ম্যাক্সিম গাের্কি জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Maxim Gorky Biography in Bengali. আপনারা যারা ম্যাক্সিম গাের্কি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ম্যাক্সিম গাের্কি এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
ম্যাক্সিম গাের্কি কে ছিলেন? Who is Maxim Gorky?
মাক্সিম গোর্কি বা আলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ (রুশ: Алексей Максимович Пешков) (১৮৬৮ মার্চ ২৮ – ১৯৩৬ জুন ১৮) ছিলেন একজন রুশ, সোভিয়েত লেখক, সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদী সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি নিজেই তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম হিসেবে ‘গোর্কি’ অর্থাৎ ‘তেতো’ নামকে বেছে নেন। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে ‘মা’ একটি কালজয়ী উপন্যাস। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঁচবারের মনোনীত হয়েছিলেন
বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিকদের অন্যতম ম্যাক্সিম গাের্কির প্রকৃত নাম ছিল আলেক্সেই ম্যাক্সিমভিচ পেশকভ। প্রথম জীবনের বিপর্যস্ত, ক্ষুব্ধ, হতাশ যুবকতার নিজের পরিবেশ ও সময়কালের প্রতি এতই বীতশ্রদ্ধ ছিলেন যে পরবর্তীকালে তিনি যখন লেখকরূপে আত্মপ্রকাশ করেন, ছদ্মনাম গ্রহণ করেন গাের্কি। শব্দটির বাংলা অর্থ হল তপ্ত বা ক্ষুব্ধ।
নিজের জীবনের প্রতি তীব্র ক্ষোভে ও বিতৃষ্ণায় একসময় তিনি এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিলেন যে নিজের হাতে গুলি করে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চেয়েছিলেন। জীবনের নিম্নতম ধাপ থেকে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পথ চলতে হয়েছিল গাের্কিকে। জীবনের শুরু থেকেই তাকে সইতে হয়েছিল লাঞ্ছনা, পীড়ন ও অপমান। বিচিত্র এবং ভিন্নমুখী অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয়েছে বারংবার।
কিন্তু অদম্য মনােবল আর সুদৃঢ় সংগ্রামী প্রয়াস তাকে একদিন বিশ্ব – সংস্কৃতির চূড়ান্ত সম্মানের স্থানে পৌছে দিয়েছিল। জীবনের বিতৃষ্ণ অধ্যায় ও অভিজ্ঞতাগুলিই হয়ে উঠেছিল তার অমর সাহিত্যের মূল্যবান উপকরণ।
ম্যাক্সিম গাের্কি জীবনী – Maxim Gorky Biography in Bengali
নাম | ম্যাক্সিম গাের্কি |
জন্ম | 16th মার্চ 1868 |
পিতা | মাক্সিম পেশকভ |
মাতা | ভারিয়া |
জন্মস্থান | নিঝনি নোভগরদ, নিঝনি নোভগরদ ওব্লাস্ট, রুশ সাম্রাজ্য |
জাতীয়তা | রুশ, সোভিয়েত |
পেশা | লেখক, নাট্যকার, রাজনৈতিক লেখক |
মৃত্যু | 18th জুন 1936 (68 বছর) |
ম্যাক্সিম গাের্কি এর জন্ম: Maxim Gorky’s Birthday
ম্যাক্সিম গাের্কি ১৮৬৮ সালের ১৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।
ম্যাক্সিম গাের্কি এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Maxim Gorky’s Parents And Birth Place
গাের্কির জন্ম হয় ১৮৬৮ খ্রিঃ ১৬ ই মার্চ রাশিয়ার নিজনি নভগরদে। তার বাবা জাহাজ কোম্পানীর কাজে আস্তাখানে বাস করতেন। সেখানেই গাের্কির শৈশব কাটে। বাল্য বয়সেই তিনি পিতৃহারা হয়ে নিজনিতে দাদুর বাড়িতে চলে আসেন। তার মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে নতুন সংসারে চলে যান।
ম্যাক্সিম গাের্কি এর ছোটবেলা: Maxim Gorky’s Childhood
কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য বেশি দিন কপালে সইল না তার। দাদুর ব্যবসায় মন্দা দেখা দিল, সংসারেও নেমে এলাে অভাবের ছােবল। সেই সঙ্গে গাের্কির জীবনেও দেখা দিল অনিশ্চয়তা। মাতামহীর স্নেহমমতা লাভ করেছিলেন গাের্কি।তারই উদ্যোগে ভর্তি হয়েছিলেন একটি স্কুলে। সেই স্কুলের পড়া এবারে বন্ধ হয়ে গেল। মাত্র আট বছর বয়সেই তাকে দাদুর অভাবের সংসারের চাপে রােজগারে নামতে হল।
এই সময়ে তাকে করতে হয়েছিল বিভিন্ন রকমের কাজ। কখনাে জুতাের দোকানের সহকারী, কখনাে স্টীলের বাসন মাজার কাজ, কখনাে কোন চিত্রশিল্পীর গৃহ ভৃত্যের কাজ করে সংসারের দৈনন্দিনের অভাবের মােকাবিলা করতে হয়েছে। এই তুচ্ছাতি তুচ্ছ কাজের মধ্যেই গাের্কি আলাের সন্ধান পেয়েছিলেন। জাহাজে বাসন মাজার কাজ যখন করতেন, সেই সময় এক পাচকের সঙ্গে তার আলাপহয়। সেই মানুষটির ছিল নানারকম বই পড়ার আগ্রহ। গাের্কি তার কাছে পড়ালেখা শেখার সুযােগ পেয়েছিলেন।
শিশু গাের্কির শ্রমিক জীবন ছিল খুবই ভয়াবহ। সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে করতে হতাে উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রম। পেট ভরে দুবেলা খাবারও জুটত না। ময়লা ছেড়া কাপড় চোপড়ের বেশি পরার জন্য জোটাতে পারতেন না। লাঞ্ছনা, গঞ্জনার সঙ্গে মাঝে মধ্যে চড়চাপড়ও জুটতাে। রাশিয়ার শ্রমিক জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এইভাবেই লাভ হয়েছিল গাের্কির। যন্ত্রণাময় শৈশব জীবনের কথা তিনি কোনদিন ভুলতে পারেননি।
ম্যাক্সিম গাের্কি এর প্রথম জীবন: Maxim Gorky’s Early Life
পরবর্তী জীবনে সমাজের নিম্নতম স্তরের জীবনের এই দুর্বিসহ অভিজ্ঞতাকেই তিনি তার সাহিত্যের উপজীব্য করেছিলেন। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই সর্বহারাদের দুঃখ বেদনা আর যন্ত্রণা – বুভুক্ষার কথা তার সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছিল। আঠারাে বছর বয়সে গাের্কি নিজনি থেকে চলে এলেন কাজানে। একটা রুটি তৈরির কারখানায় কাজ নিলেন।
এখানকার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম তাকে এতই হতাশাগ্রস্ত আর ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল যে তিনি জীবনের যন্ত্রণা জুরােতে চেয়েছিলেন আত্মহত্যা করে। এই আত্মহননের ইচ্ছা জেগেছিল তার দুটি কারণে। একদিকে ছিল আশৈশবের সঙ্গী দারিদ্র। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দারিদ্র্য মুক্তি প্রয়াসের হতাশা।
গাের্কি তার দিন মজুরের কাজকর্মের ফাকে ফাকে বইপত্র পড়ার অভ্যাসটা বজায় রেখেছিলেন। এই সময় রুশ বিপ্লবের আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি তাকে অনুপ্রাণিত করে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ ঘটে। তিনি বুঝতে পারেন, মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম। এই কথা তিনি মনে মনে বিশ্বাস করলেন এবং স্বাভাবিক ভাবেই নিজের বিশ্বাসের কথা অন্য সমব্যথীদেরও বোেঝাতে চেষ্টা করতে লাগলেন।
ইতিমধ্যে কাজানে শুরু হল তরুণ জনদরদী নেতা লেনিনের নেতৃত্বে ব্যাপকছাত্র আন্দোলন। সেই সময় গাের্কির সঙ্গীরা তাকে জানালেন এই আন্দোলনকারী ছাত্রদের কঠোর হাতে দমন করা উচিত।
গাের্কি এই কথা শুনে মর্মাহত হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এতদিন দুঃখ মােচনের যে বিশ্বাসের কথা তিনি সঙ্গীদের বুঝিয়ে এসেছেন তা কারাে মর্মস্পর্শ করেনি। তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।তার আন্তরিক বিশ্বাসের কথা কারাের মধ্যেই সঞ্চারিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে তিনি একদিন স্থির করলেন গুলি করে আত্মহত্যা করবেন। একা চলে গেলেন কাজানকা নদীর পাড়ে। বন্দুকের নল নিজের বুকে তাক করে ট্রিগার টিপে দিলেন। প্রচন্ডশব্দে কেঁপে উঠল কাজানকা নদীর বিজন তীরভূমি। গুলিবিদ্ধ গাের্কিকাত হয়ে পড়ে গেলেন মাটিতে। সেদিন নেহাতই ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছিলেন গাের্কি। বন্দুকের গুলি ফুসফুস ভেদ করে হৃদপিন্ডের পাশ ঘেঁষে চলে গিয়েছিল। তাতেই প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।
গাের্কির সঙ্গীরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের উদ্বেগ আর আন্তরিকতার অভাব ছিল না তাঁর জন্য। গাের্কি সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন, মানুষ আসলে মানুষই থাকে, পরিবেশই তাকে অমানুষ করে তােলে। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে গাের্কি জীবনকে আরও গভীরভাবে বুঝবার দেখবার প্রেরণা বােধ করলেন। জীবনের জন্য নিরন্তর সংগ্রামের মুখােমুখি হবার লক্ষে নিজেকে তৈরি করে নিলেন।
কাজান ছেড়ে যেদিন ভবঘুরের জীবন অবলম্বন করে বেরিয়ে পড়লেন তখন তার বয়স একুশ বছর। ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌছলেন দক্ষিণ রাশিয়ায়। সময়টা ১৮৯১-৯২ খ্রিঃ। রাশিয়ায় দেখা দিল আকাল। লক্ষ লক্ষ বুভুক্ষু মানুষ গ্রামের বাস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে পথে। গাের্কি নেমে পড়লেন ত্রাণের কাজে।
ম্যাক্সিম গাের্কি এর রচনা: Written by Maxim Gorky
সেই সময় একই কাজে হাত লাগিয়েছেন লিও তলস্তয়, চেখভ সহ অন্যান্য তরুণ লেখকরা। অনুপ্রেরিত হলেন গাের্কি। শ্রমিক জীবনের পাশাপাশি হাতে তুলে নিলেন কলম, মন থেকে ঝেড়ে ফেললেন হতাশা। সংকল্প নিলেন মাথা তুলে দাঁড়াবার।
ছিলেন আলেক্সেই পেশকভ, এবারে ছদ্মনাম নিলেন ম্যাক্সিম গাের্কি। ভদ্মা নদীর তীরবর্তী মফস্বল শহরের কাগজে ছাপা হতে লাগল তার লেখা। অল্পদিনের মধ্যেই গাের্কির লেখা প্রতিষ্ঠিত লেখক ও প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের নজরে এলাে। ১৮৯৫ খ্রিঃ প্রথম সেন্ট পিটার্সবার্গের একটি জনপ্রিয় কাগজে গাের্কির ‘ চেলকাস ’ প্রকাশিত হল। এটিই বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প যার উপজীব্য একজন বন্দুক চোরের কাহিনী। রূঢ় বাস্তব আর রােমান্টিকতার মিশ্রণে এ এক অপূর্ব সৃষ্টি।
গল্পটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গাের্কি লাভ করলেন অসাধারণ জনপ্রিয়তা। এরপর রুটির কারখানার জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে গাের্কি লিখলেন টুয়েন্টি সিকস মেন অ্যান্ড গার্ল গল্পটি। এই গল্প তাকে এনে দিল সাহিত্যক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা। ছােটগল্পের ক্ষেত্রে তিনি চিহ্নিত হলেন চেকভ এবং তলস্তয়ের সমকক্ষ রূপে।
এরপর সাহিত্য রচনাতেই পুরােপুরি আত্মনিয়ােগ করলেন গাের্কি। লিখে চললেন, গল্প, উপন্যাস, নাটক। একটু একটু করে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল। ১৮৯৮ খ্রিঃ প্রকাশিত হল তার গল্প সংগ্রহ।
তাঁর প্রথম উপন্যাস ফোমা গার্দেয়েভ প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ খ্রিঃ। একই সময়ে প্রকাশিত হয় তলস্তয়ের রেজারেকশান। কিন্তু তলস্তয়ের রচনার জনপ্রিয়তা ম্লান করতে পারেনি ফোমা গার্দেয়েভকে। এই সময়েই তার সঙ্গে সাক্ষাৎহয় চেকভের।
১৯০৫ খ্রিঃ রাশিয়ার বিপ্লবে সরাসরি অংশ গ্রহণ করেন গাের্কি। এর কিছুদিন পরেই লন্ডনে লেনিনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎকার ঘটে। রাশিয়ায় ফিরে আসেন প্রথম মহাযুদ্ধের পরে। জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র কাজের মধ্য দিয়ে গাের্কির পরিচয় ঘটেছিল নানা শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে। এদের মধ্যে ছিল চোর, জুয়াড়ী, খুনে, মাতাল, বেশ্যা ইত্যাদি।
সবশেষে সান্নিধ্যে আসেন বিপ্লবী তরুণ দলের। এইভাবে লাভ করা ব্যাপক অভিজ্ঞতাই গাের্কি ছড়িয়ে দিয়েছেন তার অজস্র গল্প – উপন্যাস – স্মৃতিচিত্র আত্মজীবনীর পৃষ্ঠায়।
১৯০৭ খ্রিঃ তার সাহিত্য জীবনের শ্রেষ্ঠকীর্তি Mother প্রকাশিত হয়। এছাড়া তার উল্লেখযােগ্য রচনা হল: লােয়ার ডেপথস, পেটিবুর্জোয়া, ফোমাগােরদিয়েভ, ক্লিম সামঘিন ইত্যাদি।
গাের্কির মাদার উপন্যাস রাশিয়ায় ৫৪ টি ভাষায় ও বিদেশে ৪৪ টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার সুবিখ্যাত আত্মজীবনীর নাম চাইল্ডহুড, ইন দি ওয়ার্লড, মাই ইউনিভার্সিটিস। প্রাক – বিপ্লব ও বিপ্লবােত্তর কালে সােভিয়েত রাশিয়ার সাহিত্যে গাের্কি স্মরণীয় স্রষ্টা। মানবচেতনা প্রসারে তার দান শুধু রাশিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। তা সারা পৃথিবীতে নন্দিত।
কেবল আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক রূপে নয়, মানুষ হিসেবেও তাঁর উদারতা ও হৃদয়ের প্রসারতা ছিল অপরিসীম। এইকারণে তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ম্যাক্সিম গাের্কি এর মৃত্যু: Maxim Gorky’s Death
১৮ জুন ১৯৩৬ সালে মাক্সিম গোর্কির মৃত্যু হয়।