সম্পদের শ্রেণীবিভাগ কর: যে সমস্ত দ্রব্য মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম অর্থাৎ মানুষের কোন না কোন চাহিদা মেটাই, তাদের সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সম্পদ কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। সম্পদের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল। যেমন –
সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে
প্রাকৃতিক সম্পদ – প্রকৃতি প্রদত্ত যে সব উপকরণ মানুষের অভাব মেটাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে সেগুলিকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। যেমন – মৃত্তিকা, জলবায়ু, নদী, অরণ্য, খনিজ প্রভৃতি।
মানবিক সম্পদ – মানুষকে নিয়ে যেসব সম্পদ গড়ে ওঠে সেগুলিকে মানবিক সম্পদ বলে। যেমন জনবসতি, শ্রমিকের কর্মদক্ষতা, মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা প্রভৃতি।
সাংস্কৃতিক সম্পদ – যেসব উদ্ভাবনী শক্তির সাহায্যে মানুষ নিরপেক্ষ উপাাদান গুলিকে সম্পদে পরিণত করে সেগুলিকে বলে সাংস্কৃতিক সম্পদ। যেমন – কারিগরি দক্ষতা, বিজ্ঞানচেতনা, শিক্ষা প্রভৃতি।
সম্পদের জৈবিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে
জৈব সম্পদ – জীব জন্তু ও উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ কে বলে জৈব সম্পদ। কয়লা চুনাপাথর খনিজ সম্পদের উৎপত্তি হয়েছে সুদূর অতীতে জীবজগৎ থেকে। এই কারণে এদের বর্তমানে মৃত জৈব সম্পদ বলা হয়।
অজৈব সম্পদ – যেসব সম্পদ প্রাণহীন জড়বস্তু থেকে সৃষ্টি হয় তাকে বলে অজৈব সম্পদ । যেমন – ধাতব, খনিজ, জল, প্রস্তরখন্ড, মৃত্তিকা প্রভৃতি।
সম্পদের স্থায়িত্ব বা ক্ষয়িষ্ণু তা অনুসারে
গচ্ছিত বা অপুনর্ভব সম্পদ – যে সব সম্পদের পরিমাণ সীমিত এবং ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে নিঃশেষিত হয় তাদের বলা হয় গচ্ছিত সম্পদ। ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে ক্ষয় হয় বলে এদের আরেক নাম ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ। যেমন – কয়লা খনিজ তেল আকরিক লোহা। যদি গচ্ছিত সম্পদের পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হয় তাহলে তাদের আবর্তনীয় গচ্ছিত সম্পদ বলে। যেমন বাতিল লোহা ও ইস্পাত।
অবাধ বা প্রবাহমান বা অক্ষয়িষ্ণু সম্পদ – যেসব সম্পদ ক্রমাগত ব্যবহারের ফলেও নিঃশেষিত হয় না তাদের বলা হয় অবাধ বা প্রবাহমান সম্পদ। যেমন সূর্যরশ্মি নদীর জল বাতাস প্রভৃতি।
কোন কোন প্রবাহমান সম্পদ ব্যবহারের ফলে সাময়িকভাবে কমে যায় এবং নির্দিষ্ট সময় পরে আবার আপনা আপনি পূরণ হয়ে যায়। এদের পুনর্ভব সম্পদ বা পূরণ শীল সম্পদ বলে। যেমন সমুদ্রের মাছ বনভূমি প্রভৃতি।
সম্পদের অসম বন্টন অনুসারে
সর্বত্র লভ্য সম্পদ – যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীর সর্বত্রই পাওয়া যায় তাদের বলে সর্বত্র লভ্য সম্পদ। যেমন – বাতাস, সূর্যালোক।
সহজলভ্য সম্পদ – বেশ কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যেগুলি পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া না গেলেও অধিকাংশ দেশেই পাওয়া যায়। সেগুলিকে বলে সহজলভ্য সম্পদ। যেমন – কর্ষণযোগ্য জমি, বনভূমি প্রভৃতি।
দুষ্প্রাপ্য সম্পদ – কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যেগুলি পৃথিবীর সামান্য কয়েকটি দেশেই পাওয়া যায়। এদের দুষ্প্রাপ্য সম্পদ বলে। যেমন – টিন (মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বলিভিয়া); অভ্র (ভারত, ব্রাজিল, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র)।
একমাত্র লভ্য সম্পদ – যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ পৃথিবীর একমাত্র স্থান পাওয়া যায় সেগুলিকে একমাত্র লভ্য সম্পদ বলে। যেমন – ক্রায়োলাইট যা কেবল গ্রীনল্যান্ডে পাওয়া যায়।
সম্পদের মালিকানা অনুসারে
ব্যক্তিগত সম্পদ – যেসব সম্পদ কোন একজন ব্যক্তির নিজস্ব তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বলে। যেমন – নিজের জমি, বাড়ি, বুদ্ধি, শিক্ষা।
সামাজিক সম্পদ – সমাজের অধীনস্থ সম্পদ গুলির নাম সামাজিক সম্পদ। যেমন – হাসপাতাল, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়।
জাতীয় সম্পদ – যেসব সম্পদ ব্যক্তিগত নয় সারাদেশের বা জাতির তাদের জাতীয় সম্পদ বলে। যেমন – ভারতের বনজ ও খনি সম্পদ, চীনের খনি সম্পদ প্রভৃতি।
সর্বজনীন সম্পদ – যেসব সম্পদ কোন ব্যক্তি জাতি বা দেশের নিজস্ব নয় সেগুলি সর্বজনীন সম্পদ বলা হয়। যেমন সমুদ্র তলদেশের খনি সম্পদ , আকাশপথ আন্টার্টিকার প্রাকৃতিক সম্পদ প্রভৃতি।
সম্পদের প্রাপ্যতা অনুসারে
বিকশিত সম্পদ – যেসব সম্পদ শুধুমাত্র গচ্ছিত বা আবদ্ধ অবস্থায় নেই ক্রমাগত ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের বিকশিত সম্পদ বলা হয়। যেমন – ভারতের কয়লা সম্পদ, জাপানের জলবিদ্যুৎ শক্তি।
সম্ভাব্য সম্পদ – যে সব সম্পদের অস্তিত্ব ও ব্যবহার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে সেগুলির পূর্ণ ব্যবহার করা সম্ভব হয়না তাদের সম্ভাব্য সম্পদ বলে। যেমন – ভারতে সৌরশক্তি, কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্র জলবিদ্যুৎ শক্তি।