মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কিত ফন এর তত্ত্ব: ভারতের শীত ও গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ ঋতুভেদে যে বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহ লক্ষ্য করা যায় তাকে মৌসুমী বায়ু বলে। ভারতের জলবায়ু মৌসুমী বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে একে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলে। এই মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে তা বিভিন্ন ভৌগলিক বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি সম্পর্কিত তত্ত্ব গুলি কে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা – 1) প্রথাগত তত্ত্ব বা ধারণা, 2) গতিশীল তত্ত্ব বা ধারণা এবং 3) আধুনিক তত্ত্ব। এখানে মৌসুমী বায়ু উৎপত্তি সম্পর্কিত ফন এর গতিশীল তত্ত্বটি আলোচনা করা হল যা বায়ুচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত।
ফন এর তত্ত্বটি আলোচনার পূর্বে চাপ বলয় এর স্থান পরিবর্তন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাই প্রথমে ভারতের অক্ষাংশগত অবস্থান ও বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ভারতের অক্ষাংশ গত অবস্থান – উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ অংশ নিরক্ষরেখা থেকে মাত্র 8⁰4′ উত্তরে অবস্থিত।
বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান – নিরক্ষীয় অঞ্চলে অধিক উষ্ণতা জনিত কারণে সৃষ্টি হয়েছে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় (0⁰-5⁰ উত্তর ও দক্ষিণ)। নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের উভয় পাশে 25⁰-35⁰ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ বরাবর অবস্থিত কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ অঞ্চল। এই কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে সারা বছর ধরে উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রবাহ প্রবাহ দেখা যায় এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই দুই প্রকার বায়ুর মিলন হয় বলে, একে আন্ত:ক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল বা ITCZ বলে। আর এই বায়ু চাপ বলয় গুলি প্রতি বছর সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন এর সাথে সাথে 5⁰ থেকে 10⁰ উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়।
ফন এর তত্ত্বের ব্যাখ্যা – জার্মান আবহবিদ ফন 1951 সালে পৃথিবীর বায়ু চাপ বলয় গুলির স্থান পরিবর্তনের সাথে মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তির ধারণা টি ব্যাখ্যা করেন। তার তত্ত্ব টি Dynamic Theory নামে পরিচিত।
ফন এর মতে গ্রীষ্ম কালে সূর্য যখন উত্তর গোলার্ধে কর্কট ক্রান্তি রেখার উপর লম্ব ভাবে পরে, তখন বায়ু চাপ বলয় গুলি 5⁰ থেকে 10⁰ উত্তরে স্থান পরিবর্তন করে। অর্থাৎ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় টি নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে 5⁰-10⁰ উত্তরে সরে যায়। (দ্রষ্টব্য – নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন হলেও নিরক্ষীয় অঞ্চল (0⁰) কিন্তু একই অবস্থানে থাকে)।
গ্রীষ্ম কালে মে-জুন মাসে সূর্যের উত্তরায়ণ এর সময় দক্ষিণ গোলার্ধের মকরীয় উচ্চ চাপ অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ধাবিত দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা (0⁰) অতিক্রম করা মাত্র ফেরেল এর সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে নিরক্ষীয় পশ্চিমা (Equatorial Westerlies) নামে ভারতীয় ভূখণ্ডের দিকে এগিয়ে যায়। যা ভারতের কেরালা দিয়ে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু রূপে ভারতে প্রবেশ করে। এই ভাবেই বায়ু চাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন ভারতের মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি ঘটায়।