জীবজগৎ | The Living World : কী বিস্ময়কর এই জীবজগৎ! সজীব বস্তুর বিচিত্র ব্যাপক ধরন ও চমকপ্রদ। সাধারণ বাসস্থান থেকে শুরু করে একেবারে ভিন্ন কিছু বিশেষ বাসস্থান যেমন শীতল পর্বতমালা, পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য, সমুদ্র, স্বাদুজলের হ্রদ, মরুভূমি বা উন্নপ্রস্রবণেও আমরা সজীব বস্তুর সন্ধান পাই, যা সত্যিই আমাদের বারুদ্ধ করে দেয়।
ছুটন্ত ঘোড়ার সৌন্দর্য, পাখির পরিযাণ, ফুলের উপত্যকা বা আতঙ্কদায়ক আক্রমণাত্মক হাঙর, সবই অতি বিস্ময়কর। কোনো জীবগোষ্ঠীর জীবদের মধ্যে এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলের একটি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন জীবগোষ্ঠীর মধ্যে বাস্তুতান্ত্রিক বিরোধ এবং সহযোগিতা এমনকি কোশের ভেতরে বিভিন্ন অণু পরমাণুর চলাচল, আসলে ‘জীবন’ কী এই বিষয়টিকেই গভীরভাবে প্রতিফলিত করে।
এই প্রশ্নটির মধ্যে আরও দুইটি প্রশ্ন নিহিত রয়েছে। প্রথমটি হল কৌশলগত প্রশ্ন, যা সজীব বস্তু এবং জড়বস্তুর মধ্যে কী কী বৈপরীত্য রয়েছে তার উত্তর খোঁজে এবং দ্বিতীয়টি হল দর্শনাত্মক যা জীবনের প্রয়োজনীয়তা কী, তার উত্তর খোঁজে। বিজ্ঞানী হিসাবে আমরা দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে যাব না। সজীব মানে কী? এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।
1.1 ‘সজীব’ মানে কী?
যখন আমরা ‘সজীব’ শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করি, তখন প্রথাগতভাবে আমরা সজীব বস্তুর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য খুঁজি। সজীব বস্তুর বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে বৃদ্ধি, প্রজনন, পরিবেশ থেকে সংবেদন গ্রহণ এবং উপযুক্ত পরিবেশীয় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি আমাদের মনে আসে। আবার কেউ কেউ সজীববস্তুর আরও কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন বিপাক, স্বপ্রজননশীলতা, স্ব-সংগঠিত হওয়ার ক্ষমতা, আন্তঃক্রিয়া এবং উদ্ভবের ক্ষমতা ইত্যাদিকেও তালিকাভুক্ত করেন। চলো আমরা এদের প্রত্যেকটিকেই বোঝার চেষ্টা করি। সব সজীব বস্তুরই বৃদ্ধি ঘটে। সজীব বস্তুর ‘বৃদ্ধি’ বলতে- জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আয়তন বৃদ্ধি দুটোকেই বোঝায়। কোনো জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আয়তন বৃদ্ধি দুইটি সমরূপ বৈশিষ্ট্য। বহুকোশী জীবকোশ বিভাজনের মাধ্যমে এই বৃদ্ধি সারাজীবনকালব্যাপী চলতে থাকে। প্রাণীতে এই বৃদ্ধি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ঘটে তবে বিনষ্ট কোশ প্রতিস্থাপনের জন্য কিছু কিছু নির্দিষ্ট কলাতে কোশ বিভাজন হয়। এককেশী জীব কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পায়।
অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জীবদেহের বাইরে পালন মাধ্যম শুধুমাত্র কোশের সংখ্যা গণনার সাহায্যে খুব সহজেই কোশের সংখ্যাবৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা যায়। বেশির ভাগ উন্নত প্রাণী এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি এবং জনন হল পরস্পর দুটি স্বতন্ত্র ঘটনা। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, জীবদেহের বেড়ে যাওয়াকেই বৃদ্ধি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। যদি আমরা ভর বেড়ে যাওয়াকে বৃদ্ধির মানদণ্ড হিসেবে ধরি, তবে বলা যায় জড় বস্তুও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পর্বত, পাথরের চাঁই, বালির স্তূপ এরও বৃদ্ধি ঘটে। যদিও জড় বস্তুর ক্ষেত্রে বস্তুর বহিপৃষ্ঠে পদার্থ স্তূপীকৃত হয়ে বা জমা হয়ে বস্তুর ভরের বৃদ্ধি তথা সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটায়। কিন্তু সজীব বস্তুকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে ‘বুদ্ধি’কে সজীব বস্তুর একটি ধর্ম হিসেবে ধরা যায় না। এক্ষেত্রে কোন পরিস্থিতিতে কোনো সজীব বস্তুতে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়, তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে এবং তখন আমরা বুঝাতে পারব যে এটি সজীব বস্তুর একটি বৈশিষ্ট্য হতে পারে কিনা। একটি মৃত জীব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় না।
একইভাবে জনন সজীব বস্তুর একটি বৈশিষ্টা। বহুকোশী জীবের ক্ষেত্রে প্রজনন বলতে জনিত্ব জীবের প্রায় হুবহু বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অপত্য জীব সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এখানে আবশ্যিকভাবে বা পরোক্ষভাবে আমরা যৌন জননের কথাই বলছি। অযৌন জনন পদ্ধতিতেও জীব জনন সংঘটিত করে। ছত্রাক অসংখ্য রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে খুব সহজে সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় ও বিস্তার লাভ করে। অনুন্নত জীব যেমন, ইস্ট ও হাইড্রা এর ক্ষেত্রে আমরা কোরোকোশম এবং বাডিং লক্ষ করে থাকি। প্ল্যানেরিয়া (চ্যাপ্টা কৃমি) তে প্রকৃত পুনরুৎপাদন পদ্ধতি পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ একটি খণ্ডিত জীব, দেহের হারিয়ে যাওয়া বাকি অংশ পুনরুৎপাদন করতে পারে এবং একটি নূতন সম্পূর্ণ জীবে পরিণত হতে পারে। এ পদ্ধতিতে ছত্রাক, সূত্রাকার শৈবাল, মস-এর প্রোটোনিমা, এ সবগুলোই খন্ডীভবন প্রক্রিয়ায় খুব সহজেই বংশবৃদ্ধি করে। আবার ব্যাকটিরিয়া, এককোশী শৈবাল এবং অ্যামিবার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি এবং জনন মানেই কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবে। এর মধ্যে আমরা এটা জেনে গেছি যে বৃদ্ধি বলতে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভর-বৃদ্ধি উভয়কেই বোঝায়। সুতরাং লক্ষ করার বিষয় যে এককোশী প্রাণীদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি এবং জননকে আমরা স্পষ্টভাবে আলাদা করতে পারি না। সুতরাং প্রজননকে প্রত্যক্ষভাবে সজীব বস্তুর বৈশিষ্ট্য বলা যায় না। তবে অবশ্যই কোনো জড় বস্তু প্রজননে বা নিজের প্রতিলিপি গঠনে সক্ষম নয়।
জীবনের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল বিপাক সব সজীব বস্তুই বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো ছোটো বড়ো বিভিন্ন আকৃতির এবং বিভিন্ন কার্যকারিতাসম্পন্ন হয়। এই বস্তুগুলো জীবদেহে অবিরাম তৈরি হচ্ছে এবং এগুলোই পরিবর্তিত হয়ে আরো কিছু জৈব অণু তৈরি করছে। এই পরিবর্তন বা রূপান্তর রাসায়নিক বিক্রিয়া বা বিপাকক্রিয়া। এককোশী বা বহুকোশী সব জীবের ক্ষেত্রেই কোশের অভ্যন্তরে একই সাথে হাজার হাজার বিপাকক্রিয়া চলছে। উদ্ভিদ, প্রাণী, ছত্রাক এবং অণুজীব সবার মধ্যেই বিপাকক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দেহে অবিরাম ঘটতে থাকা সব রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমষ্টিগত ফলই বিপাক। কোনো জড় বস্তুই বিপাকক্রিয়া প্রদর্শন করে না। দেহের বাইরে অকোশীয় পরিবেশেও বিপাকক্রিয়া প্রদর্শন করানো যেতে পারে। জীবদেহের বাইরে পরীক্ষানলে ঘটা বিভিন্ন বিপাকক্রিয়াগুলোকে সজীব বা জড় কোনোটিই বলা যায় না। সুতরাং যদিও বিপাকক্রিয়া সব সজীব বস্তুরই একটি সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য, তথাপি দেহের বাইরে ঘটা বিচ্ছিন্ন বিপাকীয় বিক্রিয়াগুলোকে সজীব বস্তুর বৈশিষ্ট্য বলা যায় না। কিন্তু এরা অবশ্যই সজীব বিক্রিয়া। তাই দেহের কোশীয় সংগঠন, সজীব দেহ গঠনের একটি সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য।
সম্ভবত সব সজীব বস্তুরই অত্যাবশ্যকীয় এবং প্রায়োগিক দিক থেকে জটিল বৈশিষ্ট্যটি হল নিজের চারপাশ এবং পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করা এবং শারীরিক, রাসায়নিক বা জৈবিক যে-কোনো উপায়ে পরিবেশীয় উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা। আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়গুলোর মাধ্যমে আমরা পরিবেশকে অনুভব করতে পারি। উদ্ভিদেরা পরিবেশের বহিঃপ্রভাব যেমন আলোক, জল, তাপমাত্রা, অন্যান্য জীব, দূষক ইত্যাদির প্রতি সাড়া দিতে পারে। প্রোক্যারিওটিক থেকে শুরু করে সর্বাধিক জটিল ইউক্যারিওটিক পর্যন্ত সব জীবই পরিবেশীয় ইঙ্গিতগুলোকে অনুভব করতে পারে এবং এদের সাপেক্ষে সাড়া দিতে পারে। উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয় ক্ষেত্রেই ঋতুভিত্তিক প্রজননকারীদের প্রজনন আলোকব্যাপ্তিকাল দ্বারা প্রভাবিত হয়। সব জীবই তাদের দেহে রাসায়নিক পদার্থসমূহের প্রবেশ-এর বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সব জীবই তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে ‘সচেতন’। মানুষ হল একমাত্র জীব যে কিনা নিজের সম্পর্কে সচেতন অর্থাৎ মানুষের আত্মসচেতনতা রয়েছে। সুতরাং ‘সচেতনতা’ সজীব বস্তুর একটি সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্য হিসাবে পরিগণিত হয়।
মানুষের ক্ষেত্রে জীবিত অবস্থাকে সংজ্ঞায়িত করা অধিকতর কঠিন। আমরা পর্যবেক্ষণ করি যে হাসপাতালে শুয়ে থাকা কোমায় আচ্ছন্ন রোগীর হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুসের ক্রিয়া কৃত্রিম উপায়ে চালিয়ে রাখা হয়। প্রকৃতপক্ষে এই অবস্থায় রোগীটির মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেছে এবং সে সজ্ঞানে নেই। এমন অবস্থায় থাকা রোগীদের মধ্যে যারা আর কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে না, এদের সজীব বলা হবে না জড়?
ওপরের শ্রেণিতে তোমরা জানতে পারবে যে সব সজীব ঘটনাবলিই অভ্যন্তরীণ আন্তঃক্রিয়ার ফলেই ঘটে। কলা গঠনকারী কোশসমূহে কলার ধর্ম অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু এই কোশসমূহের আন্তঃক্রিয়ার ফলেই কলা গঠিত হয়। একইভাবে কোশীয় অঙ্গাণু গঠনকারী অণুসমূহে অঙ্গাণুর ধর্ম দেখা যায় না, কিন্তু এই আণবিক উপাদানসমূহের আন্তঃক্রিয়ার ফলেই কোশীয় অঙ্গাণু তৈরি হয়। হায়ারার্কির সবস্তরেই সাংগঠনিক জটিলতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি সত্য। সুতরাং আমরা এটা বলতে পারি যে, সব সজীব বস্তু স্বপ্রজননক্ষম, তাও বিবর্তনক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্বনিয়ন্ত্রিত আন্তঃক্রিয়া ব্যবস্থা, যারা বাহ্যিক উদ্দীপনায় সাড়া দিতে পারে। জীববিদ্যা হল পৃথিবীর বুকে জীবনের গল্প। জীববিদ্যা পৃথিবীতে সজীব বস্তুর বিবর্তনেরও ইতিহাস। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ-এর সব সজীব বস্তুই বিভিন্ন মাত্রায় কিছু সাধারণ জিনগত বৈশিষ্ট্য বহন করে এবং এর মাধ্যমেই এরা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত থাকে।
1.2 জীবজগতে বৈচিত্র্য (DIVERSITY IN THE LIVING WORLD)
তুমি যদি তোমার চারপাশে লক্ষ কর, তাহলে বিভিন্ন ধরনের সজীব বস্তু তোমার চোখে পড়বে, তা হতে পারে টবে লাগানো গাছ, পতঙ্গ, পাখি, তোমার পোষা প্রাণী বা অন্যান্য প্রাণী বা গাছপালা। আবার এমন বহু জীব রয়েছে যাদের তুমি খালি চোখে দেখতে পাও না; অথচ এরা সবাই তোমাকে ঘিরেই রয়েছে। এবার যদি তোমার পর্যবেক্ষণের পরিসর আরও বৃদ্ধি কর, তবে সজীববস্তুর বিস্তৃতি ও বৈচিত্র্য আরও বৃদ্ধি পাবে। তুমি যদি কোনো ঘন অরণ্য পরিদর্শন করে থাক, তাহলে সেখানে অবশ্যই অনেক বেশি সংখ্যক এবং অনেক বেশি বৈচিত্র্যের সজীব বস্তু দেখে থাকবে। প্রত্যেকটি আলাদা ধরনের গাছ, প্রাণী অথবা জীব যা তুমি দেখ, এরা প্রত্যেকেই এক একটি প্রজাতিকে নির্দেশ করে। আজ পর্যন্ত প্রায় 1.7-1.8 মিলিয়ন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং এদের সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এটিই জৈব বৈচিত্র্য বা পৃথিবীতে বর্তমান জীবের সংখ্যা ও তার ধরন। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে কোনো নতুন আবিষ্কৃত জায়গা এমনকি কোনো পুরোনো জায়গাতেও অনবরতই নতুন নতুন জীবের সনাক্তকরণ হচ্ছে।
পূর্বের বক্তব্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণী এবং উদ্ভিদ রয়েছে। আমাদের নিজের এলাকার প্রাণী ও উদ্ভিদরা তাদের স্থানীয় নামে আমাদের কাছে পরিচিত। এই স্থানীয় নামগুলো স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোনো জীবের বিষয়ে পারস্পরিক মত বিনিময় করার কোনো উপায় এবং পদ্ধতি খুঁজে বের করতে না পারলে এক্ষেত্রে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে তা সম্ভবত তোমরা অনুধাবন করতে পার।
সুতরাং সব সজীব বস্তুরই এমন সাধারণ নামকরণের প্রয়োজন যাতে সারা পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট জীব একই নামে পরিচিত হতে পারে। এই পদ্ধতিকে বলে নামকরণ। তবে অবশ্যই একমাত্র তখনই নামকরণ বা কোনো জীবের নাম দেওয়া সম্ভব হবে যদি জীবটির বৈশিষ্ট্যাবলি সঠিকভাবে বর্ণিত হয় এবং যদি আমরা জানি যে কোনো জীবের সাথে এই নামটি যুক্ত করা হচ্ছে। একেই বলে সনাক্তকরণ।
অধ্যয়নের সুবিধার্থে বেশ কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী প্রত্যেক জীবের একটি বিজ্ঞানসম্মত নাম ঠিক করার জন্য কিছু নীতি প্রণয়ন করেন এবং এটি সারা বিশ্বের জীববিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে যে সর্বসম্মতনীতি ও মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে বৈজ্ঞানিক নামকরণ করা হয়, ইন্টারন্যাশনাল কোড ফর বোটানিক্যাল নোমেনক্ল্যাচার (ICBN)-এ তা উল্লিখিত আছে। তুমি জিজ্ঞাসা করতে পার প্রাণীদের নামকরণ কীভাবে করা হয়? প্রাণী বিন্যাসবিদ্রা প্রাণীদের নামকরণের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কোড অব জুলোজিক্যাল নোম্যানক্ল্যাচার (ICZN) গঠন করেন। বিজ্ঞানসম্মত নামগুলো প্রতিটি জীবের একটি মাত্র নামকেই সুনিশ্চিত করে। কোন একটি জীবের বর্ণনা এরূপ হওয়া প্রয়োজন যে পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের মানুষই এই বর্ণনার সাপেক্ষে একই নামে ওই নির্দিষ্ট জীবটিকে চিনতে সমর্থ হবে। এই দুই আন্তর্জাতিক সংগঠন এটাও সুনিশ্চিত করে যে কোনো একটি জীবকে প্রদত্ত এ ধরনের নাম অন্য কোনো জ্ঞাত জীবের নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে না। জীববিজ্ঞানীরা কোনো জ্ঞাত জীবের বিজ্ঞানসম্মত নামকরণের ক্ষেত্রে সর্বজনগ্রাহ্য নীতিসমূহকে অনুসরণ করেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি নাম দুটি পদের সমন্বয়ে গঠিত- প্রথমটি গণগত নাম এবং দ্বিতীয় পদটি প্রজাতিগত নামকে নির্দেশ করে। দুটি পদের সমন্বয়ে এইরূপ নামকরণ পদ্ধতিকে দ্বিপদ নামকরণ (Binomial nomenclature) বলে। বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস এই পদ্ধতির প্রণেতা যে পদ্ধতি সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা চর্চা করে চলেছেন। দুটি পদ ব্যবহার করে এই নামকরণ পদ্ধতিটি অত্যন্ত সুবিধাজনক পদ্ধতি হিসাবে পরিগণিত হয়েছিল। এই বিজ্ঞানসম্মত নামকরণ পদ্ধতিটিকে স্পষ্টভাবে বুঝতে চলো আমরা আমকে উদাহরণ হিসাবে নিই। ম্যাঞ্জিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera Indica)। চলো আমরা দেখি কীভাবে এই দ্বিপদ বিশিষ্ট নামটি তৈরি হল। এই নামটিতে ম্যাঞ্জিফেরা হল আমের গণগত নাম, আর ইন্ডিকা আমের নির্দিষ্ট প্রজাতির নামকে নির্দেশ করে।
নামকরণের অন্যান্য সর্বজনীন নিয়মাবলি নিম্নরূপ:
- বৈজ্ঞানিক নামগুলো সাধারণত ল্যাটিন শব্দে এবং বাঁকা হরফে লেখা হয়। এদের উৎপত্তি যেখানেই হোক না কেনো নামগুলো ল্যাটিন শব্দে বা ল্যাটিন থেকে উদ্ভুত শব্দে রূপান্তরিত করা হয়।
- একটি বিজ্ঞানসম্মত নামের প্রথম শব্দটি গণগত নামকে বোঝায়, যেখানে দ্বিতীয় শব্দটি প্রজাতিগত নাম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
- বিজ্ঞানসম্মত নামের দুটি পদকেই হাতে লেখার সময় আলাদাভাবে নিম্নরেখিত করতে হবে এবং ছাপার সময় এরা যে ল্যাটিন ভাষা থেকে উদ্ভুত তা বোঝাতে বাঁকা হরফে ছাপতে হবে।
- গণগত নাম নির্দেশক প্রথম শব্দটি বড়ো হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু করতে হবে আবার প্রজাতির নামটি ছোটো হাতের অক্ষরে লিখতে হয়। আমের বিজ্ঞানসম্মত নাম ম্যাঞ্ঝিফেরা ইন্ডিকাকে উদাহরণ হিসাবে নিয়ে এই বিষয়টিও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
জীবটিকে প্রথম যে বিজ্ঞানী বর্ণনা করেছিলেন তাঁর নাম প্রজাতিগত নামের শেষে অর্থাৎ বিজ্ঞানসম্মত নামের শেষে বসবে এবং এটি সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হবে। উদাহরণস্বরূপ Mangifera indica Linn. এই নাম থেকে এটা বোঝা যায় যে এই প্রজাতিটির বর্ণনা করেছিলেন বিজ্ঞানী লিনিয়াস।
যেহেতু সব সজীব বস্তুর অধ্যয়ন প্রায় অসম্ভব তাই এই অসম্ভব বিষয়টিকে সম্ভবপর করার জন্য কিছু কৌশল উদ্ভাবন করার প্রয়োজন। এটিই শ্রেণিবিন্যাস। শ্রেণিবিন্যাস হল এমন একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে কোনো কিছুকে তার উপযুক্ত ক্যাটাগরিতে রাখা যায় এবং তা করা হয় সহজে পর্যবেক্ষণযোগ্য সেই বস্তুর কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে।
উদাহরণস্বরূপ আমরা সহজেই উদ্ভিদের অথবা প্রাণীদের বা কুকুর, বেড়াল অথবা কীটপতঙ্গদের দলকে চিনতে পারি। যে মুহূর্তে আমরা এদের যে-কোনো একটি দলকে নিয়ে ভাবি তখন ওই দলভুক্ত জীবের সাথে কিছু বৈশিষ্ট্যকে যুক্ত করি। যখন তুমি একটি কুকুর সম্পর্কে ভাব, তখন কী ছবি তোমার চোখে ভেসে উঠে? অবশ্যই এক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকেই কুকুরকেই দেখি, বিড়ালকে নয়। এখন যদি আমাদেরকে ‘অ্যালসেসিয়ান’ নিয়ে চিন্তা করতে বলা হয়, আমরা জানি কী নিয়ে চিন্তা করব। একইরকমভাবে ধরো আমাদেরকে স্তন্যপায়ীদের কথা বলা হল, তুমি অবশ্যই এমন একটি জীবের কথা ভাববে যার দেহ লোমে ঢাকা এবং যার বহিঃকর্ণ রয়েছে। ঠিক সেইভাবেই উদ্ভিদের ক্ষেত্রে যদি আমরা গম গাছ সম্পর্কে বলতে চেষ্টা করি, তবে আমাদের মনে গমগাছের চিত্রই ভেসে উঠবে, ধানগাছের নয়। সুতরাং ‘কুকুর’, ‘বেড়াল’, ‘স্তন্যপায়ী’, ‘গম’, ‘ধান’ উদ্ভিদগোষ্ঠী, প্রাণীগোষ্ঠী সবই সহজে বোধগম্য হয় এমন দলসমূহ, যেখানে দলের বৈশিষ্ট্যগুলো জীবদের সম্পর্কে অধ্যয়নে আমাদেরকে সাহায্য করে। এই ধরনের এক একটি দলকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় “Taxa’ বলে।
এখানে আমাদের এটা বুঝতে হবে যে Taxa বিভিন্ন স্তরের দলকে নির্দেশ করতে পারে। সমস্ত উদ্ভিদ মিলে একটা ট্যাক্সা (Taxa) হতে পারে। আবার সমস্ত ‘গাছ’ মিলেও একটা Taxa হতে পারে। একইভাবে ‘প্রাণী’, ‘স্তন্যপায়ী’, ‘কুকুর’ প্রত্যেকটি দলই এক একটি Taxa। কিন্তু তুমি জান যে কুকুর একটি স্তন্যপায়ী এবং স্তন্যপায়ীরা আবার প্রাণীগোষ্ঠীভুক্ত। সুতরাং ‘প্রাণী’ ‘স্তন্যপায়ী’ ‘কুকুর’ সবাই ভিন্ন ভিন্ন স্তরে এক একটি Taxa কে বোঝায়। তাই বৈশিষ্ট্যাবলির ওপর ভিত্তি করে সব জীবকেই বিভিন্ন Taxa তে বিন্যস্ত করা যেতে পারে। শ্রেণি বিন্যাসের এই পদ্ধতিকেই বলে Taxonomy বা বিন্যাসবিধি। জীবের বাহ্যিক গঠন এবং অভ্যন্তরীণ গঠন, সেই সঙ্গে কোশের গণ, বিকাশ পদ্ধতি এবং জীবের প্রয়োজনীয় বাস্তুতান্ত্রিক তথ্য, আধুনিক বিন্যাসবিধি অধ্যয়নের ভিত্তি গঠন করে।
কাজেই বিন্যাসবিধি বা Taxonomy-এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো হচ্ছে, জীবের বৈশিষ্ট্যের বিবরণ, সনাক্তকরণ, গোষ্ঠীভুক্তকরণ এবং নামকরণ। Taxonomy বা বিন্যাসবিধি নতুন কোনো বিষয় নয়। মানুষ তাদের নিজস্ব ব্যবহারের সাপেক্ষে, সবসময়ই বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র জীব সম্পর্কে অনেক বেশি জানতে আগ্রহী। আদিকালে মানুষকে খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের জন্য বিভিন্ন উৎস খুঁজতে হতো। কাজেই প্রাচীনতম শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিগুলো বিভিন্ন জীবের ব্যবহারিক দিকটির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।
বহুদিন আগে থেকেই মানুষ যে কেবলমাত্র বিভিন্ন ধরনের সজীব বস্তু এবং এদের বৈচিত্র সম্পর্কে জানতেই আগ্রহী ছিল এমন নয়, এইসব জীবদের মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে জানতেও তারা আগ্রহী ছিল। জীববিদ্যায় এই বিষয়ক অধ্যয়নের শাখাকে সিস্টেম্যাটিক্স (systematics) বলে। Systematics শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘systema’ থেকে উদ্ভুত, যার অর্থ হল সজীব বস্তুর সুসংবদ্ধ সজ্জাক্রম। লিনিয়াস তাঁর প্রকাশিত পুস্তকের শিরোনাম ঠিক করেছিলেন ‘Systema Naturae‘। পরবর্তীকালে সনাক্তকরণ, নামকরণ এবং গোষ্ঠীভুক্তকরণ সিস্টেম্যাটিক্স এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে এর সুযোগ আরও বৃদ্ধি করেছিল। সজীব বস্তুর বিবর্তনগত সম্পর্কগুলোও সিস্টেম্যাটিক্সের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
1.3 ট্যাক্সোনোমিক ক্যাটাগরি (Taxonamic Categories)
শ্রেণিবিন্যাস বা গোষ্ঠীভুক্তকরণ একধাপ বিশিষ্ট কোনো পদ্ধতি নয়, কিন্তু এটি ক্রমপর্যায়ে সজ্জিত কিছু ধাপ সমন্বিত সংগঠন, যেখানে প্রতিটি ধাপ এক একটি স্তর বা ক্যাটাগরিকে নির্দেশ করে। যেহেতু ক্যাটাগরি বা স্তরগুলোই সামগ্রিক শ্রেণিবিন্যাসবিধির কাঠামোর একটি অংশ তাই একে ট্যাক্সোনোমিক ক্যাটাগরি বলে। সব ট্যাক্সোনোমিক ক্যাটাগরি একসাথে ট্যাক্সোনোমিক হায়ারার্কি গঠন করে। প্রত্যেকটি ক্যাটাগরি শ্রেণিবিন্যাসের এক একটি একক, যা প্রকৃতপক্ষে এক একটি স্তরকে উপস্থাপন করে এবং সাধারণভাবে এইরূপ প্রতিটি স্তরকে ট্যাক্সন (Taxon) (বহুবচনে: ট্যাক্সা) বলে।
ট্যাক্সোনোমিক ক্যাটাগরিগুলো এবং হায়ারার্কিকে একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায়। কীটপতঙ্গ এমন একটি গোষ্ঠীর প্রাণীদের বোঝায়, সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে যাদের তিনজোড়া সন্ধিল উপাঙ্গ রয়েছে। তার মানে কীটপতঙ্গ হল সুস্পষ্টভাবে চেনা যায় এমন প্রাণীগোষ্ঠী যাদের আলাদাভাবে শ্রেণিকরণ করা যায় এবং তাই এদের একটি স্তর হিসাবে গণ্য করা হয়। তুমি কি এমন আরও কোনও জীবগোষ্ঠীর নাম করতে পার? মনে রেখো কোনো গোষ্ঠী একটি ক্যাটাগরিকে উপস্থাপন করে। ক্যাটাগরি আবার আরেকটি স্তরকে নির্দেশ করে। এইরূপ প্রত্যেক স্তর অথবা ট্যাক্সন প্রকৃতপক্ষে শ্রেণিবিন্যাসের এক একটি একক। এই ট্যাক্সোনোমিক ক্যাটাগরিগুলো একেবারে স্বতন্ত্র এমন জীবগোষ্ঠী, যারা শুধুমাত্র জীবদের দৈহিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে গঠিত জীবগোষ্ঠী নয়।
সব জ্ঞাত সজীব বস্তুদের ট্যাক্সোনোমি বিষয়ক অধ্যয়নের ফলেই কিছু সাধারণ ক্যাটাগরির সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: রাজ্য, পর্ব বা বিভাগ (উদ্ভিদের জন্য), শ্রেণি, বর্গ, গোত্র, গণ এবং প্রজাতি। উদ্ভিদ রাজ্য এবং প্রাণীরাজ্যের অন্তর্গত সব জীবেরই সর্বনিম্ন ক্যাটাগরিটি হল ‘প্রজাতি’। এখন একটি প্রশ্ন তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পার যে কীভাবে একটি জীবকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্থাপন করা হয়? এক্ষেত্রে মূল প্রয়োজনীয় বিষয়টি হচ্ছে জীব সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান। এই জ্ঞান একইরকম জীব বা ভিন্ন ভিন্ন জীবের মধ্যে সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
1.3.1 প্রজাতি (Species)
বিন্যাসবিধি বিষয়ক অধ্যয়নের সাপেক্ষে মৌলিক সাদৃশ্যযুক্ত বেশ কিছু একক জীবের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলকে ‘প্রজাতি’ বলা হয়। স্বতন্ত্র বহিরাকৃতিগত পার্থক্যের ভিত্তিতে এক প্রজাতি থেকে খুব কাছাকাছি সম্পর্কযুক্ত অন্য প্রজাতিকে পৃথক করা সম্ভব। চলো আমরা Mangifera indica, Solanum tuberosum (অল্) এবং Panthera leo এই তিনটি প্রজাাতির জীবকে উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করি। indica, tuberosum এবং leo (সিংহ) এই তিনটি নাম তিনটি প্রজাতিগত উপাধিকে উপস্থাপন করছে, যেখানে Mangifera, Solanum এবং Panthera হল জীবদের গণগত নাম যেটি আরেকটি উচ্চতর ট্যাক্সন বা ক্যাটাগরিকে নির্দেশ করে। প্রত্যেক গণ এক বা একাধিক প্রজাতি নিয়ে গঠিত। কাজেই প্রতিটি গণে বিভিন্ন জীব অবস্থান করে, কিন্তু তারা বাহ্যিক দিক থেকে একই চেহারার হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় tigris, হল lea ছাড়াও Panthera এর আরও একটি প্রজাতি এবং nigrum এবং melongena এর মাতা Solanum গণ এর আরও প্রজাতিগত নাম রয়েছে। মানুষ ‘Homo’গণের অন্তর্গত ‘Sapiens‘ প্রজাতিভুক্ত জীব। তাই মানুষের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘Homo sapiens‘
1.3.2 গণ (Genus)
অন্য গণভুক্ত প্রজাতির তুলনায় অধিক সদৃশ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কিছু প্রজাতি নিয়ে একটি ‘গণ’ গঠিত হয়। আমরা বলতে পারি যে গণ হল কতকগুলো নিকট সম্পর্কযুক্ত প্রজাতির দল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আলু এবং বেগুন দুটো ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত কিন্তু একই গণ Solamun এর অন্তর্গত। সিংহ (Panthera leo), নেকড়ে (Panthera pardus) এবং বাধ (Panthera tigris) ৩০ গুলো সদৃশ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রজাতি এবং এই সবগুলো প্রজাতিই ‘গণ’ Panthera-এর অন্তর্ভুন্ত। এই Panthera গণটি বেড়াল-এর গণ Felis থেকে পৃথক হয়।
1.3.3 গোত্র (Family)
গণের পরবর্তী উচ্চ ক্যাটাগরি হল গোত্র। গোত্র কতকগুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ‘গণ’ নিয়ে গঠিত, যেখানে জীবদের মধ্যে ‘গণ’ এবং ‘প্রজাতি’র তুলনায় কম সাদৃশ্য রয়েছে। উদ্ভিদ প্রজাতির ক্ষেত্রে এদের অঙ্গজ এবং জননগত উভয় বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গোত্রের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয় উদাহরণ স্বরূপ, উদ্ভিদের মধ্যে Solamum. Petunia এবং Datura এই তিনটি গণ একই গোত্র Solanaceae এর অন্তর্ভুক্ত। প্রাণীদের ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে সিংহ, বাঘ, নেকড়ে নিয়ে গঠিত ‘গণ’ Panthera এবং বেড়ালের ‘গণ’ Felis এই দুই-ই ‘গোত্র’ Felidac এর অন্তর্গত। একইভাবে যদি তুমি একটি কুকুর এবং একটি বেড়ালের বৈশিষ্ট্য লক্ষ কর তাহলে এদের মাধ্যে কিছু সাদৃশ্যের পাশাপাশি কিছু বৈসাদৃশ্যও খুঁজে পাবে। কুকুর ও বেড়াল দুটি আলাদা গোত্র যথাক্রমে ‘গোত্র’ Canidae এবং ‘গোত্র’ Felidae এর অন্তর্ভুক্ত। 1.3.4 বর্গ (Order)
তুমি দেখেছ যে প্রজাতি, গণ এবং গোত্রের মতো ক্যাটাগরিগুলো কিছু সংখ্যক সদৃশ বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। সাধারণত বর্গ এবং ট্যাক্সোনমিক ক্যাটাগরিগুলোকে কতকগুলো সম্মিলিত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে সনাক্ত করা যায়। ‘বর্গ’ একটি উচ্চতর ক্যাটাগরি হওয়ায় এটি কতকগুলো ‘গোত্র’ নিয়ে গঠিত যারা কিছু সংখ্যক সাধারণ বৈশিষ্ট্য বহন করে। কোনো গোত্রের অন্তর্ভুক্ত গণগুলোর তুলনায় বর্গের অন্তর্ভুক্ত গোত্রগুলোর মধ্যেকার সদৃশ বৈশিষ্ট্যের সংখ্যা অনেক কম। Convolvulaceae এববং Solanaceae এর মতো উদ্ভিদ গোত্রগুলো ‘বর্গ’ Polymoniales বর্গের অন্তর্ভুক্ত। প্রধানত ফুলের বৈশিষ্ট্যাবলির ভিত্তিতেই ওই গোত্রগুলোকে Polymoniales বর্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। Felidae এবং Canidae এর মতো প্রাণী গোত্রগুলো প্রাণীবর্গ Carnivora এর অন্তর্গত।
1.3.5 শ্রেণি (Class)
এই ক্যাটাগরিটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক বর্গ নিয়ে গঠিত। উদারণস্বরূপ Primata বর্গভুক্ত প্রাণী বানর, গরিলা, গিবন এরা সবাই Mammalia শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। আবার এই শ্রেণিতে Carnivora বর্গ-এর প্রাণী বাঘ, বেড়াল এবং কুকুরও রয়েছে। Mammalia শ্রেণির অন্তর্গত আরও কিছু গোত্রও বর্তমান।
1.3.6 পর্ব (Phylum)
মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী ও স্তন্যপায়ীদের শ্রেণিগুলো একত্রে পরবর্তী উচ্চতর ক্যাটাগরি ‘পর্ব’ গঠন করে। এই পর্বভুক্তিকরণ প্রাণীদের কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যেমন দেহে নটোকর্ড এবং পৃষ্ঠীয় ফাঁপা স্নায়ুতন্ত্রের উপস্থিতি এদেরকে পর্ব কর্ডাটা এর অন্তর্ভুক্ত করে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কিছু সদৃশ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শ্রেণি মিলে উচ্চতর ক্যাটাগরি ‘বিভাগ’ গঠিত হয়।
1.3.7 রাজ্য (Kingdom)
প্রাণীদের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিতে বিভিন্ন পর্বভুক্ত সব প্রাণীরাই সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি ‘প্রাণী-রাজ্য’ -এর অন্তর্গত। অন্যদিকে ‘উদ্ভিদ রাজ্য ‘টি একেবারে স্বতন্ত্র এবং বিভিন্ন বিভাগের সব উদ্ভিদেরা মিলে এই রাজ্য গঠন করে। তাই আমরা এই দুইটি দলকে ‘উদ্ভিদ রাজ্য ও প্রাণী রাজ্য’ নামে আখ্যায়িত করি।
চিত্র 1.1 এখানে প্রজাতি থেকে রাজ্য পর্যন্ত শ্রেণিবিন্যাসের সবগুলো ক্যাটাগরিকে ঊর্ধ্বক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে। এগুলো সবই হল বৃহৎ ক্যাটাগরি। তবে শ্রেণিবিন্যাসবিদ্গণ বিভিন্ন ট্যাক্সাগুলোকে আরও সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে স্থানভুক্তিকরণের জন্য এই হায়ারের্কিতে আরও কিছু সাব ক্যাটাগরিও তৈরি করেছেন।
চিত্র 1.1 এ হায়ারার্কিটি দেখে তুমি এই সজ্জাক্রমের ভিত্তিটি মনে করতে পারছ কি? উদাহরণস্বরূপ, ধরো আমরা যদি প্রজাতি থেকে ক্রমশ রাজ্যের দিকে যাই, তবে সদৃশ বৈশিষ্ট্যের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। ক্রমশ নিম্নতর ট্যাক্সাগুলোতে প্রতিটি ট্যাক্সনের অন্তর্গত সদস্যদের মধ্যে অধিকতর সদৃশ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। অপরদিকে ক্রমশ উপরের ক্যাটাগরিগুলোতে একই স্তরের বিভিন্ন ট্যাক্সাগুলোর মধ্যে সম্পর্ক নিরূপণ করা অধিকতর কষ্টসাধ্য হয়। তাই শ্রেণিবিন্যাসের সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে ওঠে।
1.4 বিন্যাসবিধিতে ব্যবহৃত উপকরণসমূহ (Taxonomical AIDS)
কৃষি, বনপালন, শিল্প এবং সাধারণভাবে আমাদের জৈব সম্পদগুলো, সঙ্গে তাদের বৈচিত্র্যকে জানার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অন্যান্য জীবকুলের বিন্যাসবিধি অধ্যয়ন খুবই প্রয়োজন। এই অধ্যয়নের জন্য জীবের সঠিক শ্রেণিবিন্যাস ও সনাক্তকরণ প্রয়োজন। কোনো জীবের সঠিক সনাক্তকরণ করার ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবটির সম্বন্ধে বিশদ অধ্যয়নের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির প্রকৃত নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন, যা হবে জীবের বিন্যাসবিধি অধ্যয়নের মূল সূত্র। এগুলো জীব সম্পর্কিত অধ্যয়ন এবং সিস্টেমেটিক্সের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক উপকরণ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নমুনাটি ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
জীববিজ্ঞানীরা কোনো জীবের নমুনা ও এ সম্পর্কিত তথ্যাবলি সঞ্চয় ও সংরক্ষণের জন্য কিছু পদ্ধতি ও কৌশল প্রণয়ন করেছেন। এই উপকরণগুলোর ব্যবহার কী, তা যাতে তুমি বুঝতে পার তার জন্য এদের মধ্যে কিছু কিছু উপকরণ এর বর্ণনা করা হচ্ছে।
1.4.1 হার্বেরিয়াম (Herbarium)
হার্বেরিয়াম সিটে সংরক্ষিত শুষ্ক এবং চাপা দেওয়া সংগৃহীত উদ্ভিদ নমুনাগুলোর সংগ্রহশালাই হল হার্বেরিয়াম। এছাড়া এই হার্বেরিয়াম সীটগুলো সর্বজনগ্রাহ্য শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি অনুযায়ী সাজানো থাকে। বিশদ তথাসহ সংরক্ষিত হার্বেরিয়াম সীটের নমুনাগুলো ভবিষ্যতের জন্য একটি সংগ্রহশালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(চিত্র 1.2 দেখ) এই হার্বেরিয়াম সিটে নমুনা সংগ্রহের স্থান এবং তারিখ, নমুনার ইংরেজি নাম, স্থানীয় নাম এবং বৈজ্ঞানিক নাম, গোত্র, সংগ্রহকারীর নাম ইত্যাদি সব তথ্যবহনকারী একটি লেবেলও থাকে। বিন্যাসবিধি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে হার্বেরিয়াম একটি তাৎক্ষণিক সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
1.4.2 উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন)
এটি এক বিশেষ ধরনের উদ্যান, যেখানে তথ্যসংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন জীবন্ত গাছপালার সংগ্রহ থাকে। এসব উদ্যানের উদ্ভিদপ্রজাতিগুলোকে সনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে লাগানো হয় এবং এখানকার প্রতিটি গাছকে তার বিজ্ঞানসম্মত নাম এবং গোত্র লিখে লেবেল করা হয়। বিখ্যাত উদ্ভিদ উদ্যানগুলোর মধ্যে রয়েছে কিউ (ইংল্যান্ড), ইন্ডিয়ান বোটানিক্যাল গার্ডেন (হাওড়া, ভারত) এবং ন্যাশনাল বোটানিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (লক্ষ্ণৌ)।
1.4.3 সংগ্রহশালা (Museum)
জৈব সংগ্রহশালা সাধারণত বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তৈরি করা হয়। সংগ্রহশালায় উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সংরক্ষিত নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই সংগৃহীত নমুনাগুলো তথ্য প্রদানে সাহায্য করে। নমুনাগুলো কোনো পাত্রে বা সংরক্ষক-দ্রবণ সমন্বিত জারে রাখা হয়। কখনো বা উদ্ভিদ এবং প্রাণী নমুনাগুলোকে শুষ্ক নমুনা রূপেও সংগ্রহ করা যেতে পারে। পতঙ্গদের সংগ্রহ করার পর এদের মেরে পিন করে Insect Box এ রাখা হয়। পাখি এবং স্তন্যপায়ীর মতো বড়ো প্রাণীদের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রথমে মৃত প্রাণীর ভেতরের সব কিছু বের করে নিয়ে এর ভেতরে অপচনশীল পদার্থ ঢুকিয়ে সেই প্রাণীর নির্দিষ্ট আকার দিয়ে সেই অবস্থায় তাকে সংরক্ষণ করা হয়। সংগ্রহশালায় কখনও কখনও কিছু প্রাণীর কঙ্কালও সংরক্ষিত থাকে।
1.4.4 প্রাণী উদ্যান (Zoological Park)
জুলজিক্যাল পার্ক হল মনুষ্য পরিচর্যাধীন এমন সংরক্ষিত স্থান যেখানে সংরক্ষিত পরিবেশে বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করা হয়। এ ধরনের উদ্যান আমাদেরকে এখানকার সংরক্ষিত প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাস এবং আচরণ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এ ধরনের পার্কে রাখা প্রাণীদেরকে যতটা সম্ভব তাদের নিজস্ব বাসস্থানের অনুরূপ পরিবেশে রাখার চেষ্টা করা হয়। শিশুরা এ ধরনের পার্ক ঘুরে দেখতে পছন্দ করে। এইরূপ সংরক্ষিত স্থানকে চিড়িয়াখানা বলে।
1.4.5 বিন্যাসবিধিতে গঠন উপকরণসমূহ (শ্রেণীবিন্যাস কী)
বিন্যাসবিধিতে ব্যবহৃত এই ধরনের উপকরণ, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রাণী ও উদ্ভিদদের সনাক্তকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই উপকরণ বা Key গুলো সাধারণত বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যজোড়কে ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এবং সেই বিপরীত বৈশিষ্ট্যজোড়গুলোকে বলা হয় কপুলেট (Couplet)। এই কপুলেটগুলো দুটো বিপরীত পছন্দ থেকে একটিকে বাছাই করতে সহায়তা করে। ফলস্বরূপ যে-কোনো একটি বৈশিষ্ট্য গৃহীত হয় এবং অপরটি বর্জিত হয়। Key এর প্রতিটি বিবৃতিকে বলা হয় লিড (lead) গোত্র, গণ, প্রজাতির মতো প্রতিটি ট্যাক্সোনোমিক ক্যাটাগরির সনাক্তকরণের জন্য আলাদা আলাদা Key এর প্রয়োজন হয়। Key গুলো সাধারণত বিশ্লেষণধর্মী হয়। ফ্লোরা, ম্যানুয়েলস, মনোগ্রাফ এবং ক্যাটালগ- বিভিন্ন নমুনার বিবরণ লিপিবদ্ধ করার আরও কতকগুলো উপায়। এগুলো জীবের সঠিক শনাক্তকরণের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে। ফ্লোরা বলতে কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্ত উদ্ভিদের প্রকৃত বাসস্থান এবং এদের বিস্তারিত বিবরণকে বোঝায়। এটি ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোর একটি তালিকা প্রদানেও সহায়তা করে। কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির নাম এবং শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি যোগানের ক্ষেত্রেও এগুলো অত্যন্ত উপযোগী। ম্যানুয়েলস্ এবং মোনোগ্রাফগুলোতে যে-কোনো একটি ট্যাক্সন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়।
সারসংক্ষেপ (Summary)
জীবজগৎ বহু বিচিত্র ধরনের জীবে সমৃদ্ধ। হাজার হাজার উদ্ভিদ ও প্রাণী শনাক্ত হওয়ার পরেও এখনও বিশাল সংখ্যক জীব অজানা রয়ে গেছে। জীবের আকৃতি, বর্ণ, বাসস্থান, শারীরবৃত্তীয় এবং অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে বৃহৎ পরিসরে বিচিত্র জীবকুল আমাদেরকে সজীব বস্তুর সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্যসমূহ অন্বেষণে সাহায্য করে। সজীব বস্তুসমূহের ধরন এবং এদের বৈচিত্র্য সম্বন্ধে অধ্যয়নকে সহজ করতে জীববিজ্ঞানীরা জীবের শনাক্তকরণ, নামকরণ এবং শ্রেণিবদ্ধকরণের কিছু নিয়মনীতি প্রণয়ন করেছেন। যে শাখা এ সমস্ত বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করে তাকেই ট্যাক্সোনোমি (Taxonomy) বা বিন্যাসবিধি বলে। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের বিন্যাসবিধি অধ্যয়ন, কৃষি, বনপালন, শিল্প এবং সাধারণভাবে আমাদের জৈব সম্পদগুলো এবং এদের বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানার জন্য উপযোগী। জীবের শনাক্তকরণ, নামকরণ এবং গোষ্ঠীভুক্তকরণের মতো বিন্যাসবিধির ভিত্তিগুলো সর্বজনস্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিক কোডের নিয়ন্ত্রণাধীন। সাদৃশ্য এবং সুস্পষ্ট বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি জীবের শনাক্তকরণ করা হয় এবং একে সঠিক বিজ্ঞানসম্মত নাম দেওয়া হয়, যে নামটি দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি অনুযায়ী দুটি পদবিশিষ্ট হয়। একটি জীব শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিতে একটি স্থান দখল করে বা একটি স্থানকে নির্দেশ করে। এই শ্রেণিবিন্যাস কাঠামোতে বহু ক্যাটাগরি/র্যাংক রয়েছে এবং এদের সাধারণত ট্যাক্সোনোমিক ক্যাটাগরি বা ট্যাক্সা বলে। সবগুলো ক্যাটাগরি ট্যাক্সোনোমিক হায়ারার্কি গঠন করে।
জীবের সনাক্তকরণ, নামকরণ ও গোষ্ঠীভুক্তিকরণকে সহজ করতে বিন্যাসবিদগণ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি করেছেন। হার্বেরিয়াম, সংগ্রহশালা, উদ্ভিদ উদ্যান এবং প্রাণী উদ্যানে সংরক্ষিত নমুনা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগৃহীত প্রকৃত নমুনা নিয়ে বিন্যাসবিধি সংক্রান্ত গবেষণা করা হয়। হার্বেরিয়াম এবং সংগ্রহশালায় নমুনা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য বিশেষ কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সজীব নমুনা উদ্ভিদ উদ্যান বা প্রাণী উদ্যানে সংরক্ষিত থাকে। বিন্যাসবিদগণ ম্যানুয়েল এবং মনোগ্রাফের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রস্তুত করেন এবং ট্যাক্সোনোমির আরও বিশদ অধ্যয়নের জন্য তা সম্প্রচার করেন। ট্যাক্সোনোমিক Key হল সেইসব উপকরণ বা উপাদান যা কোনো জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তার শনাক্তকরণে সাহায্য করে।
Also Read : জীবজগতে বৈচিত্র । Diversity In The Living World