Tarasankar Bandyopadhyay Biography In Bengali: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জীবন পরিচয়
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্ম স্থান ও পিতামাতা: Birth Place And Parents Of Tarasankar Bandyopadhyay
আধুনিককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (Tarasankar Bandyopadhyay)। তার জন্ম ১৩০৫ বঙ্গাব্দে (১৮৯৮ খ্রিঃ) বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে এক ছােট জমিদার পরিবারে। পিতার নাম হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা প্রভাবতী দেবী।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রথম জীবন: Tarasankar Bandyopadhyay’s Early Life
লাভপুর গ্রামের উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয় থেকে ১৯১৫-১৬খ্রিঃ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই সময়েইনিজ গ্রামের উমাশশী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর শিক্ষাজীবন: Tarasankar Bandyopadhyay’s Educational Life
বিবাহের পর তারাশঙ্কর (Tarasankar Bandyopadhyay) পড়াশােনার জন্য কলকাতায় এলেন। প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে এবং পরে সাউথ সুবার্বন কলেজে (বর্তমান নাম আশুতােষ কলেজ) পড়াশােনা করেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর কর্ম জীবন: Tarasankar Bandyopadhyay’s Work Life
এই সময় গান্ধীজির অসহযােগ আন্দোলনে যােগদান করেন। এই অপরাধে তাকে নিজের গ্রামেই অন্তরীণ থাকতে হয়। ফলে পড়াশােনা বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকা অর্জনের জন্য কিছুকাল কলকাতায় কয়লার ব্যবসা করেন। পরে চাকরি নিয়ে চলে যান কানপুরে। এই সময়েই বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে তার পদযাত্রার সূত্রপাত হয়। ১৯২৬ খ্রিঃ প্রথম প্রকাশিত হয় কবিতার বইপত্র।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর রচনা: Written by Tarasankar Bandyopadhyay
কাব্যরচনা দিয়ে শুরু করলেও অল্প সময়ের মধ্যেই নাটকের জগতে তার উত্তরণ ঘটল। রচনা করলেন মারাঠা – তর্পণ নাটক। প্রায় একই সময়ে কল্লোল পত্রিকায় প্রকাশিত হল রসকলি গল্প।ইতিমধ্যে দেশজুড়ে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তারাশঙ্কর (Tarasankar Bandyopadhyay) আন্দোলনে যােগদান করেন ও কারারুদ্ধ হন ১৯৩০ খ্রিঃ। পরের বছর জেল থেকে বেরিয়ে সাহিত্য সাধনার মাধ্যমে দেশসেবার ব্রত গ্রহণ করেন।
সেই থেকে শুরু হয় নিরবিচ্ছিন্ন সাহিত্য চর্চা। দেশের উল্লেখযােগ্য সাহিত্যপত্র যেমন কল্লোল, কালিকলম, উপাসনা, বঙ্গশ্রী, শনিবারের চিঠি, প্রবাসী, দেশ, ভারতবর্ষ, বসুমতী, পরিচয়, প্রভৃতিতে নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। আমৃত সাহিত্য সাধনায় রত থেকে তারাশঙ্কর আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তারাশঙ্করের সাহিত্যের প্রতি পরতে মিশে আছে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। বীরভূমের লালমাটি আর তার মানুষকে তিনি নিপুণ দক্ষতায় উপস্থিত করেছেন বাংলা সাহিত্যে।
নিজে জমিদার বাড়ির সন্তান বলে জমিদারদের ক্ষয়িষ্ণু জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের বিশেষতঃ আঞ্চলিক মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা সংযুক্ত হওয়ায় তার রচনা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা যােজনা করে। এরই ফলশ্রুতি দেখা যায় গণদেবতা, মন্বন্তর, হাঁসুলীবাঁকের উপকথা, ডাক হরকরা, আরােগ্য নিকেতন, কবি, কীর্তিহাটের কড়চা প্রভৃতি অনবদ্য রচনাগুলিতে। তারাশঙ্করের সাহিত্যের প্রধান অংশ জুড়ে আছে বেদে, পটুয়া, মালাকার, লাঠিয়াল, চৌকিদার, ডাক হরকরা প্রভৃতি গ্রামীণ চরিত্র। এছাড়া বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, বিশ্বযুদ্ধ ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা, দেশবিভাগ, অর্থনৈতিক কাঠামাে ও সামাজিক অবস্থার শােচনীয় বিপর্যয়, অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিস্তার, যুব সমাজের ক্রোধ, অস্থিরতা, বিদ্রোহ প্রভৃতি ঘটনা। তারাশঙ্করের অনেক গল্প ও উপন্যাস চলচ্চিত্র ও নাটকে রূপায়িত হয়ে সাফল্য লাভ করেছে। কালিন্দী, দুই পুরুষ, আরােগ্য নিকেতন, কবি প্রভৃতি এদিক থেকে উল্লেখযােগ্য। কালিন্দীর নাট্যরূপ তিনি নিজেই দিয়েছেন। তার কবি উপন্যাসের চিত গানগুলিই তাঁর কাব্য পরিচয় বহন করে। এছাড়াও তিনি ছন্দোবদ্ধ পঙক্তির আদর্শবাদী ও নীতিমূলক কবিতাও কিছু রচনা করেছেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর পুরস্কার ও সম্মান: Tarasankar Bandyopadhyay’s Awards And Honors
অর্থের প্রয়ােজনে শেষ দিকে কিছুদিন দৈনিকপত্রে সাংবাদিকের কলম লিখেছেন। শেষ বয়সে কিছু চিত্রও এঁকেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎ স্মৃতি পুরস্কার ও জগত্তারিণী পদক, রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ উপাধি এবং জ্ঞানপীঠ। সাহিত্য পুরস্কার লাভ তাঁর সাহিত্য জীবনের উজ্জ্বল স্বীকৃতি। ১৯৫২ খ্রিঃ তারাশঙ্কর বিধান পরিষদের সদস্য হন। ১৯৫৫ খ্রিঃ তিনি ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে চীন ভ্রমণ করেন। ১৯৫৭ খ্রিঃ তাসখন্দে এশীয় লেখক প্রতিনিধি হিসেবে যােগ দেন ও মস্কো সফর করেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর মৃত্যু: Tarasankar Bandyopadhyay’s Death
১৯৭১ খ্রিঃ পরলােক গমন করেন।