লিওন ট্রটস্কি জীবনী: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Leon Trotsky Biography in Bengali. আপনারা যারা লিওন ট্রটস্কি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী লিওন ট্রটস্কি র জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
লিওন ট্রটস্কি কে ছিলেন? Who is Leon Trotsky?
লিওন ত্রোৎস্কি (৭ই নভেম্বর ১৮৭৯ – ২১শে আগস্ট ১৯৪০) ছিলেন একজন মার্কসবাদী বিপ্লবী, তাত্ত্বিক, রাজনীতিবিদ এবং রুশ বিপ্লবের অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি লেনিনের ভাবশিষ্য ছিলেন। লাল ফৌজ গঠনে তার উদ্যোগ ছিল স্মরণীয়। যোসেফ স্তালিনের সাথে মতবিরোধের কারণে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পালিয়ে লাতিন আমেরিকায় অভিবাসন গ্রহণ করেন এবং সেখানেই ৬০ বৎসর বয়সে তার মৃত্যু হয়।
লিওন ট্রটস্কি জীবনী | Leon Trotsky Biography in Bengali
নাম | লিওন ট্রটস্কি |
জন্ম | 7 নভেম্বর 1879 |
পিতা | দাভিদ ব্রোনষ্টাইন |
মাতা | আন্না ব্রোনষ্টাইন |
জন্মস্থান | ইয়ানোভকা, ইয়েলিসভেটগ্র্যাডস্কি উয়েজড, রাশিয়ান সাম্রাজ্য (বর্তমান ইউক্রেন) |
জাতীয়তা | ইউক্রেনীয়, রাশিয়ান |
পেশা | মার্কসবাদী বিপ্লবী, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও রাজনীতিবিদ |
মৃত্যু | 21 আগস্ট 1940 (বয়স 60) |
লিওন ট্রটস্কি র জন্ম: Leon Trotsky’s Birthday
লিওন ট্রটস্কি 7 নভেম্বর 1879 জন্মগ্রহণ করেন।
লিওন ট্রটস্কি র পিতামাতা ও জন্মস্থান: Leon Trotsky’s Parents And Birth Place
রাশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির তত্ত্ববিদ নেতা ট্রটস্কির প্রকৃত নাম লিও দাভিদোভিচ্ ব্রনস্টেন। বিপ্লবোত্তর রাশিয়াতে লেনিনের উত্তরসূরি হিসাবে সর্বাগ্রে যাঁর নাম করা হতো তিনি লিয়ন ট্রটস্কি। ১৯১৭ খ্রিঃ বিপ্লবের মাধ্যমে জারতন্ত্রের অবসান, বলশেভিক দলের ক্ষমতা দখল ও সোভিয়েত রাশিয়া গঠন — সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গেই ট্রটস্কির নাম জড়িত। মহান রুশ বিপ্লবকে যারা সমগ্র বিশ্বে সংঘটিত করতে চেয়েছিলেন সেই মুষ্টিমেয় রুশ বিপ্লবীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য।
ট্রটস্কির জন্ম ১৮৯৭ খ্রিঃ ২৬ শে অক্টোবর ইউক্রেনের ইয়ানেভিকায় এক অবস্থাপন্ন চাষী পরিবারে। তার পিতার নাম ডেভিড ব্রনস্টেন। মায়ের নাম আন্না। বাল্যবয়সে স্থানীয় স্কুলে পড়াশুনা করেছেন ট্রটস্কি। আটবছর বয়সে পড়াশুনার জন্য তাকে পাঠানো হয় ওডেসায়। সেখানে তিনি থাকতেন সম্পর্কিত এক দাদার বাড়িতে। তিনি ছিলেন উদারপন্থী বুদ্ধিজীবী। এই দাদার সাহচর্যেই ছেলেবেলা থেকে ট্রটস্কি উদার চিন্তাভাবনার প্রতি আকৃষ্ট হন।
লিওন ট্রটস্কি র কর্ম জীবন: Leon Trotsky’s Work Life
স্কুলের পড়া শেষ হবার আগেই ট্রটস্কি মার্কসবাদের সঙ্গে পরিচিত হন। ১৮৯৬ খ্রিঃ তিনি গুপ্ত সোসালিস্ট দলের সঙ্গে জড়িত হন। স্কুলের পড়া শেষ করে ভর্তি হলেন ওডেসা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সময়েই তিনি গোপনে দক্ষিণ রাশিয়ার শ্রমিক ইউনিয়নের সংগঠনের কাজ করতে শুরু করেন। বৈপ্লবিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে দুবছরের মধ্যেই গ্রেপ্তার হতে হয় তাকে। কারাবাস ভোগ করতে হয় সাড়ে চার বছর। এরপর তাকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়।
নির্বাসনে থাকার সময়েই ট্রটস্কি বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম আলেকজান্দ্রা সোকোলোভস্কায়া ৷ তখনো পর্যন্ত তিনি লিও দাভিদোভিচ ব্রনস্টেন। দেশে থাকা নিরাপদ ছিল না। তাই বিদেশে পাড়ি দেবার উদ্দেশ্যে তাকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। সংগ্রহ হল জাল পাসপোর্ট। পাসপোর্টে ছদ্মনাম লেখা হল ট্রটস্কি। পরবর্তীকালে এই নামেই তিনি বিশ্বপরিচিতি লাভ করেন। জাল পাসপোর্ট নিয়ে ট্রটস্কি চলে এলেন লন্ডনে।
দেশে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কিছুদিন পরেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তার। লন্ডনে রুশ বিপ্লবী সোসাল ডেমোক্রেট দলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হল ট্রটস্কির। লেনিনের এই সহযোগী বিপ্লবীরা ‘ দ্য স্পার্ক ‘ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। ট্রটস্কি এই কাগজের সঙ্গে যুক্ত হলেন। রাশিয়ান সোসাল ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কার্স পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হল ১৯০৩ খ্রিঃ লন্ডনে ও ব্রাসেলসে। এই সম্মেলনে ট্রটস্কি গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের সমর্থনে তার বক্তব্য রাখেন।
কিন্তু তার এই মতামত লেনিন এবং বলশেভিক দলের নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হল না ৷ মতভেদকে কেন্দ্র করে পার্টি ভেঙ্গে গেল ৷ বাধ্য হয়ে ট্রটস্কি মেনশেভিক দলে চলে এলেন। ১৯০৫ খ্রিঃ মধ্যেই রাশিয়ায় বৈপ্লবিক কাজকর্ম জোরদার হয়ে উঠল। ক্রমেই বিপ্লব চূড়ান্ত পরিণতির পথে এগিয়ে চলেছিল। ট্রটস্কি স্বদেশে ফিরে এসে জার বিরোধী নানা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলেন। একবছরের মধ্যেই আবার গ্রেপ্তার হলেন ট্রটস্কি। কারাবাসকালে তিনি তাঁর স্থায়ী বিপ্লব মতবাদ নিয়ে একটি বই লেখেন। ১৯০৭ খ্রিঃ তাকে পুনরায় সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হল। এবারেও যথারীতি পালালেন ৷ গেলেন ভিয়েনায়।
১৯১৪ খ্রিঃ ইউরোপে শুরু হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাশিয়ার অংশ গ্রহণের প্রশ্নে প্রবল বিরোধিতা করল সোসাল ডেমোক্রেটরা। ট্রটস্কিও একইভাবে নিন্দা করলেন। যুদ্ধের সময় ট্রটস্কি ভিয়েনা থেকে গেলেন প্রথমে সুইজারল্যান্ড, পরে প্যারিসে। কিন্তু যুদ্ধবিরোধী মতামত ব্যক্ত করার জন্য তাকে ফ্রান্সে বা স্পেনে থাকতে দেওয়া হল না। তিনি চলে এলেন নিউইয়র্কে। ১৯১৭ খ্রিঃ ট্রটস্কি এখানে নিকোলাই বুখারিনের সঙ্গে যোগ দিলেন। বুখারিন ছিলেন বলশেভিকদের অন্যতম নেতা। তিনি রাশিয়ান ভাষায় প্রকাশিত ‘নভিমির’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ট্রটস্কিও পত্রিকার কাজে যুক্ত হলেন।
রাশিয়ায় ইতিমধ্যে জারতন্ত্রের পতন ঘটেছে। জনগণের বিপ্লব চূড়ান্ত সাফল্যের পথে। এই বিপ্লবকে চিরস্থায়ী বিপ্লব মনে করে ট্রটস্কি পেট্রোগ্রাদে ফিরে এলেন এবং মেনশেভিক দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন। এই সময়ে পুনরায় বলশেভিক দলের নেতৃত্বে বিভেদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। গঠিত হল তথাকথিত উদারপন্থী সরকার। এই সরকারের নেতৃত্বে রইলেন কেরেনস্কি। ট্রটস্কি গ্রেপ্তার হলেন ১৯১৭ খ্রিঃ। জেলে থাকা অবস্থায় এক অভাবিত ঘটনা ঘটল। তাঁকে বলশেভিক দলের সদস্যক্ত করা হল।
একই সঙ্গে তাকে নির্বাচিত করা হল কেন্দ্রীয় সমিতিরও সদস্য পদে। মাসখানেক কারাবাসের পর মুক্তি পেলেন ট্রটস্কি। কিছুদিন পরেই তিনি পেট্রোগ্রাদ সোভিয়েত অব ওয়ার্কাস এবং সোলজার ডেপুটিস – এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পেট্রোগ্রাদ ক্রমেই বলশেভিকদের দখলে চলে এলে ৬ ই নভেম্বর কেরেনস্কির পতন হল। ট্রটস্কি ঘোষণা করলেন, সোভিয়েত কংগ্রেসকে রক্ষা করবার জন্য তাঁর নেতৃত্বাধীন মিলিটাবি রিভোলিউশনারি কমিটি সর্বদা প্রস্তুত। কেরেনস্কির পতনের একদিন পরেই, ৭ ই নভেম্বর লেনিন আত্মপ্রকাশ করলেন এবং বলশেভিক বিপ্লবের নেতৃত্ব হাতে তুলে নিলেন। বিপ্লবী সৈন্য বাহিনীর নেতৃত্বে ট্রটস্কিই বহাল রইলেন। কেরেনস্কি যথারীতি পেট্রোগ্রাদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেন। কিন্তু সদাতৎপর ট্রটস্কি তাঁর সেই উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিলেন।
সফল বিপ্লবের পর গঠিত হল সোভিয়েত রাশিয়া, ক্ষমতায় এল বলশেভিক দল। নতুন সরকারের ফরেন কমিশনার নিযুক্ত হলেন ট্রটস্কি। নতুন পদের দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রটস্কির প্রথম কাজ হল যুদ্ধলিপ্ত শক্তিগুলির মধ্যে শান্তি স্থাপন করা। এই উদ্দেশ্যে ব্রেস্ট – লিতোভস্কে শান্তি বৈঠক আহ্বান করা হল। এই বৈঠকে জার্মানি যে সব শর্ত আরোপ করল ট্রটস্কি তার সঙ্গে একমত হতে পারলেন না। বৈঠক ব্যর্থ হল। পেট্রোগ্রাদে ফিরে এসে তিনি জার্মানির শর্তের সমালোচনা করলেন।
ট্রটস্কি জার্মানির আরোপিত সন্ধি চুক্তির বিরোধিতা করলেও লেনিন জার্মানির সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। শেষ পর্যন্ত তার ইচ্ছাই ফলবতী হল এবং তার মতামতই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হল। ট্রটস্কি ফরেন কমিশর পদ থেকে পদত্যাগ করলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে যুদ্ধবিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্তার পদে নিয়োগ করা হল। এবারে ট্রটস্কি উদ্যোগ নিলেন লালফৌজ বাহিনী সংগঠনের কাজে। এই সময়ে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পেলেন। সেগুলি হল গৃহযুদ্ধ প্রতিহত করা এবং বৈদেশিক আক্রমণ মোকাবেলা করা। এই সময়ে ট্রটস্কি সেনাবিভাগের অনুকূলে বাস্তবসম্মত ও কার্যকরী কিছু নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
কিন্তু যোসেফ স্তালিনের নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক গোঁড়া নেতা ট্রটস্কির নীতি ও সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। অবশ্য এই বিরোধিতা অসার প্রমাণ করে দিল সুগঠিত লাল ফৌজের সাফল্য। ফলে ট্রটস্কির হাত আরও শক্তিশালী হল। অসাধারণ বাস্তববাদী ট্রটস্কি সেনাবিভাগের মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পেশাদারি নীতি প্রয়োগ করে সাফল্য লাভ করেছিলেন। দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও তার নীতি ছিল অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠ ও বাস্তবতামুখী। এই সকল কারণে নেতৃত্বের প্রশ্নে সোভিয়েত রাশিয়ায় লেনিনের পরেই তার নাম চিহ্নিত হয়ে যায়। ১৯১৯ খ্রিঃ সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর পাঁচ সদস্যের অন্তর্ভুক্ত হলেন ট্রটস্কি।
দেশের পুণর্গঠনের প্রশ্নে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি লেনিনের সঙ্গে একমত হতে পারতেন না। তবে প্রায়োগিক বিচারে তার মতামত কখনোই লেনিনকে অতিক্রম করতে পারেনি। যদিও প্রশাসনিক বুদ্ধিমত্তার বিচারে তিনি ছিলেন লেনিনেরও ওপরে। ট্রটস্কির জীবনীকাররা মন্তব্য করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তিনি তাঁর সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না রাজনৈতিক পেশাদারিত্বের অপ্রতুলতার কারণে। লেনিন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লেন ১৯২২ খ্রিঃ।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠল, লেনিনের পরে কে নেবেন সোভিয়েত রাশিয়ার দায়িত্ব। দলের ভেতরে এবং বাইরে জোের আলোচনা চলল। দেখা গেল ট্রটস্কির প্রতিই সকলের লক্ষ। স্পষ্ট হয়ে উঠল ক্রমশ ট্রটস্কির নাম — তিনিই হবেন লেনিনের স্থলাভিসিক্ত ৷ কিন্তু ঈর্ষা সর্বত্রগামী। দেশগঠনের নিঃস্বার্থ কর্মেও তার বিষাক্ত স্পর্শ যুক্তি বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে দিতে কম শক্তিশালী নয়। পলিটব্যুরোর ঈর্ষাকাতর কিছু নেতার বিরোধিতা প্রবল হয়ে উঠল। ট্রটস্কির বিপক্ষে আরও কয়েকটি নাম তুলে ধরা হল। তাঁরা হলেন ক্যামেনভ, স্তালিন এবং জিনোভেভ।
আরও পড়ুন: রানী প্রথম এলিজাবেথ জীবনী
আরও পড়ুন: ভিকাজী রুস্তম কামা জীবনী
১৯২২ খ্রিঃ নাগাদ লেনিন কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেন। ত্রয়ী নেতৃত্বের কর্মকুশলতার বিচার বিশ্লেষণের কাজে তিনি ট্রটস্কিরই সাহায্য নিলেন। এই সময়ে তিনি আমলাতন্ত্রের সংস্কার বিষয়ে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যনীতির ক্ষেত্রে ট্রটস্কির মতকেই সমধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। নেতৃত্বের প্রশ্নে স্তালিন এবং ট্রটস্কির বিরোধ এতই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে লেনিন স্বয়ং অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। তিনি স্তালিনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দিলেন ট্রটস্কিকে। তার বিরোধিতা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্তালিনের প্রভাব অক্ষুণ্ণই রইল। শেষ পর্যন্ত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা ছাড়া আর পথ রইল না।
ট্রটস্কি স্পষ্টই জানালেন, কেন্দ্রীয় কমিটি দলের গণতান্ত্রিক কাঠামো ভঙ্গ করে পক্ষপাতিত্বের প্রশ্রয় দিচ্ছে। কেবল তাই নয় দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রূপায়ণে দলের চরম ব্যর্থতার সমালোচনাও করলেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। এই প্রকাশ্য প্রতিবাদের পরে ট্রটস্কির বিরুদ্ধেও পাল্টা আক্রমণ চলল। তাকে বলা হলো বিভেদকামী। আরও বলা হল তিনি সকল প্রকার সুযোগ নিজের পক্ষে টানবার চেষ্টা করছেন। দলের এই সংকট সময়ে আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন ট্রটস্কি। ফলে তার পক্ষে আর আক্রমণের প্রতিউত্তর দেওয়া সেই সময়ে সম্ভবপর হল না। তার এই সাময়িক নীরবতার সুযোগে সাংগঠনিক শক্তির জোরে স্তালিন জয়ী হয়ে গেলেন।
১৯২৪ খ্রিঃ জানুয়ারীতে দলের ১৩ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। এই সমাবেশে স্তালিন ও তাঁর সমর্থকরা ট্রটস্কির নিন্দা করে তার সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিলেন। ট্রটস্কির প্রভাবের কথা চিন্তা করে তার ডানা ছাঁটারও ব্যবস্থা হল। চতুর্মুখী আক্রমণের মাধ্যমে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা হতে লাগল, রুশ বিপ্লবে ট্রটস্কির অবদান কত সামান্য ছিল। তার স্থায়ী বিপ্লবের মতবাদকেও ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা হল। ১৯২৫ খ্রিঃ মধ্যেই ট্রটস্কিকে সমর বিভাগের দায়িত্ব থেকে অপসারিত করা হল। বস্তুতঃপক্ষে স্তালিন ও ট্রটস্কি এই দুই নেতার মধ্যে মূলতঃ বিরোধ ছিল একটি বিষয়ে। স্তালিন সমর্থন করতেন একদেশীয় সমাজতন্ত্র।
অপর পক্ষে ট্রটস্কি ছিলেন বিশ্ববিপ্লবের প্রবক্তা। পরের বছরেই ১৯২৬ খ্রিঃ ট্রটস্কির পলিটব্যুরোর পদও কেড়ে নেওয়া হল। সেখানেই শেষ হল না। এক বছরের মধ্যেই পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল। ধাপে ধাপে সুকৌশলে কোণঠাসা করে ফেলা হচ্ছিল ট্রটস্কিকে। ১৯২৭ খ্রিঃ বিপ্লবের দশম বছরে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে সেই কাজ সম্পূর্ণ করা হল। এরপর ১৯২৮ খ্রিঃ ট্রটস্কি ও তার অনুগামীদের সোভিয়েত রাশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাসনে পাঠানো হল। নির্বাসনকালেই ট্রটস্কি আত্মগোপন করলেন। দেশের বাইরে অজ্ঞাতবাসে থাকা কালে তিনি তার আত্মজীবনী এবং রুশ বিপ্লবের ইতিহাস রচনায় মনোনিবেশ করলেন।
আরও পড়ুন: বিপিনচন্দ্র পাল জীবনী
ইতিমধ্যে জার্মানিতে হিটলারের উত্থান ইউরোপ জুড়ে ত্রাসের সঞ্চার করেছে। ট্রটস্কি সমগ্র বিশ্বকে যে একটি সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে আনার স্বপ্ন দেখতেন, হিটলারের উত্থানে তা চুরমার হয়ে গেল। ১৯৩৩ খ্রিঃ ট্রটস্কি গেলেন ফ্রান্সে। সেখানে গড়লেন ফোর্থ ইন্টারন্যাশনাল। সোভিয়েত সরকারের চাপে পড়ে তিনি নরওয়েতে যেতে বাধ্য হলেন।
শেষ পর্যন্ত ১৯৩৬ খ্রিঃ মেক্সিকোয় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে নিজেকে নিরাপদ করলেন। লেনিন যাঁকে নিজের উত্তরসুরি হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন রুশ বিপ্লবের অন্যতম তাত্ত্বিক যোদ্ধা সেই ট্রটস্কিকে দেশে ও দেশের বাইরে দেশদ্রোহীরূপে চিহ্নিত করা হল। মেক্সিকোতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার সংকল্প ছিল ট্রটস্কির। কিন্তু স্তালিনের দীর্ঘ হস্ত এখানেও সম্প্রসারিত হয়েছিল। তার নিযুক্ত এজেন্টরা ট্রটস্কিকে অনুসরণ করল।
লিওন ট্রটস্কি র মৃত্যু: Leon Trotsky’s Death
১৯৪০ খ্রিঃ ২০ শে আগস্ট মেক্সিকোর কোয়াকনের বাড়িতে তাঁকে হত্যা করা হল।