পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের একদেশীভবনের কারন কি?: পাট শিল্প হলো ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাচীন শিল্প। সমগ্র ভারতের মোট পাটকলের 78% (76 টির মধ্যে 59 টি) গড়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিকটবর্তী হুগলি নদীর উভয় তীরে। প্রধানত হুগলি নদীর ডান তীরে উত্তরের কল্যাণী থেকে দক্ষিনে বাঁশবেড়িয়া এবং বাম তীরে উত্তরে বজ বজ থেকে দক্ষিণে উলুবেড়িয়া পর্যন্ত স্থানে পাট শিল্পের একদেশীভবন করেছে। এই অঞ্চলের হালিশহর, নৈহাটি, টিটাগর, ভাটপাড়া, বজবজ, শ্যামনগর, কাঁকিনাড়া, আগরপাড়া, ভদ্রেশ্বর, বৈদ্যবাটি, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, বালি, বেলুড়, উলুবেরিয়া, রিষড়া ইত্যাদি স্থানে পাট শিল্পের একদেশীভবন ঘটেছে। এর কারণগুলি হল নিম্নরূপ-
1)কাঁচামালের সহজলভ্যতা: পাট শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো কাঁচা পাট। পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রচুর পাট উৎপন্ন হয়। এছাড়া জলপথ ও স্থলপথে আসাম ও বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর পরিমাণে পাট এরাজ্যে আছে। ফলে এই অঞ্চলে পাট শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচা পাটের অভাব হয় না।
2)অনুকূল জলবায়ু: নদী তীরবর্তী ও সমুদ্র নিকটবর্তী অবস্থানের জন্য সারা বছর ব্যাপী আর্দ্র সমভাবাপন্ন জলবায়ু হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্প গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
3)সুলভ জলের যোগান: পাট শিল্প গড়ে তোলার জন্য যে প্রচুর পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয় তা এখানকার হুগলি নদী থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
4)কলকাতা বন্দরের নৈকট্য: হুগলি শিল্পাঞ্চলের অনতিদূরে কলকাতা বন্দর অবস্থান করার কারণে একদিকে যেমন পাট শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানি করা সহজ হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি উৎপাদিত পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিরও সুবিধা হয়েছে।
5)উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা: কলকাতা বন্দর, হুগলি নদী ও তার উপনদীগুলির অভ্যন্তরীণ জলপথ; পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেল পথ, 2, 6 ও 31 নম্বর জাতীয় সড়ক পথ এবং একাধিক রাজ্য সড়ক পথের মাধ্যমে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের উন্নতিকে ত্বরান্বিত করেছে।
6)শক্তি সম্পদের প্রাচুর্য: আসানসোল, রাণীগঞ্জ ও ঝড়িয়া অঞ্চলের কয়লার সাহায্যে ব্যান্ডেল ও কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত তাপবিদ্যুৎ এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের জলবিদ্যুৎ এই অঞ্চলের পাট শিল্পের প্রয়োজনীয় শক্তি সম্পদের চাহিদা পূরণ করে।
7)দক্ষ শ্রমিকের প্রাচুর্য্য: পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, ছত্রিশগড় প্রভৃতি ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্যগুলি থেকে হুগলি শিল্পাঞ্চলের পাট শিল্পের প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়।
8)মূলধনের যোগান: প্রাথমিক অবস্থায় ইংরেজরা এখানকার পাট শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন বিনিয়োগ করেছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশীয় শিল্পপতি, ব্যাংক, বীমা সংস্থা ও অর্থলগ্নি সংস্থা এখানকার পাট শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান দেয়।
9)পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা: দেশে ও বিদেশে প্যাকিং এর কাজে বা মোড়ক দ্রব্য হিসাবে এখানকার পাটজাত দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা আছে। দেশে-বিদেশে পাটজাত দ্রব্যের এই ব্যাপক চাহিদা হুগলি নদীর উভয় তীরে পাট শিল্পের উন্নতিতে ত্বরান্বিত করেছে।