আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত – আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত – Atlantic Ocean Currents: আটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত মহাসাগর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর। এর আয়তন ১০৬,৪৬০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪১.১ মিলিয়ন বর্গমাইল); এটি পৃথিবীপৃষ্ঠের প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। ইউরোপীয় ধারণা অনুযায়ী, এটি “পুরাতন পৃথিবীকে” “নতুন পৃথিবীর” থেকে আলাদা রাখে।
আটলান্টিক মহাসাগরটি পূর্বদিকে ইউরোপ এবং আফ্রিকা এবং পশ্চিমে আমেরিকার অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দীর্ঘায়িত, এস-আকৃতির অববাহিকা রূপে অবস্থিত। আন্তঃসংযুক্ত বিশ্ব মহাসাগরের একটি অংশ হিসাবে, এটি উত্তরে সুমেরু মহাসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর , দক্ষিণ-পূর্বে ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত (অনেক সংজ্ঞায় আটলান্টিককে অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণে বিস্তৃত হিসাবে বর্ণনা করা হয়)। নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত আটলান্টিক মহাসাগরকে প্রায় ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা মহাসাগরটিকে উত্তর আটলান্টিক ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে বিভক্ত করেছে।
আটলান্টিকেের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানগুলোর মধ্যে রয়েছে চ্যালেঞ্জার অভিযান, জার্মান উল্কা অভিযান, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যামন্ট-দোহার্টি আর্থ অবজারভেটরি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী হাইড্রোগ্রাফিক অফিস।
পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক, যা পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ এবং পশ্চিমে আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা আবদ্ধ। এই বিশাল আটলান্টিক মহাসাগরে দুটি ভিন্ন ধর্মী সমুদ্র স্রোত প্রবাহিত হয়, যথা উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত। এখানে এই আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
আটলান্টিক মহাসাগরের উষ্ণ স্রোত সমূহ
নিরক্ষীয় স্রোত: আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন গতি ও উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে দুটি উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয়।
উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত – উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত টি উত্তর পূর্ব আয়ণ বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে শেষে ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে।
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত – এই স্রোত টি দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম দিকে প্রভাবিত হয়ে ব্রাজিলের শাও রোক অন্তরীপ এ প্রতিহত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে।
নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত – উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী একটি উষ্ণ স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলে।
ব্রাজিল স্রোত – দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের দক্ষিণের শাখাটি উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত নামে দক্ষিণ দিকে প্রভাবিত হয়ে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
ক্যারিবিয়ান স্রোত – দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তরের শাখাটি ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে ক্যারিবিয়ান স্রোত নামে পরিচিত হয়।
ফ্লোরিডা স্রোত – ক্যারিবিয়ান স্রোত ইউকাটান প্রণালী দিয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে ফ্লোরিডা স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
উপসাগরীয় স্রোত – ফ্লোরিডা স্রোত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয় এবং মেক্সিকো উপসাগরে উপসাগরীয় স্রোত নামে পরিচিত।
উপসাগরীয় স্রোত উত্তর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয় –
ক) ইরমিঙ্গার স্রোত – উপসাগরীয় স্রোতের উত্তর শাখা আইসল্যান্ডের দক্ষিণে ইরমিঙ্গার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম দিকে ল্যাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
খ) উত্তর আটলান্টিক স্রোত – দ্বিতীয় শাখাটি আটলান্টিক স্রোত নামে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পাশ দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে বয়ে যায়।
গ) ক্যানারি স্রোত (শীতল স্রোত) – তৃতীয় শাখাটি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকার উত্তর পশ্চিমে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের নিকট বাঁধা পেয়ে ক্যানারি স্রোত রূপে দক্ষিনে বেঁকে যায় এবং অবশেষে নিরক্ষীয় স্রোত এর সঙ্গে মিলিত হয়।
আটলান্টিক মহাসাগরের শীতল স্রোত
ফকল্যান্ড স্রোত – দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে কুমেরু স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর সামান্য উত্তরে অগ্রসর হয় এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ এর নিকট এই স্রোত ফকল্যান্ড স্রোত নামে পরিচিত।
বেঙ্গুয়েলা স্রোত – কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তরে বেঁকে যায় এবং বেঙ্গুয়েলার নিকট বেঙ্গুয়েলা স্রোত রূপে প্রবাহিত হয়।
গ্রীনল্যান্ড স্রোত – সুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল স্রোতের একটি শাখা গ্রীনল্যান্ডের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এর নাম গ্রিন ল্যান্ড স্রোত।
ল্যাব্রাডর স্রোত – সুমেরু মহাসাগরের শীতল স্রোতের অপর একটি শাখা গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়ে গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিনে গ্রীনল্যান্ড স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। এই স্রোত কানাডার পূর্বে ল্যাব্রাডর উপদ্বীপের নিকট ল্যাব্রাডর স্রোত নামে পরিচিত।