জুলিয়াস সিজার জীবনী: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Julius Caesar Biography in Bengali. আপনারা যারা জুলিয়াস সিজার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী জুলিয়াস সিজার এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
জুলিয়াস সিজার কে ছিলেন? Who is Julius Caesar?
জুলিয়াস সিজার (পুরো নাম – গাইও জুলিও কায়েসার) (জন্ম ১৩ জুলাই ১০১ অথবা ১০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ – রো্ম – মৃত্যু ১৫ মার্চ ৪৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) ছিলেন রোম সাম্রাজ্যের একজন সেনাপতি এবং একনায়ক; এছাড়া লাতিন ভাষায় রচিত তাঁর লেখা গদ্যসাহিত্যও উল্লেখের দাবি রাখে। তাঁকে ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বলে বিবেচনা করা হয়। যে সমস্ত ঘটনার ফলে তাঁর সমসাময়িক ও ঠিক তার পরবর্তী যুগে রোমের প্রশাসনিক চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় ও রোম একটি গণতন্ত্র থেকে একটি একনায়ককেন্দ্রিক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়, সেইসমস্ত ঘটনায় জুলিয়াস সিজারের ভূমিকা ছিল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।”এলাম দেখলাম জয় করলাম”এটি ছিলো জুলিয়াসের বানী।অবাক করা বিষয় রোমান সভ্যতা নদী মাতৃক ছিলো না।
জুলিয়াস সিজার জীবনী | Julius Caesar Biography in Bengali
নাম | জুলিয়াস সিজার |
জন্ম | 12 জুলাই 100 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ |
পিতা | গাইউস জুলিয়াস সিজার |
মাতা | অরেলিয়া |
জন্মস্থান | রোম, ইতালি |
জাতীয়তা | রোমান |
পেশা | রাজনীতিবিদ, সৈনিক |
মৃত্যু | 15 মার্চ 44 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ (বয়স 55) |
জুলিয়াস সিজার এর জন্ম: Julius Caesar’s Birthday
জুলিয়াস সিজার 12 জুলাই 100 খ্রীষ্টপূর্বাব্দ জন্মগ্রহণ করেন।
জুলিয়াস সিজার এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Julius Caesar’s Parents And Birth Place
অদম্য শক্তির দত্ত নিয়ে জন্মেছিলেন জুলিয়াস সিজার। ইউরোপের ইতিহাস তথা সভ্যতার ধার এক হাতে পাল্টে দিয়েছিলেন তিনি। সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন, তিনিই স্বয়ং ঈশ্বর। নিজ ক্ষমতা বলে তিনি রোমান সাম্রাজ্যের সীমানাকে উত্তর ও পশ্চিমে বিস্তৃত করেছেন, ইতিহাসে রেখে গেছেন চিরস্থায়ী খ্রিস্টের জন্মের ১০২ বছর আগে যে মাসে সিজারের জন্ম, পরবর্তীকালে তারই নামে সেই মাসের নামকরণ করে সম্মান জানানো হয়েছিল সিজারকে।
মাসটির নাম হয়েছিল জুলাই। রোমের যে সম্ভ্রান্ত পরিবারে সিজারের জন্ম, সেই পরিবারটি বিশ্বাস করত তারা স্বর্গের দেবতা ভেনাস এবং ইলিয়াসের বংশধর। মর্তের মানুষ হয়েও তারা স্বর্গের দেবতার সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে আবদ্ধ। আবাল্যের লালিত এই ধারণাই সিজারকে করে তুলেছিল গর্বিত।
জুলিয়াস সিজার এর কর্ম জীবন: Julius Caesar’s Work Life
তিনি নিজেকে অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন বলে ভাবতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। যুবক জুলিয়াস ছিলেন তাঁর পিসেমশাই মহান জেনারেল ম্যারিয়াসের অনুগামী। তাঁর দল যখন রোমের ক্ষমতা দখল করল, জুলিয়াস তার ত্যাগ ও বীরত্বের পুরস্কার স্বরূপ লাভ করলেন দেবতা জুপিটারের উপাসক পদ। জুপিটার ছিলেন রোমানদের প্রধান দেবতা। আর সেই দেবতার অচক হিসেবে জুলিয়াসের প্রভাব বৃদ্ধি পেল রোমান জনসাধারণের মধ্যে। কিন্তু এই সৌভাগ্য দীর্ঘদিন স্থায়ী হল না। কিছুদিন পরেই ম্যারিয়াসের মৃত্যু হল।
সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও হল হস্তান্তরিত। বিরোধী দলনেতা সুল্লা হলেন সর্বময় অধীশ্বর। ফলে ম্যারিয়াসের অনুগামীদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হল, পদ হারিয়ে তাদের ছাড়তে হল রোম। সুল্লা সিজারকে ক্ষমা করতে রাজি হলেন, তবে একটি শর্তে। শর্ত হল, সিজারকে গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে যুক্ত যুবতী স্ত্রীকে ত্যাগ করতে হবে। সিজার সম্মত হলেন না। ফলস্বরূপ সিজারকে ছাড়তে হলো রোম। সিজার তাঁর অনুগত সৈন্যবাহিনী নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পথে। রওনা হলেন পূর্বদিকে। গলে এসে আবার নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন নিজের মত করে।
এরপর তিনি রোমে ফিরে এলেন আইন শিক্ষার জন্য। রোডসে বিখ্যাত পন্ডিত অ্যাপেলেনিয়াস মোলোনের কাছে শিক্ষানবিশী শুরু করলেন। কিন্তু এখানে এসে তিনি আকৃষ্ট হলেন নিকৃষ্ট আমোদ প্রমোদের প্রতি। শিক্ষনজীবনের নিষ্ঠা ও পবিত্রতা তিনি রক্ষা করতে পারলেন না। সেই সময়ে রোমানদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল জুয়া। সিজার প্রবলভাবে আসক্ত হয়ে পড়লেন জুয়ায়। দিনের বেশির ভাগ সময়টাই তঁার কাটতে লাগল জুয়ার আসরে। জুয়ার আগ্রাসী আকর্ষণে দিনে দিনে ঋণের বোঝা ভারি হয়ে উঠল সিজারের। ইতিহাস বলে এই সময়ে তাঁর ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়ে ছিল দুলক্ষ পাউন্ড।
এই সময়ে যেন ভাগ্যলক্ষ্মী ফিরে তাকালেন সিজারের প্রতি। তাকে নিযুক্ত করা হল স্পেনের গভর্নর পদে। কিন্তু ঋণের বোঝা না নামিয়ে কোথায় যাবেন তিনি। মহাজনেরা পথ আগলে দাড়াল। ঋণের টাকা মিটানোর আগে তারা সিজারকে কাছছাড়া করতে রাজি হল না। বোমের বিখ্যাত ধনী ছিলেন ক্র্যাসাস। তিনিই এগিয়ে এলেন সিজারের ত্রাতা হিসেবে। সিজারের সব ঋণ পরিশোধ করে তাঁকে দায়মুক্ত করলেন তিনি। কথা রইল, আর্থিক সুদিন ফিরে এলে সিজার ক্র্যাসাসের সব টাকা মিটিয়ে দেবেন। ধনী ক্র্যাসাসের সঙ্গে বীর পম্পের সম্পর্ক ভাল ছিল না।
সিজার অসাধারণ দক্ষতায় দুজনের বিরোধের নিষ্পত্তি করে পরস্পরকে বন্ধু করে তুললেন। পরবর্তীকালে বীর পম্পের সামরিক দক্ষতাই সিজারকে রোমের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি করে তুলেছিল। ক্র্যাসাস, পম্পে এবং সীজার – এই তিনজনে মিলে রোমে যে শাসকচক্র গড়ে তুললেন তাই হল রোমের প্রথম ত্রয়ী শাসকচক্র। এই চক্র যখন রোমের ক্ষমতা দখল করল, সিজারের ওপরে বর্তাল সড়ক ও বনাঞ্চল রক্ষার দায়িত্ব। অবশ্য সিজারের দৃষ্টি ছিল সামরিক বিভাগের প্রতি। সেই সময়ে ইউরোপের উত্তরাঞ্চলে জার্মান উপজাতি রাইন নদীর তীরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা হয়ে উঠেছিল রোমের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী।
এইরকম পরিস্থিতিতে অতীতে রোম তার প্রতিপক্ষকে পূর্বদিকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল বরাবর চালিত করবার চেষ্টা করত। কিন্তু এবারে সিজার অন্য পন্থা অবলম্বন করলেন। তিনি জার্মানদের উত্তর – পশ্চিম দিকে বিতাড়িত করলেন। এরপর সিজার আল্পসের অপর পারের অঞ্চলের দায়িত্বভার দাবি করলেন। তার ইচ্ছা অপূর্ণ রাখা হল না। কিন্তু অচিরেই তাঁকে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হল। ইতিমধ্যে জার্মানরা নিজেদের পুনরায় শক্তিশালী করে তুলেছিল। তারা প্রবল বিক্রমে রোমের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াল।
বর্তমানের সুইজারল্যান্ড অঞ্চল থেকে জার্মানরা একসময় বিতাড়িত করেছিল হেলভিশদের। তারাও একই সময়ে রোমানদের কাছে দাবি জানিয়ে বসল ১২১ খ্রিঃ পূর্বাব্দ থেকে আটলান্টিকে পৌঁছবার যে অঞ্চলিটি রোম দখল করে রেখেছে তার ওপর দিয়ে তাদের যাতায়াতের অধিকার দিতে হবে। সিজার একই সময়ে দুমুখো সমস্যার সম্মুখীন হলেন। কিন্তু অসাধারণ সামরিক দক্ষতার বলে প্রথমে দ্বিতীয় সমস্যাটির মোকাবিলা করলেন তিনি। অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে তাঁর সেনাবাহিনী সংগঠিত করলেন। তারপর অতর্কিতে হেলভিশদের আক্রমণ করলেন। যুদ্ধে হেলভিশরা পরাজিত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল।
এই জয়ের পরে সিজারকে বলা হল জার্মানদের বিষয়ে মনযোগী হবার জন্য। তাদের হাত থেকে গলগোষ্ঠীগুলিকে অবিলম্বে রক্ষা করা দরকার। সিজার প্রথমে জার্মান রাজ অ্যারিভিসটাসের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। কিন্তু সেই বৈঠক ব্যর্থ হল। তখন রাইনের এপার থেকে আক্রমণ চালানোই স্থির হল। অবিলম্বে ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে জার্মানদের সরিয়ে দিলেন সিজার। পরবর্তীকালে ৫৭ খ্রিঃ পূর্বাব্দে উত্তর গলে নার্ভি এবং বেলজিদের উত্থান ঘটলে তাদের দমন করতে সিজারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। এই সময়ের বেলজিয়াম যুদ্ধের বিবরণ সিজার লিপিবদ্ধ করেছিলেন।
সেই ইতিহাস ১৯১৪ খ্রিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়েও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করা হত। জার্মানরা হটে গেলেও পরের বছরেই তারা গলের দিকে অগ্রসর হল। সেই সময়ে সিজার ব্যস্ত ছিলেন ব্রিটেনের ভেনেশি ও অন্যান্য উপজাতিদের দমনের যুদ্ধে। এদের পরাজিত করার পর তিনি আরও একবার আগ্রাসী জার্মানদের রাইনের অপর পারে বিতাড়িত করেন। একেরপর এক বিজয়ে যেমন সিজারের গৌরব বৃদ্ধি হয়েছিল সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছিল রোমেরও গৌরব। কিন্তু সিজার, যিনি নিজেকে দেবসদ্ভূত বলে বিশ্বাস করেন তার পক্ষে এই সামান্য যুদ্ধজয়ীর গৌরব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা সম্ভব ছিল না।
তার লক্ষ ছিল শাসন ক্ষমতার প্রতি — তিনি চেয়েছিলেন শাসক হতে। বলাবাহুল্য তার সেই স্বপ্নও একদিন সফল হয়েছিল। ভবিষ্যতের দিকে প্রসারিত দৃষ্টি রেখেই তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন। বিজিতদের নাগরিকত্ব দিতে তিনি দ্বিধা করেননি। শাসন ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত তার সময়ে রোমের ঐতিহ্য সম্প্রসারিত হয়েছিল বৃহত্তর ইউরোপে। তার চেষ্টায় ছোট ছোট জনগোষ্ঠী শক্তিশালী হয়ে উঠবার সুযোগ পেয়েছিল। ইউরোপের কৃষকসম্প্রদায়েরও প্রভূত উন্নতি ঘটেছিল তার শাসনকালে ৷ সিজারের সংস্কার কাজের মধ্যে অন্যতম ছিল বড় বড় সড়ক নির্মাণ।
এইভাবে দূর দূর অঞ্চলের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে এর ফলে সংহতি ও আদান – প্রদানের সুযোগ হয়েছিল। সিজারকে বারবার বিব্রত করেছে রাইনের পর পারের উপজাতিগুলির উপর্যুপরি আক্রমণ। কিন্তু সুকৌশলে একসময় তিনি তাদেরও দমন করেছেন। জার্মানদের আক্রমণ করবার জন্য তিনি খৃঃপূর্ব ৫৫ অব্দে রাইন নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করেন। কিন্তু জার্মানদের বিতাড়িত করে ফিরে এসেই সেই সেতু ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এরপরে সিজার নিজের সেনাদলকে কয়েকটি বাহিনীতে বিভক্ত করে ব্রিটেন আক্রমণের পরিকল্পনা করেন।
তাঁর এক একটি বাহিনীতে সৈন্য সংখ্যা ছিল দুই থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত। অশ্বারোহী বাহিনী সহ মোট পাঁচটি শক্তিশালী বাহিনী নিয়ে সিজার ব্রিটেন আক্রমণ করেছিলেন। টেমস নদীর পাড় পর্যন্ত তাঁর অধিকারভুক্ত হয়েছিল। গলে ফিরে যাবার আগে তিনি এই অধিকৃত অঞ্চল থেকে করও দাবি করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই কর আর আদায় করা হয়ে ওঠেনি। ব্রিটেন অভিযানে সিজারের প্রভাব স্থায়ী হবার অবসর পায়নি। পরবর্তী দুই বছরের মধ্যেই তাকে গলদের দিকে মনোনিবেশ করতে হয়েছিল। উপজাতি গুলিকেও অধীনে আনার জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ৫২ অব্দে গল নেতা ভার্সিল গেটোরিক্সের সঙ্গে জারগোভিয়ায় সিজারের যে যুদ্ধ হয়, তাতে তিনি পরাজিত হলেও ঝড়ের বেগে অ্যালেসিয়া দখল করে নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই শেষ পর্যন্ত সম্মিলিত গলবাহিনীকে তিনি পরাস্ত করেছিলেন। সিজার গলকে তার সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রদেশ করে নিয়েছিলেন এবং রীতিমত বার্ষিক কর আদায় করতেন। কর আদায় করেই নিশ্চিন্ত থাকেননি তিনি। নানাভাবে গলদের বশীভূত রাখবার চেষ্টাও করেছেন। যেখানে যা কিছু ভাল তা আত্মস্থ করার অসামান্য দক্ষতার ঐতিহ্যবাহী ছিল রোম। সেই সঙ্গে তারা জানত জয়ের ফলাফলকে কিভাবে নিজেদের কাজে লাগাতে হয়।
অন্যের কাছ থেকে অকৃপণভাবে চিন্তাধারা গ্রহণের পাশাপাশি তারা অধিকৃত অঞ্চলের লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করত। এরফলে তারা স্বেচ্ছায় রোমানদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে দ্বিধা করত না। সিজার সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করে গলদের ও উপজাতিদের বন্ধুতে রূপান্তরিত করতে যথোপযুক্ত চেষ্টা করেছেন। বহিঃশত্রু গলদের জয় করার পরেই যেন আকস্মিকভাবে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল সিজারের। রোমে অভ্যন্তরীণ শত্রুরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সিজার অবশ্য এবিষয়ে পূর্ণ সচেতন ছিলেন যে, তাঁর ব্যর্থতার সুযোগ নিয়েই বিপদ মাথা চাড়া দিতে পারে। দেখা গেল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পরেও তিনি বিপদমুক্ত থাকতে পারলেন না।
রোমে যে শাসক ত্রয়ী চক্র ৫৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গড়ে উঠেছিল পরবর্তী তিনবছরের মধ্যেই তার ভাঙ্গন দেখা দেয়। ক্র্যাসাস সিরিয়ায় নিহত হবার পর রোমের ক্ষমতার আকাশে রইলেন কেবল সিজার আর পম্পে। দুজনেই তখন ক্ষমতার মধ্যগগনে ! ফলে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠল। পম্পে কৌশলে সেনেটের পক্ষ অবলম্বন করলেন। ইতিমধ্যে সিজারের অধিনায়কত্বের সময়কাল উত্তীর্ণ হলে সেনেটে দাবি উঠল, সিজার এবার তার বাহিনী ভেঙ্গে দিন। এ দাবি ছিল অসাংবিধানিক। সিজার তাই ভিন্ন পথ নিলেন। তিনি তার বাহিনী নিয়ে দ্রুত ইতালীর সীমান্ত বর্তী নদী রুবিকনের পরপারে চলে এসে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন।
এই যুদ্ধে পম্পে পরাজিত হয়ে পলায়ন করলেন। পূর্বউপকূলে ব্রিন্দেশি পর্যন্ত সিজার তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। স্পেনে তখনো পর্যন্ত পম্পের একটি বাহিনী অপরাজিত রয়ে গিয়েছিল। তাই সিজারের সামনে কাজ ছিল দুটি। প্রথম হল সেনাপতি বিহীন একটি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা এবং দ্বিতীয় হল বাহিনীহীন নায়ক পম্পের পশ্চাদ্ধাবন করা। মোটামুটিভাবে এই কাজ শেষ করেই সিজার রোমে ফিরে এলেন। এবারে তিনি কন্সাল নির্বাচিত হলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৮ অব্দে সিজার পূর্বাঞ্চলে থেশানির ফ্যারশালস অভিযান করলেন। পম্পে পরাজিত হয়ে মিশরে পালিয়ে গেলেন।
সেখানেই তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হন। পম্পের অনুসরণ করে সিজার মিশরে উপস্থিত হলেন। তিনি জানতেন না যে এখানেই রয়েছে তার সর্বনাশের ফঁদ। তিনি মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার রূপের বাঁধনে বন্দি হয়ে পড়লেন। তাঁর আর রোমে ফেরার তাড়া থাকে না। ইতিহাসবিদদের অভিমত, এখানে সিজার ও ক্লিওপেট্রার একটি পুত্রসন্তান জন্মলাভ করে। সিজারের অনুপস্থিতিতে তার শত্রুরা সুযোগের সদব্যবহার করতে ভুল করল না। তারা নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করে শক্তিমান হয়ে উঠল। সিজার যখন রোমে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন তিনি রীতিমত শত্রু পরিবেষ্টিত।
কিন্তু শত্রুদের কোন রকম সুযোগ নেবার আগেই এশিয়া মাইনরের দিকে অভিযান করে সিজার পম্পের পুরনো এক সহযোগী পন্টাসের রাজা ফারনাসেসকে পরাজিত করলেন। সিজারের বিজয়ের ইতিহাসে এই অভিযান বিশেষ উল্লেখযোগ্য ৷ এই সময়েই তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তার বিখ্যাত উক্তি — ভিনি, ভিডি, ভিসি। অর্থাৎ এলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম। এই অভিযানের শেষে বিদ্রোহ দমন করবার জন্য সিজারকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে আফ্রিকা পর্যন্ত অগ্রসর হতে হয়েছিল। ইতালিতে ফিরে এসেই সিজারের জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। তিনি নিজেকে একনায়ক হিসেবে ঘোষণা করলেন কিন্তু এই দম্ভই সিজারের কাল হল। ক্ষমতা দখলের স্বল্পকালের মধ্যেই সিজার সুশাসক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন।
জুলিয়াস সিজার এর মৃত্যু: Julius Caesar’s Death
আল্পসের ওপারের অঞ্চলেও উপজাতিগুলিকে ভোটাধিকার ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা দান করলেন। ক্যালেন্ডার সংস্কার করলেন। বিভিন্ন জনস্বার্থের পরিপুষ্টি বিধান করলেন। সিজারের আত্মশ্লাঘা এতটাই বৃদ্ধি পেল যে তিনি নিঃসংশয়ে নিজেকে দেবতা বলে ভাবতে লাগলেন। প্রজাদের কাছেও দেবতার সম্মান দাবি করলেন। অজেয় দেবতার প্রতি — এই বাক্য খোদিত করে তিনি নিজের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করলেন মহান রোমের শ্রেষ্ঠ পুরুষদের মূর্তির মধ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিজারকে একদিন আকস্মিক ভাবে প্রাণ হারাতে হল সেনেট হাউসে পম্পের মূর্তির পাদদেশে ঘাতকের ছুরিকাঘাতে। ইতিহাসের সাক্ষ্য হল, সিজারের মিত্ররাই তাকে খুন করেছিল। মৃত্যুর পূর্বে সিজারের সর্বশেষ উক্তি ছিল — হায়, ব্রুটাস, তুমিও ! তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর সাফল্যই প্রলুব্ধ করেছিল তার ঘনিষ্ঠ জনদের।