জীবন্ত জগতে বৈচিত্র্য | Diversity In The Living World : বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবনের গঠনসমূহ ও প্রক্রিয়াসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় সেটিই জীববিদ্যা (Biology)। জীবজগৎ বিভিন্ন বিচিত্র ধরনের সজীব বস্তু নিয়ে গঠিত। আদি মানবরা সহজেই জড় বস্তু ও সজীব বস্তুর মধ্যে পার্থক্য অনুধাবন করতে পেরেছিল। এরা কিছু জড় বস্তুকে (বায়ু, সমুদ্র, আগুন ইত্যাদি) এবং কিছু কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেবতারূপে জ্ঞান করত।
এই ধরনের সজীব ও জড় বস্তুদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে এরা সবই ছিল আদি মানবের মনে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টিকারী বস্তু এবং এজন্যই মানুষেরা এদের দেবতারূপে আহ্বান করত। মানব ইতিহাসে মানুষ সহ অন্যান্য সজীব বস্তুদের বর্ণনা অনেক পরে শুরু হয়েছিল। জীববিদ্যার মানবকেন্দ্রিক ধারণাকে যে সব সমাজ প্রশ্রয় দিয়েছিল, তারা জীববিদ্যার জ্ঞানের সীমিত বিকাশ ঘটাতে পেরেছিল।
প্রয়োজনের তাগিদে জীবনের ধরনের সুসংবদ্ধ এবং ব্যাপক বর্ণনা, সনাক্তকরণ, নামকরণ এবং শ্রেণিবিন্যাসের বিস্তৃত পদ্ধতিগুলো সামনে নিয়ে এসেছিল। এ ধরনের অধ্যয়নের সবচেয়ে বড়ো দিকটি ছিল এই যে অনুভূমিক ও উল্লম্ব উভয় দিক থেকে সজীব বস্তুগুলোর মধ্যে যে সাদৃশ্য রয়েছে তা উপলব্ধি করতে পারা। বর্তমান সময়ের সব সজীব বস্তুই একে অপরের সাথে এবং এমনকি যেসব জীব কোনো এক সময় পৃথিবীতে বাস করত তাদের সাথেও সম্পর্কিত।
এই উপলব্ধি এমন এক বিপ্লবের রূপ নিয়েছিল, যা মানুষের ধারণাকে খর্ব করেছিল ও জৈব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা করেছিল। এই এককের অধ্যায়গুলোতে বিন্যাসবিদদের পরিপ্রেক্ষিত থেকে শ্রেণিবিন্যাসসহ প্রাণী ও উদ্ভিদের সম্পর্কে সম্পূর্ন বিবরণ পাই।
হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন বিষয়ক জীববিজ্ঞানী আর্নস্ট মেয়ার (Ernst Mayr) 1904 সালের 5 জুলাই জার্মানির কেম্পটন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে বিংশ শতাব্দীর ডারউইন বলা হত। সর্বকালের একশত বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন ছিলেন ডারউইন।
1953 সালে মেয়ার হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে যোগদা করেন এবং Alexander Agassiz Professor of Zoology Emeritus উপাধি গ্রহণ করার পর 1975 সালে অবসর গ্রহণ করেন। তার প্রায় ৪০ বছরের কর্ম জীবনে তার গবেষণা পক্ষীবিদ্যা (Ornithology), বিন্যাসবিধি, ভৌগোলিক প্রাণীবিদ্যা, অভিব্যক্তি, সিস্টেমেটিক্স এবং জীববিদ্যার ইতিহাস ও দর্শনে প্রসার লাভ করেছিল।
তিনি প্রায় এককভাবে বিবর্তন সম্বন্ধীয় জীববিদ্যার প্রধান অংশ অর্থাৎ প্রজাতি বৈচিত্র্যের উদ্ভব ব্যাখ্যা করেছিলেন যা আজও প্রচলিত আছে। মেয়ার তিনটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন যা সর্বত্র ত্রিমুকুট হিসেবে পরিচিত। এগুলো হল- বালজান পুরস্কার (Balzan Prize) 1983, দ্য ইন্টারন্যাশানেল প্রাইজ ফর বায়োলজি (The International for Biology)- 1994; ব্র্যাফোর্ড পুরস্কার (Crafoord Prize) – 1999 সালে, মেয়ার 2004 সালে তার 100 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
Also Read : জীবজগৎ | The Living World