ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ভূমিকা আলোচনা করো: প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দের নামেও পরিচিত (মে ৫, ১৯১১ – সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৩২), ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতারা, একজন বাঙালি ছিলেন, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী শহীদ ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন করেন।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন। এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো “কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ”। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তীতে পুলিশ তাদেরকে আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ভূমিকা আলোচনা করো
জন্ম: ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে আদর্শবোধ ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে যারা নিজেদের জীবনকে অর্থবহ করে তুলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। 1911 খ্রিস্টাব্দের 5ই মে অবিভক্ত বাংলার চট্টগ্রাম জেলার ধলঘাট গ্রামে তার জন্ম হয়। তার ডাকনাম ছিল রাণী ও ছদ্মনাম ছিল ফুলতলার।
বিপ্লবী আন্দোলনের প্রতি আগ্রহ: ছাত্রী জীবনেই প্রীতিলতা বিপ্লবী আন্দোলনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়েই তিনি দেশের কথা, বাঘাযতীন, ক্ষুদিরাম ও কানাইলাল দত্তের জীবনী পড়ে বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং প্রথমে ঢাকার দিপালী সংঘে ও পরে কলকাতার ছাত্রী সংঘে যোগ দিয়ে লাঠি খেলা , ছোরা খেলা প্রভৃতি শেখেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন: সূর্য সেনের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্যরা এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলাকে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করে বিপ্লবী আন্দোলনে গতি সঞ্চারের জন্য চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করেন। এই ঘটনার সময়ে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এরপর তিনি সূর্য সেনের আত্মগোপন কেন্দ্র ধলঘাটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব পান। 1932 খ্রিস্টাব্দে ধলঘাটের যুদ্ধে ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ক্যামেরুন মারা গেলে সূর্যসেন ও প্রীতিলতা জঙ্গলে আত্মগোপন করেন।
ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ: 1932 খ্রিস্টাব্দের 24শে সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব মাস্টারদা তার সুযোগ্য শিষ্যা প্রীতিলতার হাতে তুলে দেন। নরেশ রায, ত্রিগুণা সেন প্রমুখ পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে প্রীতিলতা পাহাড়তলীর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন। ইংরেজ পুলিশের পাল্টা আক্রমণে প্রীতিলতা আহত হন।
মৃত্যুবরণ: ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের সময় আহত প্রীতিলতা অন্যান্য বিপ্লবীদের দ্রুত স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন এবং ইংরেজ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার থেকে মৃত্যু বরন করাই শ্রেয়- এইরূপ বিবেচনা করে পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষপানের দ্বারা মৃত্যুবরণ করেন।
মূল্যায়ন: ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের অবদান চিরস্মরণীয়। বিপ্লবী আন্দোলনে তাঁর যোগদান ও আত্মবলিদান প্রমাণপ্রমাণ করে যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। তিনিই ভারতের প্রথম মহিলা শহীদ। তার এই আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে ভারতীয় নারী সমাজকে বিপ্লবী আন্দোলনে যোগদানের প্রেরণা যুগিয়েছিল।