নেপোলিয়ন বোনাপার্ট জীবনী: Gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Napoleon Bonaparte Biography in Bengali. আপনারা যারা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সম্পর্কে জানতে আগ্রহী নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কে ছিলেন? Who is Napoleon Bonaparte?
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বা নাপোলেওঁ বোনাপার্ত (ফরাসি: Napoléon Bonaparte) (১৫ই আগস্ট ১৭৬৯ – ৫ই মে ১৮২১) ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের সময়কার একজন জেনারেল। তিনি ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রথম কনসাল (First Consul) ছিলেন। তিনি (নেপলীয়) ১৮ মে ১৮০৪ থেকে ৬ এপ্রিল ১৮১৪ পর্যন্ত ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন এবং পুনরায় ১৮১৫ সালের ২০ মার্চ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন। তিনি ইতালির রাজাও ছিলেন। এছাড়া তিনি সুইস কনফেডারেশনের মধ্যস্থাকারী এবং কনফেডারেশন অফ রাইনের রক্ষকও ছিলেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট জীবনী – Napoleon Bonaparte Biography in Bengali
নাম | নেপোলিয়ন বোনাপার্ট |
জন্ম | 15 আগস্ট 1769 |
পিতা | কার্লো বুওনাপার্ট |
মাতা | লেটিজিয়া রামোলিনো |
জন্মস্থান | আজাসিও, করসিকা, ফ্রান্স |
জাতীয়তা | ফরাসি |
পেশা | ফরাসি সমরনেতা, রাজনীতিবিদ ও সম্রাট |
মৃত্যু | 5 মে 1821 (বয়স 51) |
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর জন্ম: Napoleon Bonaparte’s Birthday
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট 15 আগস্ট 1769 জন্মগ্রহণ করেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Napoleon Bonaparte’s Parents And Birth Place
অদ্বিতীয় ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন ছিলেন ফ্রান্সের নবজাগরণের প্রাণপুরুষ, মহান সৈনিক এবং কল্যাণকামী জননায়ক। কিন্তু সমগ্র জীবনে তিনি অগণিত মানুষের দুঃখ দুর্দশার কারণ হয়েছিলেন। সমগ্র জাতিকে ঠেলে দিয়েছিলেন ধ্বংসের মুখে। ১৭৬৯ খ্রিঃ ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপে নেপোলিয়নের জন্ম। যৌবনের প্রারম্ভেই তিনি রুশো – ভলতেয়ার মন্টেসক – এর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর কর্ম জীবন: Napoleon Bonaparte’s Work Life
সামরিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের পর সতের বছর বয়সে ফরাসী গোলন্দাজ বাহিনীতে যোগদান করেন। ইংরাজ বাহিনী ১৭৯৩ খ্রিঃ টুলো বন্দর অবরোধ করলে নেপোলিয়ান বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে বন্দর রক্ষা করেন। এর দুবছর পরে ১৭৯৫ ক্রিঃ ফরাসী জনতা জাতীয়সভা আক্রমণ করলে নেপোলিয়ান তাদের নিরস্ত করে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৭৯৬ খ্রিঃ ডাইরেক্টরী নেপোলিয়নকে ফরসী বাহিনীর সেনাধ্যক্ষ করে ইতালি অভিযানে পাঠায়। সেই সময় নেপোলিয়ানের বয়স মাত্র ছাব্বিশ বছর। ইতালিতে অভিযানে কৃতকার্য হবার পর ১৮০০ খ্রিঃ ১৪ ই জুন তিনি আঠারো হাজার সৈন্য নিয়ে অস্ট্রিয়ান বাহিনীকে আক্রমণ করেন। নেপোলিয়নের এই অভিযানও সফল হয় এবং অস্ট্রিয়ান সম্রাট তার সঙ্গে ক্যাম্পেন ফর মিডর সন্ধিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।
বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য এইভাবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নেপোলিয়ন ফ্রান্সের জনগণের মন জয় করে নেন। অস্ট্রিয়া অভিযানের পর ডাইরেক্টরী নেপোলিয়নকে ইংলন্ড আক্রমণের জন্য নিযুক্ত করে ৷ নেপোলিয়ন কিন্তু সরাসরি ইংলন্ড আক্রমণ না করে কৌশলের আশ্রয় নেন। তিনি অন্য দিকে অগ্রসর হয়ে মিশর আক্রমণ করেন এবং ১৭৯৮ খ্রিঃ ২১ শে জুলাই বিখ্যাত পিরামিড যুদ্ধে জয়লাভ করেন। মিশরে ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু ফরাসীদের মিশরে বেশি দিন নির্বিঘ্নে কাটল না। অচিরেই বৃটিশ সেনাপতি নেলসন নীলনদের যুদ্ধে ১৭৯৮ খ্রিঃ ১ লা আগস্ট ফরাসী নৌবহরকে বিধ্বস্ত করেন। পরাজিত নেপোলিয়ন কোনক্রমে ফ্রান্সে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। এই যুদ্ধে ফ্রান্সের ক্ষতি হলেও বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য নেপোলিয়নের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ৷ মিশর থেকে ফিরে আসার পর (১৭৯৯ খ্রিঃ) নেপোলিয়ন ডাইরেক্টরী ভেঙ্গে দিয়ে কনসালেট নামে এক নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
১৮০৪ খ্রিঃ ফ্রান্সে প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নেপোলিয়ন নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা করেন এবং সাম্রাজ্যের সর্বাঙ্গীন উন্নতির বিষয়ে সচেষ্ট হন। এদিকে ফরাসীদের অভ্যন্তরীণ উন্নতি লক্ষ করে ইউরোপের রাষ্ট্রবর্গ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। ইতিমধ্যে নেপোলিয়ন হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইতালি প্রভৃতি রাজ্যগুলি দখল করে নেন। উদ্বিগ্ন রাশিয়া ইংলন্ড ও অস্ট্রিয়া মিলে একটি রাষ্ট্রজোট গঠন করে। এটি ছিল ইউরোপের তৃতীয় রাষ্ট্রজোট। নানান কারণে ইংরাজের সঙ্গেও ফ্রান্সের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ল।
নেপোলিয়ন তার বাহিনীকে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত করলেন। ১৮০৫ খ্রিঃ ২১ শে অক্টোবর উলম – এর যুদ্ধে অস্ট্রিয়ার বাহিনী পর্যুদস্ত হলে সেনাপতি কম্যান্ডার ম্যাক ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে তার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার সম্মিলিত বাহিনী নেপোলিয়নকে আক্রমণ করলে অস্টারনিজ নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ হয়। দুই রাষ্ট্রের মিলিত শক্তি নেপোলিয়নের কাছে পরাজিত হয়। নেপোলিয়ান ইতালির রাজা বলে স্বীকৃত হলেন। এরপর তৃতীয় রাষ্ট্রজোট ভেঙ্গে যায়।
এতদিনের যুদ্ধে প্রাশিয়া ছিল নিরপেক্ষ। কিন্তু ফরাসী বাহিনীর অগ্রগতি লক্ষ করে প্রাশিয়া ফ্রান্সকে বাধা দেবার পরিকল্পনা করে। ১৪ ই অক্টোবর জেনা এবং অস্টারলিজের যুদ্ধে প্রাশিয়া পরাজিত হয় এবং নেপোলিয়নের বাহিনী বার্লিনে উপস্থিত হয়। নেপোলিয়ন জার্মানিকে পুনর্গঠিত করলেন। রাইন রাষ্ট্রসঙ্ঘ গঠন করা হল ৷ প্রাশিয়ার পরাজয় রাশিয়াকে স্বাভাবিক ভাবেই ভীত করে তুলল। তারা নেপোলিয়নের অগ্রগতিকে বাধা দিতে অগ্রসর হলে ১৮০৭ খ্রিঃ ১৪ ই জুন ফ্রিডল্যান্ড নামক স্থানে দুই বাহিনীর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
যুদ্ধে রুশবাহিনী নেপোলিয়নের হাতে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত হয়। ৭ ই ও ৯ ই জুলাই জার প্রথম আলেকজান্ডার নেপোলিয়নের সঙ্গে যে সন্ধি করেন তার নাম টিলজিটো সন্ধি। এইভাবে উপর্যুপরি কয়েকটি যুদ্ধের বিজয়ের ফলে কার্যত নেপোলিয়নই হয়ে উঠলেন ইউরোপের সর্বেসর্বা। ইংলন্ডকে সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত না করে নেপোলিয়ন স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। টিলজিটো – এর সন্ধির পর তিনি ইউরোপে ইংলন্ডের শ্রেষ্ঠত্ব অবদমিত করবার উদ্দেশ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে যুদ্ধে না নেমে পরোক্ষ ব্যবস্থা নেবার সংকল্প করলেন।
অর্থনৈতিক আঘাতই হবে সেই পরোক্ষ আঘাত। নেপোলিয়ন অবিলম্বে মহাদেশীয় ব্যবস্থা নামে এক অর্থনৈতিক অবরোধের নীতি গ্রহণ করলেন। এই নীতি গ্রহণের ফলে ১৮০০ খ্রিঃ স্পেন ও পর্তুগালে ফরাসী বিক্ষোেভ তীব্র হয়ে উঠল এবং স্পেনে ফ্রান্সের প্রভাব অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হয়। এই সুযোগ গ্রহণ করে অস্ট্রিয়া। ইংলন্ডের সমর্থনপুষ্ট হয়ে তারা আবার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৮০৯ খ্রিঃ ১৩ ই মে ফরাসী বাহিনী ভিয়েনার অভ্যন্তরে উপস্থিত হয়।
গোড়ার দিকে বিপর্যস্ত হলেও ৫ ই জুলাই ওয়াগ্রামে যে যুদ্ধ হয় তাতে ফরাসী বাহিনী অনেকটা সামলে নিল। কিন্তু বিপক্ষ বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করতে পারল না। তবে ইউরোপে নেপোলিয়নের আধিপত্য তাতে কিছুমাত্র বিচলিত হল না। এই পরিস্থিতিতে ১৮১২ খ্রিঃ ছয় লক্ষ সৈন্য নিয়ে নেপোলিয়ন রাশিয়া অভিযানে অগ্রসর হলেন। রুশবাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পশ্চাদপসরণ করে কিন্তু তারা পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে গ্রাম নগর ও খাদ্যশস্য ধ্বংস করে দিয়ে গেল। ফলে বিরাট সৈন্যবাহিনীর রসদ যোগানোর বিষয়ে নেপোলিয়ন নিশ্চিতভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়লেন। বেরোডিনে নামক স্থানে উভয় বাহিনীর যুদ্ধ হয় ৭ ই সেপ্টেম্বর।
এই যুদ্ধে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হলেও ১৬ ই সেপ্টেম্বর ফরাসী বাহিনী মস্কোয় প্রবেশ করে। এই অভিযান যে নেপোলিয়নের ক্ষেত্রে চরম ভুল হয়েছিল তার প্রমাণ হয় যখন ফেরার পথে রুশ গেরিলাদের আক্রমণে ফরাসী বাহিনী একেবারেই পর্যুদস্ত হল। নেপোলিয়ন যখন কোনক্রমে দেশে ফিরে এলেন তখন তাঁর সঙ্গে মাত্র ৫০ হাজার সৈন্য ফিরতে পারল। মহাপরাক্রান্ত নেপোলিয়নকেও পর্যুদস্ত করা সম্ভব, রাশিয়া এই বিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হল।
ফলে ইউরোপে নেপোলিয়নের শত্রুরাষ্ট্রগুলি ঐক্যবদ্ধ হবার প্রেরণা লাভ করল। জার্মানি থেকে নেপোলিয়নকে বিতাড়নের পরিকল্পনা নিয়ে ইংলন্ড ও রাশিয়ার সঙ্গে ১৮১৩ খ্রিঃ প্রাশিয়াও যোগ দিল। কিন্তু ওই বছর ২ রা এবং ২০ শে মে তারিখে ল্যুটজেন ও ব্যুটজেনের যুদ্ধে নেপোলিয়ন সম্মিলিত রাশিয়ান ও প্রাশিয়ান বাহিনীকে পরাস্ত করলেন। ইতিমধ্যে অস্ট্রিয়াও নেপোলিয়ন বিরোধী জোটে যোগ দিল।
এই সম্মিলিত বাহিনীর সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মত ফরাসীবাহিনীর যুদ্ধ হল লিপজিগে। ১৬ ই থেকে ১৯ শে নভেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ চলে এবং নেপোলিয়ন মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজিত হলেন। ১৭৯৩ খ্রিঃ পর থেকে এই প্রথম ফ্রান্সের পরাজয় ঘটল। এই পরাজয়ের পর থেকেই নেপোলিয়ন নিজ দেশেই জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করলেন। ক্রমেই তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠতে লাগল। গোটা দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ধূমায়িত হয়ে উঠল।
এককালে যে সকল ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি তার সাহায্যে উপকৃত হয়েছিল তারাই হয়ে উঠল তার প্রধান প্রতিপক্ষ। ১৮১৪ খ্রিঃ নেপোলিয়নের নিজস্ব সেনেটই তার পদত্যাগ দাবি করল। পরিস্থিতির চাপে পড়ে সম্রাটকে ফ্রান্সের সিংহাসনের দাবি ত্যাগ করতে হল। এলবার শাসনভার নিয়েই তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হল। ১৮১৫ খ্রিঃ মার্চ মাসে নেপোলিয়ন পুনরায় সিংহাসনের দাবি নিয়ে ফ্রান্সে উপস্থিত হলেন।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর মৃত্যু: Napoleon Bonaparte’s Death
এই সময়ে সমগ্র ইউরোপ তার বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ হল এবং ১৮১৫ খ্রিঃ ১৮ ই জুন ওয়াটারলুর প্রান্তরে উভয়পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু হল। যুদ্ধে নেপোলিয়ন ওয়েলিংটনের হাতে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হলেন। দুর্জয় বীর নেপোলিয়ন অবশেষে বন্দী হলেন। তাকে দক্ষিণ আটলান্টিকের সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হল। এখানেই ১৮২৯ খ্রিঃ বন্দী অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নেপোলিয়নের জীবন ও কীর্তি নিয়ে পরবর্তীকালে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এই বিপুল গ্রন্থরাজিকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। সেগুলো হল —(১) সমসাময়িক ব্যক্তিদের এবং তার সেনাপতিদের জীবনকাহিনী। (২) সমসাময়িকদের দ্বারা যেমন— Bourrienne, Las Cases, Forsyth, O Mears প্রভৃতি রচিত ব্যক্তিগত জীবনকথা এবং (৩) আধুনিককালে রচিত সমালোচনা মূলক গ্রন্থ সমূহ। আধুনিক কালের লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, Lanfrey, Jung, Seelay, O ‘ Connor Morris, Walsley, Sloane প্রভৃতি।