জন ডাল্টন জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে John Dalton Biography in Bengali. আপনারা যারা জন ডালটন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী জন ডাল্টন এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
জন ডাল্টন কে ছিলেন? Who is John Dalton?
জন ডাল্টন (৬ সেপ্টেম্বর ১৭৬৬ – ২৭ জুলাই ১৮৪৪) হলেন একজন ইংরেজ রসায়নবিদ, স্কুলশিক্ষক, আবহাওয়া বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ। তিনি তার “পারমাণবিক তত্ত্ব”(Atomic Theory) এবং “বর্ণান্ধতা” (Colour Blindness) বিষয়ে কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন।
জন ডাল্টন জীবনী – John Dalton Biography in Bengali
নাম | জন ডাল্টন |
জন্ম | 6 সেপ্টেম্বর 1766 |
পিতা | জোসেফ ডাল্টন |
মাতা | ডেবোরা গ্রিনআপ |
জন্মস্থান | ঈগলসফিল্ড, কাম্বারল্যান্ড, ইংল্যান্ড |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ |
পেশা | রসায়নবিদ, পদার্থবিদ এবং আবহাওয়াবিদ |
মৃত্যু | 27 জুলাই 1844 (বয়স 77) |
জন ডাল্টন এর জন্ম: John Dalton’s Birthday
জন ডাল্টন ১৭৬৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
জন ডাল্টন এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: John Dalton’s Parents And Birth Place
প্রবাদ আছে যে প্রতিভা কখনো চাপা থাকে না, কোন না কোনভাবে তার স্ফূরণ ঘটেই থাকে। পৃথিবীর প্রাতঃস্মরণীয় বহু মনীষীর জীবনেই এই পবাদবাক্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। জীবনের অতি সাধারণ অবস্থা থেকে এমনকি প্রতিকূল পরিবেশের গন্ডী থেকে বহু বিশ্ববরেণ্য প্রতিভার আবির্ভাব ঘটেছে।
পরমাণুবাদের প্রবর্তক জন ডালটনও এমনি এক দুর্জয় প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন ইংলন্ডের ইগলসফিল্ড নামের এক অখ্যাত গ্রামে। সময়টা ১৭৬৬ খ্রিঃ। তিনি ছিলেন তাঁতী পরিবারের ছেলে। বংশানুক্রমিক ভাবেই এই পরিবারের বৃত্তি ছিল তাতবোনা। গ্রামের যে পাড়ায় তাঁর জন্ম সেটা তাঁতীদেরই পাড়া। তাঁতবুনে জীবন নির্বাহ করাই এই পাড়ার মানুষদের একমাত্র কাজ।
পুরুষানুক্রমেই এরা মূর্খ, লেখাপড়ার সঙ্গে সম্পর্কশূন্য। সকলেরই হত দরিদ্র অবস্থা। লেখাপড়া শেখার ব্যাপারটা তাদের কাছে সময় অপচয় ছাড়া কিছু নয়। এমনি এক পরিবেশে জন্মে তাঁকেও অন্য দশটি পরিবারের ছেলেদের মতো কাপড় বুনতে তাঁতে বসে যাবার কথা। বসেওছেন তিনি, বাবাকে সাহায্য করবার জন্য। কিন্তু তার সঙ্গে অন্য একটি কাজও তিনি করতেন যা অন্য কোন পরিবারের কেউ কখনো করেনি।
জন ডাল্টন এর শিক্ষাজীবন: John Dalton’s Educational Life
লেখাপড়ার প্রতি সহজাত আগ্রহ নিয়েই তিনি জন্মেছিলেন। সেই আগ্রহে নিতান্ত শৈশবেই এক স্কুলে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন। আশ্চর্য মেধা ছিল তাঁর। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সহপাঠীদের তুলনায় অনেক বেশি শিখে যেতেন। কথিত আছে, বিদ্যালয়ে পড়বার সময়েই তিনি নিজের চেষ্টায় গ্রীক ও লাতিনের মত দুরূহ ভাষাকে আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন। ছেলেবেলায় বিজ্ঞান ও অঙ্কের প্রতিই তিনি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বোধ করতেন।
বয়স যখন বছর বারো, সেই সময় এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলেন ডালটন। তাতী পাড়ার খেলার সঙ্গীদের লেখাপড়া শেখাবার জন্য নিজেই একটা স্কুল আর করে দিলেন। বাবার কাজে সাহায্য করতে হয়। তারই ফাঁকে সময় করে বন্ধুদের নিয়ে স্কুল করতে বসেন। গোড়ার দিকে অভিভাবকের অনেকের আপত্তি থাকলেও পরে তারাও ব্যাপারটাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সকলের মধ্যেই জেগে উঠেছিল শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ। জটিল সব অঙ্কের সমাধান করতে ডালটনের খুব আনন্দ।
সেসব নিয়ে তিনি বসতেন অনেক রাতে, যখন গোটা পাড়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। কেবল অঙ্ক বা ভাষা চর্চার বইই নয়। নানান কলকব্জা নাড়াচাড়ার নেশাও তাঁকে পেয়ে বসেছিল। নিজেই বানিয়ে নিয়েছিলেন নানা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, সেসব নিয়ে নিজের মনেই একটার পর একটা পরীক্ষার বিভিন্ন অবস্থার এবং সিদ্ধান্তের বিবরণ একটা খাতায় টুকে রাখতেন। বিখ্যাত শিল্পনগরী ম্যাঞ্চেষ্টার। এখানেই কলেজের পড়া শেষ করে বিজ্ঞানের এম.এস.সি ডিগ্রি লাভ করেন, পরে ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়েই যোগদান করেন অধ্যাপক রূপে। সেই সময়ে বয়স মাত্র পঁচিশ বছর।
জন ডাল্টন এর কর্ম জীবন: John Dalton’s Work Life
অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আরম্ভ করলেন গবেষণার কাজ। সেই সময় তার গবেষণার বিষয় ছিল বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ। ডালটনের মৌলিক গবেষণাগুলি প্রথম ম্যাঞ্চেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮০০ খ্রিঃ প্রথম গবেষণাপত্রে ডালটন প্রকাশ করেছিলেন গ্যাস – প্রসারণ সূত্র এবং গ্যাসের অংশচাপ সূত্র। ডালটনের আংশিক চাপের সূত্রই সর্বপ্রথম পরিবর্তিত তাপমাত্রায় ও চাপে নানা গ্যাসের ভৌতধর্মের একটা গোড়া পত্তন করে। দেশ বিদেশের বহু বিজ্ঞানী পরীক্ষা করে এই সূত্রগুলি স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং ডালটনও স্বীকৃত হয়েছিলেন রসায়ন বিজ্ঞানী হিসেবে।
গ্যাস আয়তনের সূত্র আবিষ্কারের পর পদার্থের গঠন সম্পর্কে ডালটনের নতুন গবেষণা শুরু হল। গবেষণায় উদ্ভাসিত হল নতুন এক দিগন্ত। তাঁর নাম হল পরমাণুবাদ। ডালটনের মতবাদ অনুসারে প্রতিটি মৌলিক পদার্থ বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দিয়ে গঠিত। এই কণাগুলি অবিভাজ্য এবং প্রত্যেকেই পরস্পরের সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ব্যাবধানে অবস্থান করে। এই কণা ভাঙ্গা যায় না, কিংবা কণাগুলি ওজনে ও ধর্মে এক। গড়াও যায় না, প্রত্যেক মৌলিক পদার্থের তবে বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের মধ্যকার কণার ওজন ও ধর্ম স্বতন্ত্র।
এই কণাগুলো সরল ও সুনির্দিষ্ট অনুপাতে যুক্ত হতে পারে। ডালটন এবারে পুঁথি পত্র ঘাঁটতে বসলেন। মৌলিক পদার্থের কণাগুলোর একটা নামকরণ করা দরকার। গ্রীক ভাষা ভালভাবেই জানতেন। গ্রীক বিজ্ঞানীদের বই ঘেঁটে বার করলেন প্রাচীন গণিত বিজ্ঞানী ডেমোক্রিটাসের মতামত ৷ তিনি পদার্থের অতিক্ষুদ্র কণাগুলোকে সম্বোধন করেছেন অ্যাটমস নামে ৷ এই গ্রীক শব্দটির অর্থ অবিভাজ্য। ডালটন এই শব্দটিকে গ্রহণ করলেন স ’ অক্ষরটিকে বাদ দিয়ে — যা দাঁড়াল তা হল অ্যাটম। বিজ্ঞানের প্রাচীন পুঁথির তলা থেকে সেই প্রথম অ্যাটম শব্দ আধুনিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করল।
প্রসঙ্গতঃ বলে নেওয়া ভাল যে, পদার্থের অ্যাটম বা পরমাণুর কথা প্রাচীন ভারতেও জ্ঞাত ছিল। প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক মহর্ষি কণাদ কণাবাদ বা পরমাণুবাদ প্রচার করেছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, প্রত্যেকটি পদার্থ অতিসূক্ষ্ম অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। গ্রীক গণিতজ্ঞ দার্শনিক পদার্থের বিষয়ে এই একই মত পোষণ করতেন। তবে এঁদের এই মতবাদের কথা বিজ্ঞান জগৎ মেনে নিতে পারেনি। কারণ এঁরা দুজনই মূলতঃ দার্শনিক।
যদিও দর্শনই বিজ্ঞানের উৎসভূমি, তবু যেহেতু তারা উভয়েই জড়বস্তুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেননি, বিজ্ঞান ছিল গৌণ পর্যায়ে তাই যুক্তির জগৎ বিজ্ঞান তাদের মতামতকে কল্পনা বলেই সরিয়ে রেখেছিল। ফলে, বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পরীক্ষা – নিরীক্ষা ও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রভূমিতে ডালটনই পরমাণুবাদের প্রকৃত প্রবর্তকের শিরোপা লাভ করেন। নিজের পরমাণুতত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডালটন প্রত্যেক পরমাণুর জন্য বিশেষ বিশেষ সাঙ্কেতিক চিহ্ন ব্যবহার করেছেন।
কেবল তাই নয় বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর ওজন সম্বন্ধেও একটি সারণী প্রস্তুত করেছিলেন। নানান মৌলের পারমাণবিক ওজন নিয়ে যে সারণী ডালটন প্রস্তুত করেছিলেন তা সম্পূর্ণ নির্ভুল ছিল না। সেই ত্রুটি সংশোধন করে পরবর্তীকালে একটি পূর্ণাবয়ব সারণী প্রস্তুত করেছিলেন সুইডেনের বিখ্যাত রসায়ন বিজ্ঞানী বাৰ্জিলিয়াস ! বার্জিলিয়াসের কাজের চূড়ান্ত রূপ দিয়েছিলেন অপর এক বিজ্ঞানী, তিনি হলেন মেন্ডেলিফ। তিনি ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণুর ওজন নির্দিষ্ট নিয়মে পরপর সাজিয়ে তৈরি করেন পর্যায় সারণী বা পিরিওডিক টেবল।
মেন্ডেলিফ – এর পরে এক রসায়ন বিজ্ঞানী মসেলি পারমাণবিক ওজনের পরিবর্তে পারমাণবিক সংখ্যা বসিয়ে অত্যাধুনিক পর্যায় সারণী তৈরি করেছেন। মৌলের পরিচয় নির্ধারণের জন্য মসেলি নির্দিষ্ট পারমাণবিক সংখ্যাকেই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল সূচক বলে মেনে নেওয়া হয়। ডালটনের পারমাণবিক তত্ত্বের মূল্য অপরিসীম। তাঁর গবেষণার ভিত্তিতেই নানা রাসায়নিক যৌগের অন্তর্গত মৌলকণা বা পরমাণুর ওজন পৃথক ভাবে মাপার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ায় পরবর্তীকালে পরমাণুচর্চায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রেই ডালটন তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
তিনিই প্রথম পরীক্ষা করে দেখান সব গ্যাস বা বায়বীয় পদার্থকেই উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় তরলে রূপান্তরিত করা যায়। এছাড়া সুমেরুজ্যোতি বা অরোরা বোরেলিসে তড়িৎ প্রকৃতিও তিনি আবিষ্কার করেছিলেন।
জন ডাল্টন এর পুরস্কার ও সম্মান: John Dalton’s Awards And Honors
জীবদ্দশাতেই ডালটন বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক হিসেবে দেশে বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি পরিচিত হয়েছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের অন্যতম হিসেবে। জীবনে বহু সম্মান ও পুরস্কার তিনি লাভ করেছিলেন। ১৮২৬ খ্রিঃ লন্ডনের বিখ্যাত রয়েল সোসাইটি প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে সুবর্ণপদক দান করেছিল। তিনি ফ্রান্সের বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।
জন ডাল্টন এর মৃত্যু: John Dalton’s Death
১৮৪৪ খ্রিঃ এই নিরভিমানী, অজাতশত্রু বিজ্ঞানতাপস শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।