বারট্রান্ড রাসেল জীবনী: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Bertrand Russell Biography in Bengali. আপনারা যারা বারট্রান্ড রাসেল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বারট্রান্ড রাসেল এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
বারট্রান্ড রাসেল কে ছিলেন? Who is Bertrand Russell?
বার্ট্রান্ড আর্থার উইলিয়াম রাসেল, ৩য় আর্ল রাসেল (১৮ মে ১৮৭২ – ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০) ছিলেন একজন ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক যদিও তিনি ইংল্যান্ডেই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন, তার জন্ম হয়েছিল ওয়েলস এ, এবং সেখানেই তিনি ৯৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
বারট্রান্ড রাসেল জীবনী – Bertrand Russell Biography in Bengali
নাম | বারট্রান্ড রাসেল |
জন্ম | 18 মে 1872 |
পিতা | জন রাসেল, ভিসকাউন্ট অ্যাম্বারলি |
মাতা | ক্যাথারিন লুইসা রাসেল, ভিসকাউন্টেস অ্যাম্বারলি |
জন্মস্থান | ট্রেলেচ, মনমাউথশায়ার, যুক্তরাজ্য |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
পেশা | দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবেত্তা, সমাজকর্মী, অহিংসাবাদী, এবং সমাজ সমালোচক |
মৃত্যু | 2 ফেব্রুয়ারি 1970 (বয়স 97) |
বারট্রান্ড রাসেল এর জন্ম: Bertrand Russell’s Birthday
বারট্রান্ড রাসেল 18 মে 1872 জন্মগ্রহণ করেন।
বারট্রান্ড রাসেল এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Bertrand Russell’s Parents And Birth Place
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ দার্শনিক ও মানবকল্যাণব্রতী মনীষী বারট্র্যান্ড রাসেলের নাম শিক্ষাবিদ, রাজনীতিজ্ঞ এবং বিশ্বশান্তির দূত হিসেবেও বিখ্যাত। সমসাময়িক সময়ে তাঁকে বলা হত ব্রিটেনের সব চাইতে জ্ঞানী ব্যক্তি। নিজেকে তিনি বস্তুবাদী ও মুক্ত চিন্তাবিদ বলে পরিচয় দিতেন।
বারট্র্যান্ডের জন্ম হয়েছিল ১৮৭২ খ্রিঃ ১৮ মে তারিখে ইংলন্ডের ট্রেলক নামক স্থানে। তাঁর পিতা ছিলেন ভাইকাউন্ট অ্যাম্বারলি এবং মা লেডি কেন্ট অ্যাম্বারলি। শিশু বয়সেই বাবামাকে হারিয়েছিলেন বলে বারট্র্যান্ড মানুষ হয়েছিলেন পিতামহও পিতামহীর স্নেহও কঠোর শাসনের মধ্যে। ফলে অতি অল্পবয়স থেকেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন নিঃসঙ্গ ও লাজুক স্বভাবের।
বারট্রান্ড রাসেল এর শিক্ষাজীবন: Bertrand Russell’s Educational Life
লেখাপড়া আরম্ভ হয়েছিল বাড়িতেই। যে মানুষ পরবর্তী জীবনে অঙ্কবিদ বলে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, প্রিন্সিপিয়া ম্যাথিমেটিকা নামে অঙ্কশাস্ত্রের বিশাল গ্রন্থ রচনা করেছিলেন, বাল্যকালে তার কাছে গণিত ও অ্যালজেব্রা ছিল বিভীষিকার মত। অবশ্য এগারো বছর বয়স নাগাদ এই ভীতি দূর হয়েছিল এবং তার প্রিয় বিষয় হয়ে উঠেছিল গণিত, ইতিহাস, সাহিত্য বিশেষ করে কবিতা।
তার দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময়টাই কাটত পিতামহ লৰ্ড জন রাসেলের সুবিশাল পাঠাগারে ৷ তাঁর শিক্ষা ও জ্ঞানের গোড়াপত্তন হয়েছিল এখানেই। অতিরিক্ত পাঠাভ্যাসের জন্য ষোল বছর বয়সেই চোখের নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ফলে লেখাপড়া একরকম বন্ধ হয়ে গেল। এই সময়েই তিনি কবিতা মুখস্থ করার অভ্যাস তৈরি করলেন। জন স্টুয়ার্ট মিলের লেখা তাঁকে বেশি প্রভাবিত করেছিল।
তিনিও বিশ্বাস করতেন যে অভিজ্ঞতাই সমস্ত জ্ঞানের উৎস। ট্রিনিটি কলেজে পড়া শেষ করে বারট্রান্ড কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮৯৪ খ্রিঃ কেমব্রিজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কেমব্রিজে ভর্তি হবার আগেই তিনি ল্যাটিন, গ্রিক, জার্মান, ফরাসি ও ইতালিয়ান ভাষা বেশ ভালভাবেই শিখে নিয়েছিলেন। কেমব্রিজে তিনি বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন ম্যাকগার্ট, মুর প্রভৃতিকে। পরবর্তিকালে এই দুজনই দার্শনিক হিসেবে পরিচিত হন।
বারট্র্যান্ড শৈশবে সান্নিধ্য পেয়েছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া, কবি টেনিসন এবং ব্রাউনিং – এর। উত্তর জীবনেও এসেছিলেন লেনিন সহ অনেক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে। দার্শনিক বন্ধু মুর এবং ম্যাকটেগার্ট – এর আলোচনা বারট্র্যান্ডকে দর্শন বিদ্যায় আগ্রহী করে তোলে।
বারট্রান্ড রাসেল এর বিবাহ জীবন ও পরিবার: Bertrand Russell’s Marriage Life And Family
১৮৯৪ খ্রিঃ স্নাতক হবার পর তিনি দর্শনতত্ত্ব নিয়ে পুনরায় পড়া শুরু করেন। তিনি কিছুকাল জার্মানীতে রাজনীতিও অধ্যয়ন করেছিলেন। পরবর্তিকালে দর্শন রাজনীতি এবং শিক্ষা বিষয়ে জনসাধারণের উপযোগী বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। জনসংযোগ জনজীবনে বারট্র্যান্ডের আগ্রহ ছিল। ১৮৯৪ খ্রিঃ প্যারিসের ব্রিটিশ দূতাবাসে চাকরি নিলেন। সেই বছরই ডিসেম্বরে বিয়ে করেন স্বনির্বাচিত পাত্রী আলিসা পিয়ারসাল স্মিথকে। বিয়ের পর হনিমুনে গেলেন জার্মানিতে। সেখানে জার্মান সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে মেতে গেলেন। ১৮৯৬ খ্রিঃ দেশে ফিরে লিখলেন জার্মান গণতন্ত্র নিয়ে একটি মূল্যবান বই General Social Democrac.
বারট্রান্ড রাসেল এর কর্ম জীবন: Bertrand Russell’s Work Life
বহুমুখী চিন্তা ভাবনার প্রতিভা নিয়ে জন্মালেও ৩৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ব্যাপৃত ছিলেন মূলতঃ অঙ্কের মূলসূত্রগুলো নিয়ে। তারই ফল হল Principia Mathematica নামের বিখ্যাত গ্রন্থ। রাসেল নিজেই বলেছেন এই গ্রন্থ রচনার কাজে তাকে সাত বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ১৯০৭ খ্রিঃ বারট্র্যান্ড ন্যাশনাল ইউনিয়ান অব উইমেনস সাফ্রেজ সোসাইটির হয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ৭ হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন।
১৯১০ খ্রিঃ লিবারেল পার্টির প্রার্থী হয়ে পরে আবার হাউস অব কমনস – এর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু তার নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোটাররা যখন জানতে পারল যে তিনি নাস্তিক এবং গীর্জায় যান না, তখন কেউই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না। বারট্র্যান্ড পরবর্তী জীবনে হয়ে উঠেছিলেন গোঁড়া সোস্যালিস্ট। অবশ্য নিজের রাজনৈতিক ও দার্শনিক মতবাদের জন্য পরে তাঁকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিল। ব্যক্তি জীবনে বিবাহ সম্পর্কেও বারট্র্যান্ডের নিজস্ব মতবাদ ছিল।
তিনি মুক্ত ভালবাসা তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। নিজেও বিয়ে করেছিলেন চারবার। ১৮৯৪ খ্রি: আলিসাকে, ১৯২১ খ্রিঃ জেরা ব্লাককে, ১৯৩৬ খ্রিঃ পাট্রিশিয়া স্পেন্সকে এবং ৮০ বছর বয়সে ১৯৪২ খ্রিঃ এডিথ ফিঞ্চকে। প্রথমা স্ত্রী আলিসার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল ১৯১১ খ্রিঃ। এর ফলে তাঁকে নিজের সমাজে অপ্রিয় হতে হয়েছিল। ইতিমধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বাঁধলে তিনি যুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করেন। ফলে তাঁকে কেমব্রিজের চাকরি খোয়াতে হয়। জেলেও যেতে হয়।
নিজের সমাজে মেলামেশার পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেলে তার সম্পর্ক গড়ে উঠল চার্লস ট্রেভেলিয়ন, হারবারট স্যামুয়েল, বার্নাড শ প্রভৃতির সঙ্গে। এইকালে তিনি যাদের সান্নিধ্যে ও সাহচর্যে এসেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রচলিত ধ্যানধারণা ও রীতিনীতির বিরোধী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বারট্র্যান্ডের চিন্তার ক্ষেত্রে ও জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তিনি সবকিছু ছেড়ে যুদ্ধবিরোধী প্রচার ও আন্দোলন শুরু করলেন।
সৈন্যদলে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিরুদ্ধে অচিরেই গঠিত হল কমিটি অব দ্য নো – কনসক্রিপসন ফেলোশিপ। বারট্র্যান্ড হয়ে উঠলেন এই সংস্থার প্রেরণার প্রধান উৎস। লেবার রিডার নামের পত্রিকায় লিখতে শুরু করলেন যুদ্ধবিরোধী লেখা। ফলে খোয়াতে হল চাকরি, হল জেল – জরিমানা, তার লাইব্রেরিটিও সরকার বাজেয়াপ্ত করল। বারট্র্যান্ড এতে এতটুকু দমলেন না। শান্তির স্বার্থে যুদ্ধ বিরোধী প্রচার চালিয়ে যেতে লাগলেন।
কারাগারে থাকার সময়েই তিনি রচনা করলেন Introduction to Math ematical Philosophy এবং Analysis of Matter এর খসড়া ! দ্বিতীয় বিবাহের পরে বারট্র্যান্ড শিক্ষা প্রসঙ্গ নিয়ে মেতে উঠলেন এবং ১৯২৭ খ্রিঃ তিনি স্ত্রী জেরার সঙ্গে গড়ে তুললেন একটি প্রগতিশীল বিদ্যায়তন। স্কুলের নাম হল বেকন হিল স্কুল। শিশুদের আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের প্রতি ব্যবহার যেন প্রতিবন্ধক না হয় তাই ছিল এই বিদ্যায়তনের লক্ষ্য। ছাত্রদের ব্যবহারে যাতে বিশৃঙ্খলা দেখানা দেয় এবং তারা অবদমিত মনোভাবের শিকার হয়ে না পড়েসে বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যস্ত সচেতন।
মূলতঃ অর্থের অভাবে এবং পরে ডোরার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে এই স্কুল উঠে যায় ৷ তৃতীয় বিয়ের পর লেখাই হয়ে উঠেছিল বারট্র্যান্ডের জীবিকা। এই সময়ই তিনি জগতের বিশিষ্ট চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম বলে স্বীকৃতি লাভ করেন। বিজ্ঞান ও দর্শন যে একই ধারায় কাজ করে চলে তাঁর লেখায় তিনি তা বারবার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার একবছর আগে বারট্র্যান্ড স্ত্রী ও তিনটি সন্তান নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। সেখানে তিনি ছবছর বাস করেন। ও আমেরিকা বাসের শেষ দিকে স্ত্রী ও তিনটে সন্তান নিয়ে তাঁকে খুবই আর্থিক অনটনে পড়তে হয়েছিল। নিরলস কর্মী বারট্র্যান্ড সত্তর বছর বয়সেও জীবনের এই অনিশ্চিত সময়েই রচনা করেন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ A History of Western Philosophy দর্শন শাস্ত্রের ওপরে এমন অসাধারণ গ্রন্থ এর আগে পর্যন্ত রচিত হয়নি।
বারট্রান্ড রাসেল এর পুরস্কার ও সম্মান: Bertrand Russell’s Awards And Honors
১৯৪৪ খ্রিঃ কেমব্রিজের সাদর আহ্বানে তিনি আবার পূর্বতন কর্মস্থলে ফিরে আসেন। এবারে আর অনাদর নয়, স্বদেশে পেলেন তিনি বীরের সম্বর্ধনা। দিনে দিনে ইংলন্ডে তার সামাজিক প্রতিষ্ঠাও বেড়ে চলল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচাইতে ঐতিহ্যময় উপাধি অর্ডার অব মেরিট – এ ভূষিত হলেন ১৪৪৯ খ্রিঃ। ১৯৫০ খ্রিঃ বারট্র্যান্ড নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল কমিটি তার জীবনব্যাপী কীর্তির সম্পর্কে লিখল ইন রিকগনিশন অব হিজভ্যরিড এন্ড সিগনিফিকেন্ট রাইটিংস, ইন হুইচ হিচ্যাম্পিয়নস হিউম্যানিটেরিয়ান আইডিআলস এন্ড ফ্রিডম অব থট।
আশ্চর্য প্রতিভাধর বারট্র্যান্ড আশি বছর বয়সে লিখতে শুরু করলেন গল্প। এ সম্পর্কে তিনি নিজে মন্তব্য করেছেন ‘ দর্শনশাস্ত্রের জন্য আমার জীবনের আশিটি বছর আমি উৎসর্গ করেছি। পরবর্তী আশি বছর আমি কল্পসাহিত্যের এক নতুন শাখায় আত্মনিয়োগ করতে চাই। ‘ বারট্র্যান্ডের প্রথম গল্প সংকলন স্যাটার্ন ইন দ্য সাবার্বস প্রকাশের পর সাহিত্যের এই বিভাগে আর অগ্রসর হবার সুযোগ পেলেন না।
হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কারের ফলে মানবজাতি এক চরম সঙ্কটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছিল। মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে পৃথিবীর সকল শান্তিকামী মানুষের হয়ে বারট্র্যান্ড ঝাপিয়ে পড়লেন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনে। ১৯৫৮ খ্রিঃ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অভিযান শুরু হল, বারট্র্যান্ড হলেন তার প্রথম সভাপতি।
বারট্রান্ড রাসেল এর মৃত্যু: Bertrand Russell’s Death
জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেও তিনি বিশ্বশান্তির প্রশ্নে অক্লান্তভাবে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ১৯৭০ খ্রিঃ ২ ফেব্রুয়ারী বারট্র্যান্ডের মৃত্যু হয়।