বাল গঙ্গাধর তিলক জীবনী | Bal Gangadhar Tilak Biography in Bengali: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Bal Gangadhar Tilak Biography in Bengali. আপনারা যারা বাল গঙ্গাধর তিলক সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বাল গঙ্গাধর তিলক এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
বাল গঙ্গাধর তিলক কে ছিলেন? Who is Bal Gangadhar Tilak?
বাল গঙ্গাধর তিলক (মরাঠি: बाळ गंगाधर टिळक) (জুলাই ২৩ ১৮৫৬ – ১ আগস্ট ১৯২০) জন্ম নামঃ কেশভ গঙ্গাধার তিলক একজন ভারতীয় পণ্ডিত ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা, সমাজ সংস্কারক, আইনজীবী এবং স্বাধীনতা কর্মী ছিলেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নেতা ছিলেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাকে ভারতীয় অস্থিরতার পিতা বলতেন। তাকে আরও সন্মানসুচক লোকমান্য বলা হত, যার অর্থ “জনগণ দ্বারা গৃহীত (নেতা হিসাবে)।
বাল গঙ্গাধর তিলক জীবনী | Bal Gangadhar Tilak Biography in Bengali
নাম | বাল গঙ্গাধর তিলক |
জন্ম | 23 জুলাই 1856 |
পিতা | গঙ্গাধর তিলক |
মাতা | পার্বতী বাই গঙ্গাধর |
জন্মস্থান | রত্নগিরি, মহারাষ্ট্র, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, লেখক, রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা |
মৃত্যু | 1 আগস্ট 1920 (বয়স 64) |
বাল গঙ্গাধর তিলক এর জন্ম: Bal Gangadhar Tilak’s Birthday
বাল গঙ্গাধর তিলক 23 জুলাই 1856 জন্মগ্রহণ করেন।
বাল গঙ্গাধর তিলক এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Bal Gangadhar Tilak’s Parents And Birth Place
ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম মহান নায়ক, সুবিখ্যাত রাজনীতিকও পন্ডিত বালগঙ্গাধর তিলকের জন্ম ১৮৪৬ খ্রি ২৩ শে জুলাই দাক্ষিণাত্যের অন্তর্গত রত্নগিরি নামক স্থানে ঐতিহ্যসম্পন্ন মহারাষ্ট্রীয় চিত্পাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বংশের অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তিলকের পিতার নাম ছিল গঙ্গাধর রামচন্দ্ৰ ৷
বাল গঙ্গাধর তিলক এর শিক্ষাজীবন: Bal Gangadhar Tilak’s Educational Life
১৮৭৬ খ্রিঃ তিলক ডেকান কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৮৭৯ খ্রিঃ প্রথম শ্রেণীতে আইন শাস্ত্রের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সংস্কৃত সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও তাঁর পান্ডিত্য ছিল অসাধারণ। বেদ – বেদান্ত ও বৈদিক সংহিতার বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যায় তিনি সুগভীর জ্ঞানের পরিচয় দেন। স্বদেশীয় সাহিত্য সংস্কৃতির পাশাপাশি পশ্চিমী রাজনীতি ও চিন্তাধারার সঙ্গেও তার একাত্মতার অভাব ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন ইউরোপীয় প্রথার অন্ধ অনুকরণ নয়, ভারতীয় সনাতনী প্রথাতেই ভারতীয় জনজীবনে আধুনিকতার রূপান্তর সম্ভব।
বাল গঙ্গাধর তিলক এর কর্ম জীবন: Bal Gangadhar Tilak’s Work Life
রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় তিলক বিদেশী শাসকের কাছে আবেদন নিবেদনে বিশ্বাসী ছিলেন না। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনেই তিনি তার রাজনৈতিক ভূমিকাকে অব্যাহত রাখেন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস যখন স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লাভে ব্যস্ত হয়েছে, সেই সময় তিলকের ‘স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার’ এই দাবি ভারতীয় রাজনীতিকে সচকিত করে তুলে। একমাত্র রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতীয় স্বাধীনতা লাভ করা সম্ভাব — এই প্রশ্নে তিনি কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে ১৯০৭ খ্রিঃ জাতীয়তাবাদী দল এবং ১৯২০ খ্রিঃ কংগ্রেস ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন।
পরবর্তীকালে উভয় দলের মিলন ঘটিয়ে জঙ্গী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন রচনার মধ্যে তিনি তার মত ও কর্মধারায় অনেকাংশে সফল হন। আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে তার জাতীয়তাবাদ নরমপন্থী কংগ্রেসীদের আবেদন নিবেদন মূলক জাতীয়তাবাদ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। তিলকের মতে জাতীয়তাবাদ মূলতঃ ভাবগত হলেও বস্তুর মাধ্যমেই তা মূর্ত হয়ে ওঠে। তাই হিন্দুধর্মীয় নেতাদের পুনর্জাগরণের ভাবধারার সাথে রাজনৈতিক চিন্তাধারার ঐক্য ঘটিয়ে জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তিনি সূচনা করলেন গণপতি পূজা ও শিবাজী উৎসবের।
স্বদেশপ্রেম এবং ধর্মীয় ভাব ও ভাবনায় তিলক ছিলেন বহুল পরিমাণে স্বামী বিবেকানন্দ ও স্বামী দয়ানন্দ দ্বারা প্রভাবিত। মূলতঃ জঙ্গী জাতীয়তাবাদের প্রচারক হলেও গান্ধীপূর্বভারতে জাতীয়তাবাদ প্রকাশ ও বিকাশে তার সার্থক ভূমিকা অবিস্মরণীয়। লোকমান্য তিলকের বিরাট ব্যক্তিত্ব, গভীর পান্ডিত্য, অসামান্য রাজনৈতিক প্রতিভা, সর্বভারতীয় নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা ইংরাজ শাসকের ভয়ের কারণ ছিল।
১৯১৮ খ্রিঃ ইংলন্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ বলেছিলেন, “I fear only one man in India he is Mr. Tailk.” স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মিলিতভাবে মারাঠী ও কেশরী নামে দুখানি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। একটি ইংরাজি সংবাদপত্রের সম্পাদক রূপেও তিনি কাজ করেন। লোকমান্য তিলকের জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ এত তীব্র ছিল যে, ভীত সন্ত্রস্ত ইংরাজ সরকার তাঁকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে একাধিকবার অভিযুক্ত করে। ১৮৮২ খ্রিঃ কোলাপুর মানহানি এবং ১৮৯৭ – ৯৮ খ্রিঃ রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাঁকে কারাদন্ড ভোগ করতে হয়।
১৯০৮ – ১৪ খ্রিঃ পর্যন্ত রাজদ্রোহাত্মক অপরাধের অভিযোগে মান্দালয় জেলে অন্তরীণ থাকতে হয়। এইভাবে ক্রমাগত বন্দি থাকার ফলে বন্দিজীবনই তার কাছে হয়ে উঠেছিল পরিচিত গার্হস্থ্যজীবন। ১৯১৪ খ্রিঃ কারামুক্তির পর তিলক ১৯১৮ খ্রিঃ বিলাত যান। ১৯১৬ খ্রিঃলক্ষ্ণৌ চুক্তির মাধ্যমে তিলক কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের আন্দোলনগত ঐক্যস্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন। জাতীয়তাবাদী তিলকের সঙ্গে শ্যামজী কৃষ্ণবর্মা, বিপ্লবী বীর বিনায়ক দামোদর সাভারকর প্রমুখের সঙ্গেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সাভারকর প্রতিষ্ঠিত মিত্রমেলা ও অভিনব ভারত নামে গুপ্ত সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গেও তাব সম্পর্ক ছিল।
লোকমান্য তিলকের প্রেরণাতেই ১৯০৩ খ্রিঃ নেপালে বোমার কারখানা তৈরি হয়েছিল। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিলক ছিলেন একাধারে অভিজ্ঞ রাজনীতিক, সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত, বিখ্যাত গণিতজ্ঞ, আইনজ্ঞ। মারাঠি গদ্যের অন্যতম স্রষ্টা ও অনন্যসাধারণ নেতা। উগ্র জাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক বলে স্বীকৃতিলাভ করলেও তিনি বিপ্লবের কোনপ্রকার বৈজ্ঞানিক মতবাদ ; পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেন নি। তাছাড়া স্বয়ং বিপ্লবী নায়ক বলেও পরিচিত হতে পারেন নি।
কিন্তু তার স্বদেশপ্রেম ও অসাধারণ বাগ্মিতা বহু দেশপ্রেমিক নেতা ও কর্মীকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিলক ছিলেন সর্বক্ষেত্রেই বাস্তববাদী। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে চলার বাস্তবতা তিনি বারবার স্বীকার করেছেন। রাজনীতিক চিন্তা ও চেতনায় মহাত্মার সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও অসহযোগ আন্দোলনের পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন জানান। লন্ডনে হোমরুল লিগ স্থাপন (১৯১৬ খ্রিঃ) এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ব্রিটিশ শ্রমিকদলের পরিচিতি ঘটানো (১৯১৯ খ্রিঃ) তিলকের অবিনশ্বর কীর্তি।
বাল গঙ্গাধর তিলক এর রচনা: Written by Bal Gangadhar Tilak
মারাঠি ও কেশরী পত্রিকায় তিলকের বহু সুচিন্তিত প্রবন্ধ ও সময়ানুসারী সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। এই সকল রচনা তার বিচক্ষণতা স্বদেশপ্রেম ও বাগ্মিতাকে স্মরণীয় করে রেখেছে। তিলকের আর্য সভ্যতার উৎপত্তি ও তাৎপর্য সম্পর্কিত একটি পান্ডিত্যপূর্ণ মূল্যবান রচনা। তার লেখা গীতা রহস্যও The Arctic Home in the Vedas গ্রন্থ দুখানি সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
বাল গঙ্গাধর তিলক এর মৃত্যু: Bal Gangadhar Tilak’s Death
১৯২০ খ্রিঃ ১ লা আগস্ট লোকমান্য তিলকের জীবনাবসান ঘটে।