বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী | (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শৈশব জীবন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিবাহ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মজীবন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যে জীবন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস ইত্যাদি) Bankim Chandra Chattopadhyay Biography In Bengali
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একটি তারা। তিনি তার রচনাশৈলী দিয়ে যেমন একদিকে বাংলা সাহিত্যকে নতুন উচ্চতাতে নিয়ে গেছেন ঠিক তেমনি তিনি বন্দে মাতরমের মতো মহান ও অমর রচনা দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এক নতুন জীবন দিয়েছিলেন। আজ তার জন্মদিনের বিশেষ উপলক্ষে আমরা আপনাদের সামনে তার জীবন কাহিনীটি তুলে ধরতে চলেছি।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জীবনী
নাম | বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
উপাধি | সাহিত্য সম্রাট |
ছদ্মনাম | কমলাকান্ত |
কে ছিলেন | বাঙালি ঔপন্যাসিক |
পিতার নাম | যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় |
মাতার নাম | দূর্গাদেবী |
জন্ম তারিখ | ২৬ শে জুন ১৮৩৮ (১৩ আষাঢ় ১২৪৫ বঙ্গাব্দ) |
জন্ম স্থান | উত্তর ২৪ পরগনা জেলা |
শিক্ষা | গ্র্যাজুয়েট |
বিদ্যালয় | মেদিনীপুর ইংরেজি স্কুল |
বিশ্ববিদ্যালয় | হুগলী মহসিন কলজে, প্রেসিডেন্সি কলেজে |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধর্ম | হিন্দু |
জাতি | বাঙালি |
মৃত্যু | ৮-ই এপ্রিল, ১৮৯৪ (২৬ শে চৈত্র ১৩০০ বঙ্গাব্দ) |
Google News এ আমাদের ফলো করুন
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর শৈশব জীবন
২৬ শে জুন, ১৮৩৮ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের কাছে কাঁঠালপাড়া নামেরে এক গ্রামে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। তিনি তার পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবীর তৃতীয় এবং সবথেকে ছোটো ছেলে ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুই দাদার নাম হলো শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর শিক্ষা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শৈশব বেলা থেকেই পড়াশোনার দিকথেকে প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। তিনি মাত্র একদিনের মধ্যেই বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা কাঁঠালপাড়া গ্রামে শুরু হলেও তা সেখানে সম্পূর্ণ হয়নি। তিনি কাঁঠালপাড়া গ্রামে আট দশ মাস পড়াশোনা করার পর বাবা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে মেদিনীপুরে চলে আসেন এবং মেদিনীপুরেই তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এখানে তিনি ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
মেদিনীপুরে ৫ বছর ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করার পর তিনি কাঁঠালপাড়ায় ফিরে আসেন। এখানে তিনি শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বাংলা ও সংস্কৃতের পাঠ নিতে শুরু করে দেন। তার পর ১৮৪৯ সালে হুগলী মহসিন কলজে ভর্তি হন এবং সেখানে ৮ বছরে জন্য পড়াশোনা জারি রাখেন। এর পর ১৮৫৬ সালে তিনি আইন পড়ার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৮৫৯ সালে বিএ পরীক্ষা দেন এবং কলেজের প্রথম দুজন গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর বিবাহ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১১ বছর বয়সে নারায়নপুর গ্রামের মােহিনীদেবী নামক এক পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকার সাথে তার প্রথম বিয়ে করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত ১৮৫৯ সালে তার প্রথম স্ত্রী মারা যান। এর পর ১৮৬০ সালে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারে কন্যা রাজলক্ষী দেবীর সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কর্মজীবন
পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি যশোর শহরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের পদে চাকরি পান। যশোরে কয়েক বছর কাজ করার পর ১৮৬০ সালে তিনি মেদিনীপুরের নেগুয়ায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে যোগদান করেন। তার পর খুলনাতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে যোগদান করেন। এই ভাবেই তিনি বেশকিছু এলাকার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে কাজ করেন। যেমন –
- বারুইপুর
- মুর্শিদাবাদ
- আলিপুর
- জাজপুর (কটক)
- হাওড়া
- ঝিনাইদহ
- Etc.
এর মাঝে তিনি ১৮৭১ সালে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের পদ থেকে প্রমোশন পেয়ে তিনি মুর্শিদাবাদের কালেক্টর হয়ে ওঠেন।
সব শেষে ১৪ ই সেপ্টেম্বর ১৮৯১ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চাকরি জীবন থেকে অবসরগ্রহণ করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর পুরস্কার
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর ও কালেক্টরের পদের অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর বাংলা সাহিত্যে অবদান
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সাহিত্য সম্রাট বলার পেছনে মূল কারন হলো তার উপন্যাস, প্রবন্ধ গ্রন্থ ও বিবিধ। তার লেখা প্রথম বাংলা উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হয়ে ওঠে। তিনি এই উপন্যাস মাত্র চব্বিশ থেকে ছাব্বিশ বছর বয়সে লিখে ছিলেন। তিনি মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন যার মধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাসও ছিলো। তার রচনাশৈলী এতটাই ভালো ছিল যে বর্তমানে তার স্মরণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বঙ্কিম পুরস্কার নামক একটি পুরস্কার বাংলা কথা সাহিত্যিকদের দিয়ে থাকে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস:-
- Rajmohans Wife – (১৮৬৪)
- দুর্গেশনন্দিনী – (১৮৬৫)
- কপালকুণ্ডলা – (১৮৬৬)
- মৃণালিনী – (১৮৬৯)
- বিষবৃক্ষ – (১৮৭৩)
- ইন্দিরা – (১৮৭৩)
- যুগলাঙ্গুরীয় – (১৮৭৪)
- চন্দ্রশেখর – (১৮৭৫)
- রাধারাণী – (১৮৮৬)
- রজনী – (১৮৭৭)
- কৃষ্ণকান্তের উইল – (১৮৭৮)
- রাজসিংহ – (১৮৮২)
- আনন্দমঠ – (১৮৮২)
- দেবী চৌধুরাণী – (১৮৮৪)
- সীতারাম – (১৮৮৭)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ:-
- লোকরহস্য (১৮৭৪)
- বিজ্ঞান রহস্য (১৮৭৫)
- কমলাকান্তের দপ্তর (১৮৭৫)
- বিবিধ সমালোচনা (১৮৭৬)
- সাম্য (১৮৭৯)
- কৃষ্ণচরিত্র (১৮৮৬)
- বিবিধ প্রবন্ধ (১ম খন্ড-১৮৮৭, ২য় খন্ড-১৮৯২)
- ধর্মতত্ত্ব অনুশীলন (১৮৮৮)
- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (১৯০২)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর মৃত্যু
৮ ই এপ্রিল, ১৮৯৪ (২৬ শে চৈত্র ১৩০০ বঙ্গাব্দ) সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান। তবে তার রচনাশৈলীর মাধ্যমে তিনি আজও আমাদের মধ্যে অমর হয়ে রয়েছেন।
Frequently Asked Questions FAQ :
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কয়টি উপন্যাস লিখেছেন?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন যার মধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাসও ছিলো।
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাসের নাম কি?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম উপন্যাসের নাম হলো Rajmohans Wife.
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ছদ্মনাম কি?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর ছদ্মনাম হলো কমলাকান্ত।
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দ্বিতীয় উপন্যাস কোনটি?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দ্বিতীয় উপন্যাসটির নাম হলো দুর্গেশনন্দিনী।
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কোন রোগে মারা যান?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বহুমূত্র (Diabetes) রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর রচনা কি নামে পরিচিত?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর রচনা ‘বঙ্কিমী শৈলী’ বা ‘বঙ্কিমী রীতি’ নামে পরিচিত।
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর পিতা কিসের চাকরি করতেন?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর পিতা ডেপুটি কালেক্টরের চাকরি করতেন।
Q. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কিসের চাকরি করতেন?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ডেপুটি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর ও কালেক্টরের চাকরি করতেন।