নদীর পুনর্যৌবন লাভ ও পুনর্যৌবন লাভের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সমূহ

Rate this post

নদীর পুনর্যৌবন লাভ ও পুনর্যৌবন লাভের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সমূহ: বিভিন্ন কারনবশত নদীর নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পাওয়াকে পুনর্যৌবনলাভ বলে। নদীর পুনর্যৌবনলাভ ক্ষয়চক্রকে দীর্ঘায়িত করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – বার্ধক্য পর্যায়ে নদী সাধারণত মৃদু ঢালযুক্ত অঞ্চলের উপর দিয়ে ধীর গতিতে বয়ে যায়, এই অবস্থায় নদীর পুনর্যৌবনলাভ ঘটলে ক্ষয়চক্র বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং নদী নিম্ন ক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে আবার যৌবনবস্থায় ফিরে আসে।

নদীরপুনর্যৌবন লাভের প্রকারভেদ 

১. গতিশীল পুনর্যৌবনলাভ – সাধারণত স্থলভাগের ভূউত্থান জনিত কারণে সমুদ্র তল থেকে উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে, নদী আবার তার নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পেলে তাকে গতিশীল পুনর্যৌবনলাভ বলে। 

২. ইউস্ট্যাটিক পুনর্যৌবনলাভ – ভূআন্দোলনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের অবনমন ঘটলে বা সমুদ্রের জল হিমবাহে পরিনত হওয়ার ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের অবনমন ঘটে যার দরুন নদী তার নিম্ন ক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পায়, একেই ইউস্ট্যাটিক পুনর্যৌবনলাভ বলে।

৩. স্থিতিশীল পুনর্যৌবনলাভ – নদী মধ্যস্থিত কোন কারণ বশত নদী যখন নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পায়, তখন তাকে স্থিতিশীল পুনর্যৌবনলাভ বলে। নদী অববাহিকা অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ফলে, নদী বাহিত বোঝার পরিমান হ্রাস পেলে কিংবা নদীগ্রাস জনিত কারনে নদীতে জলের পরিমান বৃদ্ধি পেলে নদী আবার তার নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পায় ।

পুনর্যৌবনলাভের কারণ

নদীর স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রে নদীর পুনর্যৌবন লাভের প্রধান কারণ ক্ষয়ের শেষ সীমার ঋনাত্মক কারণ যা নানা কারণের হয়ে থাকে । ক্ষয়ের শেষ সীমার ঋনাত্মক পরিবর্তন সমুদ্র পৃষ্ঠের ঋনাত্মক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। যাকে মূলত ইউস্ট্যাটিক ভূআলোড়ন বলা। হিমযুগের সময়ও সমুদ্র জলের ঋনাত্মক পরিবর্তন হয়েছিল। এর ফলে নদী ঢালের পরিমান বৃদ্ধিপায়, নদীর নিম্ন ক্ষয় করে যৌবন অবস্থা প্রাপ্ত হয়।

নদীর পূনর্যৌবনলাভের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

ক্ষয়চক্রের বাধা ও তার ফলস্বরূপ নদীর পুনর্যৌবনলাভ ঘটলে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর নানা রূপ ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। নিম্নে পুনর্যৌবনলাভের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

১. উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা – ভূ-আন্দোলনের ফলে নদী নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পেলে নদীর পুনর্যৌবনলাভ ঘটে । নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে পূর্বতন উপত্যকার মধ্যে কেটে বসে গিয়ে পুরনো উপত্যকার মধ্যে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট একটি নবীন উপত্যকার সৃষ্টি করে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় একটি উপত্যকার মধ্যে আরেক টি উপত্যকা অবস্থান করছে। একেই উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বলে।

২. নিক বিন্দু – নদীর পুনর্যৌবনলাভের ফলে সৃষ্ট নদীর নতুন ঢাল ও পুরনো ঢালের সংযুক্তি করনে যে খাঁজ গঠিত হয়, সেই খাঁজ কে নিক বিন্দু বলে । নিক বিন্দু অঞ্চলে নদীর জলতলের প্রভেদ ঘটলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।

৩. নদীমঞ্চ  প্লাবনভূমি বিশিষ্ট নদী উপত্যকার ভূমি ঢালের পরিবর্তন হলে নদীটি নিম্ন ক্ষয়ের মাধ্যমে পূর্বেকার উপত্যকার মধ্যে একটি নূতন উপত্যকা গঠন করে। পূর্বেকার নদী উপত্যকার প্রাবনভূমি নবীন নদী উপত্যকার দুপাশে নদী মঞ্চের সৃষ্টি করে।

৪. কর্তিত নদী বাঁক – বার্ধক্য অবস্থায় নদীতে বাঁকের পরিমান বৃদ্ধি পায় । এই অবস্থায় নদীতে পুনর্যৌবন লাভের ফলে নিম্ন ক্ষয় বেশিমাত্রায় হলে নদীটি উল্লম্ব ভাবে বাঁকের মধ্যে কেটে বসে যায়। আবার, নিম্নক্ষয়ের পার্শ্বক্ষয় চলতে থাকলে নদীটি একপাশে সরতে শুরু করে। এর ফলে বাঁকের একদিক খাড়া ঢালযুক্ত ও অন্য দিক মৃদু ঢাল যুক্ত হলে কর্তিত নদীবাকের সৃষ্ট হয়।

Leave a Comment