
নাম ঠিকানা সহ স্বভাবটিও ধরে রাখলেন দু – চার কথায়। বলা যায় এই মানুষটিই জ্বণাকারে শার্লক হােমস। অবশ্য প্রথমে নামকরণ হয়েছিল শেরিনফোর্ড হােমস, পরে বদল করে নাম রাখলেন শার্লক। গােয়েন্দার যে সহকারীটিকে নির্বাচন করলেন ডায়াল প্রাথমিকভাবে তার নাম ছিল অরমন্ড স্যাকার। এই নামটিও পছন্দ না হওয়ায় পরে বদলে করলেন ডাঃ জন এস ওয়াটসন।
ডায়াল ডাঃ বেল – এর ছাঁচে গড়ে তুলেছিলেন মরফিন আসক্ত শার্লক হােমসের কায়মূর্তিটি। অবশ্য এই চেহারার ছাঁচের মধ্যে মিশেছিল তার প্রপিতামহ জন ডায়ালের অয়েলপেন্টিং – এর স্মৃতিও। ডাঃ ওয়াটসন মানুষটি কল্পনার সৃষ্ট হলেও তার আকৃতি – প্রকৃতি এবং নামের উৎস কিন্তু ছিল দুটি বাস্তব মানুষ। দুজনেই ছিলেন ডায়ালের বন্ধু।
এদের একজন হলেন সাউথ সী – এর ডাঃ জেমস ওয়াটসন এবং অপরজন মেজর উড। এর চেহারাটিই প্রায় হুবহু পেয়ে গেছেন গল্পের ওয়াটসন। মেজর উড – ও সাউথসীতে থাকতেন এবং কিছুকাল ডায়ালের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছেন। এর পরেই শুরু হয় অদ্বিতীয় রহস্যভেদী গােয়েন্দা শার্লক হােমসের একের পর এক অ্যাডভেঞ্চার রীতিমত ছকেবাঁধা গােয়েন্দা – কাহিনী।
শার্লক হােমস পাঠকদের দরবারে প্রথম আবির্ভূত হলেন A Tangled Skein উপন্যাসে ১৮৮৭ খ্রিঃ। অবশ্য পছন্দ না হওয়ায় উপন্যাসটির নাম বদলে নতুন নামকরণ করলেন A study in Skerlet.
শার্লক হােমসকে নিয়ে ডায়াল সবশুদ্ধ চারটি উপন্যাস এবং ছাপ্পান্নটি ছােটগল্প লিখেছিলেন। প্রতিটি লেখার মধ্যে হােমস চরিত্রটি এমন নিপুণভাবে চিত্রিত করেছিলেন যে পাঠকরা বিশ্বাসই করতে চাইতেন না যে শার্লক হােমস কাল্পনিক মানুষ।
১৯৩০ সালে মৃত্যুর আগে ডায়াল এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে পাঠকরা মনে করতেন শার্লক হােমস এক জীবন্ত ব্যক্তি আর সেই ব্যক্তি সকল রহস্যের সমাধান করতে পারেন। লেখকের জীবিতাবস্থাতেই হােমসের নামে পাঠকদের কাছ থেকে চিঠি আসত। একবার এক মহিলা হােমসকে বিয়ের প্রস্তাবও পাঠিয়েছিলেন। ডাকে আসা অধিকাংশ চিঠিতেই থাকে রহস্য সমাধানেব নানা অনুরােধ। থাকে মুগ্ধতাজ্ঞাপন এবং সাক্ষাৎ প্রার্থনা।
বস্তুতঃ হােমস সত্যিকারের চরিত্র না হয়েও পৃথিবীর হােমস – অনুরাগী মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন জীবন্ত অস্তিত্ত্বের অধিক একটি ভাবমূর্তি। ১৮৯১ খ্রিঃ ডায়ালের The Adventures of Sherlock Holmes প্রকাশিত হবার পর অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। গল্পগুলি প্রথমে প্রকাশিত হয় বিখ্যাত স্ট্রান্ড ম্যাগাজিনে।
ডায়ালের শার্লক হােমসের গল্পগুলাে পৃথিবীর সব ভাষাতেই অনুবাদ হয়েছে। তৈরি হয়েছে দুশাে ছায়াছবি ও টেলিফিল্ম। সারা পৃথিবীর পুলিশী তদন্তধারায় এনেছে পরিবর্তন। চীন মিশরে গােয়েন্দা পাঠক্রমে অবশ্যপাঠ্য এই গল্পগুলি। ডায়ালের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি অনুসৃত হচ্ছে এশিয়া, ইউরােপ আমেরিকার গােয়েন্দা সংস্থায়।
প্রধানত গােয়ন্দা কাহিনীর লেখক হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত হলেও ডায়াল বেশ কিছু উপন্যাস ও অনেকগুলি নাটকও লেখেন। এসবের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল The Story of Waterloo, The Fires of Fate, The House of Temperley, The prison Belt ইত্যাদি।
প্রথম নাটকটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন প্রখ্যাত নট স্যার হেনরি আরভিং। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ সেনানিবাসের স্বপক্ষে রচিত তার দুখানি বই হল The great Boar Warএবং The War in South Africa: Its causes and conduct. ডায়ালের Causes and Conduct of the World War গ্রন্থটি ইংরাজি ছাড়া আরও বারােটি ভাষায় প্রকাশিত হয়। জীবনের অন্তিম পর্যায়ে ডায়াল অধ্যাত্মবাদী হয়ে পড়েন এবং এই সম্পর্কে বক্তৃতা দান ও রচনা লিখতে থাকেন।
স্যার আর্থার কোনান ডায়াল এর মৃত্যু: Arthur Conan Doyle’s Death
১৯০২ খ্রিঃ তিনি স্যার উপাধি লাভ করেন। ১৯৩০ খ্রিঃ ৭ ই জুলাই তার মৃত্যু হয়।