ভরা কোটাল ও মরা কোটাল বলতে কী বোঝায়? ভরা কোটাল ও মরা কোটালের পার্থক্য।
ভরা কোটাল
সংজ্ঞা: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্র যখন একই সরলরেখায় অবস্থান করে এবং চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণে চন্দ্র-সূর্যের নিকটবর্তী পৃথিবীপৃষ্ঠের জলরাশি প্রবলভাবে ফুলে ওঠে, তখন তাকে ভরা কোটাল বলে।
সংঘটনকাল: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কোটাল সংঘটিত হয়।
চন্দ্র ও সূর্যের অবস্থান: পূর্ণিমা তিথিতে ভরা কোটালের সময় পৃথিবী সূর্য ও চন্দ্রের মাঝখানে অবস্থান করে। আর অমাবস্যা তিথিতে ভরা কোটালের সময় সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর একই দিকে একই সরলরেখায় অবস্থান করে।
জোয়ারের প্রাবল্য: ভরা কোটালে জোয়ারের প্রাবল্য সবচেয়ে বেশি হয় অর্থাৎ এক্ষেত্রে সর্বাধিক জলস্ফীতি ঘটে।
মরা কোটাল
সংজ্ঞা: কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য যখন পৃথিবীর সাথে সমকোণে অবস্থান করে তখন বিপরীতমুখী আকর্ষণের ফলে যে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রকৃতির জলস্ফীতি বা জোয়ার সংঘটিত হয়, তাকে মরা কোটাল বলে।
সংঘটনকাল: কৃষ্ণ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে মরা কটাল সংঘটিত হয়।
চন্দ্র-সূর্যের অবস্থান: মরা কোটালের সময় চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীর সাথে সমকোণে অবস্থান করে।।
জোয়ারের প্রাবল্য: মরা কোটালে জোয়ারের প্রাবল্য সবচেয়ে কম হয় অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্বল্প জলস্ফীতি ঘটে।
ভরা কোটাল ও মরা কোটালের পার্থক্য
Sl. No. | ভরা কোটাল | মরা কোটাল |
---|---|---|
1 | চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ পৃথিবীর একই স্থানের উপর কার্যকরী হয়, ফলে ভরা কোটালের সৃষ্টি হয়। | চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য সমকোণী অবস্থানে থাকলে পৃথিবীর উপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পর বিপরীত ও বিরোধী হয়, ফলে মরা কোটালের সৃষ্টি হয়। |
2 | মানবজীবনের উপর ভরা কোটালে (নদী-মোহানা, নৌ-চলাচল, মাছ আহরণ ইত্যাদি)-র প্রভাব বেশি। | মানবজীবনের উপর মরা কোটালের প্রভাব কম। |
3 | ভরা কোটাল হয় অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে। | মরা কোটাল হয় শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে। |
4 | ভরা কোটালের ক্ষেত্রে সাগর-মহাসাগরের জলতল সবচেয়ে বেশী স্ফীত হয়। | মরা কোটালের ক্ষেত্রে সাগর-মহাসাগরের জলতলের স্ফীতি সবচেয়ে কম হয়। |
5 | অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবীর একই পাশে একই সরলরেখায় চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করে। পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ও চাঁদের মাঝে পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে। | কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমীতিথিতে সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীর সঙ্গে পরস্পর লম্বভাবে অবস্থান করে। |
6 | অমাবস্যাও পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ও চাঁদের মিলিত আকর্ষণ বলের টানে জোয়ারেরস্থানে খুব বেশি মাত্রায় জলস্ফীতি ঘটে এবং ভাটার স্থানে জলস্তর খুব বেশি মাত্রায় নেমে যায়। ফলে এই সময় জোয়ার ও ভাটার মধ্যে জলতলের পার্থক্য খুব বেশি মাত্রায় থাকে। | অষ্টমী তিথিতে (কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষ) চাঁদের প্রভাবে পৃথিবীর যেখানে জোয়ার হয়, তার প্রায় সমকোণী স্থানে সূর্যের প্রভাবেও জোয়ার হয়। এর ফলে চন্দ্রের আকর্ষণে যে দুই স্থানের জল ফুলে উঠতে চেষ্টা করে, সূর্যের আকর্ষণ সেই দুই স্থানে জলের উচ্চতা কমাতে চেষ্টা করে। এর ফলে জোয়ার ও ভাটা এই দুটিরই তীব্রতা কম থাকে। |