হিমবাহ ও হিমবাহ সৃষ্ট ভূমিরূপ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর: হিমবাহ (Glacier) হল বরফের বিরাট চলমান স্তুপ বা নদী। সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলে শীতকালে তুষার পড়ার হার গ্রীষ্মে গলনের হারের চেয়ে বেশি হলে পাহাড়ের উপরে তুষার জমতে শুরু করে এবং জমে শক্ত বরফে পরিণত হয়। এই বরফজমা এলাকাটিকে বরফক্ষেত্র (Ice field) বলে। যখন এই জমা বরফ নিজের ওজনের ভারে এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে ধীরগতিতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করে, তখন তাকে হিমবাহ বলে। তবে জমা বরফ এত পুরু হয় এবং এর নিম্নগতি এতই ধীর যে তাকে স্থিরই মনে হয়।
ভারতের উত্তরে পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালাতে অবস্থিত গ্রেট বালটোরা পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৮ কিলোমিটার। হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের কাছে রংবুক ও কাশৃঙ্গ হিমবাহ অবস্থিত। অস্ট্রিয়া-ইতালি সীমান্তে আল্পস পর্বতমালার সিমিলাউন হিমবাহে ১৯৯১ সালে একজন মানুষের অবিকৃত দেহের সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় দেহটি প্রায় ৫,৩০০ বছর সেখানে সমাহিত হয়ে ছিল।
১. হিমবাহ কাকে বলে?
উত্তর – উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বা মেরু অঞ্চলে ধীরগতি সম্পন্ন চলমান বিশাল, দীর্ঘস্থায়ী তুষার বা বরফের স্তুপ কে হিমবাহ বলে। বিজ্ঞানী ফ্লিন্ট এর মতে – হিমবাহ হল এক বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ, যা তুষার জমাট বেঁধে তৈরি হয়ে বিস্তীর্ন অঞ্চল ব্যাপী অবস্থান করছে এবং চলন্ত অবস্থায় রয়েছে বা কোনো এক সময় চলন্ত অবস্থায় ছিল।
২. মহাদেশীয় হিমবাহ কাকে বলে?
উত্তর – মহাদেশের বিস্তৃর্ন অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত থাকা হিমবাহ গুলিকে মহাদেশীয় হিমবাহ বলে। যেমন – আণ্টার্কটিকা মহাদেশীয় হিমবাহ, যার বিস্তৃতি প্রায় ১৩০ লক্ষ বর্গকিমি। গ্রিনল্যান্ড মহাদেশীয় হিমবাহ যা প্রায় ১৮ লক্ষ বর্গকিমি এলাকায় ছড়িয়ে আছে।
৩. পার্বত্য হিমবাহ বলতে কী বোঝ?
উত্তর – পার্বত্য অঞ্চলের উঁচু অংশে মাধ্যাকর্ষন শক্তির প্রভাবে যে ধীর চলমান হিমবাহ দেখা যায়, তাকে পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ বলে।
এগুলি কয়েক কিমি থেকে ২০০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। যেমন – ভারতের সিয়াচেন হিমবাহ।
৪. পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহের আরেক নাম কী?
উত্তর – আল্পীয় হিমবাহ।
৫. নিরক্ষরেখার নিকট অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও কোন পর্বতের চূড়ায় বরফের উপস্থিতি দেখা যায়?
উত্তর – আফ্রকার মাউন্ট কেনিয়া পর্বত এবং দক্ষিন আমেরিকার মাউন্ট কায়াম্বি পর্বতে।
৬. বরফ চাদর (ice sheet) কাকে বলে ?
উত্তর – যে সব মহাদেশীয় হিমবাহ ৫০,০০০ বর্গকিমি বা তারও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত থাকে, তাকে বরফ চাদর বলে।
৭. ice cap কাকে বলে?
উত্তর – যে সব মহাদেশীয় হিমবাহ ৫০,০০০ বর্গকিমির কম এলাকা জুড়ে বিস্তৃত থাকে, তাকে বরফ ক্যাপ বলে।
৮. পিডমন্ড হিমবাহ কাকে বলে?
উত্তর – পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলে অনেক গুলি উপত্যকা হিমবাহের মিলনের ফলে যে হিমবাহ তৈরি হয়, তাকে পিডমন্ড হিমবাহ বলে।
উদা – আমেরিকা যুক্ত রাষ্ট্রের আলাস্কার মেলাস্পিনা হিমবাহ ।
৯. বরফ রেখা বা হিমরেখা কাকে বলে ?
উত্তর – পার্বত্য অঞ্চলে যে উচ্চতার ওপরে সারা বছর বরফ জমে থাকে এবং যে উচ্চতার নিচে ঋতুর
পরিবর্তনে বরফ গলে যায়, সেই উচ্চতাকে বরফ সীমানা বলা হয়।
১০. হিমবাহ কোন প্রক্রিয়ার দ্বারা ক্ষয় কাজ করে?
উত্তর – হিমবাহ দুটি প্রক্রিয়ার ক্ষয় কার্য সম্পন্ন করে – অবঘর্ষ ও উৎপাটন
১১. অবঘর্ষ প্রক্রিয়া বলতে কি বোঝ?
উত্তর – যে প্রক্রিয়ায় হিমবাহ বাহিত নুড়ি,পাথর প্রভৃতি চল্মান হিমবাহের তলদেশ ও পাশ্বদেশে প্রবন চাপ জনিত ঘর্ষনের দ্বারা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়, তাকে অবঘর্ষ প্রক্রিয়া বলে।
১২. উৎপাটন প্রক্রিয়াবলতে কি বোঝ?
উত্তর – যে প্রক্রিয়ায় হিমবাহ অধ্যুসিত অঞ্চলে আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট চূর্ন বির্চুন পদার্থ গুলি
হিমবাহের দ্বারা পরিবাহিত হয়, তাকে উৎপাটন প্রক্রিয়া বলে।
১৩. হিমবাহ প্রবাহের ফলে সৃষ্ট উপত্যকার আকৃতি কীরুপ হয়?
উত্তর – U আকৃতির
১৪. পার্বত্য হিমবাহের ফলে কোন কোন সৃষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়?
উত্তর – সার্ক, এরিটি, হর্ন, কল, গ্রাবরেখা, টার্ন হ্রদ, রসে-মোতানে, ঝুলন্ত উপত্যকা প্রভৃতি ভূমিরুপের সৃষ্টি হয়।
১৫. সার্ক কী?
উত্তর – পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের প্রবাহের ফলে যে আরাম কেদারার মতো অবনমিত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, তাকে সার্ক বলে।
১৬. এরিটি কী?
উত্তর – দুটি সার্কের মধ্যবর্তী যে দীর্ঘ ও সংকীর্ন ভূমিরূপ গড়ে ওঠে তাকে এরিটি বলে।
১৭. টার্ন হ্রদ কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর – হিমবাহ দ্বারা সার্কের নিম্ন দেশে যে ক্ষুদ্র অবনমিত স্থান সৃষ্টি হয়, সেখনে হিমবাহ গলিত জল জমা হয়ে ক্ষুদ্র টার্ন হ্রদ গঠিত হয়।
১৮. কল কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর – দুটি বিপরীত মুখী সার্ক যে জায়গায় এসে পরস্পর মিলিত হয়, তাকে কল বলে।
১৯. ফিঙ্গার লেক কোথায় রয়েছে?
উত্তর – আমারিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থিত, এটি একটি হিমবাহ সৃষ্ট লেক। একে ভূ-মধ্যস্থ ফিয়র্ড বলা হয়।
২০. সার্ক বা করি উৎপত্তি সম্পর্কীত বিভিন্ন তত্ত্ব গুলি কি কি?
উত্তর – ক) Glacial Protection Theory by Garwood
খ) Bergschrund Navition theory by Johnson
গ) Cyclic theory or glacial erosion theory by Hobbs
২১. নুনাটাক কী?
উত্তর – পর্বতের উঁচু বরফাবৃত অংশ কে নুনাটাক বলে।
২২. প্যাটার্নোস্টার লেক কোথায় দেখা যায়?
উত্তর – হিমসিঁড়ির মধ্যভাগের খাঁজের অবতল অংশে জল জমে, প্যাটার্নোস্টার লেক গঠিত হয়।
২৩. হিমবাহ উপত্যকার নিম্ন সমতল অংশে যে ঢিপির মতো ভূমিরূপ গঠিত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর – কেম
২৪. হিমবাহের প্রত্যক্ষ সঞ্চয় কার্যের ফলে কোন কোন ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়?
উত্তর – গ্রাবরেখা, ড্রামলিন
২৫. হিমবাহ-নদী সৃষ্ট সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ কোন গুলো ?
উত্তর – বহিঃধৌত সমভূমি, এস্কার, কেম, কেটল প্রভৃতি।
২৬. বহিঃধৌত সমভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট ছোটো গর্ত গুলিকে কি বলে?
উত্তর – কেটল
২৭. কেটল কে ঘিরে থাকা অসংখ্য স্তুপ গুলি কে কী বলে?
উত্তর – হামকস
২৮. আইস এজ ধারণাটি প্রথম কে প্রতিস্থাপন করেন?
উত্তর – লুইস আগাসিস
২৯. কাকে হিমবাহের ডেল্টা বলা হয়?
উত্তর – কেম কে
৩০. সার্ক কে স্কটল্যান্ডে কী বলা হয়?
উত্তর – করি
৩১. গ্রেট আইস এজ ধারণাটি কে তুলে ধরেন ?
উত্তর – জেমস গেইকি
৩২. পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহের নাম কী?
উত্তর – গ্রিনল্যান্ডের ক্যুইবেক হিমবাহ।
৩৩. পৃথিবীর ধীরতম হিমবাহের নাম কী?
উত্তর – আন্টার্কটিকার মেসার্ভ হিমবাহ।
৩৪. পৃথিবীর বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহের নাম কী?
উত্তর – আলাস্কার হাবার্ড হিমবাহ
৩৫. পৃথিবীর দীর্ঘতম পার্বত্য হিমবাহের নাম কী
উত্তর – আন্টার্কটিকার ল্যামবার্ট হিমবাহ
৩৬. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের নাম কী?
উত্তর – কারাকোরাম পর্বতের সিয়াচেন হিমবাহ