ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার: ব্রিটিশ ভারত বা ব্রিটিশ রাজ বলতে ১৮৫৮ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকে বোঝায়। উক্ত শব্দদুটির দ্বারা ভারতে ব্রিটিশ অধিরাজ্য ও তার অধীনস্থ শাসনকেও বোঝায়। বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে বিভক্ত এই সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ-শাসিত প্রদেশ ও ব্রিটিশ রাজশক্তির করদ রাজ্যসমূহ। ১৮৭৬ সালে সমগ্র অঞ্চলটিকে সরকারিভাবে ভারতীয় সাম্রাজ্য নামে অভিহিত করা হয় এবং এই নামেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হতে থাকে। ভারত নামে এই দেশ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য। এই নামেই ভারত ১৯০০, ১৯২০, ১৯২৮, ১৯৩২ ও ১৯৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে।
১৮৫৮ সালে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তির হাতে স্থানান্তরিত হয়। রাণী ভিক্টোরিয়া নিজ হস্তে ভারতের শাসনভার তুলে নেন। এর সঙ্গে সঙ্গে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৬ সালে ভিক্টোরিয়া ভারত সম্রাজ্ঞী উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ভারতীয় অধিরাজ্য (পরবর্তীকালে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র) ও পাকিস্তান অধিরাজ্য (পরবর্তীকালে পাকিস্তান) নামে দুটি অধিরাজ্যে বিভক্ত হলে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৩৭ সালে ব্রহ্মদেশকে (বর্তমানে মিয়ানমার) ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
- ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার কীভাবে শুরু হয়?
উত্তর: 1757 খ্রিস্টাব্দের পলাশী যুদ্ধের আগে পর্যন্ত ব্রিটিশরা ভারতে কেবলমাত্র ব্যবসায়িক হিসাবে অবস্থান করতো। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলায় ব্রিটিশরা বাণিজ্যিক থেকে প্রশাসনিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে।
পলাশী যুদ্ধের ফলে প্রাপ্ত বাংলার বিপুল সম্পদ ব্যবহার করে কোম্পানি সারা ভারতে কৃর্তত্ব বিস্তারে উদ্যোগ নেয়। যা চূড়ান্ত রূপ নেয় বক্সারের যুদ্ধের জয়ের ফলে।
বক্সারের যুদ্ধ ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা কে সুনিশ্চিত করে। কারণ মুঘল সম্রাটকেও পরাজিত করার ফলে, কোম্পানি শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।
দেওয়ানি লাভের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে বানিজ্য রত অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানির তুলনায় রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির দিক থেকে এগিয়ে যায়। সর্বোপরি দেওয়ানী অর্জনের মাধ্যমে কেবল বাংলার ওপরেই নয়, উড়িষ্যা ও অযোধ্যাসহ সমগ্র গাঙ্গেয় উপত্যকায় প্রশাসনিক ও অর্থব্যবস্থার ওপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আইনগত আধিপত্য স্থাপিত হয় এবং ভারতে তাদের প্রকৃত সাম্রাজ্য বিস্তারের সূচনা হয়।
- রেগুলেটিং আইন কী?
উত্তর: ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করার জন্য ব্রিটিশ সরকার 1773 খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশের মাধ্যমে কোম্পানির সাংগঠনিক কিছু ত্রুটি দূর করার চেষ্টা করা হয়, যা রেগুলেটিং আইন নামে পরিচিত।
ভারতের শাসনতান্ত্রিক বিবর্তনে প্রথম লিখিত এই আইনের মাধ্যমেই লন্ডনের ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ভারতে কোম্পানি শাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের উদ্যোগ নেয়। এই আইনের মাধ্যমে ভারতে সর্বপ্রথম একটি কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার সূচনা করা হয়।
1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইন:
- 4 সদস্যের কাউন্সিলর সহ বাংলার গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করা হয় এবং ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন।
- বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি ওপর কলকাতা প্রেসিডেন্সির গভর্নর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পায়।
- প্রধান বিচারপতি এলিজা ইম্পের সঙ্গে লেমিস্টার, চেম্বার ও হাইড নামে আরো তিন বিচারপতি নিয়ে 1774 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় একটি সুপ্রিম কোর্ট স্থাপন করা হয়।
- বোর্ড অফ ডাইরেক্টরসদের সংখ্যা 24 করা হয় এবং তাদের যোগ্যতা, ভোট দেওয়ার অধিকার ইত্যাদি বিষয় গুলি আনা হয় ব্রিটিশ সরকারের অধীনে।
- রেগুলেটিং আইনে কোম্পানির সকল কর্মচারীর উপহার ও ঘুষ নেওয়া নিষিদ্ধ হয়।
3. অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কী?
উত্তর: কট্টর সাম্রাজ্যবাদী লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যেসকল নীতি গ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (1798)।
এই নীতি অনুসারে ভারতীয় কোন রাজা যদি কোম্পানির সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতা সূত্রে আবদ্ধ হন, তাহলে তাকে কয়েকটি শর্ত পালন করতে হত। যেমন –
- চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাজ্যগুলিকে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, বৈদেশিক আক্রমণ ও অন্যান্য বিপদ থেকে কোম্পানি রক্ষা করত।
- চুক্তিবদ্ধ রাজ্যগুলির নিজেদের অর্থে ইংরেজ সেনা মোতায়েন করবে এবং সেই সেনাবাহিনীর প্রধান হবে একজন ইংরেজ সেনাপতি অর্থাৎ ইংরেজ রেসিডেন্ট।
- কোম্পানির বিনা অনুমতিতে চুক্তিবদ্ধ রাজ্যের অপর কোন শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ বা মিত্রতা স্থাপন করা যাবে না। অর্থাৎ সে রাজ্যগুলির বৈদেশিক নীতি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নির্ধারণ করত।
- চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাজ্যে ব্রিটিশ ব্যতীত অন্য সমস্ত ইউরোপীয়কে তাড়িয়ে দিতে হত।
ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি সর্বপ্রথম গ্রহণ করেন হায়দ্রাবাদের নিজাম (1798)। এরপর নানা উপায়ে বিনা যুদ্ধে ওয়েলেসলি একের পর এক রাজ্য সুরাট (1799), তাঞ্জোর (1800), কর্ণাটক (1801), অযোধ্যা (1801) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণের ফলে ব্রিটিশ সৈন্য বাহিনীর খরচ বহন করে দেশীয় রাজ্যগুলির আর্থিক ক্ষতি সাধন হয় এবং নিজস্ব সেনাবাহিনী গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় তা ভেঙে দেওয়া হয়, ফলে সেই বাহিনীতে কর্মরত বহু সৈনিক বেকার হয়ে পড়ে।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রয়োগের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শক্তিশালী ও সম্পদশালী হয়ে ওঠে এবং এক সার্বভৌম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই নীতির প্রয়োগ বিভিন্ন দেশের রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করে, লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটায়।
- সগৌলির সন্ধি কী?
উত্তর: লর্ড ওয়েলেসলি পর ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারে লর্ড হেস্টিংস অর্থাৎ আর্ল অফ মায়ার বিশেষ উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। 1801 খ্রিস্টাব্দে ওয়েলেসলি গোরক্ষপুরকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করলে, নেপালের দক্ষিণ সীমা পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়।
নেপালের গুর্খারা ব্রিটিশ এলাকায় হানা দিতে শুরু করলে কোম্পানি বারবার প্রতিবাদ করেও যখন কোনো ফল হলো না, তখন লর্ড মায়ার 1814 খ্রিস্টাব্দে নেপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। গুর্খারা সংখ্যায় কম হলেও ইংরেজ সৈন্য প্রথমদিকে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এবং তারা প্রায় পরাজয়ের মুখে এসে পড়েছিল। 2 বছর ধরে উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ চলে।
যাইহোক, ইংরেজ সেনাপতি অক্টারলোনি 1815 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে গুর্খা সেনাপতি অমর সিং থাপাকে পরাজিত করে মালাওঁ দুর্গ অধিকার করেন। বহু গুর্খা সৈন্যকে ঘুষ দিয়ে বশীভূত করা হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে 1815 খ্রিষ্টাব্দের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
নেপাল সরকারেই সন্ধি অনুমোদন না করায়, অক্টারলোনি নেপালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গুর্খা বাহিনীকে পরাজিত করেন ও রাজধানী কাঠমান্ডু অবরোধ করেন। নেপাল সরকার তখন সগৌলির সন্ধি অনুমোদন করতে বাধ্য হয় (1816)।
সগৌলির সন্ধির শর্তানুসারে
- সিমলা, মুসৌরি, নৈনিতাল ও অলমোড়া পার্বত্য অঞ্চল সহ কুমায়ুন ও গাড়ওয়াল জেলা এবং তরাই অঞ্চলের এক অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।
- সিকিমের ওপর নেপাল সরকারের অধিকার বিলুপ্ত হয়।
- নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে একজন ব্রিটিশ রেসিডেন্ট থাকবেন বলে স্থির হয়।
5. অমৃতসরের সন্ধি কী?
উত্তর: ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী শিখ সাম্রাজ্য গড়ে তোলায় ছিল রঞ্জিত সিং এর একমাত্র ধ্যান। আর, এই উদ্দেশ্য সিদ্ধি করতে তিনি যুদ্ধ-বিগ্রহ ও কূটনীতি উভয়ের সাহায্য নেন। তিনি শতদ্রু নদীর পশ্চিমে অবস্থিত শিখ মিসলগুলির ওপর একে একে আধিপত্য স্থাপন করেন এবং 1802 খ্রিস্টাব্দে শিখ-তীর্থ অমৃতসর দখল করেন।
শতদ্রু নদীর পূর্বে অবস্থিত শিখ মিসলগুলির অধিপতিদের মধ্যে বিবাদের মীমাংসা করার জন্য ওদেরই একজন রণজিৎ সিংহের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করে এবং সুযোগ বুঝে তিনি সসৈন্যে শতদ্রু অতিক্রম করে লুধিয়ানা অধিকার করেন। কিন্তু ওইসব নায়ক রঞ্জিত অধীনতা স্বীকার রাজি ছিল না এবং তারা পাতিয়ালার সর্দার সাহেব সিং এর নেতৃত্বে ইংরেজের সাহায্য প্রার্থনা করে লর্ড মিন্টোর শরণাপন্ন হয়।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার খাতিরে শতদ্রু নদীর তীর পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার এবং সেই সময় ফরাসী আক্রমণের সম্ভাবনা থাকায় ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টো রঞ্জিত সিং এর বিরোধিতা করার সাহস করেনি।
লর্ড মিন্টো রঞ্জিত সিং এর সঙ্গে আলোচনার জন্য চার্লস মেটকাফকে লাহোরে রঞ্জিতের রাজসভায় পাঠান। দীর্ঘ আলোচনার পর 1809 খ্রিস্টাব্দে রঞ্জিত সিং ও ইংরেজদের মধ্যে অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়।
অমৃতসরের সন্ধি অনুসারে –
- শতদ্রু নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত রণজিৎ সিংহের রাজ্যসীমা নির্দিষ্ট হয়।
- শতদ্রু নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত মিসলগুলি ইংরেজদের আনুগত্য স্বীকার করে সেখানে ইংরেজ সৈন্য মোতায়েন করে।
- ঠিক হয় উভয়পক্ষ স্থায়ী মৈত্রী বজায় রাখবে।
অমৃতসরের সন্ধির ফলে রণজিৎ সিংহের অখিল শিখ সাম্রাজ্য গঠনে স্বপ্ন চিরতরে বিনষ্ট হয় এবং বিনা যুদ্ধে শতদ্রু ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী শিখ রাজ্যগুলিতে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
- লাহোরের সন্ধি কী?
উত্তর: রঞ্জিত সিং এর মৃত্যুর পর শিখরাজ্যের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে ইংরেজ কোম্পানি পাঞ্জাব দখলের প্রস্তুতি শুরু করে। লর্ড হার্ডিঞ্জের নির্দেশে ইংরেজ সেনারা শতদ্রু নদীর তীরে উপস্থিত হলে, নাবালক রাজা দলীপ সিং এর অভিভাবিকা রানী ঝিন্দনের নির্দেশে 1845 খ্রিস্টাব্দে শিখ খালসা বাহিনী শতদ্রু নদী অতিক্রম করে ব্রিটিশ রাজ্য আক্রমণ করলে প্রথম ইঙ্গ শিখ যুদ্ধ শুরু হয়।
শিখ খালসা বাহিনী বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে কিন্তু লাল সিং, তেজ সিং প্রভৃতি স্বার্থপর সেনানায়ক নিস্ক্রিয় থাকে ও বিশ্বাসঘাতকতা করে। ফলে শিখরা মুদকী, আলিওয়াল ও ফিরোজশার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে 1846 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের সঙ্গে লাহোরের সন্ধি স্বাক্ষর করে।
লাহোরের সন্ধি অনুসারে –
- শতদ্রু ও বিপাশা নদীর বামদিক অবস্থিত শিখ রাজবংশ ব্রিটিশ লাভ করে।
- রাজকৈষে অর্থের অভাবের জন্য যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে না পারায় কাশ্মীর ও জম্মু ইংরেজদের অর্পণ করা হয়।
- শিখরা প্রতিশ্রুতি দেয় তাদের সৈন্যবাহিনীতে 25 ব্যাটেলিয়ানের বেশি পদাতিক সৈন্য এবং 12000 বেশি অশ্বারোহী সৈন্য থাকবে না।
- ইংরেজরা প্রতিশ্রুতি দেয় তারা লাহোরের অভ্যন্তরীণ শাসনের ক্ষেত্রে কোনোরকম হস্তক্ষেপ করবে না।
এরপর সেই বছর 16 ই ডিসেম্বর ইংরেজ ও শিখদের মধ্যে লাহোরের দ্বিতীয় সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। এই সন্ধি অনুসারে –
- ইংরেজদের ঘনিষ্ঠ আটজন শিখ নেতাকে নিয়ে একটি রাজ্যপরিষদ গঠিত হয় এবং এই পরিষদ ব্রিটিশ রেসিডেন্টের পরামর্শ ও নিয়ন্ত্রণে পাঞ্জাবের মহারাজ দিলীপ সিংকে পরিচালিত করবে।
- লাহোরে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন থাকবে এবং তার খরচ চালানোর জন্য শিখ সরকার বার্ষিক 22 লক্ষ টাকা দেবে। লাহোরের 2 সন্ধির ফলে শিখরাজ্যে মূলত ব্রিটিশ শাসন কায়েম হয় এবং ব্রিটিশ রেসিডেন্ট হেনরি লরেন্স হয়ে ওঠেন শিখ রাজ্যের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক।
7. স্বত্ববিলোপ নীতি কী?
উত্তর: লর্ড ডালহৌসি ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যে সমস্ত পথ অবলম্বন করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বত্ববিলোপ নীতি। এই নীতি অনুসারে লর্ড ডালহৌসি কয়েকটি রাজ্য অধিকার করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
স্বত্ববিলোপ নীতির মূল কথা হল, ইংরেজদের আশ্রিত কোন রাজ্যের উত্তরাধিকারি না থাকালে রাজা মারা যাবার পর ওই রাজ্যটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং ইংরেজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ওই সব আশ্রিত রাজ্যে কোন দত্তকপুত্রের অধিকার স্বীকৃত হবে না।
ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে 1848 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সাতার রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
এরপর 1853 সালে নাগপুরের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে, তাঁর রাজ্যটি গ্রাস করা হয়। এক্ষেত্রে ডালহৌসির যুক্তি ছিল যে, নাগপুর রাজ্যটি ইংরেজরাই সৃষ্টি করেছিল।
ঝাঁসি রাজা গঙ্গাধর রাও মারা গেলে, ঝাঁসির রানির মতামতকে উপেক্ষা করেই তার দত্তক পুত্রকে মেনে না নিয়ে ঝাঁসি রাজ্যটি দখল করা হয়।
এরপর একে একে সম্বলপুর, উদয়পুর, ভগৎপুর, কুরৌলী, জৈৎপুর ও বাগাৎ প্রভৃতি রাজ্যগুলি একই কারণে গ্রাস করা হয়। যদিও উদয়পুর কোম্পানির সৃষ্টি দেশীয় রাজ্য ছিল না।
বৃত্তিভোগী পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও এর মৃত্যুর পর, তাঁর দত্তকপুত্র নানাসাহেবকে বৃত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়।