মৌসুমি জলবায়ু ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর পার্থক্য: উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল ও স্নাতক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হচ্ছে মৌসুমি জলবায়ু ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর পার্থক্য। এই মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর কিছু গুরুত্ব পূর্ন পার্থক্য এখানে আলোচনা করা।
মৌসুমি জলবায়ু ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু পৃথিবীর দুটি অন্যতম প্রধান জলবায়ু । বিখ্যাত আবহবিদ ওলাদিমির কোপেন মৌসুমি জলবায়ুকে বোঝানোর জন্য Am এবং ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুকে বোঝাতে Cs সংকেত ব্যবহার করেন । এই জলবায়ুর আবহাওয়া গত দিক থেকে যে যে বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা পার্থক্য আকারে তুলে ধরা হল।
মৌসুমি জলবায়ু ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর পার্থক্য গুলি হল
অক্ষাংশগত অবস্থান
- মৌসুমি জলবায়ু ১০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দেখা যায়।
- ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু ৩০ ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দেখা
- যায়।
দৈশিক অবস্থান
- মৌসুমি জলবায়ু ভারত, বাংলাদেশ ও দক্ষিন ও পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলোতে বেশি লক্ষ্য করা
যায় । - ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু সাধারণত ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী দেশ গুলিতে দেখা যায়। যেমন –
ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল ফ্রান্স প্রভৃতি ।
বায়ুপ্রবাহ
- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মকালে বিপরীত মুখী উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিন-পূর্ব মৌসুমি
বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। - ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুতে শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু ও গ্রীষ্মকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব আয়ন
বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়।
ঋতুবৈচিত্র্য
- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে প্রধান চারটি ঋতুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । যথা – শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা
ও শরৎ - ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে কেবল দুটি ঋতুর দেখা যায়। যথা – শীত ও গ্রীষ্ম
ঋতুর প্রকৃতি
- মৌসুমি জলবায়ুর গ্রীষ্মকাল হয় আর্দ্র এবং শীতকাল হয় শুষ্ক ।
- ভূমধসাগরীয় জলবায়ুর গ্রীষ্মকাল হয় শুষ্ক এবং শীতকাল হয় আর্দ্র।
স্থানীয় বায়ু
- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কিছু স্থানীয় বায়ু প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। যেমন – আঁধি,
কালবৈশাখী - ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলেও স্থানীয় বায়ুপ্রবাহের প্রাধান্য দেখা যায় । যেম – মিস্ট্রাল,
সিরক্কো
বৃষ্টিপাত
- মৌসুমি জলবায়ুতে মোট বৃষ্টিপাতের ৮০ থেকে ৯০% বর্ষাকালেই হয়ে থাকে।
- ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে যে টুকু বৃষ্টিপাত হয় তার বেশির ভাগ টাই শীতকালে হয়ে
থাকে।
বৃষ্টিপাতের নিয়ন্ত্রক
- মৌসুমি জলবায়ুতে প্রধানত দক্ষিণ – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে ।
- ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মূলত শীতকালে দক্ষিন- পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
উষ্ণতা
- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যায়
এবং শীতকালে গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে । - ভূমধসাগরীয় জলবায়ুতে শীতকালের দুই তিন মাস ব্যতিত সারা বছর রৌদ্র উজ্জ্বল মেঘমুক্ত
আবহাওয়া বিরাজ করে । গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে ২১ থেকে ২৭ ডিগ্রি
সেলসিয়াসের মধ্যে এবং শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ
- মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে পর্নমোচী বৃক্ষের অরণ্য দেখা যায়।
- ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে সাধারণত গুল্ম জাতীয় ও ঝোপঝাড়ের প্রাধান্য লক্ষ্য করা
যায়।