উৎপত্তি অনুসারে মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ – উৎপত্তি অনুসারে মাটির শ্রেণিবিভাগ

Rate this post

উৎপত্তি অনুসারে মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ – উৎপত্তি অনুসারে মাটির শ্রেণিবিভাগ: মাটি বা মৃত্তিকা হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম আবরণ। পাথর গুঁড়ো হয়ে সৃষ্ট খনিজ পদার্থ এবং জৈব যৌগ মিশ্রিত হয়ে মাটি গঠিত হয়। জৈব পদার্থের উপস্থিতিতে ভূমিক্ষয় আবহবিকার, বিচূর্ণিভবন ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পাথর থেকে মাটির উদ্ভব হয়েছে। সে কারণে অতি প্রাচীন কালের মাটি পৃথিবীতে পাওয়া যায় না । ভূ-ত্বক, জলস্তর, বায়ুস্তর এবং জৈবস্তরের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে পাথর থেকে মাটি তৈরি হয়। রাশিয়ান বিজ্ঞানী ডকুশেভকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনি মৃত্তিকা সম্পর্কে ধারণা দেন।

বিজ্ঞানী ডকুশেভ ছাড়াও আরো অনেক বিজ্ঞানী মাটিকে বিভিন্ন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। তবে তাদের মধ্যে বিজ্ঞানী কীলোগ এর সংজ্ঞা থেকে মাটি সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। শুকনো গুঁড়ো মাটিকে সাধারণভাবে ধুলা বলা হয়।মাটি সৃষ্টি হতে পাঁচটি প্রভাবক আছে। এগুলো হল: মাতৃকা পদার্থ, জলবায়ু, জীব উপাদান, ভূসংস্থান, সময়।

এই পাঁচটির কোন একটি ছাড়াও মাটি গঠন সম্ভব নয়। মাটিতে খনিজ এবং জৈব পদার্থের মিশ্রণ রয়েছে। এর উপাদানগুলো কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থায় মাটিতে বিদ্যমান । মাটির কণাগুলো আলগাভাবে যুক্ত ফলে এর মধ্যে বাতাস ও জল চলাচলের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। এজন্য মাটিকে বিজ্ঞানীরা ত্রি-দশা পদার্থ (Three state system) বলে অভিহিত করেন। অধিকাংশ এলাকার মাটির ঘনত্ব ১ থেকে ২ গ্রাম/ঘন সে.মি.। পৃথিবীর উপরিভাগের অধিকাংশ মাটিই টারশিয়ারি যুগের পরে গঠিত হয়েছে। আর কোনো স্থানেই প্লাইস্টোসিন যুগের পুরানো মাটি নেই।

দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে ভৌত-রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদি শিলার পরিবর্তনের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বিভিন্ন খনিজ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ যে পাতলা ভঙ্গুর আবরনী স্তর সৃষ্টি হয়, যা উদ্ভিদ বৃদ্ধির সহায়ক, তাকে মৃত্তিকা বলে। উৎপত্তি অনুসারে মৃত্তিকাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় – আঞ্চলিক, আন্তঃআঞ্চলিক ও অআঞ্চলিক ।

১. আঞ্চলিক মৃত্তিকা / Zonal Soil

কোনো নিদিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে যে মাটি গঠিত হয়, তাকে আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলে।

যেহেতু এই মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়া মূলত জলবায়ুর উপাদান গুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই নিরক্ষরেখা থেকে মেরু বিন্দু পর্যন্ত জলবায়ুর ভৌগোলিক পরিবর্তনের জন্য এক জলবায়ু অঞ্চল থেকে অন্য জলবায়ু অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন মৃত্তিকার বিকাশ ঘটেছে।

অতএব আদিশিলার প্রভাব ব্যতিরেখে মূল শিলার প্রভাবে উৎপন্ন মৃত্তিকাকে আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলে।

উদাহরন – চারনোজেম, সিরোজেম, ল্যাটেরাইট, পডসল, তুন্দ্রা প্রভৃতি

২. আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকা / Intra-zonal Soil

আঞ্চলিক মাটির মধ্যেই যেখানে জলবায়ু ও উদ্ভিদের ভূমিকা ছাড়া কেবল স্থানীয় কোনো বৈশিষ্ট্যের অপর ভিত্তি করে, যে সব মাটি গঠিত হয় , তাদের আন্তঃআঞ্চলিক মৃত্তিকা বলে।এই প্রকার মাটি গঠনে মূল শিলার বৈশিষ্ট্য, জলবায়ু ও লবণতার প্রভাব বেশি।

উৎপত্তি – বিভিন্ন ভাবে এধরনের মাটি সৃষ্টি হয়। উৎপত্তি অনুসারে এই জাতীয় মাটি গুলি হল –

ক) জলাভূমির মৃত্তিকা – বিভিন্ন প্রকার জলাভূমিতে অবায়ুজীবি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জৈব পদার্থ বিয়োজিত হয়ে, যে কালচে রঙের মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়, তাকে জলাভূমি মৃত্তিকা বা গ্লেই মৃত্তিকা বলে।
যেমন – পিট বা বগ মৃত্তিকা

খ) চুনময় মৃত্তিকা – শিলাতে চুন বা চুনজাতীয় পদার্থের প্রাধান্য থাকলে চুনাময় মৃত্তিকা গড়ে ওঠে। যেমন – চুনাপাথর বা চক শিলা থেকে উৎপন্ন রেনজিনা মৃত্তিকা । এই মৃত্তিকা সাদা, ধূসর ও বাদামি বর্নের হয়।

গ) লবনাক্ত মৃত্তিকা – মাটির উপরিভাগে লবনের সঞ্চয় ঘটলে লবনাক্ত মৃত্তিকা গড়ে ওঠে। শুষ্ক ও শুষ্ক প্রায় অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়া কম হয়, ফলে লবনের সঞ্চয় ঘটে। আবার বাষ্পীভবন বেশি হওয়ায় কৈশিক প্রক্রিয়ায় দ্রবীভূত লবন উপরে উঠে আসে। এই ভাবে লবনাক্ত মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। এই মাটি হল ক্ষারধর্মী।
উদাহরণ – সোলানচাক ও সোলোনেৎজ মৃত্তিকা ।

৩. অআঞ্চলিক মৃত্তিকা / Azonal Soil

বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয় প্রাপ্ত শিলা চূর্ন বৃষ্টি, জলপ্রবাহ, হিমবাহ, ও বায়ুপ্রবাহের দ্বারা বাহিত হয়ে অন্য কোনো নিচু অঞ্চলে গঠিত জমা হয়ে, যে মৃত্তিকা গঠিত হয়, সেই মাটি কে অআঞ্চলিক মৃত্তিকা বলে।

উদাহরণ – পলিমাটি, লোয়েস মাটি প্রভৃতি

Leave a Comment