দৌলাত সিং কোঠারি জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Daulat Singh Kothari Biography in Bengali. আপনারা যারা দৌলাত সিং কোঠারি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী দৌলাত সিং কোঠারির জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
দৌলাত সিং কোঠারি কে ছিলেন? Who is Daulat Singh Kothari?
দৌলত সিং কোঠারি (৬ জুলাই ১৯০৬ – ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ। ভারত সরকারের পদ্মভূষণ এবং পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত ভারতের জ্যোতির্গবেষণার অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ছিলেন তিনি।
দৌলাত সিংহ কোঠারি জীবনী – Daulat Singh Kothari Biography in Bengali
নাম | দৌলাত সিং কোঠারি |
জন্ম | 6 জুলাই 1906 |
পিতা | ফতেলাল কোঠারি |
মাতা | – |
জন্মস্থান | উদয়পুর, রাজস্থান, ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ |
মৃত্যু | 4 ফেব্রুয়ারি 1993 (বয়স 86) |
দৌলাত সিং কোঠারির জন্ম: Daulat Singh Kothari’s Birthday
দৌলাত সিং কোঠারি ১৯০৬ সালের ৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।
মহাবিশ্বে সূর্যকে কেন্দ্র করে নানা কক্ষপথে নানা গ্রহ – নক্ষত্র অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে। পরমাণুর গঠনটিও বলা চলে হুবহু একই রকম। পরমাণুর কেন্দ্রক বা নিউক্লিয়াসই হল সূর্য। গোটা পরমাণুর ওটিই হল মূলবস্তু। অবশিষ্ট অংশ মহাবিশ্বের শূন্যতার মতই একেবারে ফাকা। এই নিউক্লিয়াসটি আবার এক ধরনের ধন – বিদ্যুৎ আদানযুক্ত কণিকা অর্থাৎ প্রোটনের উপস্থিতির জন্য ধন বিদ্যুৎগ্রস্ত।
প্রোটন ছাড়াও রয়েছে একপ্রকার বিদ্যুৎহীন কণিকা পরমাণুর মধ্যে উপস্থিত, যার নাম নিউট্রন। এই প্রোটন ও নিউট্রন অন্বিত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে মহাকাশের গ্রহনক্ষত্রের নিজ নিজ কক্ষপথের মত শক্তি স্তর বা এনার্জি লেভেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রোটনের সমান সংখ্যার অতি – ক্ষুদ্র কণিকা ইলেকট্রন। এই ইলেকট্রন হল প্রায় ভর – শূন্য ঋণবিদ্যুত্যুক্ত কণিকা।
এই পারমাণবিক সূর্য যাকে বলা হয়েছে, সেই নিউক্লিয়াসের তড়িৎ অঞ্চলটির ঋণ – বিদ্যুৎ – এর আবহের সঙ্গে প্রচণ্ড শক্তিতে এঁটে রয়েছে শক্তি স্তরীয় ইলেকট্রনেরা। প্রচণ্ড চাপে ইলেকট্রনেরা যখন নিউক্লিয়াসের প্রভাবমুক্ত হয় তখনই তারা খসে পড়ে পরমাণুর মহাশূন্যতায়। কিন্তু পূর্বে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ধারণাতীত উষ্ণতায় পরমাণুকে বিচূর্ণ করার পরে কেবল ইলেকট্রনেরা নিউক্লিয়াসের সম্পর্কচ্যুত হয়ে পারমাণবিক মহাশূন্যতার গহ্বরে খসে পড়ে।
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী দৌলত সিং কোঠারি চাপ আয়নী ভবন বা Pressure Ionisation- এর তত্ত্ব আবিষ্কার করে জ্যোতি র্পদার্থবিদদের দীর্ঘদিনের ভ্রান্তি দূর করে বিশ্ববিজ্ঞানের ইতিহাসে সম্ভাবনাময় নতুন পথের দ্বারোদঘাটন করেছিলেন।
দৌলাত সিং কোঠারির পিতামাতা ও জন্মস্থান: Daulat Singh Kothari’s Parents And Birth Place
ভারতের উত্তর প্রদেশের এক সাধারণ পরিবারে ১৯০৬ খ্রিঃ ৬ ই জুলাই দৌলত সিং কোঠারির জন্ম। সাধারণ পরিবারে জন্মালেও ছেলেবেলা থেকেই দৌলত ছিলেন অসাধারণ। স্কুলের পড়া রপ্ত করবার জন্য একবারের বেশি দ্বিতীয়বার পড়তে হত না তাকে। ফলে প্রচুর অবসর পেতেন।
কিন্তু সেই সময়টা সহপাঠীদের মত খেলাধুলা করে অপচয় করতেন না। স্কুলের পড়া তৈরির পরে যতটা সময় তিনি পেতেন ডুবে থাকতেন বিজ্ঞানের নানা বই পত্রের মধ্যে। স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম স্থানটি তার ছিল বাঁধা।
দৌলাত সিং কোঠারির শিক্ষাজীবন: Daulat Singh Kothari’s Educational Life
পদার্থবিদ্যার প্রতিই দৌলতের ঝোক ছিল বেশি। তা – ই পরিণত হয়ে আধুনিক পদার্থবিদ্যার পারমাণবিক গবেষণার দিকে তাকে আকৃষ্ট করে। বি.এসসি পাশ করে দৌলত ভর্তি হন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এসসি ক্লাসে। সেই সময় সেখানে পদার্থবিদ্যার ক্লাশ নিচ্ছেন বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণার প্রবাদপুরুষ মেঘনাদ সাহার প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠেছিলেন দৌলত।
১৯২৭ খ্রিঃ ১৯২৮ খ্রিঃ এই দুই বছরে দৌলতকে গড়ে তোলেন মেঘনাদ সাহা। তাঁর মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে ভারতীয় জ্যোতি র্পদার্থ বিদ্যার ভাবীকালের সম্ভাবনাময় বিজ্ঞানের প্রতিশ্রুতি। ইতিমধ্যে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেছিলেন দৌলত। সেই সংবাদ জানতে পেরে শিক্ষাগুরু মেঘনাদ সাহা শিষ্যের জীবনের লক্ষ্য নির্বাচনে ভ্রান্তির জন্য মর্মাহত হন।
তার উপদেশে এবং নির্দেশে দৌলত ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের চাকরির আর্থিক নিশ্চয়তা ও ক্ষমতার প্রলোভন ত্যাগ করে জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণায় স্বদেশভূমির গৌরববৃদ্ধির কাজে আত্মনিয়োগ করবার সঙ্কল্প গ্রহণ করেন। এম . এসসি পাশ করবার পরে মেঘনাদ সাহার নির্দেশে দৌলত ইংলন্ড গমন করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় তার পদার্থবিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণা।
দৌলাত সিং কোঠারির কর্ম জীবন: Daulat Singh Kothari’s Work Life
১৯৩৪ খ্রিঃ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে এসে দৌলত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। জগদ্বিখ্যাত পরমাণু পদার্থবিদ স্যার আর্থার এডিংটনের একটি প্রবন্ধ পড়ে দৌলত উদ্বুদ্ধ হন। তিনি গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন এবং আবিষ্কার করেন বৃহদায়তন এক সত্য।
তার আবিষ্কৃত সত্যটি হল, কেবলমাত্র চাপের প্রয়োগেই পরমাণুর বিভাজন সম্ভব। তবে এই চাপটি হওয়া দরকার একবর্গ ইঞ্চি পদার্থে কয়েক কোটি পাউন্ড। এই অস্বাভাবিক চাপ পৃথিবীর মাটিতে সম্ভব নয়। তা আছে মহাবিশ্বের নাক্ষত্রিক জগতে — ডোয়ার্ফ স্টার বা বামনরূপী নক্ষত্রদের মধ্যে। বামনরূপী নক্ষত্র হল তাদের পরমাণুর ঘনীভবনের বা শীতলতার পরিণতি। তাদের ভেতরের এই আয়তনিক অবস্থাটি গড়ে উঠেছে প্রচন্ড চাপে ও তাপে।
দৌলত আরও জানালেন, অকল্পনীয় বৃহদাকার নক্ষত্ররা ক্ষুদ্রাকার লাভ করে ভয়ঙ্কর সঙ্কোচনের ফলে। বামন নক্ষত্রগুলির সঙ্কুচিত অবস্থাটি হল ধারণাতীত শীতল অবস্থা ৷ বামননক্ষত্রের অভ্যন্তরীণ সঙ্কুচিত পদার্থের অবিশ্বাস্য চাপ নির্ণয় করে তাপীয় গতিবিদ্যায় বিদ্যুৎ – ধর্মগুলিকে যেভাবে দৌলত ব্যাখ্যা করেন তার ফলে জ্যোতি র্পদার্থবিদ্যার গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হল। দৌলত লাভ করলেন বিশ্বজোড়া খ্যাতি।
দৌলত যখন উচ্চতর গবেষণার কাজে ব্যস্ত, সেই সময়টায় সবে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে ভারত স্বাধীন হয়েছে। নতুন ভাবে দেশ গঠনের প্রস্তুতি চলছে সকল দিকে। ১৯৪৮ খ্রিঃ দেশ গঠনের কাজে ডাক এল বিশ্রুত বিজ্ঞানী দৌলত সিং কোঠারিরও। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের চোদ্দ বছরের চাকরি ছেড়ে তিনি যোগ দিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপদেষ্টার পদে।
১৯৪৮ খ্রিঃ থেকে ১৯৬১ খ্রিঃ পর্যন্ত এই দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে কোঠারি প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পূর্ণ করেন। সেগুলো হল, প্রতিযোগিতা মূলক সমরাস্ত্রের সঠিক মান নির্ণয়, মারণাস্ত্রের ক্রমোন্নতি ও নতুন নতুন অস্ত্রের নকশা ও উদ্ভাবন পদ্ধতি সংক্রান্ত গবেষণা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাজে কোঠারির দূরদৃষ্টি বাস্তববুদ্ধি ও বিজ্ঞান সচেতনা ভারত সরকারের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়।
দৌলাত সিং কোঠারির পুরস্কার ও সম্মান: Daulat Singh Kothari’s Awards And Honors
কোঠারি ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি ও ভারতীয় বিজ্ঞান সম্পর্কিত জাতীয় সংস্থার সহ – সভাপতি হয়েছেন। ১৯৬২ খ্রিঃ ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন। জ্যোতি র্পদার্থ বিজ্ঞান ছাড়াও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়েছে কোঠারিকে। এই বিষয়গুলো হল, ইলেকট্রনিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান, ধাতুবিদ্যা, মৃত্তিকাবিদ্যা, মরুবিস্তার রোধ, খাদ্য সুরক্ষা প্রক্রিয়া, মরু অরণ্যায়ন, বিমান চালনা বিদ্যা ও গ্যাস টারবাইন।
ভারতের সদ্যলব্ধ স্বাধীনতাকে ফলবান করে তুলবার সাধনায় কোঠারির অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও তার ফলাফল, পরিসংখ্যান ভিত্তিক তাপীয় গতিবিদ্যা ও শুভ্র বামন নক্ষত্রদের তত্ত্ব — কোঠারির এই জ্যোতির্গবেষণা প্রবন্ধগুলি বিশ্বখ্যাতি লাভ করেছে। প্রথম প্রবন্ধটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কোঠারি বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিকে অস্ত্র হিসাবে গড়ে না তুলে যদি মানব কল্যাণে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা যায় তবে বিশ্বের মহৎ উন্নতি সম্ভব।
দৌলাত সিং কোঠারির মৃত্যু: Daulat Singh Kothari’s Death
১৯২২ খ্রিঃ ভারতের জ্যোতির্গবেষণার অন্যতম উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক দৌলত সিং কোঠারি পরলোক গমন করেন।