গান্ধী-আরউইন চুক্তি কি? গান্ধী-আরউইন চুক্তির শর্তাবলী ও গুরুত্ব আলোচনা করো: 1930 খ্রিস্টাব্দের 27শে মে সাইমন কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশিত হলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড সাইমন কমিশনের রিপোর্ট বিচার বিবেচনা করার জন্য 1930 খ্রিস্টাব্দের 12ই নভেম্বর ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে আহ্বান করেন।কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের কোনো প্রতিনিধি যোগদান না করায় ওই বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড আশা প্রকাশ করেন যে জাতীয় কংগ্রেস পরবর্তী বৈঠক সমূহে যোগদান করবে। তার সরকার বিনা শর্তে গান্ধীজিকে মুক্তি দেন এবং গান্ধীজী ভাইসহ লর্ড আরউইনের সঙ্গে এক দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হয়ে 1930 খ্রিস্টাব্দের 5ই মার্চ এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি গান্ধী-আরউইন চুক্তি নামে পরিচিত।
গান্ধী-আরউইন চুক্তির শর্তাবলী
গান্ধী-আরউইন চুক্তির শর্তানুসারে ঠিক হয়
1)গান্ধীজী আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেবেন এবং দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগদান করবেন।
2)ব্রিটিশ সরকার সমস্ত দমন মুলক আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার করে নেবেন।
3)সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
4)আইন অমান্য আন্দোলনে যাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
5)ব্রিটিশ সরকার ভারতে লবণের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করবে এবং লবণ তৈরির অনুকূল পরিবেশ থাকলে ভারতীয়রাও নিজেদের ব্যবহারের জন্য লবণ তৈরি করতে পারবে।
গান্ধী-আরউইন চুক্তির গুরুত্ব
লর্ড আরউইন উপরি উক্ত শর্তগুলি পুরোপুরি মেনে না নিলেও রাজবন্দীদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে, বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি আন্দোলনকারীদের ফিরিয়ে দিতে এবং সমুদ্রতীর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বসবাসকারীদের বিনাশুল্কে লবণ উৎপাদনের অনুমতি দিতে রাজি হন। তবে ভগৎ সিং, রাজগুরু, শুকদেব ও বটুকেশ্বর দত্তের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে কোন আলোচনা না করায় জহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ গান্ধীজিকে দোষারোপ করেন। ভারতীয় জনগনের সামগ্রিক স্বার্থের পরিপন্থী গান্ধী-আরউইন চুক্তি জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যেও দারুণভাবে সমালোচিত হয়। এই চুক্তির ফলে আইন অমান্য আন্দোলন বন্ধ হওয়ার দরুন মুখ রক্ষার উপায় হিসেবে জাতীয় কংগ্রেস তথা গান্ধীজি দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন।