নাইট্রোজেন চক্র – Nitrogen Cycle

Rate this post

নাইট্রোজেন চক্র – Nitrogen Cycle: জীবদেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টিমৌল গুলি পরিবেশ থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পরিবেশের মধ্যে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। একেই জীব ভূ-রাসায়নিক চক্র বলে। জীবদেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টিমৌল গুলির মধ্যে অন্যতম হল নাইট্রোজেন আর যে চক্রাকার পদ্ধতিতে বায়ুমন্ডলের প্রাকৃতিক উপায়ে ও জীবানুর দ্বারা আবদ্ধ হয়ে মাটিতে মেশে ও সেখান থেকে জীবদেহে প্রবেশ করে এবং জীবদেহ ও মাটি থেকে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে আবর্তিত হয়, তাকে নাইট্রোজেন চক্র বলে। 

নাইট্রোজেন চক্র জীব ভূ-রাসায়নিক চক্রের গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ। দুটি পর্যায়ে নাইট্রোজেন চক্রটি সম্পূর্ন হয়, যথা – A. নাইট্রোজেন স্থিতিকরন বা ফিক্সেশন এবং B. নাইট্রোজেন মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন। 

A. নাইট্রোজেন স্থিতিকরন:

যে পদ্ধতিতে বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন গ্যাস নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগে পরিণত হয় এবং বিভিন্ন জীবানুর দ্বারা মাটির মধ্যে আবদ্ধ হয় বা সঞ্চিত হয়, তাকে নাইট্রোজেন স্থিতিকরন বলে। ইংরেজিতে একে নাইট্রোজেন  ফিক্সেশন বলা হয়। 

নাইট্রোজেন স্থিতিকরনের পদ্ধতি:

সাধারনত তিনভাবে নাইট্রোজেনের স্থিতিকরন ঘটে থাকে – প্রাকৃতিক, জীবজ ও শিল্পজাত। 

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন: সাধারনত বজ্রপাতের সময় যখন আকাশে বিদ্যুৎস্ফুরন ঘটে তখন বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন গ্যাস অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। পরে আবার এই নাইট্রিক অ্যাসিড বায়ুমন্ডলের অক্সিজেনের বিক্রিয়া করে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড তৈরি করে এবং সবশেষে এই নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড বৃষ্টির জলের সাথে বিক্রিয়া করে নাইট্রাস ও নাইট্রিক অ্যাসিডে পরিনত হয়ে মাটিতে নেমে আসে। মাটিতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম প্রভৃতি লবন গুলির সাথে এই দুটি অ্যাসিড যুক্ত হয়ে নাইট্রেট যৌগ রূপে অবস্থান করে। যেমন – ক্যালসিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি। এই ভাবে বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন মাটিতে মিশে যায়। 

জীবজ নাইট্রোজেন সংবন্ধন: যে পদ্ধতিতে প্রকৃতিস্থিত মুক্ত নাইট্রোজেন বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা শৈবালের দ্বারা অ্যামোনিয়া ও পরে নাইট্রেট রূপে আবদ্ধ হয়, তাকে জৈবিক নাইট্রোজেন স্থিতিকরন বলা হয়। নাইট্রোজেন সংবন্ধন ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু গুলি হল – রাইজোবিয়াম, ক্লসট্রিডিয়াম, অ্যাজোটোব্যাকটর, সায়ানোব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি। 

শিল্পজাত নাইট্রোজেন: শিল্প কারখানায় রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত নাইট্রোজেন ঘটিত সার কৃষিক্ষত্রে ব্যবহারের মাধ্যমে মাটিতে নাইট্রোজেন সঞ্চিত হয়। 

অ্যামোনিফিকেশন: মৃত উদ্ভিদ ও প্রানীর দেহ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পচনের ফলে সেই জীবদেহে আবদ্ধ নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়া রূপে পরিবেশে মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া কে অ্যামোনিফিকেশন বলে। অ্যামোনিফিকেশনে অংশ গ্রহনকারী ব্যাকটেরিয়া গুলি হল ব্যাসিলাস র‍্যামোসাস, ব্যাসিলাস ভালগারিস। 

নাইট্রিফিকেশন: জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের পুনরায় মাটিতে ফিরে আসার প্রক্রিয়াকে নাইট্রিফিকেশন বলে। মৃত জীবদেহ প্রথমে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিয়োজনের ফলে প্রথমে অ্যামোনিয়া, পরে নাইট্রাইট ও সবশেষে নাইট্রেট যৌগে পরিনত হয়ে মাটিতে ফিরে আসে। নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার উদাহরন হল নাইট্রোসোমোনাস, নাইট্রোব্যাকটর। 

B. নাইট্রোজেন মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন

মাটিতে উপস্থিত জীবানুর দ্বারা মৃত্তিকাস্থিত বিভিন্ন নাইট্রোজেন যৌগকে ভেঙে নাইট্রোজেনে পরিনত করে ও পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়। অর্থাৎ মৃত্তিকা মধ্যস্থিত নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসার ঘটনাকে নাইট্রোজেন মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন বলে। ডিনাইট্রিফিকেশ প্রক্রিয়ায় মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। এই রকম কয়েকটি ব্যাকটেরিয়ার উদাহরন হল সিউডোমোনাস, থিওব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়ায়। 

এইভাবে বিভিন্ন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা একদিকে যেমন বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন মৃত্তিকা সঞ্চিত হয় এবং সেই মৃত্তিকা থেকে খাদ্যশৃঙ্খলে মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রানীর দেহে প্রবেশ করে, ঠিক তেমনি মৃত জীবদেহ পচনের মাধ্যমে তা আবার পরিবেশে তথা বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। এই ভাবে নাইট্রোজেন চক্রটি সম্পন্ন হয়। 

Leave a Comment