মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয়ের কারণ কী? ভূমিক্ষয়ের প্রভাব: পৃথিবীর উপরিভাগের আলগা শিলাচূর্ন বায়ু ও জল প্রভৃতি মাধ্যমের দ্বারা বাহিত হয়ে অপসারিত হওয়াকে ভূমিক্ষয় বা মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। ভূমিক্ষয়ের ফলে একদিকে যেমন ভূমিভাগের উচ্চতা হ্রাস পায় অন্য দিকে তেমনি ভূমির গুণগত মানেরও অবনমন ঘটে। এই মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব গুলোকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যথা – ১) প্রত্যক্ষ প্রভাব ২) পরোক্ষ প্রভাব।
ভূমিক্ষয়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব গুলি হল
মৃত্তিকার উর্বর অংশের অপসারন – মৃত্তিকার উপরের অংশটি উৎপাদনশীলতার দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারণ মৃত্তিকার এই অংশে জৈব পদার্থ থাকে যা থেকে উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিমৌল সংগ্রহ করে থাকে। তাই ভূমিক্ষয়ের দ্বারা মৃত্তিকার এই পৃষ্ঠস্তর অপসারনের ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে উতপাদনশীলতা কমে যায়।
পুষ্টিমৌলের অপসারন – উদ্ভিদ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিমৌল গুলি মাটি থেকে পেয়ে থাকে। যার মধ্যে অন্যতম হল নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। যা ছাড়া উদ্ভিদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। কিন্তু এই পুষ্টিমৌল গুলি ভূমিক্ষয়ের সাথে সাথে মৃত্তিকা থেকে অপসারিত হচ্ছে বলে, ভূমি গুলি উদ্ভিদহীন বন্ধুর ভূমিতে পরিনত হচ্ছে।
কৃষি জমির পরিমান হ্রাস – বায়ু দ্বারা ক্ষয় প্রাপ্ত অতি সূক্ষ্ম বালিকনা গুলি বাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমিতে পতিত হলে কৃষি জই গুলি চাষবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে ভারতে প্রচুর পরিমানে কৃষি জমি ধীরে ধীরে অনুর্বর পতিত জমিতে পরিনত হচ্ছে।
ভূমিক্ষয়ের পরোক্ষ প্রভাব গুলি হল
বন্যার প্রবনতা বৃদ্ধি – ক্ষয়জাত পদার্থ গুলি নদীগর্ভে সঞ্চিত হয় বলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায়। ফলস্বরূপ বর্ষার সময় নদী বর্ষার অতিরিক্ত জল ধারন করতে সক্ষম হয় না বলে বন্যার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
জলাধার গুলির জলধারনের ক্ষমতা হ্রাস – ক্ষয়জাত পদার্থ বায়ু ও জলের সাথে বাহিত হয়ে জলাধার গুলিতে সঞ্চিত হয়। ফলে এই সব জলাধার গুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়। জলের পরিমান কমে যাওয়া এই সব জলাধার থেকে সারা বছর ধরে জল পাওয়া যায় না।
নদীগর্ভে মগ্ন চরার সৃষ্টি – নদীতে এই ক্ষয়জাত পদার্থের পরিমান বৃদ্ধি পেলে সেগুলি নদীর তলদেশে ক্রমাগত সঞ্চিত হতে হতে মগ্ন চরার সৃষ্টি করে, যা নৌকা, স্ট্রিমার চলনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।
কর্দমাক্ত জল – নদীর জলের সাথে কর্দম কনা দ্রবীভূত হয়ে জল কে কর্দমাক্ত করে তোলে এবং নদীর জলের স্বচ্ছতা হ্রাস পায়।
বাতাসের দৃশ্যমানতা হ্রাস – বাতাসের সাথে প্রচুর পরিমানে ক্ষয়জাত পদার্থ ভাসমান অবস্থায় থাকলে দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। যা বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করে।
বায়ু দূষণ – ভুমিক্ষয় বাতাসে ধূলিকনার পরিমান বাড়িয়ে দেয়। যা আগত সৌর বিকিরনের বিচ্ছুরন ঘটিয়ে অ্যালবেডোর পরিমান বাড়িয়ে দেয়, যা আবহাওয়ার স্বাভাবিক ভারসাম্য কে বিঘ্নিত করে। যার ফলে বায়ু দূষিত হয়ে পড়ে।