বসু বিজ্ঞান মন্দির – Bose Institute: ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতির উদ্দেশ্যে যে সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কলকাতার বিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ বা ‘বোস ইনস্টিটিউট’।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য:
জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর বিভিন্ন গবেষণার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিখ্যাত হন। কিন্তু গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর একটি উন্নত গবেষণাগার প্রয়োজন ছিল।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’প্রতিষ্ঠা উদ্দেশ্য সম্পর্কে জগদীশচন্দ্র বসু বলেন – এটির উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও জ্ঞানের প্রসার ঘটানো এবং তিনি চাইতেন বসু বিজ্ঞান মন্দিরের আবিষ্কারের সুফল যেন সার্বজনীন হয়।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’প্রতিষ্ঠার পটভূমি:
ইংল্যান্ড থেকে উচ্চশিক্ষা লাভের পর দেশে প্রত্যাবর্তন করে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রুপে যোগদান করেন এবং সেখানেই বিজ্ঞান গবেষণায় মগ্ন থাকেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞান চর্চার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বিজ্ঞান চর্চার বিষয় নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং ইংল্যান্ডের রয়েল সোসাইটির অনুকরণে ভারতে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগার ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং এর জন্য তিনি তাঁর বাড়ি সংলগ্ন জমি ক্রয় করেছিলেন।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’প্রতিষ্ঠার:
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণের পর বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণার জন্য 1917 খ্রিস্টাব্দে 30 শে নভেম্বর ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠার অর্থব্যয়:
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত ভ্রমণের পরে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু উন্নত গবেষণার জন্য গবেষণাগার তৈরির প্রস্তাব সরকারের কাছে দিলেও তা গড়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত তিনি মুন্সিগঞ্জের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের বৃহদাংশ ও সংগৃহীত 11 লক্ষ টাকার অনুদানের সাহায্যে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বমানের বিজ্ঞান চর্চার পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ব্যয় করেন।
বিজ্ঞানচর্চায় বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান:
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু 1937 খ্রিস্টাব্দে থেকে আমৃত্যুকাল বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন। ভারতের আধুনিক বিজ্ঞানচর্চাযর উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
- গবেষণার ক্ষেত্র: বসু বিজ্ঞান মন্দিরে প্রকৃতিবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এখানে উদ্ভিদবিদ্যার সঙ্গে পদার্থবিদ্যার গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স ও পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি চর্চা ও গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়।
- উন্নত গবেষণা: ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’এ জগদীশচন্দ্র বসু বিশ্বমানের উন্নত গবেষণার ব্যবস্থা করেন এবং এটি বিশ্বের প্রথম সারির গবেষণা কেন্দ্র গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল।
- ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার: বসু বিজ্ঞান মন্দিরে জগদীশচন্দ্র বসু দীর্ঘ গবেষণার পর ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কার করেন এবং এর সাহায্যে তিনি প্রাণীদের মতো উদ্ভিদের প্রাণ ও অনুভূতি শক্তি আছে, তা প্রমাণ করেন।
- আন্তর্জাতিক খ্যাতি: ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষনা ও বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিল। এখানকার গবেষকগণ পরবর্তীকালে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞান চর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছেন।
‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ভারতে বিজ্ঞান গবেষণার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল মাইলফলক যা বর্তমানে ‘বোস ইনস্টিটিউট’ নামে পরিচিত। যার প্রধান প্রাঙ্গণটি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোডে জগদীশচন্দ্র বসুর বাসভবনে এবং দ্বিতীয় প্রাঙ্গনটি কাঁকুড়গাছিতে এবং তৃতীয় প্রাঙ্গনটি সল্টলেকে অবস্থিত।