দক্ষিণ ভারতের প্রধান নদনদী | দক্ষিণ ভারতের নদনদী গুলির বিবরণ দাও: সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণাংশের নদীগোষ্ঠীকে দক্ষিণ ভারতের নদনদী বলে। এই নদীগুলি মধ্য ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন মালভূমি বা উচ্চভূমি থেকে উৎপত্তি লাভ করে ভূমির স্বাভাবিক ঢাল অনুসারে পূর্ব অথবা পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে যথাক্রমে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে পতিত হয়েছে। প্রবাহের দিক অনুসারে দক্ষিণ ভারতের নদ নদী গুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
A)পূর্ব বাহিনী নদী
দক্ষিণ ভারতের পূর্ব বাহিনী নদী গুলি হল-
১) মহানদী
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ: ছত্রিশগড়ের রায়পুর জেলার মহাকাল পর্বতের সিওয়া উচ্চভূমি থেকে মহানদী উৎপত্তি লাভ করেছে এবং তারপর উড়িষ্যার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
দৈর্ঘ্য: মহানদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 857 কিমি।
মহানদীর উপনদী প্রধান: উপনদীগুলি হল শিবনাথ, হাঁসদে, ইব, টেল, মান্ড, জাংক প্রভৃতি।
পতন স্থল: মোহনা নিকট বদ্বীপ সৃষ্টি করে মহানদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
তীরবর্তী শহর: মহানদীর তীরে কটক, ভুবনেশ্বর ও সম্বলপুর অবস্থিত।
২)গোদাবরী
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ: মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে ত্রিম্বক উচ্চভূমি থেকে গোদাবরী নদী উৎপত্তি লাভ করেছে এবং তারপর অন্ধপ্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
দৈর্ঘ্য: গোদাবরী নদী হল দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী।এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 1465 কিমি। দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী বলে গোদাবরীকে দক্ষিণী গঙ্গা বা বৃদ্ধ গঙ্গা বলা হয়।
উপনদী: গোদাবরী নদীর প্রধান উপনদীগুলি পেনগঙ্গা, ওয়েনগঙ্গা, ওয়ার্ধা, ইন্দ্রাবতী, প্রাণহিতা, মঞ্জিরা, শবরী প্রভৃতি।
পতনস্থল: মোহনা নিকট বদ্বীপ সৃষ্টি করে গোদাবরী নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
তীরবর্তী শহর: গোদাবরী নদীর তীরে নাসিক, রাজমুন্দ্রি ও রামগুন্ডাম শহর অবস্থিত।
৩) কৃষ্ণা
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ: পশ্চিমঘাট পর্বতের মহাবালেশ্বর শৃঙ্গ থেকে কৃষ্ণা নদীর উৎপত্তি লাভ করে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
দৈর্ঘ্য: কৃষ্ণা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 1400 কিমি।
উপনদী: কৃষ্ণা নদীর প্রধান উপনদীগুলি হল ভীমা, কয়না, ঘাটপ্রভা, মালপ্রভা, তুঙ্গভদ্রা, মুসি, নেত্রবতী ইত্যাদি।
পতনস্থল: মোহনার নিকট বদ্বীপ সৃষ্টি করে কৃষ্ণা নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
তীরবর্তী শহর: কৃষ্ণা নদীর তীরে বিজয়ওয়ারা, সাংলি, অমরাবতী ও কৃষ্ণার উপনদী মুসির তীরে হায়দ্রাবাদ অবস্থিত।
৪)কাবেরী
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ: পশ্চিমঘাট পর্বতের ব্রহ্মগিরির কাছে তালাকাবেরী থেকে উৎপত্তি লাভ করে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
দৈর্ঘ্য: কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 805 কিমি।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য: উত্তর ভারতের গঙ্গা নদীর মতো কাবেরী নদী হলো দক্ষিণ ভারতের পবিত্র নদী।তাই কাবেরীকে দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা বলা হয়।
উপনদী: হিমবতী, সিসমা, ভবানী, কবিনা, সুবর্ণবতী, অর্কবতী ইত্যাদি হল কাবেরী নদীর উপনদী।
জলপ্রপাত: কাবেরী নদীর উপর অবস্থিত উল্লেখযোগ্য জলপ্রপাত হলো শিবসমুদ্রম জলপ্রপাত।
পতন স্থল: মোহনার নিকট বদ্বীপ সৃষ্টি করে কাবেরী নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
তীরবর্তী শহর: কাবেরী নদীর তীরে তিরুচিরাপল্লী অবস্থিত।
B)পশ্চিম বাহিনী নদী
দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম বাহিনী নদী গুলি হল-
১)নর্মদা
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ: মধ্যপ্রদেশ ও ছত্রিশগড় রাজ্যের সীমানায় অবস্থিত মহাকাল পর্বতের অমরকন্টক শৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভ করে নর্মদা নদী সাতপুরা ও বিন্ধ্য পর্বতের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ গ্রস্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
দৈর্ঘ্য: নর্মদা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 1300 কিমি।
উপনদী: হিরণ, কোলার, বর্ণার, উরি, ওরসাং, শের, হাতনি, তাওয়া ইত্যাদি হল নর্মদা নদীর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য।
জলপ্রপাত: নর্মদা নদীর উপর জব্বলপুরের কাছে ভোরঘাটে মার্বেল পাথরের উপর ধোঁয়াধর জলপ্রপাত অবস্থিত।
পতন স্থল: নর্মদা নদী খাম্বাত উপসাগর পতিত হয়েছে।
তীরবর্তী শহর: নর্মদা নদীর তীরে বারুচ ও জব্বলপুর অবস্থিত।
২)তাপ্তি
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ: মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই নামক প্রস্রবণ থেকে তাপ্তি নদী উৎপত্তি লাভ করেছে এবং সাতপুরা ও অজন্তা পর্বতের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তাপ্তি নদী তার প্রবাহপথে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্য অতিক্রম করেছে।
দৈর্ঘ্য: তাপ্তি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 730 কিমি।
উপনদী: তাপ্তি নদীর প্রধান প্রধান পূর্ণা, বেতুল, শিপ্রা।
পতন স্থল: তাপ্তি নদী খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে।
তীরবর্তী শহর: তাপ্তি নদীর তীরে সুরাট অবস্থিত।
৩) সবরমতি নদী
উৎপত্তি ও প্রবাহপথ: সবরমতি নদী আরাবল্লী পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মুখী ভাবে গুজরাটের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
দৈর্ঘ্য: সবরমতী নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 416 কিমি।
উপনদী: সবরমতী নদীর প্রধান উপনদীগুলি হলো ওয়াকার, হরনখ, ওয়াদ্রনাক ইত্যাদি।
পতন স্থল: সবরমতি নদী খাম্বাত উপসাগর পতিত হয়েছে।
তীরবর্তী শহর: সবরমতী নদীর তীরে আমেদাবাদ অবস্থিত।
৪)মাহী
উৎপত্তি ও প্রবাহ পথ: মাহি নদী বিন্ধ্য পর্বতের মাহীকন্টা হিলস থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে কিছুটা উত্তরে এবং পরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদী তার প্রবাহ পথে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান গুজরাট রাজ্য অতিক্রম করেছে।
দৈর্ঘ্য: মাহি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় 583 কিমি।
উপনদী: মাহি নদীর প্রধান উপনদীগুলি হলো সোম, আনস, পনম, মোরান, জাখম, ভাদর ইত্যাদি।
পতন স্থল: মাহি নদী খাম্বাত উপসাগর পতিত হয়েছে।