কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করো।

Rate this post

কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করো: কার্স্ট বলতে ভূমিরূপ ও পয়ঃপ্রণালীর সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যসহ এমন একটি বিশিষ্ট ভূমিখণ্ডকে বোঝায়, যা মূলত শিলার দ্রাব্যতার গুণ উচ্চমাত্রায় থাকার ফলে প্রাকৃতিক জলপ্রবাহের দ্বারা সৃষ্টি হয়। এই কার্স্ট অঞ্চল ঘন সঙ্ঘবদ্ধ চুনাপাথর, ডলোমাইট ও চক দ্বারা গঠিত হয় বলে এই অঞ্চলে ভৌমজলের কার্যের ফলে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভূমিরূপ গঠিত হয়। বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড বৃষ্টির জলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে মৃদু কার্বনিক অ্যাসিড সৃষ্টি হয়, তা ক্যালসিয়াম কার্বনেটকে ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত করে। এই ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেটই কার্স্ট অঞ্চলে স্বতন্ত্র ভূমিরূপ সৃষ্টির জন্য দায়ী। নিম্নে কার্স্ট অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত ভৌমজলের কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

A)ক্ষয়জাত ভূমিরূপ:

কার্স্ট অঞ্চলে ভৌম জলের ক্ষয়কার্যের ফলে নিম্নলিখিত ভূমিরূপগুলি গঠিত হয়-

১)সোয়ালো হোল: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে ভূপৃষ্ঠের উপর সৃষ্ট ছোট ছোট গর্তগুলিকে সোয়ালো হোল বলে। সোয়ালো হোল বিভিন্ন স্থানে ক্রুয়েকস্, সোয়লেট, আঙেন, গ্রুফে, পুইট ও সচ্ নামেও পরিচিত।

উদাহরণ: ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের ঈঙ্গলবারের গ্যাপিং ঘাইল হল সোয়ালো হোলের উদাহরণ।

২)সিঙ্কহোল: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট সোয়ালো হোলগুলি যদি দ্রবন কার্যের দ্বারা আরো গভীর হয়, তাহলে সেই সোয়ালো হোল অপেক্ষা গভীর গর্তগুলিকে সিঙ্কহোল বলে।প্রধানত চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে ভৌমজলের নিম্নমুখী দ্রবন কার্যের জন্য অথবা ভূ-অভ্যন্তরস্থ কোন সুরঙ্গ বা গুহার ওপরের শিলার ধ্বসের ফলে সিঙ্কহোল সৃষ্টি হয়।ইহা ফানেলের ন্যায় আকৃতি বিশিষ্ট হয়। সিঙ্কহোলগুলি কয়়েক সেমি থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত গভীর হয়।

উদাহরণ: ভারতের ছত্রিশগড় রাজ্যের ধামতারি সিঙ্কহোলটি বিখ্যাত।

৩)ডোলাইন: কার্স্ট অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে সিঙ্কহোল ও সোয়ালো হোলগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে অপেক্ষাকৃত বৃহদাকার গর্ত সৃষ্টি হয়, তাকে ডোলাইন বলে।ডোলাইনগুলি প্রধানত বৃৃৃহৎ ফানেল আকৃতির হয়। এগুলি ২-১৫ মিটার গভীর এবং ৬০-১০০ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট হয়। উৎপত্তি অনুসাারে ডোলাইনগুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

ক)দ্রবণ ডোলাইন: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে চুনাপাথরের দুর্বল সন্ধিস্থলগুলি দ্রবীভূত হয় যে ডোলাইন সৃষ্টি হয়, তাকে দ্রবণ ডোলাইন বলে।

খ)ধসন ডোলাইন: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে চুনাপাথরের গুহার ছাদ ধসে গিয়ে যে ডোলাইন সৃষ্টি হয়, তাকে ধসন ডোলাইন বলে।

গ)অবনমন ডোলাইন: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হওয়ার পর ওপরের অদ্রাব্য শিলাস্তর নিজ ভারে বসে গিয়ে যে ডোলাইন সৃষ্টি হয়, তাকে অবনমন ডোলাইন বলে।

ঘ)দ্রবণ-পাইপ ডোলাইন: কার্স্ট অঞ্চলে চুনাপাথর স্তরের মধ্যে ফাটল বা দারণ লম্বভাবে বিস্তার লাভ করলে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে ফাটল বা দারন বরাবর গোলাকার গর্ত সৃষ্টি হয় এবং ওপরের অংশ বসে গিয়ে যে ডোলাইন সৃষ্টি হয়, তাকে দ্রবণ-পাইপ ডোলাইন বলে।

ঙ)ককপিট ডোলাইন: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে যে চতুর্দিক খাড়া‌ পাড়যুক্ত অর্ধগোলাকৃতি ডোলাইন সৃষ্টি হয়, তাকে ককপিট ডোলাইন বলে। জামাইকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ককপিট ডোলাইন দেখা যায় বলে জামাই কাকে ককপিট কান্ট্রি বলা হয়।

উদাহরণ-অন্ধ্রপ্রদেশের বোরাগুহা অঞ্চলে ডোলাইন দেখতে পাওয়া যায়।

৪)উভালা: কার্স্ট অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে ডোলাইনগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় অথবা দু তিনটি ডোলাইন একত্রে মিলিত হয়ে যে বৃহদাকার গর্ত সৃষ্টি হয়, তাকে উভালা বলে। অনেক সময় সুবিশাল চুনাপাথরের গুহার ছাদ ধসে গিয়েও উভালা সৃষ্টি হয়। এক একটি উভালার আয়তন কয়েক হেক্টর হয়ে থাকে।

উদাহরণ-যুগোস্লাভিয়া, জামাইকা, কিউবা ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কার্স্ট অঞ্চলে উভালা দেখতে পাওয়া যায়।

৫)পোলজে: উভালার থেকে আয়তনে বৃহৎ উপবৃত্তাকার চুনাপাথরের গর্তকে পোলজে বলে।কার্স্ট অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে উভালাগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পোলজে সৃষ্টি হয়। এগুলি সাধারণত দীর্ঘায়ত, সমতল তলদেশ বিশিষ্ট ও চতুর্দিক খাড়া ঢালযুক্ত আবদ্ধ গর্ত। এদের গড় ক্ষেত্রফল ২৫০ বর্গ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পোলজের উপরিভাগে হামস্ বা হে স্ট্যাক হিল নামক শঙ্কু আকৃতির অবশিষ্ট পাহাড় অবস্থান করে।

উদাহরণ-যুগোস্লাভিয়ার লিভানো পোলজেটি বিখ্যাত।

৬)ল্যাপিস: কার্স্ট অঞ্চলে ভূমিরূপ বিবর্তনের তরুণ অবস্থায় শিলার ফাটল বরাবর দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে ফাটলগুলি ক্রমশঃ বর্ধিত হয়ে যে সংকীর্ণ, গভীর ও পরস্পর সমান্তরাল পরিখার সৃষ্টি হয়, তাকে ফ্রান্সে ল্যাপিস, জার্মানিতে কারেন ও ইংল্যান্ডে গ্রাইকস বলে।এই ল্যাপিস বা কারেন বিভিন্ন ধরনের হয়। যেমন-

ক)রিলেন কারেন: অত্যন্ত ক্ষুদ্র, সরু ও ঘনসন্নিবদ্ধ পরিখা বা কারেনগুলিকে রিলেন কারেন বলে।

খ)রিনেন কারেন: কারেনের থেকে বড় পরিখা বা গর্তগুলিকে রিনেন কারেন বলে।

গ)ট্রিট কারেন: অতি ক্ষুদ্র ও সমতল তলদেশ বিশিষ্ট পরিখা বা কারেনকে ট্রিট কারেন বলে।

ঘ)রুন্ড কারেন: মৃত্তিকা স্তরের নিচে গোলাকৃতি শিলাখণ্ড যুক্ত পরিখাগুলিকে বা কারেনগুলিকে রুন্ড কারেন বলে।

ঙ)ক্লুফট কারেন: দারুন যুক্ত চুনাপাথরের ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট বড়ো বড়ো লম্বা খাত বা পরিখাগুলিকে ক্লুফট কারেন বলে।

উদাহরণ-ভারতের দেরাদুনের তপকেশ্বর গুহার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ল্যাপিস দেখা যায়।

৭)ক্লিন্ট: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট দুটি ল্যাপিস বা গ্রাইকসের মধ্যবর্তী প্রায় সমতল আয়তকার স্তম্ভকে ক্লিন্ট বলে।

উদাহরণ-মধ্যপ্রদেশের নন্দিনী খনি অঞ্চলে এবং অন্ধপ্রদেশের বোরাগুহালুতে ক্লিন্ট দেখা যায়।

৮)পোনর: কার্স্ট অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে অবস্থিত সোয়ালো হোলের সহিত ভূগর্ভস্থ গুহার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী বেলনাকার সুরঙ্গপথকে পোনর বলে। ইহা ভূপৃষ্ঠ থেকে উল্লম্বভাবে বা অত্যন্ত খাড়াভাবে ভূগর্ভে নেমে যায়। মূলত চুনাপাথরের ওপর ভৌমজলের দ্রবণ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে এই সুরঙ্গ পথ তৈরি হয়।সার্বিয়ান ভাষায় পোনরকে অ্যাভেন বলা হয়।

উদাহরণ-ইংল্যান্ডের চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।

৯)হামস্: কার্স্ট অঞ্চলে ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে সমগ্র অঞ্চলটি ভৌমজলের দ্রবণ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অবনত হয়ে পড়ে। কেবলমাত্র কিছু কিছু কঠিন শিলাখণ্ড ক্ষয় প্রতিরোধ করে বিচ্ছিন্নভাবে ঢিবির আকারে দাঁড়িয়ে থাকে। কার্স্ট অঞ্চলে প্রায় সমতল অবনত ভূমির উপর বিচ্ছিন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এই শঙ্কু আকৃতির অবশিষ্ট পাহাড় বা ঢিবিগুলিকে হামস্ বলে। এগুলি সাধারনত পোলজের উপরিভাগে অবস্থান করে।হামসকে কোথাও কোথাও হে স্ট্যাক হিল বা পেপিনো হিরো বলা হয়। ভারতের ছত্রিশগড় রাজ্যের রায়পুর জেলায় শেল পাথরে গঠিত হামসগুলিকে স্থানীয় ভাষায় রাবণ ভাটা বলে।

উদাহরণ-যুগোস্লাভিয়া (হামস্), পুয়ের্তোরিকো (হে স্ট্যাক হিল বা পেপিনো হিল) এবং ভারতের ছত্রিশগড়ের(রাবণ ভাটা) চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখতে পাওয়া যায়।

১০)টেরারোসা: টেরারোসা শব্দটি ‘Terra’ অর্থাৎ কাদা বা মৃত্তিকা এবং ‘Rossa’ অর্থাৎ লাল শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। সুতরাং টেরারোসা শব্দের অর্থ হলো লাল রঙের মৃত্তিকা। মৃদু থেকে মধ্যম ঢালবিশিষ্ট অবিশুদ্ধ চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত ভৌমজলের প্রভাবে দ্রবণের দ্বারা ভূপৃষ্ঠে এক ধরনের লাল রঙের আম্লিক কাদার আস্তরণ সৃষ্টি হয়। মধ্য অক্ষাংশে বা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে চুনা পাথরের উপর অবস্থিত এই লাল রঙের কাদার আস্তরণকে বা মৃত্তিকা স্তরকে টেরারোসা বলে। প্রধানত কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত ভৌমজলের দ্রবন কার্যের ফলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয়ে ভূগর্ভে প্রবেশ করলে অদ্রাব্য সূক্ষ্ম লৌহ যৌগ ভূপৃষ্ঠ পড়ে থেকে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের প্রভাবে কালক্রমে লাল রঙের টেরারোসায় পরিণত হয়।

উদাহরণ-আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ও পেনসিলভেনিয়ার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে টেরারোসা দেখা যায়।

১১)শুষ্ক উপত্যকা: কার্স্ট অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর গতিপথে সিঙ্কহোল, সোয়ালো হোল, পোনর ইত্যাদি অবস্থান করলে নদীর জল ওই সমস্ত গর্তের মধ্যে দিয়ে ভূ-গর্ভে প্রবেশ করে।ফলে নদী উপত্যকার পরবর্তী অংশ বা নিম্নাংশ জলশূন্য ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। জলশূন্য এই নদী উপত্যকাকে শুষ্ক উপত্যকা বলে।এই অংশে নদী অন্তঃসলিলা নদী রূপে প্রবাহিত হয়।

উদাহরণ-ভারতের বোরা গুহা অঞ্চলে শুষ্ক উপত্যকা দেখা যায়।

১৩)অন্ধ উপত্যকা: কার্স্ট‌ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কোন নদী যখন সিঙ্কহোল, সোয়ালো হোল বা পোনরে প্রবেশ করে তখন নদী উপত্যকার বিস্তার নদীর উৎস থেকে ওই সিঙ্কহোল, সোয়ালো হোল বা পোনর পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং এবং ওইখানে নদী উপত্যকা হঠাৎ শেষ হয়ে যায়। নদী উপত্যকার এই অংশটিকে অর্থাৎ নদী যেখানে এসে তার প্রবাহ পথ হারিয়ে ফেলে তার উপত্যকাকে অন্ধ উপত্যকা বলে।এই উপত্যকা ঊর্ধ্ব নদী উপত্যকার অংশ বিশেষ। এই উপত্যাকা সর্বদা জলপূর্ণ থাকে।

উদাহরণ-ইংল্যান্ডের পিনাইল পার্বত্য অঞ্চলে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কারেগুডা ও বোরা গুহা অঞ্চলে অন্ধ উপত্যকা দেখা যায়।

১৪)কার্স্ট গুহা: কার্স্ট অঞ্চলে ভৌম জলস্তরের নিকটে বা সামান্য নিচে ক্রমাগত ভৌমজলের দ্রবন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে শিলা স্তর ধ্বসে গিয়ে যে শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়, তাকে কার্স্ট গুহা বলে। এই গুহার আকৃতি খুব বড় হলে তাকে কেভার্ন বা কন্দর বলে এবং বহুতল বিশিষ্ট কার্স্ট গুহাকে গ্যালারি গুহা বলে। কার্স্ট গুহার প্রকোষ্ঠগুলি উলম্ব বা তির্যক সুরঙ্গ পথের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।

উদাহরণ-সুইজারল্যান্ডের হোলক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্লসবার্ড ও ম্যামথ, ফ্রান্সের গুফ্রে বার্জার, ভারতের বোরা কেভ হলো কার্স্ট গুহার উদাহরণ।এদের মধ্যে কার্লসবার্ড গুহা পৃথিবীর বৃহত্তম, হোলক পৃথিবীর দীর্ঘতম এবং গুফ্রে বার্জার পৃথিবীর গভীরতম কার্স্ট গুহা।

১৫)অন্যান্য ভূমিরূপ: উপরিলিখিত ভূমিরূপগুলি ছাড়াও কাস্ট অঞ্চলে ভৌমজলের ক্ষয় কার্যের ফলে দ্রবণ প্যান, কার্স্ট হ্রদ, কার্স্ট বাতায়ন, প্রাকৃতিক সেতু ইত্যাদি ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।

B)সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ:

কার্স্ট অঞ্চলের ভৌমজলের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট কার্স্ট গুহার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ গড়ে ওঠে।কার্স্ট গুহার অভ্যন্তরের এই সঞ্চয়জাত ভূমিরূপগুলিকে ভূবিজ্ঞানী ডেভিস ড্রিপস্টোন নামে অভিহিত করেছেন। অনেক ভূবিজ্ঞানী আবার এই সঞ্চয়জাত ভূমিরূপগুলিকে কেভ ট্রাভারটাইন বা স্পেলিয়োথেম নামেও অভিহিত করেছেন। প্রধানত কার্স্ট গুহার অভ্যন্তরে চুনাপাথরের জলীয় দ্রবণ থেকে জল শুকিয়ে গেলে অবশিষ্ট পদার্থ জমাট বেঁধে এই ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় কার্স্ট অঞ্চলে গুহার অভ্যন্তরে চুনাপাথরের জলীয় দ্রবণ অবক্ষেপণের বা সঞ্চয়ের দ্বারা নিম্নলিখিত ভূমিরূপগুলি সৃষ্টি হয়-

১)স্ট্যালাকটাইট-কার্স্ট অঞ্চলে গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত চুনাপাথরের স্তম্ভকে স্ট্যালাকটাইট বলে। কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্বারা সৃষ্ট চুনাপাথরের জলীয় দ্রবণ অনেক সময় গুহার ছাদ থেকে অত্যন্ত ধীরে ধীরে ফোঁটার আকারে নিচে নামতে থাকে। এই অবস্থায় কখনো কখনো উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে চুনাপাথরের জলীয় দ্রবণের মধ্যবর্তী জল বাষ্পীভূত হওয়ার ফলে শুষ্ক চুনাপাথর স্তম্ভের আকারে স্ট্যালাকটাইট রূপে গুহার ছাদ থেকে ঝুলতে থাকে। স্ট্যালাকটাইটগুলি গুহার ছাদের দিকে মোটা ও বিস্তৃত এবং মেঝের দিকে সরু ও তীক্ষ্ণ হয়।

উদাহরণ-ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি, ছত্রিশগড়ের পাঁচমারি, অন্ধপ্রদেশের বোরাগুহালু ও কুমায়ুন হিমালয় অঞ্চলের স্ট্যালাকটাইট দেখা যায়। এছাড়া আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যামথ ও কার্লসবার্ড গুহায় এবং যুগোস্লাভিয়ার দিনারিক আল্পস পার্বত্য অঞ্চলে ও অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের কাস্ট অঞ্চলেও স্ট্যালাকটাইট দেখা যায়।

২)স্ট্যালাগমাইট-কার্স্ট অঞ্চলে গুহার মেঝে থেকে ওপরের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত চুনাপাথরের স্তম্ভকে স্ট্যালাগমাইট বলে।কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত জলের দ্বারা সৃষ্ট চুনাপাথরের জলীয় দ্রবণ অনেক সময় গুহার মেঝেতে অত্যন্ত ধীরে ধীরে ফোঁটা ফোঁটা আকারে পড়তে থাকে। পরবর্তীকালে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ওই জলীয় দ্রবণ থেকে জল বাষ্পীভূত হলে শুষ্ক চুনাপাথর স্তম্ভের আকারে স্ট্যালাগমাইট রূপে গুহার মেঝে থেকে ঊর্ধ্বমুখী ভাবে অবস্থান করে। স্ট্যালাগমাইট মেঝের দিকে মোটা ও বিস্তৃত এবং ওপরের দিকে সরু ও তীক্ষ্ণ হয়।

উদাহরণ-ভারতের দেরাদুনের কাছে তপকেশ্বর গুহায়, বিহারের সাসারামের গুপ্তেশ্বর গুহায় ও অন্ধ্রপ্রদেশের বোরা গুহালুতে স্ট্যালাগমাইট দেখা যায়।এছাড়া আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যামথ ও কার্লসবার্ড গুহায় ও ফ্রান্সের গুফ্রে বার্জার গুহায় স্ট্যালাগমাইট দেখা যায়।

৩)হেলিকটাইট ও হেলিকমাইট-অনেক সময় কার্স্ট অঞ্চলে চুনাপাথরের গুহার সৃষ্ট চুনাপাথরের স্তম্ভগুলি অর্থাৎ স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইটগুলি স্থান বিশেষে অনুভূমিক বার তির্যক ভঙ্গিতে অবস্থান করে । এইরূপ তির্যক বা হেলানো স্ট্যালাকটাইটগুলিকে‌ হেলিকটাইট এবং তির্যক বা হেলানো স্ট্যালাগমাইটগুলিকে হেলিকমাইট বলে।

উদাহরণ-ভারতের দেরাদুনের কাছে তপকেশ্বর গুহায়, বিহারের সাসারামের গুপ্তেশ্বর গুহায় ও অন্ধ্রপ্রদেশের বোরাগুহালুতে হেলিকটাইট ও হেলিকমাইট দেখা যায়।

৪)পিলার বা স্তম্ভ-কাস্ট অঞ্চলে চুনাপাথরের গুহায় স্ট্যালাকটাইটের ঠিক নিচে স্ট্যালাগমাইট গঠিত হয় এবং গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত স্ট্যালাকটাইট ও মেঝে থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত স্ট্যালাগমাইট এক সময় পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়ে যে থামের ন্যায় ভূমিরূপ গঠন করে, তাকে পিলার বা স্তম্ভ বলে। কাস্ট গুহার অভ্যন্তরে এই ধরনের পিলার বা স্তম্ভ সৃষ্টি হতে প্রায় 30 থেকে 40 হাজার বছর সময় লাগে।

উদাহরণ-ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি, ছত্রিশগড়ের পাঁচমারি, অন্ধ্রপ্রদেশের বোরাগুহালু ও কুমায়ুন হিমালয় অঞ্চলে পিলার বা স্তম্ভ দেখা যায়।

৫)ড্রেপ-কার্স্ট অঞ্চলে চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে সৃষ্ট অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ট্যালাকটাইটেরর মত ঝুলন্ত খাঁজকাটা পর্দার ন্যায় ভূমিরূপকে ড্রেপ বা কার্টেন বলে।

৬)গ্লোবুলাইট-কার্স্ট অঞ্চলে চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত দ্রবীভূত চুনের ক্ষুদ্র ও গোলাকৃতি মূর্তিকে গ্লোবুলাইট বলে।

৭)অ্যানথোডাইট-কার্স্ট অঞ্চলে চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত ফুলের পাপড়ির ন্যায় দ্রবীভূত চুনের জমাটবদ্ধ রূপকে অ্যানথোডাইট বলে।

Leave a Comment