হেনরি ভিক্টর রেনোঁ জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Henry Victor Reno Biography in Bengali. আপনারা যারা হেনরি ভিক্টর রেনোঁ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হেনরি ভিক্টর রেনোঁ এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
হেনরি ভিক্টর রেনোঁ এর জন্ম: Henry Victor Reno’s Birthday
একমাত্র অধ্যবসায়ের বলে নিতান্ত সাধারণ অবস্থা থেকে মানুষ যে কি করে সম্মানের উচ্চশিখরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তার অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হেনরি ভিক্টর রেনোঁ – এর জীবন ! বর্তমানে তাপ বিজ্ঞানের দ্রুত সম্প্রসারণের মূলে আছে রে নোঁ – এর অবদান। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাতেই তিনি যথেষ্ট অবদান রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ফ্লান্সের এক দরিদ্র পরিবারে ১৮১০ খ্রিঃ ৯ ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন রেনোঁ।
হেনরি ভিক্টর রেনোঁ এর শিক্ষাজীবন: Henry Victor Reno’s Educational Life
পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমনই শোচনীয় ছিল যে স্কুলে ভর্তি হওয়া সত্ত্বেও পড়াশোনা সম্পূর্ণ করবার সুযোগ পাননি তিনি। শৈশব উত্তীর্ণ হবার আগেই স্কুলের পড়া বন্ধ করে তাঁকে চাকরির সন্ধানে বেরাতে হয়েছিল। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল রেনোঁ – এর। তাঁর প্রিয় বিষয় ছিল রসায়ন ও ওষুধ। ইচ্ছাও ছিল কায়ক্লেশে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের। কিন্তু প্রকট অর্থচিন্তা তার সেই আকাঙ্ক্ষাকে গ্রাস করেছিল।
হেনরি ভিক্টর রেনোঁ এর কর্ম জীবন: Henry Victor Reno’s Work Life
তাঁকে একটি ওষুধের দোকানের কেরানীর চাকরি নিতে হয়েছিল। ভাগ্যের বিড়ম্বনা সত্ত্বেও মনোবল ও আগ্রহ দমিত হয়নি। চাকরি পাবার পর রেনোঁ বিদ্যাভ্যাসের সময় নিজেই বার করে নিলেন। দিনের বেলায় – দোকানের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। রাত্রে বসতেন বই নিয়ে। রাত জেগে নিজের প্রিয় বিষয়ের বই পড়াশোনা করতেন। অতি অল্প বয়স থেকেই প্রচণ্ড অধ্যবসায় সম্বল করে প্রতিকূল ভাগ্য ও পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন দরিদ্রের সন্তান রেনোঁ।
চাকরি করে সংসারে কিছু সাহায্য করতে হত। তারপরও নিজস্ব খরচ খরচা কাটছাঁট করে অর্থ সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করে নিয়েছিলেন। কিছুকাল পরে যৎসামান্য অর্থ যা সঞ্চিত হল, তাই সম্বল করে তিনি চলে এলেন প্যারিসে। ভর্তি হলেন একোল পলিটেকনিক স্কুলে। এখানে পড়াশোনা বজায় রাখতে অশেষ কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছিল রেনোঁকে। প্রবল অর্থ সংকটের মধ্যেও মনোবল হারান নি। দ্বিগুণ উৎসাহে অর্থোপার্জনের চেষ্টা করেছেন, একই সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে গেছেন। এমন অনেকদিন কেটেছে, যেদিন কোন খাদ্য ছাড়াই তাকে কাটাতে হয়েছে।
কঠিন পরিশ্রম কখনো ব্যর্থ হয় না। অর্থসমস্যা রেনোঁর অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করলেও রুদ্ধ করতে পারল না। জীবন – সংগ্রাম তাঁর জীবনকে আরও মহত্তর করে তুলেছিল। অধ্যবসায় জয়যুক্ত হয়েছিল। একদিন একোল পলিটেকনিকের শেষ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন তিনি। ১৮৩৬ খ্রিঃ বিদ্যায়তনে লাভ করলেন অধ্যাপকের পদ। প্রতিভা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল রেনোঁর আবাল্যের সহায়। এবারে অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শুরু করলেন গবেষণা। গোড়ার দিকে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল রসায়ন।
এ সম্পর্কে তার কিছু প্রবন্ধ কয়েকটি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হল। প্রবন্ধগুলির মৌলিকতা বিজ্ঞানী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। খ্যাতি লাভ করলেন রেনো। একোল পলিটেকনিক স্কুল কর্তৃপক্ষের আহ্বানে পূর্বতন কর্মস্থল পরিত্যাগ করে রেনোঁ ১৮৪০ খ্রিঃ এখানে অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করলেন। এখানেই তাপ বিজ্ঞানের ওপর তার গবেষণার সূত্রপাত হয়। দীর্ঘ গবেষণার পর পদার্থবিদ্যার তাপ বিজ্ঞান শাখায় বহু যন্ত্র ও তথ্য আবিষ্কার করে তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেন।
এই ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার এক ধরনের ক্যালরি মিটার। পদার্থের আপেক্ষিক তাপ নির্ণয় করবার জন্য বর্তমান সময়েও ল্যাবরেটরিতে রেনোর ক্যালরি মিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যে সকল হাইড্রোমিটার বায়ুর শিশিরাঙ্ক ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় তাদের একটির আবিষ্কর্তা রেনোঁ। হাইগ্রোমিতির ক্ষেত্রে তার মিটারের গুরুত্বই সর্বাধিক। এছাড়াও যন্ত্রের সাহায্যে যে পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব, গ্যাসের আপেক্ষিক তাপ প্রভৃতি নির্ণয় করা হয়, তার অনেকগুলি পদ্ধতিই রেনোঁ আবিষ্কার করেছিলেন।
তরলও গ্যাসীয় পদার্থের প্রসারণ সম্বন্ধেও রেনোঁর গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাপবিজ্ঞান রেনোর বহু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের ফলে সমৃদ্ধ হয়েছে। তার আবিষ্কারের ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে বহু বিজ্ঞানী তাপ বিজ্ঞানকে সম্প্রসারিত করতে সমর্থ হয়েছেন। বিজ্ঞানের অপরাপর শাখার সঙ্গে শব্দ বিজ্ঞান নিয়েও দীর্ঘকাল গবেষণা করেছিলেন রেনোঁ। তাঁর গবেষণা শব্দের গতিবেগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। নিরলস বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানী হিসেবে দেশে বিদেশে সম্মান ও খ্যাতি লাভ করেছিলেন রেনোঁ। তাঁর সফল জীবন ছিল কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের আশীর্বাদ স্বরূপ।
হেনরি ভিক্টর রেনোঁ এর মৃত্যু: Henry Victor Reno’s Death
এই মহান বিজ্ঞানী ১৮৭৮ খ্রিঃ লোকান্তরিত হন।