জীবিকা সত্ত্বা ভিত্তিক কৃষি ও বাণিজ্যিক কৃষির পার্থক্য লেখো।
জীবনধারণ ভিত্তিক কৃষি
কৃষকের এবং তার পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে কৃষির যে ধরণের শস্য জন্মানো এবং পশুপাল পালন করা হয়, একে জীবিকা নির্বাহ বলা হয়। শিল্পায়নের আগে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা তাদের চাহিদা পূরণের জন্য জীবিকা নির্বাহের উপর নির্ভরশীল।
এই কৃষিতে আধুনিক কৃষিক্ষেত্র এবং পদ্ধতিগুলির ব্যবহার কম হয়, হোল্ডিং আকারটি ছোট এবং ম্যানুয়াল শ্রম, যা কৃষকদের পরিবারের সদস্য হতে পারে, ফসল উত্পাদন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। উত্পাদিত আউটপুট প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়, অল্প পরিমাণে উদ্বৃত্ত বাণিজ্য থাকে। উত্পাদিত উদ্বৃত্তগুলি (যদি থাকে) কাছের বাজারগুলিতে বিক্রি হয়। শস্যের সিদ্ধান্তটি আসন্ন সময়ে পরিবারের প্রয়োজন এবং এর বাজার মূল্যের উপর ভিত্তি করে।
বাণিজ্যিক কৃষি
বাণিজ্যিক কৃষিকাজ, বা অন্যথায় কৃষিকাজ হিসাবে পরিচিত হ’ল একটি কৃষিকাজ পদ্ধতি যেখানে শস্য সংগ্রহ করা হয়, এবং গবাদি পশুকে বাজারে পণ্য বিক্রি করার লক্ষ্যে লালন করা হয়, যাতে অর্থ উপার্জন করা যায়। এই ধরণের কৃষিতে, আধুনিক প্রযুক্তি, মেশিন, সেচ পদ্ধতি এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বিশাল খামারে প্রচুর পরিমাণে মূলধন বিনিয়োগ করা হয় এবং প্রচুর পরিমাণে ফসলের ফলন হয়। বাণিজ্যিক চাষের মূল বৈশিষ্ট্য হ’ল আধুনিক উপকরণগুলির উচ্চ মাত্রা উচ্চ উত্পাদনশীলতার জন্য ব্যবহার করা হয়, যেমন উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন বীজ, সার, কীটনাশক, কীটনাশক, আগাছা নিরোধক ইত্যাদি for
বাণিজ্যিক কৃষিতে প্রাথমিকভাবে যে ফসলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে সেগুলি উত্পাদিত হয়, অর্থাৎ যে ফসলগুলি অন্য দেশে রফতানি করতে হয় বা শিল্পগুলিতে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অধিকন্তু, কৃষিকাজের বাণিজ্যিকীকরণের পরিমাণ অঞ্চলভেদে পৃথক হয়।
জীবিকা সত্ত্বা ভিত্তিক কৃষি ও বাণিজ্যিক কৃষির পার্থক্য:
১)সংজ্ঞা: যে প্রাচীন পন্থী কৃষি ব্যবস্থায় অল্প জমিতে অধিক শ্রম ও অল্প মূলধন বিনিয়োগ করে প্রধাণত জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে অধিক ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করা হয়, তাকে জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক কৃষি বলে। অন্যদিকে, যে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় অপেক্ষাকৃত বৃহদায়তন জমিতে অধিক মূলধন ও অধিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে প্রধানত বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে কৃষিকাজ করা হয়, তাকে বাণিজ্যিক কৃষি বলে।
২)অবস্থান: জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার মৌসুমী জলবায়ু যুক্ত অঞ্চলে (ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান) দেখা যায়।অন্যদিকে, বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থা উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ ও মরুপ্রা জলবায়ু অঞ্চলে (কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স) দেখা যায়।
৩)শ্রমিক: জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় শ্রমিকের চাহিদা বেশি, কিন্তু তাদের মজুরি কম।অন্যদিকে, বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থা শ্রমিকের চাহিদা অপেক্ষাকৃত কম, কিন্তু তাদের মজুরি বেশি।
৪)মূলধন: এই কৃষি ব্যবস্থায় মূলধন লগ্নীকরণের পরিমাণ কম। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় মূলধন লগ্নীকরণের পরিমাণ বেশি।
৫)উৎপাদন: জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেশি, কিন্তু মাথাপিছু উৎপাদন কম। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম, কিন্তু মাথাপিছু উৎপাদন বেশি।
৬)জমির আয়তন: জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় ব্যবহৃত জমিগুলি ক্ষুদ্রায়তন হয়। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় ব্যবহৃত জমিগুলি বৃহদায়তন হয়।
৭)যন্ত্রপাতি: জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় যন্ত্রপাতির ব্যবহার খুব কম এবং যে অল্প পরিমাণ কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলির বেশির ভাগই পুরানো ধরনের হয়। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেশি এবং যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলির প্রায় সবই আধুনিক ধরনের হয়ে থাকে।
৮)উদ্বৃত্ত ফসল: জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক ববস্থায় উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ খুব বেশি থাকে না বললেই চলে। তাই এই কৃষি ব্যবস্থায় উৎপন্ন ফসল বিদেশে রপ্তানি করা যায় না বলে এটি বাণিজ্য নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা নয়। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ প্রচুর। তাই এই কৃষি ব্যবস্থায় উৎপন্ন ফসল বিদেশে রপ্তানি করা হয় বলে এটি বাণিজ্য নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা।
৯)উৎপন্ন ফসল: জীবিকা সত্ত্বাভিত্তিক ববস্থায় উৎপন্ন প্রধান ফসল হলো ধান। এছাড়া আলু পাট প্রভৃতিরও চাষ হয়। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় উৎপন্ন প্রধান ফসল হল গম। এছাড়া ডাল, সোয়াবিন প্রভৃতিরও চাষ হয়।