রানী প্রথম এলিজাবেথ জীবনী | Elizabeth Biography in Bengali

Rate this post

রানী প্রথম এলিজাবেথ জীবনী | Elizabeth Biography in Bengali: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Elizabeth I Biography in Bengali. আপনারা যারা রানী প্রথম এলিজাবেথ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী রানী প্রথম এলিজাবেথ এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

রানী প্রথম এলিজাবেথ কে ছিলেন? Who is Elizabeth I?

প্রথম এলিজাবেথ (সেপ্টেম্বর ৭, ১৫৩৩‌ – মার্চ ২৪, ১৬০৩) ১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের রাণী, ফ্রান্সের রাণী (পদাধিকার অনুসারে) ও আয়ারল্যান্ডের রাণী ছিলেন। ১৫৩৩ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের গ্রিনউইচে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। টিউডর রাজবংশের পঞ্চম ও সর্বশেষ রানী ছিলেন তিনি। তার বাবা ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি। এলিজাবেথের বয়স যখন মাত্র আড়াই বছর তখন তার মা অ্যান বোলিনকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয় এবং এলিজাবেথকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

রানী প্রথম এলিজাবেথ জীবনী – Elizabeth I Biography in Bengali

নামপ্রথম এলিজাবেথ
জন্ম৭ সেপ্টেম্বর ১৫৩৩
পিতারাজা ৮ম হেনরি
মাতাঅ্যান বোলিন
জন্মস্থানপ্লাসেন্টিয়া প্রাসাদ, গ্রিনিচ, ইংল্যান্ড
জাতীয়তাব্রিটিশ
পেশাইংল্যান্ডের রাণী
মৃত্যু২৪ মার্চ ১৬০৩ (বয়স ৬৯)

রানী প্রথম এলিজাবেথ এর জন্ম: Elizabeth I’s Birthday

রানী প্রথম এলিজাবেথ ৭ সেপ্টেম্বর ১৫৩৩ জন্মগ্রহণ করেন।

রানী এলিজাবেথ ছিলেন ইংলন্ডের টিউডর বংশের রাজা অষ্টম হেনরীর মেয়ে। অবশ্য তার জন্মের বৈধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু তার পিতৃপরিচয় কেউ অস্বীকার করতে পারেনি। তিনি জন্ম সূত্রেই তাঁর পিতার কাছ থেকে লাভ করেছিলেন তীক্ষ্ণ উপস্থিত বুদ্ধি, কূটনৈতিক দক্ষতা, সৌজন্যহীন অহংভাব, মাত্রাতিরিক্ত ঔদ্ধত্য, চূড়ান্ত বিবেকহীনতা ও শিক্ষানুরাগ।

বয়স পঁচিশ পূর্ণ হবার আগেই ১৫৫৮ খ্রিঃ এলিজাবেথ ইংলন্ডের সিংহাসনে বসেন। তার আগে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ষষ্ঠ এডওয়ার্ড ও ভগ্নী মেরী স্বল্পকাল রাজত্ব করেছিলেন। এলিজাবেথের রাজত্বকালকে ইংলন্ডের ইতিহাসে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সময় বলা হয়। শুধু রাজনীতি বা পার্লামেন্টের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নয়, তার রাজত্বকাল সাহিত্যে এক অসাধারণ যুগ বলে প্রতিপন্ন হয়। ইংলন্ডের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের অনেকেই এই সময় আবির্ভূত হন।

এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেক্সপীয়র, মরলো, বেন জনসন, স্পেনসার, লিলি, গ্রীন প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও সাহিত্যিক। তার সময়েই নাট্য সাহিত্যের চূড়ান্ত বিকাশ লাভ করে যা ইংরাজি সাহিত্যে এলিজাবেথীয় নাটক বা Elizabethan Drama নামে পরিচিত। আর এই সময়ের ইংলন্ডকে বলা হত West of the singing birds.

রানী প্রথম এলিজাবেথ এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Elizabeth I’s Parents And Birth Place

এলিজাবেথের জন্ম ১৫৩৩ খ্রিঃ। পিতা অষ্টম হেনরী তাকে খুশি মনে মেনে নিতে পারেন নি। তিনি চেয়েছিলেন কোন পুরুষ বংশধর তার অবর্তমানে টিউডর বংশের ঐতিহ্যের ধারা বহন করে চলবে। তাই অজস্র বাধা বিপত্তি অগ্রাহ্য করে তিনি অ্যানবোলিনকে রানী করেছিলেন। কিন্তু অ্যান তাকে পুত্র সস্তান উপহার দিতে পারেন নি। এই অপরাধেই হয়তো তিন বছরের শিশুকন্যাকে ফেলে রেখে অ্যান বোলিনকে ফাসিকাঠে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

মায়ের মৃত্যুর পর থেকে শিশু এলিজাবেথের সাথী হয়েছিল একাকীত্ব, ভীতি, বেদনা এবং দুঃখ। খুব ছোট বয়স থেকেই মৃত্যুভয়ে তাকে শঙ্কিত থাকতে হত। তার ছেলেবেলার বেশিভাগ সময়টাই কেটেছে বন্দিদশায়। তবে তাকে সাহচর্য দিত বৈমাত্রেয় ভাই এডোয়ার্ড। আর পেয়েছিলেন ভালো গৃহশিক্ষক ও পড়বার মত প্রচুর পুস্তক। অষ্টম হেনরী মারা যান ১৫৪৭ খ্রিঃ। ইংলন্ডের সিংহাসনে বসলেন দশবছরের বালক ষষ্ঠ এডোয়ার্ড। তার অভিভাবক হয়ে রইলেন মামা ডিউক অব সমারসেট ৷

এডোয়ার্ড ছিলেন শারীরিকভাবে দুর্বল ও অর্থব। তিনি যে পরিপূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় কোনদিনই পৌঁছতে পারবেন না তা অবিদিত ছিল না। ফলে নতুন রাজার বাজত্বের অল্পকালের মধ্যেই ঘনিয়ে উঠল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের কালো মেঘ। অষ্টম হেনরীর উইল অনুযায়ী উত্তরাধিকারী হিসাবে এডোয়ার্ডের পরেই অ্যারাগনের ক্যাথারিনের কন্যা মেরী টিউডরের নাম ছিল। সব শেষে নাম ছিল এলিজাবেথের। এদের দুজনের কাছেই বিপদ স্বরূপ ছিল ফ্রান্সের দঁফের স্ত্রী ও অষ্টম হেনরীর বড়বোন মার্গারেটের নাতনী এবং স্কটল্যান্ডের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মেরী স্টুয়ার্ট।

ইংলন্ডের সিংহাসনে তাঁর দাবিও কিছু কম জোরালো ছিল না। যাই হোক, এহেন পরিস্থিতিতে কুটিল ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত ঘিরে ফেলতে লাগল ইংলন্ডের রাজ সিংহাসনকে। ষষ্ঠ এডোয়ার্ড মামার তত্ত্বাবধানে কয়েক বছর রাজত্ব করার পরেই ষোল বছরে পা দেবার আগেই মারা গেলেন। সঙ্গে সঙ্গেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠল অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র। এই সময়ে এলিজাবেথের সৎবোন মেরী তৎপরতার সঙ্গে তাকে পাঠিয়ে দিলেন দুর্গের অন্তরীনে। এই সময়ে তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেন স্পেনের ফিলিপ ও তার বাবাব হস্তক্ষেপের ফলে।

মেরী ইংলন্ডের সিংহাসনে রাজত্ব করলেন পাঁচ বছর। সেই সময় এলিজাবেথের জীবন কেটেছে লর্ড সেমুর – এর রাজসংসারে। সেমুর ছিলেন অষ্টম হেনরীর শেষ রানী ক্যাথারিনের দ্বিতীয় স্বামী। বয়সে তিনি স্ত্রীর চেয়ে অনেক ছোট ছিলেন। বিমাতার নতুন স্বামীর সংসারে এলিজাবেথ রূপ ও গুণে সুদর্শন সেমুরের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। ১৫৪০ খ্রিঃ ক্যাথারিন যখন মারা যান সেই সময় তার বয়স পনের। সদ্য যৌবনে পা দিয়েছেন। সেমুর সরাসরি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এলিজাবেথকে বিবাহ করে ইংলন্ডের সিংহাসন দখল করা। কিন্তু পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে ইতিহাস খুব স্পষ্ট নয়।

রানী প্রথম এলিজাবেথ এর কর্ম জীবন: Elizabeth I’s Work Life

মেরীর রাজত্বকালে প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করেছিল। প্রোটেস্ট্যান্ট শহীদদের রক্তে ইংলন্ডের মাটি লাল হয়ে উঠেছিল। একটার পর একটা ভুল ও অন্যায় পদক্ষেপের ব্যর্থতার মধ্যেই ১৫৫৮ খ্রিঃ নিঃসন্তান অবস্থায় করুণ মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল মেরীকে। এই বছরেই নভেম্বর মাসে এলিজাবেথ ইংলন্ডের রানী হলেন। সর্বক্ষেত্রে এক বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে শাসনদন্ড হাতে নিলেন এলিজাবেথ। চরম অর্থসংকটে ধুঁকছে তখন ইংলন্ড।

মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস পেয়ে গিয়েছিল। দেশের ধর্মবিরোধও চরমে। এই সংকট মোচনের জন্য এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেই প্রথমে তাঁর মন্ত্রীসভার অনুমোদন নিয়ে এক উপদেষ্টা মন্ডলী গঠন করলেন। এলিজাবেথের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া গেল তার প্রথম পদক্ষেপেই। তিনি উপদেষ্টা মন্ডলী গঠন করেছিলেন, সর্ববিষয়ে এদের উপদেশ ও মতামতও গ্রহণ করতেন। কিন্তু তার সঙ্গে যুক্ত করতেন তিনি তার নিজস্ব যুক্তিবুদ্ধি ও চিন্তাকে। এরপর যে সিদ্ধান্ত তিনি নিতেন তা হত সম্পূর্ণ তার নিজস্ব। এলিজাবেথের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইলিয়ম সেসিল।

দীর্ঘ চল্লিশ বছর তিনি এই পদে থেকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে রানীর সেবা করে গেছেন। তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এক ঐতিহাসিক বলেছিলেন, এমন এক রানীর উপযুক্ত কর্মচারী তিনি ছিলেন, যাঁর ডান হাত কি করছে তা কখনোই বাম হাত জানতে পেত না। বলাই বাহুল্য, রানী এলিজাবেথের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই মন্তব্যের মধ্যেই বিধৃত। রাজ্যের অর্থসংকট দূর করবার জন্য এলিজাবেথ প্রচন্ডভাবে ব্যয় সংকোচ করে এবং ব্যাপক হারে কর বসিয়ে কয়েক বছরের মধ্যেই দেশকে ঋণমুক্ত করলেন।

রানী প্রথম এলিজাবেথ আজীবন অবিবাহিত ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল ঐতিহাসিকরাঅনেকেই এমন অভিযোগ তুলেছেন। এই অভিযোগ যে একেবারেই অমূলক তা নয়। তৎকালীন ইংলন্ডের অভ্যন্তরীন রাজনীতি ও বৈদেশিক নীতিকে অনেকাংশেই জটিল করে তুলেছিল এলিজাবেথের ব্যক্তিগত জীবনচর্যা। যুবসম্প্রদায়ের ভালবাসার প্রতি তিনি লালায়িত ছিলেন। তার মোহিনী রূপে মোহিত হয়েছেন অনেকেই। বলা হয়ে থাকে এসেক্স – এর সঙ্গেই তার প্রেম সবচেয়ে গভীরতা লাভ করেছিল।

এলিজাবেথ ব্যক্তিগত জীবনে পছন্দ করতেন জাঁকজমক, আড়ম্বর এবং বিলাসিতা। রাজকীয় কোন অনুষ্ঠান বা শোভাযাত্রা তার সময়ে এমন বর্ণাঢ্য ও জলুসপূর্ণ হত যে জনসাধারণের চোখে ধাঁধা লেগে যেত। তিনি স্বয়ং এসবের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এর ফলে জনসাধারণের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন উৎসাহ ও প্রেরণার প্রতিমূর্তি। ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এলিজাবেথ নিজে ছিলেন প্রোটেস্ট্যাস্ট। কিন্তু ধর্মীয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে তিনি প্রশয় দিতেন না।

তিনি জানতেন যে তার দেশে বিদ্রোহ ও রাজদ্রোহের বীজ বপন করবার জন্য একদল বিশেষ সম্প্রদায়ের ধর্ম প্রচারকদের স্পেন থেকে পাঠানো হয়েছিল। এই ক্যাথলিক ধর্ম সংস্কারকদের প্রভাবে ইংলন্ডের জনজীবনের ধমনীতে যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনি উপলব্ধি করতে পারছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এলিজাবেথ ক্যাথলিকদের ওপর নির্যাতন না করে পারলেন না। অবশ্য তাঁর নিজের হাতে তৈরি চার্চ অব ইংলন্ড তৈরি হবার পরেই কোন কোন ঐতিহাসিক এমন মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন।

আবার একজন ঐতিহাসিক বলেছেন যে, ইংরাজ শাসকদের মধ্যে একমাত্র এলিজাবেথই বুঝতে পেরেছিলেন যে ধর্মীয় নির্যাতনের অভিযোগ শাসন ব্যবস্থার ওপর বিরাট কলঙ্কের বোঝা চাপিয়ে দেবে। সেকারণেই কেবলমাত্র ধর্মীয় মত পার্থক্যের দরুন কোন মানুষকে হত্যা করার চেষ্টাকে তিনি অপরাধ হিসেবেই গণ্য করতেন। এটা ঠিক যে ক্যাথলিকদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও এলিজাবেথ কখনো তা বাইরে প্রকাশ করতেন না যাতে তাকে বৃহৎ সংখ্যক প্রোটেস্ট্যান্টদের বিরাগভাজন করে তোলে।

১৫৬৮ খ্রিঃ লংসাইড – এর যুদ্ধে পরাজিত হবার পর স্কটল্যান্ডের রানী মেরী সীমান্ত পার হয়ে ইংলন্ডে আশ্রয় ভিক্ষা করেছিলেন। এলিজাবেথ তার সৎবোনের এই প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন কারাগারে। সৎবোন মেরী এলিজাবেথের প্রিয়পাত্রী ছিলেন না। কিন্তু তার কারাবাসের প্রধান করণ ছিল তাঁর ধর্মবিশ্বাস। একজন ক্যাথলিককে আশ্রয় দিয়ে তিনি প্রোটেস্ট্যান্ট ইংলন্ডের বিরাগ ভাজন হতে চাননি। মেরীকে দীর্ঘ আঠারো বছর কাটাতে হয়েছিল বিভিন্ন দুর্গে স্থান পরিবর্তন করে।

এলিজাবেথের স্বর্ণময় রাজত্বের গৌরবময় দিন হিসেবে গণ্য করা হয় ১৫৮৮ খ্রিঃ ১৭ ই নভেম্বর তারিখটিকে। এই দিন তিনি তার প্রিয় স্বদেশভূমি ইংলন্ডকে চরম বিপর্যয় ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকায় স্প্যানিশ জাহাজের ওপর ইংরাজ অভিযানকারীরা অত্যাচার করা ছাড়াও নানাভাবে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করছে এই অভিযোগ পেয়ে স্পেনের রাজা ফিলিপ শত্রু পক্ষকে জব্দ করবার জন্য তার রণতরীর বহর পাঠিয়ে দিলেন।

স্প্যানিশ আর্মাডার আক্রমণের পরিণতির আশঙ্কা করে এলিজাবেথকেও লন্ডন ত্যাগ করে চলে যেতে বলা হল। অনেকেই সেদিন এই শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে উঠলো যে এই সুযোগে দেশের অভ্যন্তরে ক্যাথলিকরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এলিজাবেথ কিন্তু মনোবল হারালেন না। তিনি দুর্জয় মনোবল নিয়ে টিলাবেরিতে এক সমাবেশে সৈন্যবাহিনীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে একজায়গায় বললেন, ‘আমার প্রিয় এবং বিশ্বস্ত দেশবাসীর প্রতি যেদিন আমার মনে একতিল সন্দেহ বা অবিশ্বাস দেখা দেবে, এমন দিনে একমুহূর্তের জন্যও আমি প্রাণ ধারণ করতে চাই না। আমি জানি আমি একজন নারী। শরীরগত কারণেই আমি ক্ষীণ ও দুর্বল।

কিন্তু তাই বলে দেশের প্রতি ভালবাসা কোন পুরুষের চাইতে আমার কম নয়। আমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে পারমা, স্পেন কিংবা ইউরোপের কোন যুবরাজ আমাব রাজ্যের সীমান্ত লঙ্ঘনের চেষ্টা করবে।” এলিজাবেথের বক্তব্যের অন্তর্গত উদ্দেশ্য সৈনিকদের অন্তর স্পর্শ কবল। তারা মিলিত কন্ঠে রানীর বক্তব্যের সমর্থনে হর্ষধ্বনি করে উঠল। ভাগ্যের এমনই বিচিত্র যোগাযোগ যে ঠিক সেই সময়েই একজন দূত এসে রানীকে জানাল যে ঈশ্বরের সহায়তায় ইংরাজরা স্পেনীয় আর্মার্ডাদের হটিয়ে দিয়েছে।

এলিজাবেথের গৌরবময় রাজত্বের সোনালী অধ্যায়ের চূড়ান্ত বিকাশ এখানেই শেষ হল, শৌর্য, মহত্ত্ব ও কূট বুদ্ধিকৌশলের বলে চরম বিপর্যয় ও ধ্বংসের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু নিয়তির অমোঘ বিধানে আবার অহংকারী ও তেজী এই মহিলাই ধীরে ধীরে একদিন হারিয়ে গেলেন দেশবাসীর অন্তর থেকে। প্রজ্বলন্ত অহংকারই হয়েছিল তাঁর পতনের কারণ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল প্রেমের অন্তহীন বুভুক্ষা। সুদর্শন তরুণ ও স্বেচ্ছাচারী নাইট এসেক্স – এর হৃদয়হীন ব্যবহারই এলিজাবেথকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধস্ত করে দিয়েছিল।

রানী প্রথম এলিজাবেথ এর মৃত্যু: Elizabeth I’s Death

শেষপর্যন্ত এসেক্সকে প্রাণ দিতে হয়েছিল ফাঁসিকাঠে ১৬০১ খ্রিঃ ২৫ শে ফেব্রুয়ারী। আর সেই সঙ্গে এলিজাবেথেরও বেঁচে থাকার অহংকার ও প্রাণশক্তি নিঃশেষিত হল। এরপর আর মাত্র বছর দুই বেঁচেছিলেন এলিজাবেথ। টিউডর বংশের রাজসিংহাসন শূন্য করে ইংলন্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথ মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। ২৪ মার্চ ১৬০৩ (বয়স ৬৯) রানী প্রথম এলিজাবেথ এর জীবনাবসান হয়। চিরকুমারী এলিজাবেথ কেন বিবাহ করেননি তার কারণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের গবেষণার অন্ত নেই। অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তাঁর গুরুতর কোন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল।, প্রকৃত সত্য যাই হোক না কেন, তিনি যে তার স্বদেশ ইংলন্ডকে হৃদয়ের সমস্ত ভালবাসা উজাড় করে দিয়েছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।

Leave a Comment