পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির কারণ: যে বয়ন শিল্পে কার্পাস হতে সুতা এবং সুতা হতে বস্ত্র তৈরি করা হয়,তাকে কার্পাস বয়ন শিল্প বলে। জামা,কাপড়,তোয়ালে,বিছানার চাদর,দরজা-জানালার পর্দা অসংখ্য জিনিস কার্পাস দিয়ে তৈরি হয়। তাই সবগুলো বয়নশিল্পের মধ্যে কার্পাস বয়ন শিল্প প্রধান।
তুলা আঁশজাতীয় নরম পদার্থবিশেষ যা সংশ্লিষ্ট তুলা গাছের বীজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। তুলা দেখতে সাদা, লম্বা, পাতলা ও চুলের ন্যায় মিহি। তুলা গাছ থেকে সংগ্রহ করে সুতা, বালিশ, চিকিৎসা কর্মে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা হয়। তৈরীকৃত সুতা দিয়ে কাপড় প্রস্তুত করে মানুষের পোষাকসহ অনেক ধরনের জিনিসপত্রে ব্যবহার করা হয়। প্রচণ্ড গরমে সুতি কাপড় পরিধানে বেশ আরাম অনুভূত হয়। খুবই হাল্কা বিধায় খুব সহজেই তুলা অনেক দূরে বাতাসের সাহায্যে স্বাধীনভাবে উড়ে যায়। এর ফলে প্রাকৃতিকভাবেই নিজের বংশবিস্তারে সক্ষমতা রয়েছে এটির। অনেক পূর্বেই মানুষ তুলার নরম, তুলতুলে অবস্থার সাথে পরিচিত হয়েছে এবং বস্ত্রখাতে একে সম্পৃক্ত করেছে। খুব দ্রুত বর্ধনশীল গাছ হিসেবে তুলা গাছের সুনাম রয়েছে।
চাষাবাদকৃত তুলাগাছ থেকে পেকে যাবার পূর্বেই বীজ সংগ্রহ করতে হয়। সংগৃহীত তুলার সাহায্যে সুতা প্রস্তুত করলেও তা তেমন টেকসই নয়; কিন্তু কয়েকটি সুতা একত্রিত করলে তা খুবই শক্ত ও মজবুত আকৃতি ধারণ করে। বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়োজনে ঐ সুতায় বিভিন্ন ধরনের রঙ দেয়া হয়।
তুলার নানা জাতের গাছ রয়েছে। যথা: শিমুল গাছ, কারপাস গাছ, ফুটি কারপাস।
ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্র গুলি সবচেয়ে বেশি গড়ে উঠেছে পশ্চিম ভারতে অর্থাৎ মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, পুনে, নাগপুর অঞ্চলে; গুজরাটের আমেদাবাদ, সুরত, ভাদোদরা এবং মধ্যপ্রদেশের ভূপাল, ইন্দোর, গোয়ালিয়র অঞ্চলে। এই পশ্চিম ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির কারণ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কাঁচামালের সহজ লভ্যতা – কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল তুলো। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে উৎপাদিত তুলো এই শিল্পাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুম্বাই, কান্ডালা প্রভৃতি বন্দর মারফৎ বিদেশ থেকে অতি সহজেই উন্নত মানের দীর্ঘ আঁশ যুক্ত তুলো আমদানি করা যায়।
শক্তি সম্পদের প্রাচুর্য – মুম্বাই ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে ভিরা, ভিবপুর, খোপালি ও গুজরাটের উকাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ধুবরানের তাপবিদ্যুৎ ও কাকড়া পাড়ের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের বিকাশে সাহায্য করেছে।
অনুকূল জলবায়ু – মুম্বাই ও আমেদাবাদ উভয় অঞ্চল সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানকার আর্দ্র প্রকৃতির জলবায়ু যা বস্ত্র বয়ন শিল্পের পক্ষে একান্ত উপযোগী।
বন্দরের অবস্থান – এই অঞ্চলের নিকটবর্তী মুম্বাই, কান্ডালা, সুরাট, পো র বন্দর প্রভৃতির মাধ্যমে বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি যেমন আমদানি করা যায় তেমনি শিল্প জাত দ্রব্য বিদেশে পাঠানোর সুবিধা রয়েছে।
মূলধন বিনিয়োগ – নিকটবর্তী অঞ্চলের পার্সি, ভাটিয়া, গুজরাটি শিল্পপতি গণের মূলধন ব্যবসায়িক দক্ষ তা ও পরিচালন ক্ষমতা এই শিল্পের উন্নতিতে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
সুলভ শ্রমিক – মহারাষ্ট্র ও গুজরাট ভারতের অন্যতম ঘন বসতি পূর্ণ রাজ্য হওয়ায় শিল্পের প্রয়োজনীয় সুলভ দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিক এর অভাব হয় না।
বাজার – ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ, তাই এই শিল্পাঞ্চলের উৎপাদিত দ্রব্যের যেমন অভ্যন্তরিন চাহিদা রয়েছে তেমনি এই অঞ্চলে উৎপাদিত বস্ত্র উন্নত মানের হওয়ায় বিশ্ব ব্যাপী চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।