ভারতের জলবায়ুর শ্রেনীবিভাগ

Rate this post

ভারতের জলবায়ুর শ্রেনীবিভাগ: ভারতের জলবায়ু কোন স্থানের অনেক দিনের (৩৫ বছরের বেশি) আবহাওয়ার গড়কে সেই স্থানের জলবায়ু বলে। ভারতের জলবায়ু বলতে সাধারণভাবে বোঝায় এক বিশাল ভৌগোলিক ক্ষেত্রে ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ আবহাওয়া পরিস্থিতি। কোপেন আবহাওয়া বর্গীকরণ অনুসারে, ভারতে ছয়টি প্রধান আবহাওয়া সংক্রান্ত উপবর্গ দেখা যায়: পশ্চিমে মরুভূমি, উত্তরে আল্পীয় তুন্দ্রা ও হিমবাহ থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে ও দ্বীপাঞ্চলের ক্রান্তীয় আর্দ্র বর্ষণারণ্য। কোনো কোনো অঞ্চলে আবার পৃথক স্থানীয় জলবায়ুরও দেখা মেলে। দেশে মোট চারটি প্রধান ঋতু: শীত (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি), গ্রীষ্ম (মার্চ থেকে মে), বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) ও শরৎ-হেমন্ত (অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর)।

প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈচিত্র্যের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে জলবায়ুর বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন আবহাওয়বিদ যেমন – কোপেন, থর্নওয়েট, স্ট্যাম্প, থম্পসন প্রভৃতি ভূগোলবিদ ভারতের জলবায়ুকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেনীবিভাগ করেছেন। এদের মধ্যে ওলাদিমির কোপেন প্রবর্তিত শ্রেনীবিভাগটি বেশি যুক্তিযুক্ত। কোপেন স্বাভাবিক উদ্ভিদ কে ভিত্তি করে ভারতের জলবায়ুর শ্রেনীবিভাগ করেন, তা নিচে উল্লেখ করা হল । কোপেন ভারতের জলবায়ুকে আটটি ভাগে ভাগ করেন, নিচে সেগুলি উল্লেখ করা হল। 

ক) ক্রান্তীয় অতি আর্দ্র মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল (Am) – ভারতের দক্ষিন-পশ্চিমে অবস্থিত কোঙ্কণ ও মালাবার উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে এরূপ জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • এই অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ৩০০ সেমির বেশি।
  • প্রায় ৭ মাস থেকে ৮ মাস বৃষ্টিপাত হয়।
  • উষ্ণতা সমভাবাপন্ন অর্থাৎ না খুব গরম না খুব ঠাণ্ডা ।
  • স্বল্পস্থায়ী শুষ্ক ঋতুর জন্য চিরহরিৎ বৃক্ষের প্রাধান্য দেখা যায়।

খ) ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু অঞ্চল (Aw) – কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিনে অবস্থিত গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের দক্ষিন অংশ; পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিন-পশ্চিম অংশ, কর্নাটকের কিছু কিছু অংশে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • সমস্ত অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মকালের মধ্যে উষ্ণতার বেশ পার্থক্য দেখা যায়।
  • গ্রীষ্মকাল বেশ উষ্ণ । গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • শীতকালীন গড় তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • এই অঞ্চলের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ৭৫ থেকে ১২৫ সেমি। অধিকাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ু প্রবাহের দ্বারা হয়ে থাকে।
  • এই অঞ্চলে পর্নমোচি ও সাভানা জাতীয় উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায়।

গ) ক্রান্তীয় শুষ্ক গ্রীষ্ম ও আর্দ্র শীতকাল যুক্ত জলবায়ু অঞ্চল (As)– ভারতের দক্ষিন-পূর্বে করমন্ডল উপকূলের দক্ষিন অংশে অবস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্যে এই জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও শীতকালে প্রত্যাবর্তনকারী উত্তর – পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
  • এই জলবায়ু অঞ্চলটি ভারতের বছরে দু’বার বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল।
  • বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ৭৫ থেকে ১২৫ সেমির বেশি।
  • এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা থাকে ২৮ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা থাকে ২০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • এই অঞ্চলে ক্রান্তীয় শুষ্ক চিরহরিৎ বৃক্ষের প্রাধান্য দেখা যায়।

ঘ) আর্দ্র উপক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল(cwg) – ভারতের গঙ্গা ও শতদ্রু সমভূমি, ব্রহ্মপূত্র উপত্যকা ও মালব মালভূমির কিছু কিছু এরূপ জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয় (১০০-২০০সেমি), শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক থাকে।
  •  এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা থাকে ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা থাকে ১০ ডিগ্রি থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • আর্দ্র ও শুষ্ক পর্নমোচী এবং চিরহরিৎ ও পর্নমোচী বৃক্ষের মিশ্র বনভূমি এই অঞ্চলে দেখা যায়।

ঙ) প্রায় শুষ্ক স্তেপ জলবায়ু অঞ্চল (Bshw)- রাজস্থানের রোহি ও বাগড় অঞ্চল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার দক্ষিনাংশে, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে এরূপ জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • গ্রীষ্মকাল প্রায় শুষ্ক ও শীতকালেও তেমন বৃষ্টিপাত হয় না।
  • বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১০ থেকে ২৫ সেমি ।
  • এখানে জুন-জুলাই মাসে গড় উষ্ণতা থাকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জানুয়ারী মাসে ৫ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
  • কাঁটাযুক্ত ঝোপঝাড় ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায়।

চ) উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চল (BWhw) – ভারতের রাজস্থানের থর মরূভূমি অঞ্চলে এরূপ জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • অধিক উষ্ণতা, অতি স্বল্প বৃষ্টিপাত ও দিন-রাত্রির উষ্ণতার ব্যাপক পার্থক্য এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য।
  • গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা ৫ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
  • বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১০ সেমিরও কম।

ছ) উত্তর-পূর্ব শীতল আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চল – উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমের পূর্বাংশে ও অরুনাচল প্রদেশে এরূপ জলবায়ু দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য

  • গ্রীষ্মকাল স্বল্পস্থায়ী, শীতকাল আর্দ্র।
  • বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ৩০০ সেমির অধিক।
  • আর্দ্র চিরহরিৎ ও নাতিশীতোষ্ণ উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায়।

জ) পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চল – কাশ্মীর ও লাডাকের অধিকাংশ অঞ্চল এই জলবায়ুর অন্তর্গত।

বৈশিষ্ট্য

  • শীতকালে উষ্ণতা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়। শীতকালে তুষারপাত হয়।
  • বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ২৫ থেকে ৫০ সেমি।
  • শীতকালে পশ্চিমাঝঞ্ঝার প্রভাবে মাঝে মাঝে প্রবল তুষারপাত হয়।   

Leave a Comment