পৃথিবীর আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতির স্বপক্ষে কয়েকটি প্রমাণ দাও।

Rate this post

পৃথিবীর আহ্নিক গতি বা আবর্তন গতির স্বপক্ষে কয়েকটি প্রমাণ দাও: যে গতিতে সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী আপন মেরুরেখার ওপর অনবরত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে, তাকে আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি বলে। নিজের মেরুদণ্ডের বা মেরু রেখার চারিদিকে একবার সম্পূর্ণ ঘুরতে পৃথিবীর সময় লাগে 23 ঘন্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ড বা প্রায় 24 ঘন্টা। এই গতিতে পৃথিবী দিনে একবার সূর্য কে সামনে রেখে সম্পূর্ণ পাক খায় বলে, একে আহ্নিক গতি বলে। পৃথিবীর যে আহ্নিক গতি আছে অর্থাৎ পৃথিবী যে সূর্যকে সামনে রেখে দিনে একবার নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরছে, তার স্বপক্ষে নিম্নলিখিত প্রমাণগুলি দেয়া যায়-

১)সূর্যের আপাত গতি: প্রতিদিন সকালে সূর্য পূর্ব আকাশে ওঠে এবং সন্ধ্যাবেলায় পশ্চিম আকশে অস্ত যায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, সূর্য বুঝি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু আমরা জানি সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় 15 কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। পৃথিবী থেকে এত দূরে অবস্থান করে সূর্যের পক্ষে মাত্র 24 ঘন্টায় পৃথিবী পরিক্রমণ করার জন্য যে প্রচন্ড গতিবেগ প্রয়োজন তা আলোর গতিবেগের থেকেও অনেক বেশি। কিন্তু গণিত শাস্ত্র অনুসারে কোন পদার্থ আলোর থেকে দ্রুতগামী নয়। এর থেকে সহজেই প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারিদকে ঘুরছে অর্থাৎ পৃথিবীর আবর্তন গতি আছে।

২) মহাকর্ষ সূত্র: মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি কোন বড় ও ভারী বস্তু কখনোই তার থেকে হালকা ও ছোট বস্তুর চারিদিকে ঘুরতে পারে না। যেহেতু সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় 13 লক্ষ গুণ বড়,তাই মহাকর্ষ সূত্র অনুযায়ী সূর্যের পক্ষে পৃথিবীকে পরিক্রমণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যই আমরা সূর্যকে পূর্ব আকাশে উদিত হতে এবং পশ্চিম আকাশে অস্ত যেতে দেখি।

৩)ফুকোর পরীক্ষা: 1851 খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত ফরাসি বিজ্ঞানী ফুকো প্যারিস শহরের 61 মিটার উঁচু একটি গির্জার চূড়া থেকে একটি সরু তার ঝুলিয়ে ওই তারের নিচে একটি আলপিন আটকে দোলক তৈরি করেন। এরপর ওই দোলকের নিচে মাটিতে বালি ছড়িয়ে দেন। দোলকটিকে এমনভাবে রাখেন যাতে আলপিনটি বালির ওপর দাগ কাটতে পারে। এরপর তিনি দোলকটিকে উত্তর-দক্ষিণে দুলিয়ে লক্ষ্য করেন যে বালির ওপর আলপিনের দাগগুলি ক্রমশ পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। পৃথিবী যে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে এই পরীক্ষা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

৪) দিন রাত্রির পরিবর্তন: পৃথিবীর কোন স্থানে 12 ঘন্টা দিন ও 12 ঘন্টা রাত্রি হয়। যদি পৃথিবীর আবর্তন গতি না থাকতো তাহলে পৃথিবীর একদিক চির অন্ধকার ও অপরদিক চির আলোকিত হতো। কিন্তু বাস্তবে দিন রাত্রির পরিবর্তন হয়। আর এই দিন রাত্রির পরিবর্তন প্রমাণ করে যে পৃথিবীর আবর্তন গতি আছে।

৫)বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্র স্রোতের দিক পরিবর্তন: পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্র স্রোত উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর আবর্তন গতি না থাকলে এই বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্র স্রোত উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে যথাক্রমে ডানদিকে ও বামদিকে না বেঁকে সোজাসুজি প্রবাহিত হতো।

৬) জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি: প্রধানত চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রে জোয়ার ভাটা হয়। চাঁদ প্রায় 27 দিনে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর আবর্তন গতি না থাকলে 27 দিনে একবার মুখ্য জোয়ার হতো। কিন্তু আবর্তন গতিতে পৃথিবী নিজ দেহকে দিনে একবার করে ঘোরায় বলে ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি স্থানে দিনে একবার করে মুখ্য জোয়ার হয়।

৭) উঁচু স্থান থেকে বস্তু নিক্ষেপ: কোন ভারী বস্তুকে যদি উঁচু স্থান থেকে নিচ ফেলা হয় এবং সেই সময় যদি বায়ুপ্রবাহ প্রায় নিশ্চল থাকে, তাহলে বস্তুটি সরাসরি লম্বভাবে নিচে না পড়ে সামান্য পূর্ব দিক ঘেঁষে। পড়ে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে।

৮) অন্যান্য গ্রহের আবর্তন গতি: পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা গেছে যে সূর্যের অন্যান্য গ্রহগুলির আবর্তন গতি আছে। যেহেতু পৃথিবীও সূর্যের একটি গ্রহ, তাই এরও আবর্তন গতি থাকা স্বাভাবিক।

Leave a Comment