মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জীবনী: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Mohandas Karamchand Gandhi Biography in Bengali. আপনারা যারা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী) সম্পর্কে জানতে আগ্রহী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কে ছিলেন? Who is Mohandas Karamchand Gandhi?
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (গুজরাটি: મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી) মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী বা মহাত্মা গান্ধী; ২রা অক্টোবর ১৮৬৯ – ৩০শে জানুয়ারি ১৯৪৮) ছিলেন অন্যতম ভারতীয় রাজনীতিবিদ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। এছাড়াও তিনি ছিলেন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। যার মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জীবনী – মহাত্মা গান্ধী – Mohandas Karamchand Gandhi Biography in Bengali
নাম | মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী) |
জন্ম | 2 অক্টোবর 1869 |
পিতা | করমচাঁদ উত্তমচাঁদ গান্ধী |
মাতা | পুতলিবাই গান্ধী |
জন্মস্থান | পোরবন্দর, গুজরাট, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে: পোরবন্দর, গুজরাট, ভারত) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | উকিল, রাজনীতিবিদ, আন্দোলনকারী, লেখক |
মৃত্যু | 30 জানুয়ারী 1948 (বয়স 78) |
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র জন্ম: Mohandas Karamchand Gandhi’s Birthday
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী 2 অক্টোবর 1869 জন্মগ্রহণ করেন।
ভারতের কাথিয়াবাড় প্রদেশের পোরবন্দর নামক স্থানে এক প্রাচীন বেনিয়া পরিবারে ১৮৬৯ খ্রিঃ ২ রা অক্টোবর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কাবা গান্ধী এবং মাতা পুতলী বাঈ। মোহনদাসের পূর্বপুরুষগণ বংশানুক্রমে কাথিয়াবাড় প্রদেশের পোরবন্দর নামক স্থানের দেওয়ান ছিলেন।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র শিক্ষাজীবন: Mohandas Karamchand Gandhi’s Educational Life
বাল্য ও শৈশবের শিক্ষা কাথিয়াবাড়ের সমাপ্ত করেন মোহনদাস। এরপর বিলাতে গিয়ে ব্যারিস্টারি অধ্যয়ন করেন। পরে দেশে ফিরে এসে বোম্বাই হাইকোর্টে আইনব্যবসা আরম্ভ করেন।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র প্রথম জীবন: Mohandas Karamchand Gandhi’s Early Life
১৮৯৩ খ্রিঃ দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের একটি জটিল মামলার প্রয়োজনে তিনি নেটাল যাত্রা করেন। পরে সেখান থেকে ট্রান্সভাল যাত্রা করেন। ১৮৯৪ খ্রিঃ মোহনদাস মুষ্টিমেয় ভারতীয়দের নিয়ে নেটাল ইণ্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় নেটাল সরকার এশিয়াটিক এক্সক্লুশন অ্যাক্ট অর্থাৎ এশিয়াবাসী বিতাড়ন নামক একটি আইন পাস করেন। মোহনদাস এই আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবাসী ভারতীয়দের ধন্যবাদভাজন হন।
নেটালে ও ট্রান্সভালে ভারতীয়দের দুরবস্থার বিষয় সাধারণকে এবং সরকারকে জানাতে ১৮৯৫ খ্রিঃ মোহনদাস ভারতে আসেন। তার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্যবাদী শ্বেতাঙ্গরা তাঁর প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট হন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওলন্দাজদের উপনিবেশ স্থাপিত হয়েছিল দীর্ঘকাল আগে। তাদের বংশধরদের একাংশ বুয়র নামে পরিচিত ছিল। এই বুয়রদের অধিকাংশেরই উপজীবিকা ছিল কৃষি। ট্রান্সভালে তাদের একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই অঞ্চলে ইংরাজদের ক্ষমতা ও প্রভাব যথেষ্ট ছিল। তারা একটি নিরঙ্কুশ ইংরাজ উপনিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টায় সচেষ্ট ছিল। ১৮৩৪ খ্রিঃ ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় বুয়ররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এরপর ১৮৭৮ খ্রিঃ জুলুদের সঙ্গে ইংরাজদের বিরোধ বাঁধলে, বুয়রদের সঙ্গেও বিরোধ বাঁধে। পরিণতিতে ট্রান্সভালের বুয়রদের প্রজাতন্ত্রটি ইংরাজ উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। এর ফলে ১৮৮০-৮১ খ্রিঃ শুরু হয় প্রথম বুয়র যুদ্ধ। দ্বিতীয় ইঙ্গ – বুয়র যুদ্ধ শুরু হয় ১৮৯৯ খ্রিঃ এবং শেষ হয় ১৯০২ খ্রিঃ।
১৮৯৯ খ্রিঃ যুদ্ধ শুরু হলে মোহনদাস সেখানকার ভারতীয়দের নিয়ে ইণ্ডিয়ান এমবুলেন্স কোর গঠন করেন। ১৯০১ খ্রিঃ গান্ধীজি ভারতে ফিরে এসে বোম্বাই হাইকোর্টে পুনরায় ব্যারিস্টারি শুরু করেন। কিছুকাল পরে মিস্টার চেম্বারলেন নেটাল পরিদর্শনে এলে গান্ধীজি সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরুদ্ধ হয়ে পুনরায় দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যান। এরপরে গান্ধীজি ট্রান্সভালের সুপ্রীম কোর্টের এটর্নির কাজে নিযুক্ত হন। ১৯০৩ খ্রিঃ তিনি ট্রান্সভাল ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯০৪ খ্রিঃ জোহান্সবার্গে ভারতীয় পল্লীতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। গান্ধীজি রোগীদের শুভ্রূষার জন্য সেখানে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেই রোগাক্রান্ত রোগীদের পরিচর্যা করেন। কিছুকাল পরে গান্ধীজি নেটালে ইণ্ডিয়ান ওপিনিয়ন নামে একটি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ খ্রিঃ ট্রান্সভালে এশিয়াটিক ল এমেন্ডমেন্ট অর্ডিন্যান্স জারি হয়। গান্ধীজি এই অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করে জনমত গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯০৭ খ্রিঃ গান্ধীজি ও তাঁর কতিপয় সহচরকে কারারুদ্ধ করা হয়।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র রাজনৈতিক জীবন: Mohandas Karamchand Gandhi’s Political Life
দেশে ফিরে এসে তিনি আহমেদাবাদে একটি সত্যাগ্রহ আশ্রম স্থাপন করেন। এই সময়ই সমগ্র ভারতবর্ষ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের জন্য তিনি দেশের প্রধান প্রধান স্থানগুলি পরিদর্শন করেন। সেবামূলক কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার গান্ধীজিকে কাইজার – ই – হিন্দ পদক দিয়ে সম্মানিত করেন। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১৬ খ্রিঃ বিহারের চম্পারন জেলায় সেখানকার কৃষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নীলকর সাহেবদের বিবাধ বাঁধে। গান্ধীজি সেখানে গিয়ে বিবাদ মীমাংসার চেষ্টা করেন।
ইতিমধ্যে কায়রায় দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হলে গান্ধীজি সেখানে পৌঁছে দুর্গতদের সেবায় নিযুক্ত হন এবং দুর্ভিক্ষ নিবারণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন। ১৯১৮ খ্রিঃ মন্টেগু চেমসফোর্ড এদেশে আসেন। তখন গান্ধীজির ঐকান্তিক চেষ্টায় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে একখানি আবেদনপত্র প্রদান করা হয়। এই সময় রাউলাট বিল নামক একটি আইন বিধিবদ্ধ করার প্রস্তাব হয়। এতে ভারতীয়দের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নাশের আশঙ্কায় দেশজুড়ে তুমুল আন্দোলন উপস্থিত হয়। অন্যদিকে খেলাফৎ সমস্যাও জটিল হয়ে ওঠে।
এই সব সমস্যা সমাধানের জন্য গান্ধীজি বড়লাটকে একটি পত্র লেখেন। এই সময় গান্ধীজির নেতৃত্ব লাভ করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নবজীবন লাভ করে। এই সময় পাঞ্জাব ও দিল্লীতে রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে ব্রিটিশ সরকার অমানবিক হত্যাকান্ড চালায়। এই দুঃখজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েও কোন প্রতিকার হল না। খেলাফৎ সমস্যাও জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের জন্য গান্ধীজি সরকারের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা বর্জন করার আহ্বান জানান।
১৯২০ খ্রিঃ তিনি তাঁর সরকার প্রদত্ত কাইজার – ই – হিন্দ পদক ফিরিয়ে দেন। ১৯২০ খ্রিঃ নাগপুর অধিবেশনে গান্ধীজির নেতৃত্বে কংগ্রেস ঘোষণা করে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ পথে পূর্ণ স্বরাজ লাভই হলো কংগ্রেসের লক্ষ। কংগ্রেস তার দাবি আদায়ের জন্য অহিংসা ও অসহযোগের ভিত্তিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। ইংরাজ শাসনের বিরুদ্ধে গান্ধীজির নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় জাগরণ হয় ১৯২১ খ্রিঃ তার অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে। ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়কেও জাতীয় আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এই সময়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে খেলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন করা হয়।
১৯২২ খ্রিঃ মার্চ মাসে রাজদ্রোহমূলক বিবেচিত হওয়ায় সেসনের বিচারে গান্ধীজির ছয় বৎসরের বিনাশ্রম কারাদন্ড হয়। দুই বৎসর কারবাসের পর সরকার গান্ধীজিকে মুক্তি দেন। ১৯৩০ খ্রিঃ এপ্রিল মাসে গান্ধীজি দেশজুড়ে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন। ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে কঠোর হাতে এই আন্দোলন দমন করে। কয়েকজন জননেতা সহ গান্ধীজিকেও কারারুদ্ধ করা হয়। ফলে সমগ্র ভারত জুড়ে ব্রিটিশবিরোধী অনুভূতি উত্তাল হয়ে ওঠে এবং আন্দোলন চলতে থাকে।
এরপর গোলটেবিল বৈঠক উপলক্ষ্যে গান্ধীজি বিলাতে গিয়ে প্রধান প্রধান রাজনীতিক দিগকে এবং মন্ত্রিবর্গকে ভারতের দাবির কথা জানান। এরপর বিলেত থেকে দেশে ফিরে এসে গান্ধীজি আবার কারারুদ্ধ হন। এই সময়ে তিনি হরিজন আন্দোলন ও পল্লী উন্নয়নের কাজে নিজেকে সমর্পণ করেন। ১৯৩১ খ্রিঃ গান্ধীজি পুনরায় দ্বিতীয়বার গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের জন্য ইংলন্ড যান।
১৯৪২ খ্রিঃ তার নেতৃত্বে কংগ্রেস দেশব্যাপী ভারতছাড় আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে গান্ধীজি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ১৯৪৫ খ্রিঃ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ ও মিত্রপক্ষ জয়লাভ করে। ১৯৪৬ খ্রিঃ মীরাট অধিবেশনে কংগ্রেস আবার পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানায়। ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৫ ই আগস্ট ভারত দেশভাগের মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই বছরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য গান্ধীজির নোয়াখালি সফর এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী র মৃত্যু: Mohandas Karamchand Gandhi’s Death
১৯৪৮ খ্রিঃ ৩০ শে জানুয়ারী দিল্লিতে এক প্রার্থনা সভায় গান্ধীজি এক আততায়ীর হাতে নিহত হন। গান্ধীজির জীবন, দর্শন ও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তিনি জাতির জনক রূপে স্বীকৃতি লাভ করেছেন।