মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জৈব পদার্থের ভূমিকা

Rate this post

মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জৈব পদার্থের ভূমিকা: জৈব পদার্থ মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াতে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। মাটির উৎপত্তির ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি প্রক্রিয়ার সাথে জৈব পদার্থ যৌথভাবে ক্রিয়া করে। যেমন –আবহবিকার এবং মাটির পরিলেখ গঠন। এই দুই প্রক্রিয়াতেই বিশেষ ভাবে জৈবিক পদার্থ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ক) আবহবিকারের মাধ্যমে মৃত্তিকা সৃষ্টিতে জৈব পদার্থের ভূমিকা: জৈব পদার্থের উপস্থিতি ও ক্রিয়াশীলতার মাধ্যমে সাধারনত মৃত্তিকার খনিজ সমূহের রাসায়নিক ও জৈবিক পচন সংঘটিত হয়। প্রাথমিক ভাবে শিলা মানুষ অথবা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্রিয়াশীলতায় বিয়োজিত হয় এবং পরবর্তীতে এতে জল জীবজন্তু ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ বা জৈব পদার্থ মিশে গিয়ে মৃত্তিকার সৃষ্টি করে। মাটির জৈব পদার্থ বিশেষ জৈব রাসায়নিক আবহবিকারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহন করে থাকে। এক্ষেত্রে জৈব পদার্থ বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা বিশ্লেষণের সময় জৈব পদার্থ থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ সমূহ শিলার রাসায়নিক বিয়োজনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং বিচূর্নীকৃত শিলার সাথে মিশে গিয়ে মৃত্তিকা সৃস্তিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।    

খ) মৃত্তিকার পরিলেখ গঠনে জৈবপদার্থের ভূমিকা: জৈব পদার্থের উপস্থিতি মাটির পরিলেখ গঠনে সাহায্য করে। আবহবিকারের মাধ্যমে বিচূর্নীকৃত শিলাসমূহের সাথে উদ্ভিদ ও প্রানীর দেহাবশেষ মিশে গিয়ে হিউমাসের সৃষ্টি করে এবং এই হিউমাস মৃত্তিকার A স্তর গঠনে সহায়তা করে। মৃত্তিকার অন্যান্য স্তর গঠনেরও এই জৈব পদার্থ পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করে। যেমন –

মৃত্তিকার উপরিস্তরের জৈব পদার্থ বিশ্লেষণের সময় নানান অজৈব যৌগের সৃষ্টি হয়। যেমন – কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন । এই সব অজৈব যৌগ বৃষ্টির জলের সাথে মৃত্তিকার A স্তর থেকে স্থানান্তরিত হয়ে অন্যান্য স্তরে জমা হয় এবং মৃত্তিকার অন্যান্য স্তর গঠন করে। সুতরাং মৃত্তিকার জৈব পদার্থ পরোক্ষ ভাবে এলুভিয়েশন এবং ইলুভিয়েশনে ভূমিকা পালন করে এবং মৃত্তিকার বা ভূ-পৃষ্টের রেগোলিথ কে সোলামে পর্যবেশিত করে।

গ) হিউমিফিকেশনে জৈব পদার্থের ভূমিকা: হিউমিফিকেশন প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকার উপরিস্তরে হিউমাসের সৃষ্টি হয়। আর হিউমিফিকেশন মৃত্তিকা সৃষ্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ন প্রক্রিয়া। জীবজন্তু ও গাছপালার দেহাবশেষ জলের সংস্পর্শে বিয়োজক জীবানুর ক্রিয়াশীলতায় পচে গিয়ে জটিল কর্দম জাতীয় কালোর রঙের হিউমাস গঠন করে। একে হিউমিফিকেশন বলে।  

ঘ) খনিজকরনে হিউমাসের ভূমিকা: কাঁচা জৈব পদার্থ পচে হিউমাসে পরিনত হয়। জীবাণুকর্তৃক বিশ্লেষণের সময় এই হিউমাসের দ্বারা শিলা খনিজও বিশ্লেষিত হয় এবং বিভিন্ন অজৈব যৌগ গঠন করে থাকে, সার্বিকভাবে খনিজিকরন বলে।  এই ভাবে জৈব পদার্থ খনিজিকরনে সাহায্য করে।

উপরিক্ত আলোচনার মাধ্যমে এটি পরিষ্কার যে মৃত্তিকা সৃষ্টির ক্ষেত্রে জৈব পদার্থের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং এই জৈব পদার্থের অনুপস্থিতিতে মৃত্তিকা সৃষ্টি একে বারেই অসম্ভব। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জৈব পদার্থের সরবরাহের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের মৃত্তিকার সৃষ্টি করে।  

Leave a Comment