উদ্যান কৃষি কাকে বলে? এবং উদ্যান কৃষির বৈশিষ্ট্য : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের এক গুরুত্বপূর্ন আলোচনা। তাই উদ্যান কৃষি বলতে কী বোঝানো হয়ে থাকে এবং উদ্যান কৃষির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলো কী কী সে সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সম্পূর্ন জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
উদ্যান কৃষি এক ধরণের আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা যেখানে শহরের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বিশাল বাজার কে কেন্দ্র করে শহরের অনতিদূরে বিভিন্ন মাপের জমিতে নিবিড় পদ্ধতিতে শাক-সবজি, ফুল, ফল ইত্যাদির চাষকেই বাজারভিত্তিক উদ্যান বা বাজার-বাগান কৃষি বলা হয়ে থাকে। বাজার মুখী এই উদ্যান কৃষি ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে মার্কেট গার্ডেনিং এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ট্রাক ফার্মিং নামে পরিচিত হলেও সাধারনভাবে একে হর্টিকালচার বলা হয়।
Horticulture শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Hortus অর্থাৎ উদ্যান এবং culture বা cultivation অর্থাৎ চাষবাস থেকে নেওয়া হয়েছে।
বাজার -বাগান কৃষিতে কৃষিক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শাকসবজি, ফল, ফুল প্রভৃতি নিকটবর্তী শহরে ট্রাক মারফৎ নিয়ে যাওয়া হয় বলে, এই উদ্যান কৃষিকে ট্রাক ফার্মিং / Truck Farming বলে।
কৃষিপণ্য – উদ্যান কৃষি ব্যবস্থায় সাধারণত চার ধরণের কৃষিপন্য উৎপন্ন হয়, যেমন –
১. সারাবছর ফোটে অথবা মৌসুমি বা অসময়ের ফুল গুলিকে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ করা হয় । যেমন – গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, রজনিগন্ধা, গাঁদা, টিউলিপ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের ফুলের চাষ বানিজ্যের জন্য করা হয়, যাকে ফ্লোরিকালচার বলে।
২. উদ্যান কৃষিতে মৌসুমি, অসময়ের এবং সারাবছর পাওয়া যা এমন ফলের চাষ বানিজ্যিক পদ্ধতিতে করা হয়, একে বলে পোমোকালচার । যেমন – পেয়ারা, কলা, আনারস, পাম, কমলালেবু প্রভৃতি।
৩. দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় শাক-সবজি চাষ, যাকে ওয়েলারিকালচার বলে। যেমন – বেগুন, কুমড়ো, শাক প্রভৃতি।
৪. এছাড়া ভেষজগুন সম্পন্ন উদ্ভিদের চাষ করা হয়। যেমন – সিঙ্কোনা, নিম ইত্যাদি।
বন্টন – প্রায় সব দেশের নগর বা মহানগর গুলিকে কেন্দ্র করে বাজার কেন্দ্রিক কৃষি প্রণালী গড়ে উঠলেও উদ্যান বা বাজার বাগান কৃষির কেন্দ্রীভবন দেখা যায় ইউরোপের যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, স্পেন প্রভৃতি দেশে। ভারতে এই কৃষির প্রচলন ঘটেছে বড়ো শহর গুলিকে কেন্দ্র করে।
উদ্যান কৃষির বৈশিষ্ট্য
ছোট কৃষিজোত – ঘনবসতি পূর্ন শরাঞ্চলের উপকণ্ঠে উদ্যান কৃষি গড়ে ওঠে বলে, এই কৃষির কৃষিজোত গুলি ছোট হয়।
কৃষি যন্ত্রপাতির সার্বিক ব্যবহার – এই কৃষিকাজে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত কৃষিজ উপকরন ব্যবহার করা হয়। যেমন – রাসায়নিক সার, উন্নত বীজ, উন্নত জলসেচ প্রভৃতি।
শ্রম নিবিড়তা – গাছের খুঁটি নাটি সমস্ত কিছু পরিচর্যা করার জন্য, ছোট বড়ো যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্পূর্ন পর্যাপ্ত সংখ্যায় দক্ষ শ্রমিক দরকার।
অধিক মূলধন বিনিয়োগ – কৃষি সরঞ্জাম, সার, উন্নত ফলনশীল বীজ, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি, উৎপাদিত পন্য বাজারে প্রেরন ইত্যাদি নানা কাজে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়।
দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা – শাকসবজি, ফল, ফুল প্রভৃতি পন্য দ্রুত পচনশীল। এগুলি যাতে বাজারে দ্রুত পাঠানো যায় তার জন্য স্বল্প দূরত্বে সড়ক পরিবহন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বিমান পরিবহন ব্যবস্থা করতে হয়।
সহায়ক শিল্প – উদ্যান কৃষিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প, যেমন – খাদ্য প্রক্রিয়াকরন, জৈব রঙ তৈরি, সুগন্ধ দ্রব্য প্রভৃতি শিল্প গড়ে উঠেছে।
বাজার – রপ্তানির উদ্দেশ্যে আধুনিক প্রথায় ফসল ফলানো হয়। কৃষিজ পন্যের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় প্রকার বাজার রয়েছে।
অনিশ্চয়তা – কৃষিজ পন্য বাজারে বিক্রি হলে কৃষক লাভবান হয় কিন্তু হঠাৎ চাহিদা কমে গেলে কৃষকের প্রচুর লোকসান হওয়ায় সম্ভাবনা থাকে।
সমস্যাপূর্ন কৃষি – আবহাওয়া ও জলবায়ুর সামান্য তম পরিবর্তন কৃষির ওপর প্রচণ্ড ভাবে পড়ে। যেমন – টানা দুই তিন দিনের বৃষ্টিতে ফসলের খুব ক্ষতি হয়।