ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ও অবস্থান: ভারতে সাতটি মৃত্তিকা বণ্টন রয়েছে। সেগুলি হল পলি মৃত্তিকা, কৃষ্ণ মৃত্তিকা, লোহিত মৃত্তিকা , ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বা শুষ্ক মাটি এবং বন ও পার্বত্য মৃত্তিকা, জলাভূমির মৃত্তিকা। এই মৃত্তিকা গঠিত হয় নদী দ্বারা আনা পলি দ্বারা। তাদের বিভিন্ন রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জলাভূমি মার্শ মাটিতে সমৃদ্ধ।
পাথরের রাসায়নিক পচন থেকে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা তৈরি হয়। মাটিতে প্রধানত আয়রন অক্সাইড থাকে যা তাদের বৈশিষ্ট্যযুক্ত গোলাপী বা লাল রঙ দেয়। এই মৃত্তিকাগুলি মধ্য, পূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতে পাওয়া যায়। এই অবশিষ্ট মৃত্তিকা বেসাল্ট থেকে গঠিত এবং উচ্চ নির্দিষ্ট মাধ্যাকর্ষণ আছে। এই মাটি বেশির ভাগই ক্যালসাইট জমা হিসাবে গঠিত। এগুলি কাজুবাদামের মতো ফসলের জন্য আরও উপযুক্ত।
১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ মৃৎবিজ্ঞানী বুখানন কেরালার মালাবার উপকূলে একপ্রকার লাল রঙের মৃত্তিকা দেখতে পান, তিনি এই মৃত্তিকার নাম দেন ল্যাটেরাইট । ল্যাটেরাইট শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘later’ থেকে এসেছে, যার অর্থ লাল। অধিক তাপমাত্রা (গড়ে ২৭-২৮ ডিগ্রি) ও বৃষ্টিপাতযুক্ত (১৫০-২০০ সেমি) ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়।
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য
১. বর্ন – ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা মূলত লাল রঙের হয়।
২. খনিজের উপস্থিতি – ল্যাটেরাইট মাটির ওপরের স্তরে লৌহ ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমান বেশি থাকে।
৩. পৃষ্টীয় দেশের নিচে এই মৃত্তিকা খুব নরম হয় কিন্তু ভূপৃষ্টে উন্মুক্ত হওয়া মাত্র পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
৪. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় ছোট ছোট মৌচাকের মতো গর্ত বা হানিকম্ব দেখা যায়।
৫. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় কায়োলিনাইট খনিজের জল ধারন ক্ষমতা ও ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা খুবই কম।
৬. প্রক্রিয়া – অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য মাটির ওপরের স্তর থেকে ধৌত প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত পদার্থ অপসারিত হয়ে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
৭. গোত্র – ল্যাটেরাইট মাটি আম্লিক প্রকৃতির ও পেডালফার গোত্রীয়।
৮. অবস্থান – ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায় ভারতের কর্নাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, মালাবার উপকূল, ওড়িশা, ঝারখন্ড ও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশে; থাইল্যান্ড, মায়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া দক্ষিন চিন, মধ্য আফ্রিকা, ব্রাজিল, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন-পূর্ব অংশে এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তর অংশে।
৯. উৎপন্ন ফসল – ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি কম এবং কৃষিকাজের পক্ষে কম উপযুক্ত। তবে জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে চা, কফি, বাদাম প্রভৃতি চাষ করা হয়।