ভারতের মৃত্তিকার শ্রেনীবিভাগ – ভারতের প্রধান মৃত্তিকা: ভারতে সাতটি মৃত্তিকা বণ্টন রয়েছে। সেগুলি হল পলি মৃত্তিকা, কৃষ্ণ মৃত্তিকা, লোহিত মৃত্তিকা , ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বা শুষ্ক মাটি এবং বন ও পার্বত্য মৃত্তিকা, জলাভূমির মৃত্তিকা। এই মৃত্তিকা গঠিত হয় নদী দ্বারা আনা পলি দ্বারা। তাদের বিভিন্ন রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জলাভূমি মার্শ মাটিতে সমৃদ্ধ।
ভারতের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র
ICAR ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মৃত্তিকাকে উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, উদ্ভিদের বিস্তার, শিলার গঠন ও জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে ৮ টি প্রধান ভাগে এবং ২৬ টি উপবিভাগে ভাগ করেছে। ভারতের মৃত্তিকার শ্রেনীবিভাগ গুলি সম্পর্কে নিম্ন আলোচনা করা হল –
১. পলি মৃত্তিকা
বন্টন: ভারতের প্রায় ১৫ লক্ষ বর্গকিমি অর্থাৎ ৪৬% অঞ্চল জুড়ে রয়েছে সমভূমির পলিমাটি। এই প্রকার মাটি রয়েছে সিন্ধু-গঙ্গা নদীর সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলে।
উৎপত্তি
এই অঞ্চলের নদীসমূহ হিমালয়ের পাললিক শিলাক্ষয় করে সিন্ধু গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা সঞ্চয় করেছে। উপকূল অঞ্চলে মালভূমির কঠিন শিলা থেকে সৃষ্ট পলির সঞ্চয় ঘটেছে বলে মৃত্তিকা কিছুটা কর্কশ জাতীয়।
বৈশিষ্ট্য
- শিলার বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের কারনেই পলিমৃত্তিকার রঙ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন এবং মৃত্তিকার গভীরতাও সব জায়গায় সমান নয়।
- মৃত্তিকার মধ্যে কোথাও বালির ভাগ বেশি আবার কোথাও পলির ভাগ বেশি।
- এই মৃত্তিকায় ফসফরাস ও পটাসিয়ামের পরিমান বেশি। কিন্তু নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থের পরিমান কম হলেও কৃষির পক্ষে অত্যন্ত উর্বর।
শ্রেনীবিভাগ – আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই মৃত্তিকাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক) খাদার – নদীর তীরবর্তী নবীন পলিমাটিকে খাদার বলে।
খ) ভাঙ্গার – নদী থেকে দূরবর্তী প্রাচীন পলিমাটিকে ভাঙ্গার বলে।
গ) ভাবর – পর্বতের পাদদেশে নুড়ি, পলি ও বালি গঠিত মৃত্তিকাকে বলে ভাবর।
ঘ) ধাঙ্কার – উচ্চ গঙ্গা সমভূমিতে জলাভূমির মৃত্তিকাকে বলে ধাঙ্কার ।
২. কৃষ্ণ মৃত্তিকা
বন্টন: প্রায় সমগ্র মহারাষ্ট্র, দক্ষিণ গুজরাট, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ, উত্তর কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশে কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায়। ভারতের প্রায় ১৭% অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। কৃষ্ণ মৃত্তিকার স্থানীয় নাম রেগুর মৃত্তিকা।
উৎপত্তি – স্বল্প বৃষ্টিপাতের (৫০-৬০ সেমি) প্রভাবে লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে এই মৃত্তিকার উৎপত্তি হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য
- ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্ট এই মৃত্তিকায় টাইটানিয়াম অক্সাইড ও জৈব যৌগের পরিমান বেশি থাকায় এই মাটি রঙ কালো।
- পলি ও কাদার পরিমান বেশি থাকায় এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা বেশি।
- এই মৃত্তিকায় লোহা, চুন, ক্যালসিয়াম কার্বনেট ও ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি খনিজ বেশি থাকায় এই মাটি খুব উর্বর।
৩. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
বন্টন:কর্নাটক ও কেরলের পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে; ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর পূর্বাঘাট পার্বত্য অঞ্চলে, ছোটনাগপুর মালভূমির পূর্বাংশে, অসম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ভাবে ল্যাটেরাইট মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
- ল্যাটিন শব্দ ল্যাটার এর অর্থ ইট। ইটের মতো শক্ত ও লাল রঙের বলে এই মাটির নাম ল্যাটেরাইট।
- এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম।
- লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড এই মৃত্তিকার প্রধান উপকরন।
- অন্যান্য খনিজ ও জৈব পদার্থ থাকে না বলে এই মাটি অনুর্বর প্রকৃতির। তবে জলসেচ ও সার প্রয়োগ করে এই মাটিতে চা, কফি, রবার ও বাদামের চাষ হয়।
৪. লোহিত মৃত্তিকা
বন্টন : ভারতের প্রায় ৩.৫ লক্ষ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে লোহিত মৃত্তিকা প্রায় সমগ্র দাক্ষিনাত্য মালভূমি, ওড়িশার উচ্চভূমি, দন্ডকারন্য মালভূমি, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ, ছত্তিশগড় উচ্চভূমি প্রভৃতি স্থানে লাল মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
- গ্রানাইট ও নিস শিলা থেকে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
- ফেরিক অক্সাইডের পরিমান বেশি থাকে বলে এই মৃত্তিকার রঙ লাল।
- এই রূপ মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব কম।
- নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও চুনের ভাগ সামান্য থাকায় এবং জৈব পদার্থের পরিমান খুব কম বলে এই মাটি অনুর্বর। এই মাটি অনুর্বর হলেও মিলেট, বাদাম, ভুট্টা, সোয়াবিন, আঙুর ও কফি উৎপাদনের পক্ষে উপযোগী।
৫. পার্বত্য মৃত্তিকা
বন্টন : উত্তরে হিমালয়, দক্ষিনে নীলগিরি ও পশ্চিমঘাট পর্বতের বনভূমি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
- এই মাটি ধূসর বাদামি ও কালচে রঙের হয়।
- এই মাটির মধ্যে জৈবপদার্থের পরিমান বেশি কিন্তু পটাশ ও ফসফরাসের পরিমান কম।
- এই মাটি প্রধানত অনুর্বর প্রকৃতির।
৬. মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা
বন্টন :রাজস্থানের মরুভূমি, গুজরাটের কচ্ছের রন অঞ্চল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কিছু কিছু অংশে এই মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
- অতি স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য ধৌত প্রক্রিয়া বিশেষ দেখা যায় না।
- অধিক বাষ্পীভবনের জন্য মাটির উপরিভাগে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম প্রভৃতি নুনের পরিমান বেশি থাকে।
- মাটির জলধারণ ক্ষমতা কম এবং জৈব পদার্থের পরিমান কম থাকায় মাটি অনুর্বর হয়।
৭. লবনাক্ত ও ক্ষারকীয় মৃত্তিকা
বন্টন :বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলে এবং পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই মৃত্তিকা বিস্তৃত।
বৈশিষ্ট্য
- এই মৃত্তিকাগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন – রেহ, কালার, উসার, থুর, রাকার প্রভৃতি।
- মাটিতে লবনের পরিমান অত্যন্ত বেশি থাকায় মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়।
৮. জলাভূমির মৃত্তিকা
বন্টন: কেরালার উপকূল বরাবর, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, ও ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর উপকূল বরাবর এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য
- এই মাটির রঙ কালো হয়।
- এই মৃত্তিকা অতি আম্লিক চরিত্রের হয়।