আরমাউয়ার হ্যানসেন জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Gerhard Armauer Hansen Biography in Bengali. আপনারা যারা আরমাউয়ার হ্যানসেন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী আরমাউয়ার হ্যানসেন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
আরমাউয়ার হ্যানসেন কে ছিলেন? Who is Gerhard Armauer Hansen?
গেরহার্ড হেনরিক আরমাউয়ার হ্যানসেন (29 জুলাই 1841 – 12 ফেব্রুয়ারী 1912) ছিলেন একজন নরওয়েজিয়ান চিকিত্সক, যিনি 1873 সালে কুষ্ঠরোগের কার্যকারক এজেন্ট হিসাবে মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রে ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করার জন্য স্মরণীয় হয়েছিলেন। ১৯০৯ সালে বার্গেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কুষ্ঠ কংগ্রেসে তার বিশিষ্ট কাজ স্বীকৃত হয়।
আরমাউয়ার হ্যানসেন জীবনী – Gerhard Armauer Hansen Biography in Bengali
নাম | আরমাউয়ার হ্যানসেন |
জন্ম | 29 জুলাই 1841 |
পিতা | ক্লজ হ্যানসেন |
মাতা | এলিজাবেথ কনকর্ডিয়া শ্রাম |
জন্মস্থান | বার্গেন, নরওয়ে |
জাতীয়তা | নরওয়েজিয়ান |
পেশা | চিকিৎসক |
মৃত্যু | 12 ফেব্রুয়ারি 1912 (বয়স 70) |
আরমাউয়ার হ্যানসেন এর জন্ম: Gerhard Armauer Hansen’s Birthday
আরমাউয়ার হ্যানসেন 1841 সালের 29 জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।
কুষ্ঠ এক ভয়াবহ ব্যাধি। অতি প্রাচীনকাল থেকেই এই রোগ সন্ত্রাসিত করছে সমাজকে। ব্যাধিটির কারণ ও প্রতিষেধকের অনুসন্ধানেও মানুষের চেষ্টার বিরাম ছিল না। পৃথিবীর প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র গুলিতে কুষ্ঠরোগের বর্ণনা রয়েছে। কোথাও কোথাও প্রতিকারের উপায়ও বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তবু কুণ্ঠর ভয়াবহতা কিছুমাত্র হ্রাস পেতে দেখা যায়নি। দীর্ঘকাল থেকেই পৃথিবীর সর্বত্র এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ তীব্র যন্ত্রণা ভোগের মধ্যে মৃত্যুবরণ করে।
এই ভয়াবহ রোগকে কেন্দ্র করে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মনে নানান সংস্কার জন্ম নিয়েছে। লোকে মনে করত কুণ্ঠ সংক্রামক ব্যাধি এবং নিরাময়ের অতীত। তাই কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকেসমাজ থেকে নির্বাসিত হতে হত। তাদের লোকে ঘৃণায় ও ভয়ে স্পর্শ পর্যন্ত করত না। মনুষ্যবসতির বাইরে অবর্ণনীয় যন্ত্রণা দুর্দশা ভোগ করে রোগগ্রস্ত মানুষদের পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হত। কুষ্ঠরোগের সঠিক কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা ও রোগের নিরাময়ের উপায় জানার জন্য আধুনিক যুগেও মানবদরদী বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকগণ নিরলস সাধনায় ব্রতী হয়েছেন।
মানুষের চেষ্টাই ফলবতী হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ১৮৭৪ খ্রিঃ চিকিৎসাশাস্ত্রবিদ ও গবেষক জি . আরমাউয়ের হ্যানসেন কুষ্ঠরোগের জীবাণু আবিষ্কারে সমর্থ হন। তার গবেষণার ফলেই বর্তমানে সমাজ থেকে কুষ্ঠবোগের ভীতি ও ত্রাস দূরীভূত হয়েছে বলা যায়। বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা প্রণালী আবিষ্কৃত হওয়ায় কুষ্ঠ আজ নিরাময় সম্ভব হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে অতীতের অনেক ধারণাই ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। জানা গেছে এই রোগ সব ক্ষেত্রেই সংক্রামক নয়, বা বংশানুক্রমিকও নয়। মানবহিতৈষণার ক্ষেত্রে যেসব মনীষীর অবদান মানবসভ্যতা ভোগ করছে, হ্যানসেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
আরমাউয়ার হ্যানসেন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Gerhard Armauer Hansen’s Parents And Birth Place
হ্যানসেনের জন্ম ১৮৪১ খ্রিঃ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী। চিকিৎসক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কুষ্ঠরোগীদের দুর্দশার কথা অজানা ছিল না হ্যানসেনের। কিন্তু এই রোগের নিরাময়ের কোন ফলপ্রসু পথ জানা ছিল না। একসময় তিনি চিকিৎসাবৃত্তি থেকে সরে এসে গবেষণায় লিপ্ত হলেন। দীর্ঘ ও কঠোর গবেষণার পর হ্যানসেন সফল হলেন। জানতে পারলেন এই রোগের জীবাণুর পরিচয়।
১৮৭৪ খ্রিঃ সেই প্রথম মানুষ জানতে পারল মিকোবাতেরিয়ম লেপরী নামের এক প্রকার জীবাণু ভয়াবহ কুন্ঠরোগের কারণ। তিনি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে জানান কুষ্ঠ রোগের জীবাণুর সঙ্গে যক্ষা রোগের জীবাণুর সাদৃশ্য রয়েছে। আর এই রোগ কোন অবস্থাতেই বংশানুক্রমিক নয়। কুষ্ঠ দু ধরনের — এর একটি সংক্রামক ও অপরটি অসংক্রামক। সংক্রামক রোগগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতস্থান থেকে যে রস নিঃসৃত হয় তার মধ্যে থাকে রোগজীবাণু। কোনভাবে এই জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে রোগ সংক্রমণ ঘটে থাকে।
আরমাউয়ার হ্যানসেন এর কর্ম জীবন: Gerhard Armauer Hansen’s Work Life
অল্পকালের মধ্যেই কুষ্ঠ রোগজীবাণু সম্বন্ধে হ্যানসেনের দেওয়া তথ্য অন্য বিজ্ঞানীরা স্বীকার করে নিলেন। হ্যানসেন রোগজীবাণুর পরিচয় আমাদের জানিয়েছিলেন কিন্তু কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে অনুসরণ করে বহু বিজ্ঞানী গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। আবিষ্কৃত হয় কুষ্ঠরোগের প্রতিষেধক। এই ওষুধের নাম সালফোন। এই আবিষ্কারের ফলেই সমাজ থেকে কুষ্ঠরোগের ভীতি ও ভয়াবহতা দূর হয়েছে। তবুও দুঃখের বিষয় যে সমাজ থেকে কুসংস্কারের বীজ এখনো নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন দেশে সরকারী বেসরকারী স্তরে বিভিন্ন ভাবে প্রচার অভিযান চালানো হয়েছে এই উদ্দেশ্যে, সেই চেষ্টা এখনো অব্যাহত, তবুও মানুষের মন থেকে কুণ্ঠ রোগীর প্রতি ঘৃণার ভাব দূর হয়নি। হ্যানসেনের সোচ্চার ঘোষণার পরও সমাজের অকারণ ঘৃণা ও অবহেলার শিকার হচ্ছে হতভাগ্য কুষ্ঠরোগীরা। হ্যানসেন জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন কুষ্ঠরোগের গবেষণায়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি অন্য কিছু বিষয় নিয়েও গবেষণা করেছিলেন। ডারউইনের বিবর্তনবাদের ওপরে তাঁর গবেষণা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি কুন্ঠরোগের জীবাণু আবিষ্কার।
আরমাউয়ার হ্যানসেন এর মৃত্যু: Gerhard Armauer Hansen’s Death
১৯১২ খ্রিঃ হ্যানসেনের জীবনাবসান হয়।