খরা কাকে বলে? খরার প্রকারভেদ ও খরার প্রভাবগুলো কী কী?: খরা হল জল সরবরাহে দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতির একটি ঘটনা, যা বায়ুমণ্ডলীয় (গড় বৃষ্টিপাতের নীচে), ভূ-পৃষ্ঠের জল বা ভূগর্ভস্থ জল হতে পারে। একটি খরা এক মাস এমনকি এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র এবং কৃষির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বার্ষিক শুষ্ক মৌসুমগুলি খরার বিকাশ এবং পরবর্তীতে গুল্ম আগুনের সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। তাপের সময়কাল জলীয় বাষ্পের দ্রুত বাষ্পীভবনের মাধ্যমে খরা পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ করতে পারে।
খরা পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশে জলবায়ুর একটি পুনরাবৃত্ত বৈশিষ্ট্য। যাইহোক, এই নিয়মিত খরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও চরম এবং আরও অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে ডেনড্রোক্রোনোলজি, বা ট্রি রিংস ডেটিং-এর উপর ভিত্তি করে গবেষণাগুলি নিশ্চিত করে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিং দ্বারা প্রভাবিত খরা 1900-এ ফিরে যায়।
অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি, যেমন Cactaceae (বা cacti) পরিবারের খরা সহনশীলতা অভিযোজন আছে, যেমন – পাতার ক্ষেত্রফল কমে যাওয়া এবং খরা সহ্য করার ক্ষমতা বাড়াতে মোমযুক্ত কিউটিকল। কেউ কেউ দাফন বীজ হিসাবে শুকনো সময়কাল বেঁচে থাকে। আধা-স্থায়ী খরা মরুভূমি এবং তৃণভূমির মতো শুষ্ক বায়োম তৈরি করে। দীর্ঘস্থায়ী খরা ব্যাপক অভিবাসন ও মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। বেশিরভাগ শুষ্ক বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিকভাবেই কম উৎপাদনশীলতা রয়েছে। নথিভুক্ত ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘায়িত খরা চিলির আতাকামা মরুভূমিতে (400 বছর) হয়েছিল।
খরা কাকে বলে? খরার প্রকারভেদ ও খরার প্রভাবগুলো কী কী?
একটি নিদিষ্ট সময়ের ব্যবধানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে যাওয়ার ফল হচ্ছে খরা। জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদান যেমন উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ গতিবেগ সম্পন্ন বায়ু ও নিম্ন আপেক্ষিক আদ্রতা খরাকে আরো প্রবল করে দেয়।
চরম খরা (Absolute Drought) – কোনো অঞ্চলে এক নাগাড়ে ১৫ দিন ০.২ মিমি থেকে কম বৃষ্টিপাত হলে, তাকে চরম খরা বলা হয়।
আংশিক খরা ( Partial Drought) – কোনো অঞ্চলে এক নাগাড়ে ২৯ দিন দৈনিক ০.২ মিমি থেকে কম বৃষ্টিপাত হলে, তাকে আংশিক খরা বলা হয়।
খরার কারণ
খরা নানা কারণে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন –
ক) খরার প্রধান কারণ হল বিশ্ব আবহাওয়া চক্র। ২০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে খরার অন্যতম প্রধান কারণ হল শুষ্ক বায়ুর অধোপতন।
খ) সমুদ্র পৃষ্ট থেকে যত দূরত্ব বাড়তে থাকে সমুদ্র বায়ু দ্বারা বাহিত বায়ুতে আদ্রতার পরিমান তত কমতে থাকে। ফলে খরা সৃষ্টির প্রবণতাও বাড়তে থাকে।
গ) যে সব উপকূল বরাবর শীতল স্রোত বাহিত হয়, সেই সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে খরা তথা মরুভূমি সৃষ্টির প্রবনতা বৃদ্ধি পায়। কারণ শীতল সমুদ্র স্রোত শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
ঘ) যে সব অঞ্চল গুলি পর্বতের বিপরীত পাশে বৃষ্টিছায় অঞ্চলে অবস্থিত, সেই সব স্থান গুলিতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ঙ) মনুষ্য সৃষ্ট কিছু কার্যকলাপ মরুভূমির প্রসার ঘটিয়ে, খরা পরিস্থিতি কে আরো জটিল করে দিচ্ছে।
খরার প্রকারভেদ
১) আবহিক খরা / Meteorological Drought
India Meteorological Department এর মতে কোনো একটি স্থানে কোনো একটি নিদিষ্ট ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমান যদি সেই অঞ্চলের দীর্ঘকালীন গড় বৃষ্টিপাতের থেকে ৭৫% কম হয়, তখন তাকে আবহিক খরা বলা হয়।
২) জলজ খরা / Hydrological Drought
বৃষ্টিপাতের পরিমান হ্রাসের ফলে নদীবাহিত জলের পরিমান স্বাভাবিকের থেকে এতো টা কমে যায় যে তা পাশ্ববর্তী অঞ্চলের সরবরাহ করা সম্ভব হয় না, তখন তাকে হাইড্রোলজিক্যাল ড্রট বা খরা বলা হয়।
৩) কৃষিজ খরা / Agricultural Drought
মাটিতে উপস্থিত আদ্রতার পরিমান কমে যাওয়ার ফলে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না হলে, তখন তাকে কৃষিজ খরা বলে।
৪) আর্থ- সামাজিক খরা / Socio-Economic Drought
জলের পরিমানের অস্বাভাবিক হ্রাস আর্থ- সামাজিক ক্রিয়াকলাপে বাধার সৃষ্টি করলে, তাকে আর্থ- সামাজিক খরা বলে। যেমন – জলের অভাবে কোনো অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে বাধা, বেকারতব, পরিব্রাজন প্রভৃতি সমস্যার সৃষ্টি করে।
অনাবৃষ্টি বা খরার প্রভাব
- আমাদের দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খরার প্রভাবে কৃষিজ ফসলের উৎপাদন কমে যায়।
- খাদ্যদ্রব্যের অভাব হওয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
- উপদ্রুত অঞ্চলে পানি অভাব দেখা দেয়।
- প্রবল উত্তাপে বিভিন্ন ধরনের অসুখের প্রাদুর্ভাব ঘটে।
- পরিবেশ রুক্ষ হয়ে ওঠে।
- অগ্নিকান্ডের উদ্ধব বেড়ে যায়।
বৃষ্টিহীন ও খরাযুক্ত পরিবেশ মানুষ ও জীবজগতের স্বাভাবিক কাজকর্মের বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বনজ সম্পদ বৃদ্ধি তথা অধিক বৃক্ষরোপণ করে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।