স্যামুয়েল মোর্স জীবনী: gksolve.in আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছে Samuel Morse Biography in Bengali. আপনারা যারা স্যামুয়েল মোর্স সম্পর্কে জানতে আগ্রহী স্যামুয়েল মোর্স এর জীবনী টি পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
স্যামুয়েল মোর্স কে ছিলেন? Who is Samuel Morse?
স্যামুয়েল এফবি মোর্স (২৭ এপ্রিল ১৭৯১-২ এপ্রিল ১৮৭২) একজন আমেরিকান উদ্ভাবক ও চিত্রশিল্পী ছিলেন। প্রথম জীবনে চিত্রশিল্পী হিসেবে সুনাম লাভের পর তিনি ইউরোপীয় টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এক-তার বিশিষ্ট টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন। মোর্স কোডের উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রাখেন। তার হাত ধরেই টেলিগ্রাফ ব্যবহারের প্রসার ঘটে।
স্যামুয়েল মোর্স জীবনী – Samuel Morse Biography in Bengali
নাম | স্যামুয়েল মোর্স |
জন্ম | 27 এপ্রিল 1791 |
পিতা | জেডিডায়ে মোর্স |
মাতা | অ্যান ফিনলি ব্রিজ |
জন্মস্থান | চার্লসটাউন, ম্যাসাচুসেটস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
জাতীয়তা | মার্কিন |
পেশা | চিত্রশিল্পী, আবিষ্কারক |
মৃত্যু | 2 এপ্রিল 1872 (বয়স 80) |
স্যামুয়েল মোর্স এর জন্ম: Samuel Morse’s Birthday
স্যামুয়েল মোর্স ২৭ এপ্রিল ১৭৯১ জন্মগ্রহণ করেন।
স্যামুয়েল মোর্স জীবন শুরু করেছিলেন চিত্রকর হিসেবে। বিশিষ্ট শিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভও করেছিলেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ লন্ডনের শিল্পরসিক মহল সম্মান জানিয়েছিল স্বর্ণপদক দান করে। এই শিল্পীর ভবিষ্যৎ যে সম্ভবনাময় তাতে আর সন্দেহ কি ? যে কোন প্রতিভাই চায় স্বীকৃতি। সেই স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন স্যামুয়েল মোর্স। কিন্তু আশ্চর্য এই যে চিত্রশিল্পের স্বক্ষেত্র থেকে জীবনের কর্মধারা অত্যন্ত আকস্মিক ভাবেই মোড় ফেরালেন।
রঙ, তুলি, ইজেল সরিয়ে রেখে নেমে পড়লেন বিজ্ঞানের গবেষণায়। তারের মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে কি করে সঙ্কেত বা বার্তা পাঠানো যায় এই বিষয়টিই হল তাঁর গবেষণার বিষয়। মোর্স – এর গবেষণার ফলেই জগৎ লাভ করেছে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা। স্যামুয়েল মোর্স এই অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করে অমরত্ব লাভ করেছেন।
স্যামুয়েল মোর্স এর পিতামাতা ও জন্মস্থান: Samuel Morse’s Parents And Birth Place
ম্যাসাচুসেটসের চার্লস টাউন নামক স্থানে ১৭৯১ খ্রিঃ ২৭ শে এপ্রিল মোর্স এর জন্ম। ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি সহজাত আকর্ষণ ছিল তার। বিজ্ঞানের নানা পরীক্ষা – নিরীক্ষারও খোঁজখবর রাখতেন উৎসাহের সঙ্গে। বস্তুতঃ বিজ্ঞান ও ললিতকলা — এই দুই ভাবনাই সমান্তরাল ভাবে তার মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিল।
স্যামুয়েল মোর্স এর শিক্ষাজীবন: Samuel Morse’s Educational Life
বিদ্যালয়ে পাঠ্যাবস্থাতেই চিত্রশিল্পী হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। পড়াশোনা ও ছবি আঁকার অবসরে নিজের সংগ্রহের নানান সরঞ্জাম নিয়ে নানারকম পরীক্ষা – নিরীক্ষা করতেন। এইভাবেই এই দুই বিদ্যার সহাবস্থান তার মধ্যে অব্যাহত ছিল। ১৮১০ খ্রিঃ ইয়েল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর মোর্স চিত্রকরের বৃত্তিই বেছে নেন।
স্যামুয়েল মোর্স এর প্রথম জীবন: Samuel Morse’s Early Life
এই সময়ে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন যাদুঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। তার উদ্দেশ্য ছিল প্রখ্যাত শিল্পীদের চিত্র সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা। দীর্ঘ চার বছর তিনি এই কাজে ব্যয় করেন। দেশে ফেরার পথে দৈবক্রমে জাহাজে আলাপ হল এক চিকিৎসকের সঙ্গে। এই চিকিৎসক একজন নীরব বিজ্ঞানীও ছিলেন। চিকিৎসা অপেক্ষা বিজ্ঞানের গবেষণাতেই তিনি বেশি উৎসাহ বোধ করতেন।
স্যামুয়েল মোর্স এর কর্ম জীবন: Samuel Morse’s Work Life
বিশেষ করে তড়িৎ ও চুম্বক সম্বন্ধে তিনি বেশি আগ্রহ বোধ করতেন। ফলে এই উৎসাহী চিকিৎসক সবসময়েই নিজের সঙ্গে চুম্বক ও কিছু যন্ত্রপাতি রাখতেন। দুজনের জীবনের ধারা একই — দুই বৃত্তির মানুষ দুজনে। কিন্তু আগ্রহ ও উৎসাহের কেন্দ্র একই বিজ্ঞান। কাজেই পরিচয় থেকে অন্তরঙ্গ আলাপ জমতে সময় লাগল না। চিকিৎসক ভদ্রলোক জাহাজেই সোৎসাহে মোর্সকে কতগুলি পরীক্ষা করে দেখালেন।
এই সময়ে উভয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ ও তারের মাধ্যমে সঙ্কেত প্রেরণের বিষয়েও আলোচনা হয়। সেই আলোচনার সূত্রেই কিছু দিনের মধ্যে মোর্সের জীবনের গতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে গেল। সেই সময়ে তড়িৎ ও চুম্বক নিয়ে গবেষণায় রত হয়েছিলেন পৃথিবীর প্রায় সব দেশের বিজ্ঞানী। ভাগ্যের অদৃশ্য সঙ্কেতে চিত্রশিল্পী রূপেই তাঁর পরিচয় এবং খ্যাতি। ছবি আঁকার কাজে সত্যি সত্যি ইস্তফা দিয়ে মোর্স গবেষণা আরম্ভ করলেন তারের মাধ্যমে সঙ্কেত প্রেরণের পন্থা আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে। গবেষণার কাজে তিনি এমনই নিবিষ্ট হলেন যে অচিরেই পড়তে হল কঠোর অভাব অনটন ও দারিদ্র্যের মধ্যে।
অর্থোপার্জনের পথ তো বন্ধ – ছবি আঁকা ছেড়ে বিজ্ঞানের গবেষণায় মনোনিবেশ করেছেন। নিজের রাহা খরচ, গবেষণার ব্যয়, সর্বসাকুল্যে যথেষ্ট অর্থেরই প্রয়োজন।মোর্স দমলেন না। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি কেনা সম্ভব হত না বলে তিনি বহু কষ্ট স্বীকার করে নিজের হাতেই সেসধব বানিয়ে নিতে লাগলেন। এইভাবেই কায়ক্লেশে কেটে গেল চারটি বছর। অবশেষে অক্লান্ত পরিশ্রম ও অপরাজেয় মনোবলের দ্বারা সাফল্য অর্জন করলেন।
তার আবিষ্কারের পরীক্ষার কথা বিশ্ববাসী জানতে পেল এইভাবে – নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাসাদশীর্ষ থেকে ৬০০ গজ দূরে তারের মাধ্যমে সঙ্কেত প্রেরণ করতে সমর্থ হয়েছেন স্যামুয়েল মোর্স। প্রাথমিক সাফল্য মোর্সকে উৎসাহিত করে তুলল। তিনি এখানেই সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না। মাত্র ৬০০ গজ নয়, দূরে আরও দূরে – দূর থেকে দূরান্তরে সার্থকভাবে সঙ্কেত প্রেরণ করতে না পারা পর্যন্ত তাঁর মনে শান্তি ও তৃপ্তি আসে কি করে।
কিছুদিনের মধ্যেই মোর্স আবিষ্কার করলেন ‘ রিলে’ পদ্ধতি। সমস্যার সমাধান হল, সঙ্কেত প্রেরণের অসুবিধা দূর হল। আনন্দিত হলেন মোর্স। নিজের আবিষ্কার বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রয়োগ ও প্রদর্শন করতে চাইলেন মোর্স। আবেদন জানালেন সরকারকে। কিছু অর্থের প্রয়োজন তাঁর, তাহলেই তিনি ওয়াশিংটন থেকে বাল্টিমোর পর্যন্ত তারের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে সঙ্কেত সাহায্যে খবর আদানপ্রদান করতে পারেন। নবীন বিজ্ঞানীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেন সরকার।
উৎসাহের সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। অভাবিত সাহায্য লাভ করলেন মোর্স। এবারে ওয়াশিংটন থেকে বাল্টিমোর পর্যন্ত তার টেনে টেলিগ্রাফের লাইন বসান হল। মোর্স সাফল্যের সঙ্গে খবরের সঙ্কেত প্রেরণ করলেন। দূর হল নিকট। ভবিষ্যতের বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে সেই প্রথম পৃথিবীতে টেলিগ্রাফ প্রবর্তিত হল। অক্ষয় কীর্তি স্থাপন করলেন বিজ্ঞানী মোর্স, একদিন যাঁর জীবনের যাত্রা শুরু হয়েছিল একজন সার্থক চিত্রশিল্পী হিসেবে। টেলিগ্রাফ নিঃসন্দেহে মানব সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে এক মাইল স্টোন ৷
স্যামুয়েল মোর্স এর মৃত্যু: Samuel Morse’s Death
১৮৭২ খ্রিঃ ২ রা এপ্রিল এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনাবসান হয়।