আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষির বৈশিষ্ট্য – আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষির পার্থক্য লেখ?: বৃষ্টিপাতের পরিমানের উপর ভিত্তি করে কৃষি ব্যবস্থাকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, যথা – আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষি । এখানে আর্দ্র কৃষির বৈশিষ্ট্য ও শুষ্ক কৃষির বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য পৃথক পৃথক ভাবে আলোচনা করা হল ।
আর্দ্র কৃষি ও তার বৈশিষ্ট্য
সংজ্ঞা – সাধারনত যে সব অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাত হয়, সেই সমস্ত অঞ্চলে ওই বৃষ্টিপাতের জলকে কাজে লাগিয়ে যে কৃষিকাজ করা হয় তাকে আর্দ্র কৃষি বলে।
আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল – যে সব ফসল চাষের জন্য অধিক জলের প্রয়োজন হয়, সেই সমস্ত ফসল এই কৃষি ব্যবস্থায় চাষ করা হয়ে থাকে। যেমন – ধান, পাট, আখ প্রভৃতি এই কৃষির প্রধান ফসল।
অবস্থান – এই কৃষি ব্যবস্থা নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে হয়ে থাকে। যেমন – ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল হিসাবে প্রচুর ধান ও পাট চাষ করা হয়ে থাকে।
বৈশিষ্ট্য
- এই কৃষি ব্যবস্থায় জলসেচ করার প্রয়োজন হয় না ।
- এই কৃষি যে সমস্ত অঞ্চলে প্রচলিত সেখানে জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় কৃষিজোত গুলি ক্ষুদ্র আকৃতির হয়ে থাকে ।
- আর্দ্র কৃষিতে হেক্টর প্রতি উৎপাদনের পরিমান বেশি হয় কিন্তু অধিক জনসংখ্যার জন্য মাথাপিছু উৎপাদন কম হয়।
- এই ধরণের কৃষিতে কায়িক শ্রমের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে।
- আর্দ্র কৃষি মূলত জীবিকাসত্বাভিত্তিক চরিত্রের হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই কৃষি ব্যবস্থায় প্রধানত খাদ্য শস্যের চাষ করা হয়ে থাকে এবং উদ্বৃত্ত ফসল কম থাকে বলে তেমন মুনাফা অর্জিত হয় না।
- এই কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তির তেমন একটা ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না।
শুষ্ক কৃষির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
সংজ্ঞা – যে সমস্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ৭৫ সেমির কম সে সমস্ত অঞ্চলে এই অল্প বৃষ্টির জলকে কাজে লাগিয়ে মূলত খরা প্রতিরোধী ফসলের চাষকে বলা হয় শুষ্ক কৃষি।
শুষ্ক কৃষির ফসল – শুষ্ক কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল গম, ভুট্টা, মিলেট ও ডাল ।
অবস্থান – এই কৃষি প্রধানত খরা প্রবন মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল গুলিতে হয়ে থাকে।
বৈশিষ্ট্য
- যে অল্প বৃষ্টি হয় তার উপর নির্ভর করেই এই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে । এই কৃষিতে জলসেচের তেমন সুযোগ থাকে না।
- এই কৃষিতে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান খুব কম হয়।
- শুষ্ক কৃষি অঞ্চলে কৃষি জমিতে জল ধরে রাখার জন্য কৃষি জোত গুলি ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করা হয়ে থাকে।
- এই অঞ্চলের মাটি গুলি শুষ্ক বেলে-দোয়াস প্রকৃতির হয়ে থাকে।
- প্রাচীন পদ্ধতিতে এই কৃষি কাজ করা হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রেও শ্রমের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে।
- এই কৃষি ব্যবস্থায় মাটিতে জলের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য জমির উপর অনেক সময় ফসলের অবশিষ্টাংশ এবং আগাছা বিছিয়ে রাখা হয়, এই পদ্ধতিকে মালচিং বলা।
আর্দ্র ও শুষ্ক কৃষির পার্থক্য
জলবায়ু
- উষ্ণ ও আর্দ্র নিরক্ষীয় এবং মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি দেখা যায়।
- উষ্ণ শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে শুষ্ক কৃষির প্রচলন দেখা যায়।
বৃষ্টিপাত
- বছরে ১৫০ থেকে ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি ব্যবস্থা দেখা যায়।
- সাধারণত যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৭৫ সেমির কম সেখানে শুষ্ক কৃষিকাজ হয়ে থাকে।
প্রধান ফসল
- আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল – ধান, পাট, আখ প্রভৃতি ।
- শুষ্ক কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল – গম, ভুট্টা, মিলেট ও ডাল ।
উৎপন্ন ফসল
- আর্দ্র কৃষিতে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান বেশি।
- শুষ্ক কৃষির ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান অনেক কম।
আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষির পার্থক্য
বিষয় | আর্দ্র কৃষি | শুষ্ক কৃষি |
সংজ্ঞা | পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে কেবল নিয়মিত ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিরজলের উপর নির্ভর করে কৃষিব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাকে আর্দ্র কৃষি বলে। | বছরে 50 সেমির কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে খরাসহনশীল শস্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে শুষ্ক কৃষি বলে। |
জলবায়ু | উষ্ণ ও আর্দ্র নিরক্ষীয় এবং মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি দেখা যায়। | উষ্ণ শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে শুষ্ক কৃষির প্রচলন দেখা যায়। |
বৃষ্টিপাত | বছরে ১৫০ থেকে ২০০ সেমির বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি ব্যবস্থা দেখা যায়। | সাধারণত যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৭৫ সেমির কম সেখানে শুষ্ক কৃষিকাজ হয়ে থাকে। |
প্রধান ফসল | আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল – ধান, পাট, আখ প্রভৃতি । | শুষ্ক কৃষির প্রধান ফসল গুলি হল – গম, ভুট্টা, মিলেট ও ডাল । |
উৎপন্ন ফসল | আর্দ্র কৃষিতে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান বেশি। | শুষ্ক কৃষির ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনের পরিমান অনেক কম । |
আধুনিক পদ্ধতি | আর্দ্র কৃষিতে যথাসম্ভব আধুনিক কৃষিপদ্ধিতে চাষাবাদ করা হয়। | শুষ্ক কৃষিতে আধুনিক কৃষিপদ্ধতি মেনে যত্নসহকারে তেমন চাষ হয় না। |