স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র কাকে বলে? স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে গঠিত ভূমিরূপ

Rate this post

স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র কাকে বলে? স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে গঠিত ভূমিরূপ: বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিস ১৮৯৯ সালে তার স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র ধারনাটি প্রকাশ করে। যেহেতু পৃথিবীর অধিকাংশ ভূমিরূপই নদীর ক্ষয়চক্রের দ্বারা গঠিত হয়েছে, তাই ডেভিস নদীর বা জলপ্রবাহের ক্ষয়চক্র কে স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র নামে অভিহিত করেছেন।

ডেভিসের মতে যে কোন আদি ভূমিরূপই একটি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে নদী দ্বারা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে ভূমিরূপের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছায়, ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে নদী দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ গুলি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল ।

যৌবন অবস্থায় গঠিত ভূমিরূপ

১. গিরিখাত বা ক্যানিয়ন 

যৌবন পর্যায়ে পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতি বেশি থাকে বলে নিম্নক্ষয় বেশি হয়। এর ফলে নদী উপত্যকা I বা V আকৃতি হয়। এরূপ গভীর খাঁড়া নদী উপত্যকাকে গিরিখাত ও ক্যানিয়ন বলে। যেমন হিমাচল প্রদেশের শতুদ্রু নদীর গিরিখাত। শুষ্ক অঞ্চলে গিরিখাত I আকৃতির হয়, একে ক্যানিয়ন বলে। যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর গ্রান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর দীর্ঘতম গিরিখাত।

২. জলপ্রপাত, খরস্রোত ও ক্যাসকেড 

নদীর গতিপথে ভূমির ঢাল পরিবর্তনের ফলে নদী হঠাৎ খাঁড়া ভাবে নেমে এলে নিচে পতিত হয়, একে জলপ্রপাত বলে। যেমন ভারতের সরাবতী নদীর ওপর যোগ জলপ্রপাত। নদী  কয়েক ধাপ নেমে এলে জলধারা ধাপে ধাপে পতিত হয়, একে ক্যাসকেড বলে। পার্বত্য অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি অবস্থান করলে নরম শিলা অতি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ধাপ বিশিষ্ট প্রবল গতি সম্পন্ন খরস্রোতের সৃষ্টি করে।

৩. মন্থকূপ  

নদীর গতিপথে কোমল শিলা অবস্থান করলে নদীবাহিত কঠিন শিলাখন্ডের আঘাতে নরম শিলায় গর্তের সৃষ্টি হয়।পরবর্তীকালে বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড সহ জল ওই গর্তে আবর্তিত হয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি করে। নদী গর্ভে এইরূপ বিশিষ্ট ভূমিরূপকে মন্থকূপ বা পটহোল বলে।

৪. শৃঙ্খলিত স্পার 

নদী একে বেঁকে পর্বতের বাধা এড়িয়ে প্রবাহিত হলে দূর থেকে দেখে মনে হয় পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশগুলি দুপাশ থেকে উপত্যকায় নেমে  এসে শৃঙ্খলিত স্পার সৃষ্টি করেছে।

পরিনত অবস্থায় গঠিত ভূমিরূপ

১. পলল ব্যজনি বা পলিশঙ্কু 

নদী যখন পার্বত্য অঞ্চল ত্যাগ করে সমভূমিতে পতিত হয় তখন নদীর ঢাল হঠাৎ খুব কমে যায়। তখন নদী বাহিত পদার্থ পর্বতের পাদদেশে একটি পাখার মত বা শঙ্কু আকৃতির ভূভাগ গড়ে তোলে, একেই পলল ব্যজনি বা পলিশঙ্কু বলে।

২. প্লাবন সমভূমি 

নদী পার্বত্য অঞ্চল পেরিয়ে সমতল ভূমিতে নেমে আসলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায় ফলে বর্ষার সময় নদী বর্ষার অতিরিক্ত জল বহন করতে সক্ষম হয় না বলে নদীর পাশ্ববর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়, ফলে পাশ্ববর্তী অঞ্চলে নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমি গঠিত হয়।

৩. স্বাভাবিক বাঁধ 

পরিনত পর্যায়ে নদীর তীর বরাবর পলি সঞ্চিত হয়ে পাশ্ববর্তী অঞ্চল থেকে উঁচু হয়ে পাশ্ববর্তী অঞ্চলকে বর্ষাকালে প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা করে, একে নদী গঠিত স্বাভাবিক বাঁধ বলে।

৪. নদীচর বা নদী দ্বীপ 

নদীর ঢাল কমে যাওয়ায় নদীর বহন ক্ষমতা কমে যায়।ফলে নদীবাহিত পদার্থ সমূহ নদীগর্ভে ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে চর বা চরার সৃষ্টি করে। নদীর চরায় বারবার পলি সঞ্চিত হয়ে চ্রা গুলি উঁচু হয়ে দ্বীপে পরিণত হয়। নদী গর্ভে অসংখ্য চর থাকে নদী এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়।

৫. পর্যায়িত নদী ঢাল 

পরিনত পর্যায়ে এসে নদীর ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কার্য প্রায় সমান সমান হয় বলে নদীর এই ঢালকে পর্যায়িত ঢাল বলে।

বার্ধক্য অবস্থায় গঠিত ভূমিরূপ

১. নদী বাঁক বা মিয়েন্ডার 

এই পর্যায়ে উপস্থিত হয়ে নদীর শক্তি অনেক কমে যায় বলে নদী একে বেঁকে প্রবাহিত হতে শুরু করে ফলে নদীতে বাকের সৃষ্টি হয়। একেই মিয়েন্ডার বলে।

২. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ 

নদী খুব একে বেঁকে প্রবাহিত হলে পরপর দুটি নদী বাঁকের মধ্যবর্তী অংশ সংকীর্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তী কালে নদীবাক সংযুক্ত হলে নদী বাঁকা পথ ছেড়ে সোজা পথে চলতে শুরু করে। ফলে পরিত্যক্ত নদীবাক টি হ্রদের আকারে বস্থান করে। একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।

৩. সমপ্রায়ভূমি 

আবহবিকার ও পুঞ্জিতক্ষয়ের প্রভাবে উঁচু ভূমিরূপ ক্ষয় পেয়ে ক্রমশ মৃদু ঢালু সমপ্রায়ভূমি গঠিত হয়, ডেভিস এগুলিকে পেনিপ্লেন নাম দিয়েছেন।

৪. মোনাডনক বা ক্ষয়জাত পাহাড় 

সমপ্রায়ভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে কোন কোন শিলা ক্ষয় কাজ প্রতিরোধ করে অবশিষ্ট ক্ষয়জাত পাহাড় বা মোনাডনক হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকে।

Leave a Comment