কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল | কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি গঠন-1930 এর দশকে ভারতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো কংগ্রেসের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের আগমন। এই সময় গান্ধীজীর নেতৃত্বের প্রতি হতাশা থেকে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রসার ঘটে এবং আচার্য নরেন্দ্র দেব ও জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে 1934 খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল বা কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি।
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সদস্যবৃন্দ
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উল্লেখযোগ্য সদস্য ছিলেন আচার্য নরেন্দ্র দেব, জয় প্রকাশ নারায়ণ, মিনু মাসানি, রামমনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন, নাম্বুদিরিপাদ, অশোক মেহেতা প্রমুখ। এদের মধ্যে আচার্য নরেন্দ্র দেব ছিলেন এই দলের সভাপতি এবং জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন এই দলের সম্পাদক।
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের উদ্দেশ্য
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল
1)কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শক্তিকে সুসংহত করা।
2)বামপন্থী মতাদর্শের দ্বারা সমাজকে শোষণমুক্ত করা
3)কংগ্রেসের বিরোধিতা না করে কংগ্রেসের মধ্যে থেকে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রসার ঘটানো।
4)সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করা।
5)ভারতের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করা।
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের কর্মসূচি
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সদস্যরা মনে করতেন আর্থসামাজিক স্বাধীনতার ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তাই তাঁরা বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেগুলি হল-
1)দেশীয় রাজা ও জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধন।
2)শিল্পের সমাজতন্ত্রীকরন।
3)বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ।
4)কৃষি ঋণ মুকুব ও কৃষকদের মধ্যে জমি বন্টন।
5)রাষ্ট্র কর্তৃক কাজের অধিকারকে স্বীকৃতি দান এবং প্রতিটি শ্রমিককে উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান।
কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের গুরুত্ব
ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে বিশেষত কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রের দলের অবদান ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
1)এই দলের মতাদর্শ দ্বারা কৃষক ও শ্রমিকরা অনুপ্রাণিত হয়েছিল এবং এই দলের নেতৃত্বেই বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল।
2)এই দলের প্রভাবে জাতীয় কংগ্রেস ভূমি সংস্কার শিল্প বিরোধের সমস্যা ও দেশীয় রাজ্যের প্রজাদের সমস্যা সমাধানের দিকে নজর দিতে বাধ্য হয়।
3)এই দলের প্রভাবে 1937 খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস ব্যাপক সাফল্য লাভ করে এবং 1939 খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের ত্রিপুরী অধিবেশনে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন।
4)ভারত ছাড়ো আন্দোলনকালে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হলে তাদের অনুপস্থিতিতে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সদস্যরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে অগ্রসর হয়েছিলেন।