ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সমস্যাগুলি আলােচনা করাে

Rate this post

ভারতে লৌহ-ইস্পাত শিল্পের সমস্যাগুলি আলােচনা করাে: লৌহ ইস্পাত শিল্প কে আধুনিক শিল্পের মেরুদণ্ড বলা হয়ে থাকে। আর ভারতবর্ষ লৌহ ইস্পাত শিল্পে বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এবং এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প । ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের বিকাশ ঘটলেও ভারতে  লৌহ ইস্পাত শিল্পের কিছু কিছু সমস্যা দেখা যায়, যা নানা ভাবে শিল্পের উন্নতিতে ব্যঘাত সৃষ্টি করে ।

ভারতে লৌহ ইস্পাত শিল্পের সমস্যা গুলি হল 

ক) উন্নত মানের আকরিক লৌহার অভাব – ভারতে মূলত লিমোনাইট ও সিডেরাইট শ্রেনির আকরিক লোহা  বেশি পাওয়া যায় । উন্নত মানের আকরিক লোহা যেমন – হেমাটাইট ও ম্যাগনেটাইট খুব একটা পাওয়া যায় না। যা লৌহ ইস্পাত শিল্পের উন্নতিতে বাধার সৃষ্টি করে। 

খ) কোক কয়লার অভাব – ভারতে উন্নতমানের কোক কয়লার অভাব দেখা যায়।যে কয়লা পাওয়া যায় তাতে কার্বনের পরিমান কম হওয়ায় তা লৌহ ইস্পাত শিল্পে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাই ভারত কে অস্ট্রেলিয়া থেকে উন্নত মানের কয়লা আমদানি করতে হয়। যা উৎপাদন ব্যয়ের পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়। 

গ) কাঁচামালের অসম বন্টন – লৌহ ইস্পাত শিল্পের জন্য যে সমস্ত কাঁচামাল প্রয়োজন, যেমন – লৌহ আকরিক, কয়লা, চুনাপাথর, ডলোমাইট, মাঙ্গানিজ প্রভৃতি খনিজ কাঁচামাল প্রধানত পূর্ব ও মধ্য ভারতে এবং সামান্য পরিমান দক্ষিণ ভারতে পাওয়া যায় । কিন্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতে এই সমস্ত কাঁচামাল পাওয়া যায় না বলে লৌহ ইস্পাত শিল্পের বিকাশ ঘটেনি।  

ঘ) আধুনিকীকরনের অভাব – ভারতে এখনও বেশ কয়েকটি ইস্পাত কারখানা আছে, যেখানে পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে  উৎপাদন করা হয় বলে উৎপাদনের পরিমান কমে যায় এবং উৎপাদিত দ্রব্যের গুনগত মানও তেমন ভালো হয় না । 

ঙ) কাঁচামালের বর্ধিত মূল্য ও অত্যাধুনিক পরিবহন ব্যয় –লৌহ ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল গুলির পরিমান সীমিত হওয়ায় ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে তা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এদিকে বিশ্ব বাজারে তেলের দামও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে কাঁচামালের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলে ভারত অন্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। 

চ) উৎপাদন ক্ষমতার আংশিক ব্যবহার – ইস্পাত কারখানা গুলি অনেক সময় তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী পূর্নমাত্রায় উৎপাদন করে না। ক্ষমতার কম ব্যবহারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন হয় না । 

ছ) অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার অভাব – ভারতে বিপুল সংখ্যক মানুষ দরিদ্র। দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কম হওয়ায় দেশীয় বাজারে লৌহ ইস্পাতের চাহিদা খুব কম। যা শিল্পটির উন্নতিতে বাধার সৃষ্টি করে। 

জ) নিম্নমানের লৌহ – ভারতের লৌহ ইস্পাত কারখানা গুলিতে সাধারনত অনুন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইস্পাত উৎপাদন করা হয় বলে ইস্পাত গুলি গুন গত দিক থেকে খুব একটা উন্নত মানের হয় না। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের তৈরি ইস্পাতের চাহিদা খুব কম । 

ঝ) বিদ্যুতের অভাব – লৌহ ইস্পাত উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমানে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যে পরিমান তাপবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তা ইস্পাত শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের জোগান দিতে সক্ষম হয় না । 

Leave a Comment