অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার পার্থক্য – Difference between latitude and longitude: পৃথিবীর আকৃতি অনেকটা গোলকের মতো। তাই পৃথিবী পৃষ্ঠের কোনো স্থানের প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য গোলকের ওপর আড়াআড়ি ও লম্বভাবে কত গুলি কাল্পনিক রেখা টেনে কোনো স্থানের অবস্থান নির্নয় করা হয়। এই কাল্পনিক রেখা গুলিকে বলা হয় অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা। এই অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার পার্থক্য আলোচনার পূর্বে অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা প্রয়োজন।
অক্ষরেখা – ভূপৃষ্ঠের যেসব স্থানের অক্ষাংশ সমান বা একই সেই সব স্থানকে যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায় তাকে অক্ষরেখা বলে। অন্যভাবে বললে পৃথিবীর মাঝ বরাবর বিস্তৃত নিরক্ষরেখার উভয় দিকে পরস্পরের সমান্তরালে বিস্তৃত কাল্পনিক রেখা গুলিকে অক্ষরেখা বলে।
অক্ষরেখার বৈশিষ্ট্য –
[i] অক্ষরেখা গুলি পৃথিবীকে পূর্ব – পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে।
[ii] প্রত্যেকটি অক্ষরেখা এক একটি পূর্নবৃত্ত ও পরস্পরের সমান্তরাল।
[iii] অক্ষরেখা গুলির মধ্যে নিরক্ষরেখার পরিধি সবচেয়ে বেশি বলে, একে মহাবৃত্ত বলা হয়।
[iv] একই অক্ষরেখায় অবস্থিত যে কোনো স্থান থেকে নিরক্ষরেখার দূরত্ব সবসময় সমান হয়।
[v] সব অক্ষরেখার পরিধি সমান নয়। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিনে এগুলি ক্রমশ ছোট হতে হতে মেরু অঞ্চলে বিন্দুতে পরিনত হয়।
[vi] একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য ও জলবায়ু প্রায় একই রকমের হয়। বিভিন্ন অক্ষরেখার জলবায়ু ভিন্ন ভিন্ন হয়।
[vii] নিরক্ষরেখাকে প্রধান অক্ষরেখা বলা হয়। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অক্ষরেখা গুলি হল – কর্কটক্রান্তি রেখা, মকরক্রান্তি রেখা, সুমেরু বৃত্ত, কুমেরু বৃত্ত প্রভৃতি।
[viii] ১ ডিগ্রি অন্তর অবস্থিত দুটি অক্ষরেখার মধ্যে রৈখিক ব্যবধান ১১১ কিমি।
[ix] মোট অক্ষরেখার সংখ্যায় ১৭৯ টি।
দ্রাঘিমারেখা – ভূপৃষ্ঠের যে সব স্থানের দ্রাঘিমাংশ সমান বা একই, সেই সব স্থানকে কোনো কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে দ্রাঘিমারেখা বলে।
দ্রাঘিমারেখার বৈশিষ্ট্য –
[i] প্রতিটি দ্রাঘিমারেখা উত্তরে সুমেরু হতে দক্ষিনে কুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত এক একটি অর্ধবৃত্ত।
[ii] দ্রাঘিমারেখা গুলি পরস্পরের সমান্তরাল নয়।
[iii] দ্রাঘিমারেখা গুলি উত্তর-দক্ষিনে বিস্তৃত।
[iv] সব দ্রাঘিমারেখার পরিধি সমান।
[v] দ্রাঘিমারেখার মান মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে ক্রমশ বাড়ে।
[vi] একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থান গুলিতে একই সময় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত্র হয়।
[vii] শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখা কে মূলমধ্যরেখা ও ১৮০ ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখা কে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বলে।
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার পার্থক্য
১. অক্ষরেখার অপর নাম সমাক্ষরেখা। দ্রাঘিমারেখার অপর নাম দেশান্তর রেখা।
২. অক্ষরেখা গুলি পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত। দ্রাঘিমারেখা গুলি উত্তর-দক্ষিনে বিস্তৃত।
৩. অক্ষরেখা গুলি পরস্পরের সমান্তরাল। দ্রাঘিমারেখা গুলি পরস্পরের সমান্তরাল নয়।
৪. অক্ষরেখা গুলি পূর্নবৃত্ত। দ্রাঘিমারেখা গুলি অর্ধবৃত্ত।
৫. প্রতিটি অক্ষরেখার কোণের সমষ্টি ৩৬০ ডিগ্রি। প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার কোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি।
৬. এক ডিগ্রি অন্তর মোট ১৭৯ টি অক্ষরেখা রয়েছে। এক ডিগ্রি অন্তর মোট ৩৬০ টি দ্রাঘিমারেখা রয়েছে।
৭. সর্বনিম্ন অক্ষরেখার মান শূন্য ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ অক্ষরেখার মান ৮৯ ডিগ্রি উত্তর বা দক্ষিণ।
সর্বনিম্ন দ্রাঘিমারেখার মান শূন্য ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ দ্রাঘিমারেখার মান ১৮০ ডিগ্রি।
৮. একই অক্ষরেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের মধ্যে স্থানীয় সময়ের পার্থক্য দেখা যায়। একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত বিভিন্ন স্থানের মধ্যে স্থানীয় সময় একই রকম হয়।
৯. অক্ষরেখা গুলির দৈর্ঘ্য সমান নয়। দ্রাঘিমারেখা গুলির দৈর্ঘ্য সমান।
১০. পৃথিবীর মাঝ বরাবর বিস্তৃত শূন্য ডিগ্রি অক্ষরেখা (নিরক্ষরেখা) পৃথিবীকে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে ভাগ করেছে। শূন্য ডিগ্রি দ্রাঘিমারেখা (মূলমধ্যরেখা) পৃথিবীকে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে ভাগ করেছে।
১১. অক্ষরেখার ওপর কোন স্থানের জলবায়ু নির্ভর করে। অন্যদিকে দ্রাঘিমা রেখার সাহায্যে কোন স্থানের সময় ও তারিখ নির্নয় করা হয়।
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার পার্থক্য – Difference between latitude and longitude
অক্ষরেখা (Parallels of latitude) | দ্রাঘিমা রেখা (Meridians of longitude) |
---|---|
অক্ষরেখা গুলো পৃথিবী কে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে | দ্রাঘিমা রেখা গুলো পৃথিবী কে উত্তর-দক্ষিণ বেষ্টন করে আছে |
নিরক্ষরেখা থেকে অক্ষরেখা গণনা করা হয় | মূল মধ্যরেখা থেকে দ্রাঘিমা রেখা গণনা করা হয় |
অক্ষরেখা গুলো উত্তর অক্ষরেখা এবং দক্ষিণ অক্ষরেখা নামে পরিচিত | দ্রাঘিমা রেখা গুলো পূর্ব দ্রাঘিমা রেখা ও পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখা নামে পরিচিত |
অক্ষ রেখার অপর নাম সমাক্ষরেখা | দ্রাঘিমা রেখার অপর নাম দেশান্তর রেখা |
অক্ষরেখা গুলো প্রত্যেকেই পূর্ণ বৃত্ত | দ্রাঘিমা রেখা গুলো প্রত্যেকেই অর্ধবৃত্ত |
অক্ষরেখার মান 0 ডিগ্রি থেকে 90 ডিগ্রি পর্যন্ত | দ্রাঘিমা রেখার মান 0° থেকে 180 ডিগ্রি পর্যন্ত |
অক্ষরেখা গুলি নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর-দক্ষিণ এ অবস্থান করছে | দ্রাঘিমা রেখা গুলো মূলমধ্যরেখা থেকে পূর্ব পশ্চিমে অবস্থান করছে |
নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে অক্ষরেখা গুলো ক্রমশ ছোট হয়ে গেছে | মূল মধ্যরেখা থেকে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার দিকে’ দ্রাঘিমা রেখার দৈর্ঘ্য একই থেকে গেছে |